বাংলাদেশের নব্য নরেন্দ্র মোদি মিরপুরের এমপি ইলিয়াস মোল্লা

লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ১৮ জুন, ২০১৪, ১১:৩৬:০৪ রাত



নরেন্দ্র মোদী শুধু ভারতে থাকে না, নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশেও আছে। হ্যা মিরপুরের এমপি ইলিয়াস মোল্লাই হচ্ছে বাংলাদেশের নব্য নরেন্দ্র মোদী। বাচ্চা - বাচ্চার মা সহ ৯ জনকে ঘরে আটকে বাইরে থেকে তালা মেরে পেট্রোল দিয়ে আগুন জালিয়ে জ্যান্ত কাবাব বানানো হয়েছে এই বাংলাদেশের নরেন্দ্র মোদী এমপি ইলিয়াস মোল্লার নির্দেশে।

গুজরাটের নরেন্দ্র মোদী যেমন বলত মুসলমানরা বেশি বাচ্চা দেয়, দেশের প্রতি টান নাই- তাই এদেরকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা উচিত ঠিক তেমনি বিহারীদের হত্যার সাফাই গেয়ে ঠিক এই কথা গুলিই এখন বলে বেড়াচ্ছে অনলাইনের নাস্তিক ও হিন্দু বৌদ্ধ গুলি। বিহারীদের অপরাধ যদি হয়ে থাকে ৭১ সালে পাকিস্তানীদের কে সমর্থন করা তাইলে ঠিক এই দোষে তো বাংলাদেশের বৌদ্ধরাও দুষ্ট। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধ নেতা বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো সরাসরি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৯ মাস এই বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো পাকসেনাদের কার্যকলাপকে অভিনন্দন জানিয়ে বহু বিবৃতি দিয়েছেন পত্র পত্রিকায়। পাকসেনাদের জন্য সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান সফর করেছেন। সেই সময় টিক্কা খানের সাথেও এই বৌদ্ধ নেতা দফায় দফায় বৈঠক করেছে। শাহরিয়ার কবির সম্পাদিত " একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়" এই বইতে স্পষ্ট বলা আছে যে বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো একজন রাজাকার ছিলো। ৭১ সালে আমাদের মুক্তিসংগ্রামে এই বৌদ্ধদের কোন ভূমিকা নাই। সেই সময়ের চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় তো সরাসরি রাজাকারের ভূমিকায় অংশ নিয়েছিল। এবং উনি মারাও গেছেন পাকিস্তানে। রাজা ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ফেডারেল মন্ত্র্র্রী হিসেবে জুলফিকার আলী ভূট্টোর মন্ত্রীসভায় যোগদান করেন। রাজ ত্রিদিব রায় প্রায়শ:ই গর্ব করে বলতেন যে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যে দুজন প্রার্থী আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন না করে জয়লাভ করেন তার মধ্যে তিনি (ত্রিদিব রায়) একজন। নির্বাচনে জয়ের জন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলীয়ান হতে হবে, এ কথা তিনি তা প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করেন। তাইলে ১৯৭১ সালের ভূমিকার জন্য যারা এখন বিহারী হত্যার পক্ষে কথা বলছেন তাদের কে আমি বলব ৭১ সালে বৌদ্ধরাও তো রাজাকার ছিল। তাইলে কি আপনারা এখন বৌদ্ধ হত্যায় অংশ নিতে আগ্রহী ? আর ১৯৭১ সালে সবচেয়ে বেশী রাজাকার গিরী করেছি তো আমরা বাঙ্গালীরা। রাজাকার আল বদর আল শামসে কয়টা বিহারী ছিল। সবই তো ছিলাম আমরা। তাইলে তো বিহারী হত্যার এই থিওরী ধরে এখন আমাদের নিজেদেরই উচিত নিজেদের কে মেরে ফেলা। তাইলে আসুন আমরা এখন বিহারী হত্যার এই থিওরী কে সত্য ধরে একজন আরেকজন কে মেরে ফেলি। বিহারীরা ৭১ সালে আকাম কুকাম করছে তা তো আমি অস্বীকার করছি না বা আমি বিহারীদের কে মুক্তিযুদ্ধাও বলছি না। কিন্তু ৭১ সালের বিহারীদের কাজের জন্য এই প্রজন্মের বিহারী হত্যা করা কখনই ঠিক হবে না। আর ৭১ সালে আকাম কুকাম আমরাও কম করি নাই। আমরা Status ব্লগ লেখার সময় নিজেদেরকে হিমালয়ের মতো উদার বলি। আমাদের ভালবাসা কেবল ধর্মের সীমানায় আবদ্ধ রাখতে নারাজি প্রকাশ করি। অথচ এখন দেখা যায় নিজ দেশের ছোট্ট সীমানার মধ্যেও আমাদের ভালবাসা পরিব্যপ্ত নয়, বরং এর মধ্যেও সংকীর্ণ এবং সীমাবদ্ধ! নিছক বাঙ্গালী আর অবাঙ্গালীয়ানাই আজ আমাদের ভালবাসার মাপকাঠি!! আজকে যারা বিহারী হত্যার পক্ষে কথা বলছেন তারা হয়ত ভুলে গেছেন পাকিস্তানেই প্রায় ১০ লাখের মত বাংলাদেশী আছে যারা ৭১ সালের পর আর বাংলাদেশে আসে নাই। তাই আমরা যদি এখন বিহারী হত্যায় মেতে উঠি বা বিহারীদের কে পাকিস্তান পাঠিয়ে দিতে বলি তখন পাকিস্তানে থাকা আমাদের বাংলাদেশী ভাইদের কি হবে ? আমরা কি পারব পাকিস্তান ফেরত সব বাংলাদেশীদের কে পুনর্বাসন করতে ? ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগের দায় এই দেশকে নিতে হবে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এবং তারপরেও, এই অঞ্চল থেকে হিন্দুদের একটা মাইগ্রেশন হয়েছে। ঠিক তেমনি পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং অন্য অঞ্চল থেকে বিহারি বা গুজরাটিরা এই অঞ্চলের দিকে মাইগ্রেট করেছে।



