উম্মে হানীকে কেন্দ্র করে নাস্তিকদের সব অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব

লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ২৬ মে, ২০১৪, ১২:৫৮:৫৫ দুপুর

Muhammad

আজ থেকে ৫ বছর আগে আমি যখন ব্লগজগতে প্রবেশ করি তখন থেকেই আমি দেখছি আবুল কাশেম টাইপ নামক কিছু মুক্তমনা ব্লগাররা রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে উম্মে হানীর একটা অনৈতিক সম্পর্ক ছিল তা বলে বেড়াত। কিন্তু কে এই উম্মে হানী, উনার পরিচয় কি বা এই উম্মে হানীর বয়স কত সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। শুধু আমি না অনেক মুসলমানই এই উম্মে হানী সম্পর্কে কিছুই জানে না। আর এই না জানার সুযোগটাই নিয়েছে নাস্তিকরা। মুক্তমনার আবুল কাশেম মুক্তমনা ব্লগে উম্মে হানীকে নিয়ে ৫ টা ব্লগ লিখেছে। সেই ৫ টা ব্লগে আবুল কাশেম উম্মে হানীর সাথে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটা অনৈতিক সম্পর্ক ছিল তা প্রমান করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। আবুল কাশেম সাহেব বলতে চেয়েছেন উম্মে হানীর সাথে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটা অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো। আমরা এখন উম্মে হানীকে নিয়ে আবুল কাশেম টাইপ লোকদের কথাবার্তার ব্যবচ্ছেদ করবো। উম্মে হানী নামক এই মহিয়সী সাহাবিয়্যার নাম ছিল ফাখতা। হিন্দ নামেও উনাকে ডাকা হত। বিয়ের পর উনি উম্মে হানী নামে পরিচিত হন। উম্মে হানী ছিল উনার কুনিয়াত। উম্মে হানী ছিলেন রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচা আবু তালেবের জ্যৈষ্ঠ কন্যা ও হযরত আলীর বড় বোন। অর্থ্যাৎ উম্মে হানী ছিলেন রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচাত বোন। তিনি রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম বয়স্কা ছিলেন। তবে অনেক রেওয়াতে পাওয়া যায় উম্মে হানী রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন তবে অধিকাংশ সীরাতবিদ উম্মে হানী কে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমবয়সী বলেছেন। তাইলে অধিকাংশ সীরাতবিদের কথামত মেরাজের ঘটনার সময় উম্মে হানী ও রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের বয়সই ছিল ৫০ এর উপরে। যুবক বয়সেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু তালেবের কাছে উম্মে হানীকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু আবু তালেব রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তার মেয়ের বিয়ে না দেয়ার কারণ ছিল তিনি আগেই হুবাইরা বিন আয়েয আল মাখযুমীকে বিয়ের ব্যাপারে কথা দিয়ে দিয়েছিলেন। পরে হুবায়রার সাথেই উম্মে হানীর বিয়ে হয়েছিল। আমরা জানি আরবগণ কারও সাথে কথা দিলে যে কোন মূল্যে তা পালন করত। এটা আরবদের একটি উল্লেখ যোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট। তাই খুব স্বভাবতই আবু তালেব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেন নি।

কিন্ত তাই বলে কি আত্মীয়তার সম্পর্ক সেখানেই শেষ হয়ে গেল? না হল না। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণেই আপন চাচাত বোন হিসাবে উম্মে হানীর সাথে দেখা স্বাক্ষাৎ বা যোগাযোগ রক্ষা করতেন।

আবু তালেবের গৃহে একই সঙ্গে লালিত পালিত হওয়ায় উম্মে হানী রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সহোদরের ন্যায় স্নেহ করতেন। তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল আপন ভাই বোনের মত। উম্মে হানীর স্বামীর নাম ছিল হুবায়রা। উম্মে হানীর চার সন্তান ছিল। তাদের নাম হল: আমর, জাদাহ, হানী এবং ইউসুফ। অর্থ্যাৎ উনার প্রথম সন্তান হানীর নামে উনাকে উম্মে হানী বলে ডাকা হত। খাদিজা রাযিয়াল্লাহ আনহা ও আবু তালেবের মৃত্যুর পর রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব অসহায় হয়ে পরেছিলেন। সেই সময় সালাত আদায় করতে গেলে কাফেররা রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাথার উপর উটের নাড়ি ভূড়ি ফেলে দিত। মক্কী জীবনে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রভাবশালী সাহাবীদের গৃহে অবস্থান করে অন্যান্য সাহাবীদের কে দ্বীন শিক্ষা দিতেন। যেমন সাহাবী আরকাম ইবনে আবুল আরকামের ঘর সাফা পাহাড়ের উপর অবস্থিত ছিল। তাই নব্যুয়তের ৫ম বছর থেকে দারে আরকাম কে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনের দাওয়াত এবং মুসলমানদের সাথে মেলামেশার কেন্দ্ররুপে নির্ধারন করেন। যেহেতু উম্মে হানী এবং উনার ২ ভাই হযরত আলী ও জাফর উনারা উভয়েই মুসলমান ছিলেন ও উম্মে হানীর স্বামী হুবায়রা মুসলমান না হলেও রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন তাই রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মাঝে উম্মে হানীর গৃহে সালাত আদায় করতেন এবং অন্যান্য সাহাবীদের কে দ্বীন ইসলাম শিক্ষা দিতেন। উম্মে হানীর ঘর কাবা শরীফের খুব সন্নিকটেই ছিল। উম্মে হানী বিনতে আবু তালেব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- “ আমি রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাতের কিরাত আমার চাদোয়া বা তাবুর নিচ থেকে শুনতাম। “ অর্থ্যাৎ রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কাবা শরিফে রাতে সালাত আদায় করতেন তখন তা উম্মে হানী উনার ঘর থেকেই শুনতে পেতেন। আর উম্মে হানীর পিতা রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচা আবু তালেব তো সব সময়ই রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাকাঙ্গী ছিলেন। আর হাশেমী গোত্র সব সময়ই রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে ছিল। আর উম্মে হানীর স্বামী হুবায়রা কখনই রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি কোন বিরুপ মন মানসিকতা পোষন করতেন না। তাই আমরা বুঝতে পারছি যে উম্মে হানীর পরিবার পরিজনের বেশীর ভাগ সদস্য ও উম্মে হানী রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচাত বোন হবার কারনে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হানীর গৃহকে নিরাপদ ভাবতেন। ব্যাস এতটুকুই। কিন্তু নাস্তিকরা কি চমৎকার ভাবেই না এই উম্মে হানীকে কেন্দ্র করে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আজেবাজে কথা বলা যাচ্ছ। কিন্তু গাধার দল এটা জানে না এই মেরাজের ঘটনার সময় এই উম্মে হানীর বয়স ছিল ৫০ বছর। ৫০ বছর বয়সী মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচাত বোন উম্মে হানী এখন নাস্তিকদের চোখে বিশ্ব সুন্দরী। সীরাত সাহিত্যে পাওয়া যায় মেরাজের রাত্রিতে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হানীর গৃহে ছিলেন। কিন্তু সহীহ হাদিসগুলিতে এই সম্পর্কে কিছু পাওয়া যায় না। মিরাজের রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথায় অবস্থান করছিলেন ? সহীহ বুখারীর বণর্নায় মেরাজের রাতে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম হাতীমে কাবায় অবস্থান করছিলেন।

))أَنَّ نَبِىَّ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – حَدَّثَهُمْ عَنْ لَيْلَةَ أُسْرِىَ بِهِ « بَيْنَمَا أَنَا فِى الْحَطِيمِ – وَرُبَّمَا قَالَ فِى الْحِجْرِ – مُضْطَجِعًا ، إِذْ أَتَانِى آتٍ((

“আল্লাহর নবী (সাল্লালাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম) ইসরার রাতের ঘটনা প্রসেঙ্গে বলেন: আমি তখন হাতীমে কাবা অথবা বলেছেন, হিজরে চিৎ হয়ে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ একজন আগন্তুক আসল…)”। (সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ মিরাজ)

আর সুনান তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে:

بينما أنا عند البيت بين النائم واليقظان

“আমি তখন (ইসরার সময়) বাইতুল্লাহ তথা কাবা শরীফের নিকট ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থার মাঝে অবস্থান করছিলাম…।” (হাদীস নং ৩৬৬৯)

মিরাজের রাত্রিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মে হানীর ঘরে থাকার কথা কোন গ্রহণযোগ্য হাদীস গ্রন্থে পাওয়া যায় না তবে সীরাত গ্রন্থ গুলিতে এই বিষয় নিয়ে লেখা আছে। সীরাতে ইবনে হিশাম আস-সীরাহ আন-নাবাবিয়্যাহ এই গ্রন্থগুলিতে উম্মে হানীর বক্তব্য পড়লে বুঝা যায় রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেরাজের রাত্রিতে উম্মে হানীর গৃহে অবস্থান করলেও রাতের বেলায় কাবা শরীফে চলে গিয়েছিলেন। তারপর কাবা শরীফ থেকেই হযরত জিবরাঈল উনাকে নিয়ে বায়তুল মোকাদ্দাসে যায়। যেহেতু সহীহ হাদীস সমূহতে বলা আছে যে কাবা শরীফ থেকেই রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজ শুরু হয়েছিল তাই মেরাজের রাত্রিতে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কাবা শরীফেই ছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নাই। উম্মে হানী বলেনঃ রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজ আমার ঘর থেকেই হয়। সে রাতে তিনি এশার নামায আদায় করে আমার ঘরে ঘুমান। আমরাও ঘুমিয়ে পড়ি। ফজরের অব্যবহিতের পূর্বে তিনি আমাদের কে ঘুম থেকে জাগান। তারপর তিনি ফজরের নামায পড়েন এবং আমরাও তাঁর সাথে নামায পড়ি। তারপর তিনি বলেনঃ উম্মে হানী! তুমি দেখেছিলে, গতরাতে আমি এই উপত্যকায় এশার নামায আদায় করেছিলাম। তারপর আমি বায়তুল মোকাদ্দাসে যাই এবং সেখানে নামায আদায় করি। আর এখন আমি ফজরের নামায তোমাদের সাথে আদায় করলাম, যা তোমরা দেখতে পেলে। তাই উম্মে হানীর বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে কাবা শরীফে যাওয়ার আগের সময়টা রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হানীর গৃহেই অবস্থান করেছিলেন। সীরাত গ্রন্থ গুলিতে মেরাজ রাত্রির ব্যাপারে উম্মে হানীর যে বক্তব্য আছে তা আমরা এখন একটু দেখি- “উম্মে হানী বলেন: “তিনি রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে রাতে (ইসরার রাতে) ‘আমাদের’ নিকট ঘুমান। তিনি এশার নামায আদায় করে ঘুমালেন। ‘আমরা’ও ঘুমালাম। অত:পর ফজর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তিনি ‘আমাদের’কে ঘুম থেকে জাগালেন অত:পর ইসরা ও মিরাজের ঘটনা ‘আমাদের’ নিকট বর্ণনা করলেন।” এখানেও বহুবচন। এখানে আমরা দেখি উম্মে হানী আমাদের শব্দটি ব্যবহার করেছেন। “ অত:পর ফজর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তিনি ‘আমাদের’কে ঘুম থেকে জাগালেন অত:পর ইসরা ও মিরাজের ঘটনা ‘আমাদের’ নিকট বর্ণনা করলেন।” এখন উম্মে হানী যদি ঘরে একাই থাকতেন তাইলে তিনি কি আমাদের এই শব্দটি ব্যবহার করতেন ? তখন তিনি শুধু আমাকে এই শব্দটি ব্যবহার করতেন অর্থ্যাৎ উম্মে হানী তখন বলত“তিনি ফজরের কিছুক্ষণ আগে ‘আমাকে’ ঘুম থেকে জাগালেন। স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে, উম্মে হানী একাকি বাড়ীতে ছিলেন না। তার সাথে আরও মানুষ জন ছিল। আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি তার স্বামী ও চার সন্তান ছিল। সুতরাং এটা তো খুব স্বাভাবিক যে তার বাড়ীতে তার স্বামী, সন্তান ও উনার দাসী থাকবে। আর আমি আগেই তো বলছি উম্মে হানীর আপন ২ ভাই হযরত আলী ও জাফর তারা মুসলমান ছিলেন এবং উনারা উম্মে হানীর গৃহে দ্বীন শিক্ষা করতেন। যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেই ঐ রাত্রিতে উম্মে হানীর স্বামী বাড়িতে ছিল না তাও কিন্তু উম্মে হানীর সন্তান, উনার আপন ২ ভাই ও উনার দাসদাসী বাড়িতে ছিল।

মেরাজের রাত্রিতে উম্মে হানীর বাড়িতে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যাওয়াটাকে একটু সহজভাবে আপনাদের কে বুঝাই। ধরেন কোন কারনে আপনি যদি আপনার আপন চাচাতো বোনের বাড়িতে বেড়াতে যান এবং সেইখানে রাত্রিযাপন করেন, আপনার চাচাত বোনের বাসায় তার স্বামী, সন্তান ও বাসার কাজের লোকও ছিল তাইলে কারো সামনে সেই প্রসঙ্গ তোলার সময় কেউ কি এই কথা ভাববে যে আপনি আপনার চাচাতো বোনের সাথে রাত কাটিয়েছেন ? অথবা, অন্য কেউ যদি তার চাচাতো বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায় এবং রাত্রিযাপন করে, তাইলে আপনি কি ধরে নেন যে সে আসলে তার চাচাতো বোনের সাথে রাত কাটিয়েছে? আর যদি আমরা ধরে নেই আপনার বয়স ৫০ বছর ও আপনার আপন চাচত বোনের বয়সও ৫০ বছর আর কোন কারনে আপনি আপনার ৫০ বছর বয়স্ক চাচাত বোনের বাড়িতে এক রাত ছিলেন তাইলে এই কথার প্রসঙ্গ ধরে কেউ যদি বলে আপনি আপনার ৫০ বছর বয়স্ক আপন চাচাত বোনের সাথে রাত কাটিয়েছেন তাইলে তাকে এক কথায় আমরা পাগল ছাড়া আর কি বলতে পারি। ঠিক এই পাগলামিটাই দীর্ঘদিন ধরে বাংলা ব্লগ জগতে চলছে যে মিরাজের রাত্রিতে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হানীর গৃহে ছিলেন তাই উম্মে হানীর সাথে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৈহিক মিলন হয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ। কিন্তু গাধার দল এটা জানে না যে উম্মে হানী ছিল রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচাত বোন এবং মেরাজের ঘটনার সময় উম্মে হানী ও রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের বয়সই ছিল ৫০ এর উপরে। এবং মিরাজ রাত্রিতে উম্মে হানীর ঘরে উনার সন্তান, উনার আপন ২ ভাই হযরত আলী ও জাফর এবং উনার দাসী ছিল।

