বিজেপীতে একটিও মুসলিম এমপি নেই
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ২৪ মে, ২০১৪, ০৯:৫৯:৩৪ রাত
১৯৯৯ সালের ১৩ লোকসভা নির্বাচনে শাহনেওয়াজ হোসাইন বিহারের ভগলপুর আসন থেকে বিজেপী থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে বিজেপীর জনপ্রিয়তা অবশ্যই এখনকার মত তুঙ্গে ছিল না। উনি পরবর্তীতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী, কয়লা মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। শাহনেওয়াজ হোসাইন পরবর্তীতে ২০০৪ ও ২০০৯ সালেও লোকসভা নির্বাচনে বিজেপী থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। শাহনেওয়াজ হোসাইন মাঝে মাঝে বিজেপীর মুখপাত্র হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৮ সালের ১২ তম লোকসভা নির্বাচনে মুখতার আব্বাস নকভী উত্তর প্রদেশের রামপুর আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিল। উনি ১৯৯৮ সালে ভারতের তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। ২০১০ সালে উনি বিজেপীর সহ সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পান। ১৯৯৮-১৯৯৯ সালের চেয়ে ভারতে বিজেপী যে এখন বহু গুন বেশী জনপ্রিয় এই ব্যাপারে তো আপনারা সবাই একদম। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ভারতের সদ্য সমাপ্ত ১৬ তম লোকসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী দল বিজেপিতে একজন মুসলমান এমপিও নেই। তথ্যসূত্র ১ যেখানে বিএনপির মত দলে প্রতিবারই ২-৩ জনের মত হিন্দু এমপি হয় এমনকি বিএনপি প্রতিবারই ১ জন হিন্দুকে মন্ত্রী বানায় সেখানে এই বিশাল ভূ ভারতে বিজেপী থেকে একজন মুসলমান এমপিও নেই। এডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, টাঙ্গাইলের এক হিন্দু এমপি ২০০২ সালে বিএনপির সময়ে পানি সম্পদ মন্ত্রী হয়েছিল। যেইসব হিন্দু গুলি খালি বলে বিজেপী দলটা মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতিশীল তাইলে তাদের প্রতি আমার প্রশ্ন কেন বিজেপী থেকে একজন মুসলমান এমপি হল না ? এখন হয়ত হিন্দু গুলি বলবে ভারতের মুসলমানরা বিজেপী কে ভোট দেয় না। তাইলে আমি বলব বিএনপিকেও তো বাংলাদেশের হিন্দুরা ভোট দেয় না তাও তো প্রতিবছর বিএনপি থেকে ২-৩ জনের মত হিন্দু এমপি হয়। এই বিশাল ভূ ভারতে অন্তত ৪০ টি আসন রয়েছে যেখানে মুসলমান ভোটারের সংখ্যা শতকরা ৪০ ভাগেরও বেশী। সেখান থেকেও যদি বিজেপী কোন মুসলমান কে নমিনেশন দিত তাইলে সে ঠিকই লোকসভায় নির্বাচিত হতে পারত। বিজেপী দলটি লোকদেখানো মাত্র ৫ জন মুসলমানকে নামকাওয়াস্তে লোকসভা নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছিল যাদের কেউই জিততে পারেননি। আর বিজেপী এই ৫ জন মুসলমান লোকসভার প্রার্থীকে এমন সব আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল যেইসব আসনে বিজেপী কখনই জয়ী হয় নি। অর্থ্যাৎ বিজেপী দলটিই চেয়েছে যে তাদের দলে কোন মুসলমান এমপি না থাকুক। শুধু তাই নয় বিজেপী নেতৃত্ত্বাধীন এনডিএ জোট থেকে মাত্র ১ জন মুসলমান এমপি নির্বাচিত হয়েছে। আর উনি জয়ী হয়েছেন বিহার থেকে বিহারের লোক জনশক্তি দলের প্রার্থী হিসাবে। ফলে সমগ্র বিজেপি জোটে মুসলমান এমপি রয়েছেন মাত্র একজন। অর্থাৎ বিজেপি জোটে ৩০২ আসনের মাঝে মুসলমান এমপি রয়েছে মাত্র ১ জন। তথ্যসূত্র ২
আপনারা একটু চিন্তা করে দেখুন কি ভয়াবহ অবস্থা যে এই বিশাল ভূ ভারতে বিজেপি জোটে মাত্র একজন মুসলমান এমপি রয়েছেন। এইবারই ভারতে ক্ষমতাসীন দলের মাঝে কোন মুসলমান জনপ্রতিনিধি নাই। এত বড় একটা খবর বাংলাদেশের মূল ধারার মিডিয়া গুলিতে আসলই না। সবাই খালি আছে নরেন্দ্র মোদীর জয়ধ্বনি করতে কিন্তু কি চমৎকার ভাবেই না এনডিএ জোট তাদের দলে মাত্র ১ জন মুসলমান এমপি রেখেছেন তা কেউ বলছে না। যেই কংগ্রেস করতে করতে ভারতের মুসলমানরা মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেলে সেই কংগ্রেস দলে মাত্র ৪ জন মুসলমান এমপি নির্বাচিত হয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্ত্বাধীন ইউপিএ জোট মাত্র ৮ জন মুসলমান এমপি রয়েছেন। ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেসের দুই জন, লালু প্রসাদের জনতা দলের একজন। আর পুরা ভারতের ৫৪৩ টি আসনের লোকসভায় মাত্র ২২ জন মুসলমান জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিজয়ী হয়ে আসতে পেরেছেন। এটা ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বর্তমানে ভারতে জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ মুসলমান। সেই হিসাবে লোকসভায় মুসলমান সদস্য সংখ্যা অন্তত ১০০ জন থাকার কথা। কিন্তু বর্তমান লোকসভায় মুসলমান এমপির সংখ্যা দাঁড়ালো মাত্র ৪ শতাংশ। হিন্দু জাতীয়তাবাদের সর্বাত্মক উত্থানে রাজনৈতিকভাবে ভারতের মুসলমানরা এখন একদম প্রান্তিক শ্রেণীতে পরিনত হয়ে গেছে। ভারতে বিজেপী এসেছে এখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় কি আওয়ামী লীগ থাকতে পারবে না কি বিএনপি আসবে তা নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে কিন্তু এবারের লোকসভায় মুসলমান জনপ্রতিনিধির হার যে একেবারেই কম তা কিন্তু কেউ বলছে না। বিজেপী থেকে যে একজন মুসলমানও জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হতে পারে নি তা কিন্তু কেউই বলছে না। এইবারের বিজেপীর যে গনজোয়ার ছিল তাতে বিজেপী চাইলেই পারত কমপক্ষে ১০ জন মুসলমান কে জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত করতে।
কেন গুজরাটের সব সিট তো বিজেপীই পায়। তাইলে বিজেপী কি পারত না গুজরাট থেকে একজন মুসলমান এমপি নির্বাচিত করা। কিন্তু চরম ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবের কারনেই বিজেপী তার দলে একজন মুসলমানকেও জনপ্রতিনিধি হিসাবে রাখে নি। যারা ভারতের মুসলমানদের কে নিয়ে লেখালেখি করেন তাদের কে আমি অনুরোধ করব এই বিষয়টা নিয়ে লিখতে।
হয়ত বিজেপী তার মুখপাত্র মুখতার আব্বাস নকভীকে টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী বানাবে। ঐ টেকনোক্রেট কোটায় একজন মুসলিম মন্ত্রী হওয়াটাও লজ্জার। আপনারা দেখেন বিজেপী সব সময় তার মুখপাত্র গুলি মুসলমান রাখে। এর কারন হল সরলমনা মুসলমানদের যেন ভুলভাল বুঝিয়ে তাদের ভোট দখল করা যায়। আর বিজেপীর মুখপাত্র গুলি কি টাইপের মুসলমান তা তো আমরা সবাই জানি। এদের অনেকেই কাদিয়ানী, বাহাই বা শিয়া। বিজেপীর মুখপাত্র মুখতার আব্বাস নকভী উনি যে একজন শিয়া মুসলিম তা উইকিপিডিয়াতেই বলা আছে আর এইসব মুখপাত্র দিয়ে কি আমরা পানি খাব ? গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এমপি ছাড়া খাওয়া নাই।
জানি না নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসছে ভারতের মুসলমানদের জন্য কত বেদনাদায়ক সময় অপেক্ষা করছে। নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশের মুসলমানদের বিতাড়ন করতে সে আলাদা দফতর খুলবে। বিজেপী আসার আগেই তো আসাম,উত্তর প্রদেশ ও হায়দারবাদে অনেক মুসলমান মারা গেছেন সেই সব তথাকথিত দাঙ্গায়। যদিও সেইসব দাঙ্গায় কখনই কোন হিন্দু মারা যায় না শুধুমাত্র মুসলমানরাই মারা যায় না। তাই আমরা এগুলিকে দাঙ্গা না বলে ঠান্ডা মাথায় মুসলিম নিধন বলতে পারি। ভারতের মুসলমানদের উচিত ব্যাপকহারে হিন্দুদের কে দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দেওয়া। হয়ত ভারতের এই হিন্দুদের মাঝেই আমরা একজন কালা পাহাড় পাবো যে কিনা মূর্তি ধ্বংস করবে। আসলে সত্যিকথা বলতে কি দাওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই ভারতের মুসলমানদের জন্য। বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে হিন্দুদের মাঝে দ্বীন ইসলামের দাওয়াতই শুধু পারবে ভারতের মুসলমানদের অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখতে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভারতে হায়দারাবাদ ও লাক্ষাদ্বিপ এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও মুসলিম এমপি হওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার পশ্চিম বংগের মালদহ তে পারিবারিক উত্তরাধিকার থেকে মেীসম বেনজির এমপি হয়েছেন। কাশ্মির কে ধরা যায়না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন