মেক্সিকান কবি অক্তাবিও পাজের হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে মূল্যায়ন

লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ৩১ মে, ২০১৪, ১২:১৯:৫৮ রাত



অক্তাবিও পাজ লোজানো (৩১ মার্চ, ১৯১৪ – ১৯ এপ্রিল, ১৯৯৮) একজন মেক্সিকান কবি, লেখক, ও কূটনীতিবিদ। তার অসামান্য কাজের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে মিগুয়েল ডি সার্ভেন্তেস পুরষ্কার, ১৯৮২ সালে নিওয়েসড্যাট ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর লিটারেচার ও ১৯৯০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বিংশ শতাব্দীর লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা তিনি। এ বছরের ৩১ মার্চ পূর্ণ হলো কবি অক্তাবিও পাজের জন্মশতবর্ষ। পৃথিবীর শিল্পসাহিত্যের মূল কেন্দ্রগুলোজুড়ে এ উপলক্ষে ছিল নানা অনুষ্ঠান। চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগের কাফকা সোসাইটি গত ১২ এপ্রিল আয়োজন করল তিন দিনব্যাপী ‘অক্তাবিও পাজ স্মরণোৎসব’। এখানে মূল বক্তা ছিলেন মিলান কুন্ডেরা ও নোবেলজয়ী মারিও বার্গাস য়োসা। কবি অক্তাবিও পাজের মূল্যায়ন নিয়ে মিলান কুন্ডেরার একটি অভিভাষণ আজ প্রথম আলো পত্রিকার সাহিত্য পাতায় ছাপা হয়েছে। আমার আবার ল্যাটিন কবি সাহিত্যিকদের প্রতি খুব আগ্রহ। ব্রাজিল আর্জেন্টিনা মেক্সিকো কে আমরা বাংলাদেশীরা একটা দূর গ্রহের দেশ বলেই ভাবি। তাই খুব ধৈর্য্য ধরে আজ প্রথম আলো পত্রিকায় কবি অক্তাবিও পাজের মূল্যায়ন নিয়ে মিলান কুন্ডেরার অভিভাষণ টি পড়লাম। লেখার শেষ প্রান্তে এসে থমকে দাড়ালাম। নোবেল বিজয়ী অক্তাবিও পাজ ভারত নিয়ে একটা বই লিখেছেন। বইটার নাম “ইন লাইট অব ইন্ডিয়া”। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পাজ প্রথম বারের মত ভারত ভ্রমণে আসেন। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত অক্তাবিও পাজ ভারতে মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তখনই উনি “ইন লাইট অব ইন্ডিয়া” বইটা লিখেন।



এই বইতে নোবেল বিজয়ী কবি অক্তাবিও পাজ হিন্দু ধর্ম কে একটা বর্বর কালো যাদু ও তন্ত্রমন্ত্রের ধর্ম বলেছেন। ভারতের হিন্দুরা কেন এখনও খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে না সেই আক্ষেপেও উনি করেছন। কবি অক্তাবিও পাজে এই আফসোস ও করেছেন খৃষ্ট ধর্ম যেভাবে ইউরোপের প্যাগান ধর্মকে একদম ধ্বংস করে দিয়েছে তাইলে ব্রিটিশরা কেন ভারতের বুক থেকে এই মূর্তিপূজা কে লোপ করতে পারল না। হিন্দুরা যেইসব দেবদেবীদের পূজা করে তা যে অনেকটা প্যাগানদের দেবদবী হিরক্লিয়াস জিয়সের মত সেই কথাও উনি বলেছেন। অর্থ্যাৎ বাইবেলে যেই কথা বলা হয়েছে ঠিক সেই কথাই উনি হিন্দুদের দেবদেবীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন। No, but the sacrifices of pagans are offered to demons, not to God, and I do not want you to be participants with demons.

"না, মুর্তিপূজারিদের সকল উত্‍সর্গ জ্বীনের জন্য, ঈশ্বরের নয়, আর আমি জ্বীনদের সঙ্গী হতে চাই না" [1 corinthians 10:20 ]

আর আমরা তো এখন সবাই জানি যে ইসলামেই বলা হয়েছে হিন্দুদের দেবদেবীরা হল সব দুষ্ট জ্বীন। [তথ্যসূত্রঃ] কবি অক্তাবিও পাজকে সারা পৃথিবী চিনে। উনার শত জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে পৃথিবীর প্রত্যেকটা বড় বড় শহরে উনার সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা হয়েছে।



অক্তাবিও পাজের সাহিত্য কর্ম নিয়ে বাংলা ভাষায়েও অনেক বই বের হয়েছে। আর কবি অক্তাবিও পাজে খুব চমৎকার ভাবেই বুঝেছেন যে হিন্দুদের দেবদেবীরা হল সব দুষ্ট জ্বীন/শয়তান। ব্রিটিশরা কেন তাদের ২০০ বছরের শাসনামলে সব হিন্দুকে খৃস্টান করতে পারল না সেই আক্ষেপও কবি অক্তাবিও পাজে উনার “ইন লাইট অব ইন্ডিয়া” বইটাতে করেছেন। শুধু তাই নয় অক্তাবিও পাজে এই কথাও বলেছেন মহাত্মা গান্ধী হিন্দু-ঐতিহ্য থেকে অহিংসার বোধ পাননি, বরং মহাত্মা গান্ধী এই অহিংসা পরম ধর্ম এই বোধটা পেয়েছেন লিও টলস্টয়ের শান্তিবাদ থেকে। অর্থ্যাৎ কবি অক্তাবিও পাজের কথা হল মানব জাতিকে একমাত্র কামসূত্র বই উপহার দেওয়া ছাড়া হিন্দু ধর্মের আর কোন কল্যানকর কিছু দেবার সামর্থ্য কখনই ছিল না। অর্থ্যাৎ এক কথায় একটা জানোয়ারের ধর্ম হল হিন্দু ধর্ম। এর পরে আমার কাছে আরেকটা বিস্ময় এসে উপস্থিত হয়। কবি অক্তাবিও পাজের জীবনি নিয়ে আলোচনাকারী মিলান কুন্ডেরা এরপর স্যাটানিক ভার্সেসের লেখক সালমান রুশদীর কাছে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে কবি অক্তাবিও পাজের এই কথা গুলির মূল্যায়ন জানতে চান। সালমান রুশদী তখন মিলান কুন্ডেরা কে রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের মতো হিন্দু সংস্কারবাদীদের কথা বলেন, এবং আরও বলেন যে, টাইটাস অ্যান্ড্রোনিকাস যেমন শেক্সপিয়ারের মতো লেখকের বাজে লেখা, তেমনই ইন লাইট অব ইন্ডিয়া কবি অক্তাবিও পাজের একটি বাজে লেখা। আপনারা একটু চিন্তা করে দেখুন সালমান রুশদী নিজেকে নাস্তিক বলে দাবী করেন কিন্তু মিলান কুন্ডেরার কাছে কি চমৎকার ভাবেই না হিন্দু ধর্মের সাফাই গাচ্ছেন। শুধু সাফাই গাওয়াই নয় সালমান রুশদী কবি অক্তাবিও পাজে কে একজন বাজে লেখকও বলছেন। অর্থ্যাৎ আমরা যে বলি এভরি নাস্তিক ইজ এ ছুপা হিন্দু তা আজ প্রথম আলো পত্রিকা পড়ে আবার বুঝতে পারলাম। এতদিন জানতাম বাংলার নাস্তিকরা সব গোপনে গোপনে হিন্দু ধর্মকে সাপোর্ট করে কিন্ত্য এখন দেখলাম সালমান রুশদী নিজেও প্রকাশ্যে হিন্দু ধর্মের দালালী করে। সালমান রুশদীর কাছে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মহান সংস্কারবাদী কিন্তু ভারতের নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের কে যারা ব্রাক্ষণদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাল সেই মহান মুসলিম সুলতানরা সালমান রুশদীর কাছে বর্বর।

আমি নেট থেকে খুঁজে “IN LIGHT OF INDIA” বইটার Review টা বের করলাম। AGHA SHAHID ALI এর ভাষ্যে এই বইয়ের রিভিউ তে বলা আছে The new ideas Islam brought to India were equality and fraternity, something Paz implicitly recognizes in the fact that "all the millions who adopted the new faith came from the lower castes." This was because, to quote Paz himself, Islam offered a chance "for one to free oneself from the chain of birth and rebirth (the terrible law of karma), a liberation that was not only religious but also social: The converted became a part of a fraternity of brothers." অর্থ্যাৎ নিম্নবর্ণের হিন্দুরা বর্ণপ্রথার হাত থেকে মুক্তি পেতে দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করেছে। ইসলামই ভারত বর্ষে সমতা ও ভ্রাতৃত্ত্ব নিয়ে এসেছে। [তথ্যসূত্রঃ]