নাস্তিকরা Lings, Martin এর লেখা “Muhammad his life based on the earliest sources” এই বই থেকে উম্মে হানীর প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসে। Lings, Martin এর বইটা বিভিন্ন প্রাচীন সীরাত গ্রন্থের রেফারেন্স দিয়ে লেখা হয়েছে। Lings, Martin এর লেখা বইতে উম্মে হানীর সম্পর্কে কি বলা আছে তা আমরা এখন একটু দেখি “ if it was the time for a prayer during one of these visits, the Muslims of the household would pray together. রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো ভিজিটের সময় নামাজের সময় হলে ঘরের মুসলিমগন (ঘরের মুসলিম শুধু উম্মে হানি হলে মুসলিমগন বলা হতো না) একসাথে নামাজ পড়তেন।

এমনকী উম্মে হানি এবং উনার মেয়ে হানী –ঘরের যদি শুধু এই দুজনও মুসলিম হতেন তাহলেও এভাবে বলাটাই স্বাভাবিক হতো যে হানী এবং উম্মে হানি মুহম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পেছনে নামাজ পড়তেন। সুতরাং ধারণা করাই যায়, হানী এবং উম্মে হানি ছাড়াও আরো কেউ কেউ (তার ভাইরা) রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর পিছে তখন নামায পড়ত। সুতরাং বাড়িতে উম্মে হানীর স্বামী হুবাইরা না থাকলেও উম্মে হানি একা থাকতেন না, এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেল।

on one occasion, when they had all prayed the night prayer behind the Prophet, Umm Hani’ invited him to spend the night with them.

He accepted her invitation; but after a brief sleep he rose and went to the Mosque, for he loved to visit the Ka’bah during the night hours. While he was there, the desire to sleep came over him again, and he lay down in the Hijr.

“Whilst I was sleeping in the Hijr,” he said, “Gabriel came to me…

একবার উনারা সবাই নবীর পিছনে নামাজ পড়লেন। এর পর উম্মে হানী নবীকে আমন্ত্রণ জানালেন তাঁদের সাথে রাত্রি যাপনের। মুহাম্মদ সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন। কিন্তু অল্প কিছুক্ষণ ঘুমের পরই উঠলেন এবং মসজিদে চলে গেলেন। কেননা কাবায় রাত্রি কাটাতে নবী অতিশয় পছন্দ করতেন।

একবার যখন তারা সবাই প্রফেটের পেছনে নামাজ পড়ে নিলেন,…

এখানে যে অকেশনের কথা বলা হচ্ছে, বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে, ইসরা এবং মিরাজের দিনের কথাই বলা হচ্ছে। সেদিন যখন তারা সবাই প্রফেটের পেছে নামাজ পড়া শেষ করলেন, তখনকার কথা হচ্ছে।

প্রফেট ছাড়াই বাকিদের কথা বলতে বলা হচ্ছে সবাই। অর্থাৎ, বাকি সবাই নিশ্চয়ই উম্মে হানি একা নন আমি বলতে চাচ্ছি, উম্মে হানি একা হলে নিশ্চয়ই বাকি সবাই বলা হতো না। এমনকী, যদি উম্মে হানি এবং উনার মেয়ে হানী –এই দুজনও থাকতেন তবু মুহম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাদে বাকিদের জন্য সবাই বলার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না। উম্মে হানি এবং হানী বলাটাই স্বাভাবিক হতো। সুতরাং বাড়িতে যদি উম্মে হানীর স্বামী হুবাইরা না-ও থাকতেন, তবু উম্মে হানি একা ছিলেন না। এতটুকু নিশ্চিত হওয়া গেল। মিরাজ রাত্রির ঘটনাটা ইবনে ইসহাক -এর উদ্ধৃত অংশটা আমরা দেখি:

He prayed the final night prayer, then he slept and we slept. A little before dawn the apostle woke us, and when we had prayed the dawn prayer he said, “O Umm Hani’, I prayed with you…

ক. then he slept and we slept…(তিনি ঘুমালেন, এবং আমরা ঘুমালাম)

খ. A little before dawn the apostle woke us…

(জাগালেন আমাদের…, এইখানে আমাদের মানে কী, সেটা বোঝার জন্য নিশ্চয়ই খুব সূক্ষ্ম বুদ্ধি দরকার নাই। যদি শুধু উম্মে হানি-ই থাকতেন, তাহলে ডাকার সময় ” the apostle woke us” বলা হবে কেন? বলা হতো ” the apostle woke me”. তারপর বলেন, ডাকার পর নামাজ পড়লেন, মানে কী? যাদেরকে ডাকলেন, তাদের সবাইকে নামাজ পড়ার জন্যই ডাকলেন, তাই না? যাদেরকে ডাকলেন, তারা যদি নামাজ না-ই পড়বে, তাহলে তাদেরকে ডাকবেন কেন?