আপনি যদি দিনাজপুর বা দেশের সর্ব উত্তরে অবস্থিত জেলাগুলোর বর্ডার ক্রস করেন, তাহলে আপনি বিহারে পৌঁছে যাবেন খুব সহজেই!অবিশ্বাস্য মনে হলেও কথাটি সত্য, বিশ্বাস না হলে ছবিতে দেয়া ম্যাপ দেখে নিশ্চিত হতে পারেন। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা, এই তিনটি অঞ্চল শত শত বছর ধরে অভিন্ন দেশ হিসেবে বিবেচিত হতো। অর্থাৎ জাতিগত বিচারে কিন্তু বিহারীরা আমাদের প্রতিবেশী, আমাদের ভাই। ব্রিটিশ আমলের ২০০ বছরের ইতিহাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিহারীরা বাঙালিদের সহযোগী ছিল। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হোসেন সোহরাওয়ার্দীও ছিল একজন বিহারী।

সাতচল্লিশে ভারতে যতগুলো দাঙ্গা হয়েছিল, তার মধ্যে বিহার দাঙ্গায় পাইকারীভাবে মুসলিম নিধনে মেতে উঠেছিল হিন্দুরা। ফলে বিহারীরা বর্ডার ক্রস করে এদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বিহারীরা পাকিস্তানি নয়। ৪৭ এ দেশ ভাগের সময় ভারতের বিহার রাজ্য থেকে যেটা এক সময় অবিভক্ত বাংলার অংশ ছিল হিন্দুদের নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে অংশ নেয়। তাদের ভাষা উর্দু বলে অনেকে তাদেরকে পাকিস্তানি মনে করেন। ইন্ডিয়ার অনেক মুসলমআনের ভাষাই উর্দু। আর আমরা যাদের কে বিহারী বলি তাদের মাঝে অনেক গুজরাটিও আছে। বাংলাদেশের ক্বওমী মাদ্রাসা গুলিতেও এই উর্দু ভাষায় ক্লাস পরীক্ষা নেওয়া নয়। আর বিহারীদের বাংলাতে আনতে বঙ্গবন্ধুর একটা বড় ভুমিকা ছিল সেই সময়ে উনি এ উদ্দেশ্যে বিহার ও ভিসিট করেছিলেন। আর যারা বলছেন বিহারীরা পাকিস্তান হবার পর থেকেই বাংলাদেশীদের সাথে ঝামেলা করে আসছে তাদের কে আমি বলছি আপনি হয়ত যুক্তফ্রন্টের নাম শুনে থকবেন। ৫৪ এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট যখন নির্বাচনে জয় লাভ করে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসল ঠিক এর পর পরেই আদমজী পাটকল আর চন্দ্রঘোনায় পশ্চিম পাকিস্তানের ইন্ধনে বাংঙ্গালী ও বিহারী দাঙ্গা হয়েছিল। যেই দাঙ্গার ছুতা ধরে মাত্র ২ মাসের মাথায় পশ্চিম পাকিস্তানীরা যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙ্গে দিল। ১৯৫৪ এ আদমজী পাটকলে পরিকল্পিতভাবে রায়ট বাধানো হয়। পাকিস্তান পিরিয়ডে এই বাংঙ্গালী বিহারী দাঙ্গা পাকিস্তান সরকারের নীল নকশায় হত যেন এইসব অছিলা দিয়ে তারা সামরিক শাসন জরুরী অবস্থা জারি রাখতে পারে। আমেরিকায় জন্ম নেয়া বাঙ্গালি বাবা মা'র সন্তান যদি আমেরিকান হতে পারে।