অক্তাবিও পাজ প্রথম জীবনে কমিউনিস্ট পার্টি করলেও ১৯৭৪ সালে উনি কমিউনিজম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। কম্যুনিজমের মিথ্যাচার ও গণহত্যার হিসাব কষে অতঃপর অক্তাবিও পাজ সোশ্যাল ডেমোক্রেসিকেই উনার আদর্শ হিসাবে নেন। বামপন্থায় বিশ্বাস ছিল পাপ এই পাপ আমাদের কে কলঙ্গের দাগ দিয়ে গেছে, আমাদের লেখাগুলোও মারাত্মকভাবে সেই দাগে ভরিয়েছে। যেই মানুষটি এক সময় স্তালিনের ভক্ত ছিলেন সেই তিনিই এক সময় স্তালিন লেনিনের বিরুদ্ধে কলম ধরলেন, কিউবার বিপ্লব থেকেও দূরে রাখলেন নিজেকে। কবি অক্তাবিও পাজ ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আফসোস পাজ আপনি ২০০২ সালের গুজরাটের মুসলিম নিধন দেখেন নাই। অক্তাবিও পাজ আপনি নরেন্দ্র মোদীকে দেখেন নাই যেই নরেন্দ্র মোদী আমাদের গুজরাটের বোনদের কে ধর্ষন করে তারপর আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল। এই নরেন্দ্র মোদীর অনুসারীরা আমাদের গর্ভবতী বোনদের পেট চিড়ে হত্যা করেছে। পাজ আপনি যদি ২০০২ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকতেন তাইলে হয়ত Brutality of Hinduism নামে একটা বই লিখতেন। পাজ ভারতের মুসলমানদের কে প্রতিমূহূর্তে একটা বর্বর নিচ পিশাচ জাতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়।

বিষয়: বিবিধ

২২১৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

228517
৩১ মে ২০১৪ রাত ১২:৪১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনি যদি ২০০২ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকতেন তাইলে হয়ত Brutality of Hinduism নামে একটা বই লিখতেন। পাজ ভারতের মুসলমানদের কে প্রতিমূহূর্তে একটা বর্বর নিচ পিশাচ জাতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়।
নিঃসন্দেহে পৈশাচিক বর্বরতা। এদের বিচার.........। অনেক ধন্যবাদ
228552
৩১ মে ২০১৪ সকাল ০৭:৩৫
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
228554
৩১ মে ২০১৪ সকাল ০৮:১৬
খেলাঘর বাধঁতে এসেছি লিখেছেন : ব্রিটিশরা কেন তাদের ২০০ বছরের শাসনামলে সব হিন্দুকে খৃস্টান করতে পারল না সেই আক্ষেপও কবি অক্তাবিও পাজে উনার “ইন লাইট অব ইন্ডিয়া” বইটাতে করেছেন। শুধু তাই নয় অক্তাবিও পাজে এই কথাও বলেছেন মহাত্মা গান্ধী হিন্দু-ঐতিহ্য থেকে অহিংসার বোধ পাননি, বরং মহাত্মা গান্ধী এই অহিংসা পরম ধর্ম এই বোধটা পেয়েছেন লিও টলস্টয়ের শান্তিবাদ থেকে।

আপনার জন্য করুনা। নোবেল বিজয়ী কবি অক্তাবিও আল্যার জমিনে সত্য! ধর্ম ইসলাম কায়েমের কথা বলেন্নি। এই[b] মেক্সিকান কবি সাহেব দাঙ্গাবাজ মোহাম্মদের মাঝে শান্তিবাদ খুজে পান্নি, পেয়েছেন লিও টলস্টয়ের মাঝে। করুনা আবারো
228562
৩১ মে ২০১৪ সকাল ০৮:৩৯
আল সাঈদ লিখেছেন : ব্রিটিশরা হয়তো হিন্দুদের ইংলিশ বানাতে পারেনি ২০০ বছরে তবে হিন্দুত্ববাদ গো অন্ধকার তা বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।
228573
৩১ মে ২০১৪ সকাল ১০:০৩
শাফিউর রহমান ফারাবী লিখেছেন : এই পৃথিবীর অনেক বড় বড় সাহিত্যিকই ইসলাম ধর্মের প্রতি দূর্বল ছিল। কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া এই সত্য গুলি গোপন রাখতে চায়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File