তার মানেই তো নামাজে উম্মে হানি ছাড়াও আরো কেউ কেউ ছিলো।

আর উম্মে হানীর গৃহে যে দাসীও থাকত এই কথাও কিন্তু উম্মে হানী নিজেই বলেছেন। রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মিরাজের ঘটনা কাফেরদের কে বলতে চাইলেন তখন আমি বললাম: “হে আল্লাহর নবী, আপনি এই সংবাদ কাউকে জানাবেন না। কারণ এই সংবাদ জানলে তারা আপনাকে মিথ্যুক বলবে এবং অপমান করবে।“ তিনি বললেন: “আল্লাহর কসম, আমি তাদেরকে জানাবই।“ আমি আমার ক্রীতদাসীকে নির্দেশ দিলাম: “তুমি নবীকে অনুসরণ কর আর শ্রবণ কর উনি কি বলেন, আর তারা কি বলে।“ (ইবনে ইসহাক, পৃঃ ১৮৪)

তাইলে আমরা সীরাত গ্রন্থগুলি থেকে ও নাস্তিকদের প্রিয় বই Lings, Martin এর লেখা “Muhammad his life based on the earliest sources,” এর রেফারেন্স গুলি থেকে যা বুঝলাম তা হল মেরাজের রাত্রিতে উম্মে হানী একাকী বাড়িতে ছিলেন না। মেরাজের রাত্রিতে উম্মে হানীর স্বামী যদি নাও থাকে তাও উম্মে হানীর গৃহে উনার সন্তান, উনার ২ আপন ভাই হযরত আলী ও জাফর এবং উনার দাসী ছিল। আমি নাস্তিকদের কে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি {{He used to sleep in her house, when no one was around.}} উম্মে হানীর সাথে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই জাতীয় কোন সম্পর্ক আমাকে কোন নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থ থেকে বের করে নিয়ে এসে দেখাক। উম্মে হানী বলেনঃ রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজ আমার ঘর থেকেই হয়। সে রাতে তিনি এশার নামায আদায় করে আমার ঘরে ঘুমান। আমরাও ঘুমিয়ে পড়ি। ফজরের অব্যবহিতের পূর্বে তিনি আমাদের কে ঘুম থেকে জাগান। তারপর তিনি ফজরের নামায পড়েন এবং আমরাও তাঁর সাথে নামায পড়ি। তারপর তিনি বলেনঃ উম্মে হানী! তুমি দেখেছিলে, গত রাতে আমি এই উপত্যকায় ঈশার নামায আদায় করেছিলাম। তারপর আমি বায়তুল মোকাদ্দাসে যাই এবং সেখানে নামায আদায় করি। আর এখন আমি ফজরের নামায তোমাদের সাথে আদায় করলাম, যা তোমরা দেখতে পেলে। তারপর তিনি বাইরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। আমি তাঁর চাদরের এক কোণা টেনে ধরলাম। ফলে তাঁর পেটের একাংশ বেরিয়ে যায়। তখন তা মিসরীয় কিবতী ভাঁজ করা কাতান বস্ত্রের মত দেখাচ্ছিল। আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র নবী! একথা আর কাউকে বলবেন না। এমন কথা তারা বিশ্বাস করবে না এবং তারা আপনাকে কষ্ট দিবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! একথা আমি তাদেরকে বলবই। নাস্তিকরা উম্মে হানীর রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই কাপড় ধরে টেনে ধরা এই প্রসঙ্গ টা টেনে নিয়ে এসে অনেক অশ্লীল কথা বলে। কিন্তু আপনারা এখানে খেয়াল করুন, এই ঘটনাটা ঘটেছে নামাজ পড়ার পর। এবং বাড়িতে যেহেতু উম্মে হানি এবং ফাতিমা ছাড়াও আরো অনেকেই ছিলেন সেহেতু এই টানাটানিটা অনেকের সামনেই হয়েছিলো।

উম্মে হানীর স্বামী আবু হুবায়রা মক্কা বিজয়ের সময় মুশরিক অবস্থায় নাজরানের দিকে পালিয়ে যায়। নাজরান থেকে প্রত্যাবর্তন ও তার ইসলাম গ্রহণ সম্বন্ধে কোন বর্ননা পাওয়া যায় নি। মক্কা ছেড়ে যাওয়ার খেদ প্রকাশমূলক তার একটা কবিতা প্রাচীন আরবী সাহিত্যে সংরক্ষিত আছে। “তোমার শপথ আমি কাপুরূষতা বা নিহত হওয়ার ভয়ে মুহাম্মদ এবং তাঁর সাথীদের থেকে পলায়ন করেনি। কিন্তু আমি বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম, তীর-তরবারি ব্যবহার করা যথেষ্ট মনে করিনি। যতক্ষন আমার অবস্থান স্থল সংকীর্ণ দেখিনি, ততক্ষন আমি মক্কায় অবস্থান করেছি। অতঃপর ফিরে এসেছি, যেমন সিংহ ফিরে আসে সিংহ শাবকের কাছে। ”