তবে বাংলাদেশ এ জন্ম নেয়া অবাঙ্গালীরা কেন বাংলাদেশি হবে না ?



মিরপুরের খালবিল জলাভূমি ভরাট করে সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা ফ্ল্যাটের ব্যবসা করছ। এখন এই ইলিয়াস মোল্লা বিহারিদের ক্যাম্পের দিকে নজর দিয়েছে। সে স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের কে ব্যবহার করে এই ১০ ১০ টা বিহারীকে আগুনে পুড়িয়ে মারল। কিন্তু দেশের সুশীল সমাজ কেউই এই ইলিয়াস মোল্লার বিরুদ্ধে কিছু বলছে না কারন এই ইলিয়াস মোল্লা হচ্ছে শেখ হাসিনার খুব কাছের লোক। আজকে যদি এই বিহারীদের জায়গায় ১০ টা কাদিয়ানী বা ১০ টা হিন্দু মরত তাইলে দেখতেন সারা বাংলাদেশের সুশীল সমাজ কিভাবে জেগে উঠত। যদিও মানুষ কে আগুনে পুড়িয়ে মারা এটা আওয়ামী লীগ/জানোয়ার লীগের অনেক পুরানো অভ্যাস। আওয়ামী লীগের এক এমপির মালিকানাধীন বিহঙ্গ পরিবহনের গাড়িতে উঠলেই আপনি পুড়ে কংকাল হয়ে যাবেন। শেখ হাসিনা অনেক আগে থেকেই এই বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়াতে অভ্যস্ত। তো তাই তার দলের এক সংসদ সদস্য বিহারীদের কে আগুনে পুড়িয়ে মারবে এটাই স্বাভাবিক। দলের নেত্রীই যেখানে জানোয়ার সেখানে দলের এমপিও যে একটা জানোয়ার হবে তা তো সবাই জানে।

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

236392
১৮ জুন ২০১৪ রাত ১১:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই অমানুষটাকে মোদির সাথে তুলনা করা ঠিক না। মোদি যা করেছে সেটা তার আদর্শের জন্য। আর এ করেছে স্রেফ পয়সার জন্য।
236417
১৯ জুন ২০১৪ সকাল ০৭:৩৪
টাংসু ফকীর লিখেছেন : ইলিয়াস মোল্লা ইবলিশ শয়তানের চেয়েও জঘন্য৤ আর মালাউনের জন্য সে কিন্তু সব করে,মালাউনদেরকে সকল বড় বড় পোষ্টে বসানেরা জন্য তার অবদান অনেক৤ আর মুসলমানদের পুড়িয়ে মারে এই মানুষ নামের শয়তান৤ এর বিচারও আমরা বাংলার মাটিতেই করব ইনশাল্লাহ৤ ফারবী ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ অনেক তথ্য দেওয়ার জন্য৤
236467
১৯ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৪২
ইয়াফি লিখেছেন : আওয়ামীলীগ মানবচরিত্রের পশুত্বকে লালন করে। এজন্য দেশের বিভিন্ন এলাকার কুখ্যাত মানুষরূপী পশুগুলো ঐদলে ঠিকানা করে নিয়েছে।
236502
১৯ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:১৫
শাফিউর রহমান ফারাবী লিখেছেন : প্রথমে শুনা গেল পুলিশের গুলিতে মানুষ মরছে পরে আবার শুনা গেল আতশবাজির পটকায় মানুষ মরছে কিন্তু সর্বশেষ জানা গেল না দরজা বন্ধ করে মানুষ গুলিকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File