অনেকেই তার এই ফিরে আসাকে ইসলামের দিকে ফিরে আসা বলেছেন, কিন্তু তা সঠিক নয়। কারন তিনি কুফরীর উপর অটল থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন।

উম্মে হানী বলেন মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কার উঁচু ভূমিতে অবতরণ করলেন তখন আমার শ্বশুর বাড়ির গোত্র বনূ মাখযূমের ২ ব্যক্তি আল-হারিছ ইবনে হিশাম ও আব্দুল্লাহ ইবনে আবী রাবীআ পালিয়ে আমার গৃহে আশ্রয় নেয়। এই সময় আমার ভাই আলী এসে উপস্থিত হয় এবং তাদেরকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। উম্মে হানী তখন আলীকে বলেন, ভাই আমি তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। তারপর আমি দরজা বন্ধ করে মক্কার উঁচু ভূমিতে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট ছুটে গেলাম। তিনি আমাকে স্বাগত জানিয়ে বললেনঃ উম্মে হানী! কি উদ্দেশ্যে এসেছো ? আমি তখন ঐ ২ ব্যক্তি ও আলীর বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি বললেনঃ তুমি যাদেরকে আশ্রয় দিয়েছো আমিও তাদেরকে আশ্রয় দিলাম। তুমি যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছো আমিও তাদেরকে আশ্রয় দিলাম। তুমি যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছো আমরাও তাদেরকে নিরাপত্তা দিলাম। অতএব আলী তাদেরকে হত্যা করবে না।

ইয়াহিয়া ইবনুূু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবূ মুররা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উম্মে হানী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমি মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম এবং আমি তাঁকে গোসল করতে পেলাম। তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) একটি কাপড় দিয়ে তাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। আমি সালাম দিলাম! তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? আমি জবাব দিলাম, উম্মে হানীবিনত আবূ তালিব। তিনি বললেন, মারহাবা হে উম্মেহানী! তারপর তিনি গোসল সেরে দাড়িয়ে আট রাকআত সালাত আদায় করলেন। তখন তিনি একই কাপড় জড়িয়ে ছিলেন। তিনি যখন সালাত শেষ করলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার সহোদর আলী ইবনুূু আবূ তালিব, হুরায়রার পূত্র অমুককে কতল করার সংকল্প করেছে, যাকে আমি নিরাপত্তা দিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে হানী! তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ আমিও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। উম্মেহানী (রাঃ) বললেন, এ ছিল চাশতের সময়। [সহীহ মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশন| অধ্যায়ঃ ৬/ মুসাফিরের সালাত ও কসর | হাদিস নাম্বার: 1542 ]

ইয়াহইয়া ইবনুূ আকছাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহ সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ নারীরাও সম্প্রদায়ের পক্ষে (অঙ্গীকার) গ্রহণ করতে পারে অর্থাৎ মুসলিমদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান করতে পারে। এই বিষয়ে উম্মি হানী রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান-গরীব। আবূল ওয়ালীদ দিমাশকী রাদিয়াল্লাহু আনহউম্মি হানী রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার শ্বশুর পক্ষীয় দুই ব্যক্তিকে আমি নিরাপত্তা প্রদান করেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যাকে তুমি নিরাপত্তা প্রদান করেছ আমরাও তাকে নিরাপত্তা দান করলাম। [ ইসলামিক ফাউন্ডেশন | জামে তিরমিজী

অধ্যায়ঃ ২৪/ অভিযান | হাদিস নাম্বার: 1585 ]

হুবাইরার সাথে উম্মে হানীর সম্পর্ক ছেদ হয়ে গেলেও, হুবাইরার প্রতি উম্মে হানির Devotion টা লক্ষ্য করুন আপনারা। দেখুন, মক্কা বিজয়ের পর আলি এসে দেখলেন উম্মে হানি হুবাইরার দুইজন কাফের আত্মীয়কে আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি তাদের হত্য করতে আসলে ভাইয়ের বিপক্ষে দাড়ালো একটা মেয়ে তার স্বামীর দুইজন আত্মীয়ের জন্য, যেই স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক ছেদ হয়ে গেছে!!!

এখানে কি আপনারা উম্মে হানি এবং নবীজীর পরকীয়া প্রেমের কোন উপাখ্যান পাচ্ছেন? নিশ্চয়ই এটাও একটা প্রেমের উপাখ্যানই বটে। তবে তা উম্মে হানি এবং হুবাইরার প্রেমের উপাখ্যান লিখলেই মনে হয় সবচেয়ে বেশি যৌক্তিক হবে।

উম্মে হানীর স্বামী হুবায়রা কুফরীর উপর অটল থাকেন এবং সেই অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। মক্কা বিজয়ের পর উম্মে হানীর প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা করার কারনে উনাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে যায়। অতঃপর রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তখন উনাদের উভয়ের বয়সই ছিল ৬০ বছর। জবাবে উম্মে হানী বলেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! আমি তো জাহেলী যুগেই আপনাকে ভালবাসতাম। এখন ইসলামী যুগে তো সে ভালবাসা আরো গভীর হয়েছে। তবে আমি এখন একজন বিপদ্গ্রস্থ নারী। আমার অনেকগুলি ছোট ছোট ছেলে মেয়ে রয়েছে। আমার ভয় হয় তারা আপনাকে কষ্ট দিবে। রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ বাহনের পিঠে আরোহণ কারিণীদের মধ্যে কুরাইশ রমণীরাই সর্বোত্তম। তারা তাদের শিশুদের প্রতি সর্বাধিক মমতাময়ী এবং স্বামীদের অধিকারের ব্যাপারে অধিক যত্নশীলা।

মুহাম্মাদ ইবনুূু রাফি ও আবদ ইবনুূু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালিবের কন্যা উম্মে হানীকে বিবাহের পয়গাম পাঠালেন। তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি এবং আমার সন্তান সন্ততি আছে। এরপর রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তুমি সর্বাপেক্ষা উত্তম রমনী। এরপর মামার ইউনূস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তরে তার বর্ণনায় এতে পার্থক্য যে, তিনি বলেন, অর্থাৎ “তারা শৈশবে সন্তানের প্রতি মেহেরবান ও যত্নশীল হয়ে থাকেন। [সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন |

অধ্যায়ঃ ৪৫/ সাহাবী (রাঃ) গণের ফযীলত | হাদিস নাম্বার: 6229 ]

সেই সময় রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মে হানী উনাদের উভয়ের বয়সই ছিল ৬০ বছর। ৬০ বছর বয়সী, স্বামী পরিত্যক্তা আপন চাচাত বোন কে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া কি অশ্লীলতা ? কিন্তু আপনারা অবাক হবেন মক্কা বিজয়ের পর এই উম্মে হানীকে রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন এটা কে কেন্দ্র করে মুক্তমনা ব্লগে নাস্তিকরা অনেক অশ্লীল কথা বলেছে। ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা মহিলাও নাস্তিকদের কী বোর্ড থেকে রক্ষা পায় নি।

রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ছিল উম্মে হানীর দারুন সম্মানবোধ ও ভালবাসা। মক্কা বিজয়ের সময় কালে একদিন রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হানীর গৃহে যান। উম্মে হানী রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে শরবত পান করতে দিলে তিনি কিছু পান করে উম্মে হানীর দিকে এগিয়ে দেন। উম্মে হানী সেইদিন নফল রোযা রেখেছিল। তিনি রোযা ভেঙ্গে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পানকৃত অবশিষ্ট শরবত পান করেন। রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এইভাবে রোযা ভাঙ্গার কারন জানতে চাইলে জবাবে উম্মে হানী বলেনঃ আমি আপনার মুখ লাগানো শরবত পানের সুযোগ ছাড়তে পারি না। [ মুসনাদে আহমদ]

এই শরবত পান করা নিয়েও নাস্তিকরা রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অশ্লীল কথা বলতে ছাড়েন নাই। দীর্ঘ ১০ বছর পর রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ৬০ বছর বয়স্কা আপন চাচাত বোন কে দেখতে গেছেন আর এটাই এখন হয়ে গেছে নাস্তিকদের চোখে অশ্লীলতা !

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় উনার আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ ভাই বোনদেরও খোঁজখবর রাখতেন। খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহার বান্ধবীদেরও খোঁজখবর রাখতেন। খোদ আল কোরআনেই তো বলা হয়েছে আত্মীয় স্বজনদের দেখভাল করতে। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মে হানীর এই খোঁজখবর নেওয়াটা ছিল আল কোরআনের ই নির্দেশ।

হযরত উম্মে হানীর জন্য বিশেষ মর্যাদা এই যে, রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিকট খাবার চেয়েছেন।

আবূ কুরায়ব (রহঃ) উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমার কাছে এলেন এবং বললেন, তোমাদের কাছে কিছু আছে কি ? আমি বললাম, শুকনো রুটির কয়েকটি টোকরা ও সিরকা ছাড়া আর কিছুই নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা-ই নিয়ে আস, যে বাড়িতে সিরকা আছে যে বাড়িতে সালনের কোন অভাব আছে বলে বলা যায় না। [ জামে তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন |

অধ্যায়ঃ ২৮/ খাদ্য সম্পর্কিত | হাদিস নাম্বার: 1848 ]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাশতের সালাত আদায় করার ঘটনাটাও উম্মে হানীর তরফ থেকে বর্ণিত হয়েছে। হাফ্স ইবনুূু উমর (রহঃ) ইবনুূু আবূ লায়লা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, উম্মে হানী (রাঃ) ব্যতিত অন্য কেউ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাত কে চাশতের সালাত আদায় করতে দেখেছেন বলে আমাদের জানা নাই। তিনি (উম্মে হানী (রাঃ)) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে গোসল করার পর আট রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। আমি তাঁকে এর চাইতে সংক্ষিপ্ত কোন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখিনি, তবে তিনি রুকূ’ ও সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করেছিলেন। [সহীহ বুখারি (ইফা), ইসলামিক ফাউন্ডেশন |

অধ্যায়ঃ ১৮/ সালাতে কসর করা | হাদিস নাম্বার: 1040 ]

উম্মে হানী রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে যেমন দেখেছিলেন তার একটা সংক্ষিপ্ত বর্ননা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেয়ে সুন্দর দাঁত আমি আর কারো দেখিনি। মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাথার কেশ ৪টি গুচ্ছে ভাগ করা দেখেছি। রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর প্রথম খলীফা আবূ বকরের নিকট নবী দুহিতা হযরত ফাতেমার পিতার উত্তরআধিকার দাবীর বিষয়টিও উম্মে হানী বর্ননা করেছেন। উম্মে হানী রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ৪৬ টি হাদীস বর্ণনা করেছেন যা বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে সংকলিত রয়েছে। হযরত উম্মে হানীর সেই ঘরটি এখন মসজিদুল-হারামের ভিতরে পড়েছে। স্থানটি সর্বশ্রেণীর বুযুর্গগণের বিশেষ আকর্ষণের। সার্বক্ষনিক এবাদতকারীগন অনেকেই এ স্থানে অবস্থান করেন। উম্মে হানীর নামে পবিত্র মসজিদুল হারামে একটি দরজাও রয়েছে।

makkah-umm-hani6

তিনি হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর পরেও জীবিত ছিলেন। ইমাম আয-যাহাবী বলেনঃ তিনি ৫০ হিজরি পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তাহযীবুত তাহযীব গ্রন্থের বর্ণনা মতে তিনি খলীফা মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে ইন্তিকাল করেন। উম্মে হানীর এক ছেলে জা’দা কে আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু খোরাসানের গভর্নর পদে নিয়োগ করছিলেন। আশা করি এই আলোচনা করার পর বিবেকবান নাস্তিকরা আর কখনই ৫০ বছর বয়স্কা বিগতা যৌবণা রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচাত বোন উম্মে হানীর প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসে রাসূলাল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পর্কে আর কোন আজে বাজে কথা বলবে না। তবে নাস্তিকদের চোখে একজন ৫০ বছর বয়সী মহিলাকে যদি হলিউঠের Keira Nightly এর মত সুন্দর লাগে তাইলে আমার আর কিছু বলার নাই।

তথ্যসূত্রঃ ১। http://www.shodalap.org/antibhondo/4460

২। আসহাবে রাসূলের জীবন কথা, আধুনিক প্রকাশনী।

৩। হাদীস চর্চায় মহিলা সাহাবীদের অবদান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

বিষয়: বিবিধ

৩০৪৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

226385
২৬ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৫৬
রেজাউল ইসলাম লিখেছেন : ধন্যবাদ ফারাবী ভাই, মেরাজের আগেই এই অভিযোগের সুন্দর জবাব দেওয়ার জন্য। আপনি বিভিন্ন Reference সংগ্রহ করে এত সুন্দর জবাব দেন কিভাবে? আপনার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী.......
226391
২৬ মে ২০১৪ দুপুর ০২:১৫
শাফিউর রহমান ফারাবী লিখেছেন : আমি সদালাপ থেকে এইসব পাই http://www.shodalap.org
226397
২৬ মে ২০১৪ দুপুর ০২:২৫
শফিউর রহমান লিখেছেন : সুন্দর! ধন্যবাদ।
আসলে এরা বুঝতে পারে না, তাই এমন কথা বলে তা নয়। বরং তারা বুঝে-শুনেই এমন মিথ্যা কথা বলে অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করতে চায়। যতই যুক্তি দেয়া হোক না কেন তাদের মিথ্যাচার বন্ধ হবার নয়।
226400
২৬ মে ২০১৪ দুপুর ০২:৪৫
শাফিউর রহমান ফারাবী লিখেছেন : উম্মে হানীর এই ঘটনাটা সেই সময়কার যখন পর্দা ফরজ হওয়া বিধার অবর্তীণ হয় নি। কেননা, পর্দা ফরজ হয় হিজরতের পরে।
226609
২৬ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ এই যেীক্তিক পোষ্টটির জন্য।
এই তথাকথিত নাস্তিকরা সবসময় হয় পশ্চিমা ওরিয়েন্টালিষ্ট দের লিখা কিংবা প্রধানত উপমহাদেশের কিছু ভুল চিন্তাধারার আলেমদের লিখা থেকে রাসুল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে লিখার এবং ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের বিরোধিতার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের সেই উৎসগুলিই ভুল।
227352
২৮ মে ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : ভালো লাগলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File