পহেলা বৈশাখের দিনটি কি আমাদের পূর্ব পুরুষদের জন্য কোন আনন্দময় দিন ছিল ?
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ১৩ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:২৬:১৯ রাত
আজ থেকে ৪৫০ বছর আগে ঠিক এই দিনে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে প্রত্যেক কৃষক কে তার বাৎসরিক সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পরের দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা অর্থাৎ জমিদাররা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। যেসব কৃষক চৈত্র মাসের শেষ দিনে পহেলা বৈশাখের খাজনা পরিশোধ করার মত ফসল তুলতে পারতো না, গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া আর তাদের কোন পরিণতি ছিলো না। অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের দিনটি আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে কোন আনন্দদায়ক দিন ছিল না। পহেলা বৈশাখের দিনটি ছিল আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে এক বিভীষিকাময় দিন। কারন যদি কোন কারনে তারা পহেলা বৈশাখের দিনে জমির বাৎসরিক খাজনা পরিশোধ না করতে পারত তাইলে জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনী দ্বারা ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ায় ছিল তাদের ভাগ্য। পহেলা বৈশাখের আরেক নাম কিন্তু পুণ্যাহ। পুণ্যাহ মূলত সংস্কৃত শব্দ। অর্থ ভালো কাজের সুফল পাবার দিন। জমিদার প্রথার সময় বছরের সূচনার দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে এই পুণ্যাহ অনুষ্ঠানটি করা হতো। আক্ষরিক অর্থে এই পুণ্যাহ অনুষ্ঠানটি ছিল রাজা-প্রজার দেখা হবার এবং কথা বলার দিন। আসলে পুণ্যাহ ছিল জমিদারদের দিক থেকে আর্থিক স্বার্থ উদ্ধারের কৌশল। ১৯২০ সাল পর্যন্ত জমিদার এবং বড় বড় তালুকদারদের কাচারিতে পুণ্যাহ অনুষ্ঠান হতো। সেদিন প্রজারা ভালো কাপড়-চোপড় পরে খাজনা দিতে আসতো এবং অতীতের বাকী থাকা খাজনা আদায় করতো।
সে আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খাজনা আদায় শুরু হয়। সরকার বাহাদুর সকল জমিদার, তালুকদার, ইজারাদার, এবং অন্যান্য রাজস্ব প্রদানকারী ব্যক্তিদেরকে আামন্ত্রণ জানানো হতো পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে। সে অনুষ্ঠানের সেরেস্তায় বা খাজনা আদায়ের নির্ধারিত দরবারে নায়েব তহসিলদারকে পূর্বের রাজস্ব পরিশোধ করে নতুনভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া হতো। আর সে দরবার পরিচালনা করতেন নওয়াবগণ। আর যারা নওয়াবদের সন্তুষ্ট করতে পারতেন তাদেরকে নওয়াব সন্মানসূচক খিলাত বা পোশাক দিতেন। কাচারিতে প্রজারা একত্রিত হয়ে জমিদার বা নায়েবের কাছ থেকে পানপাতা নিতেন। আগে সদর আর মফস্বল নামে দু’ধরণে পুণ্যাহ হতো। সদর পুণ্যাহ উৎসবে জমিদার এবং আন্যান্য ভূস্বামিগণ বাংলার দীউয়ানের বাসভবনে অংশগ্রহণ করতেন। আর মফস্বল পুণ্যাহ উৎসব অনুষ্ঠিত হতো জমিদারের কাচারিতে।
সাহিত্যের ভাষায় তো কত চমৎকার লাগে এই পুণ্যাহ নববর্ষ পহেলা বৈশাখ শুনতে। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখুন তো যেই কৃষক টা তার খাজনা পরিশোধ করতে পারত না তার জীবনটা কি এই পহেলা বৈশাখের দিনে দুর্বিষয় হয়ে যেত না। তাইলে আমরা কোন মুখে এই পহেলা বৈশাখ পালন করি। আরে আমাদের বেশীরভাগ পূর্ব পুরুষদের কাছে পহেলা বৈশাখের দিনটা কোন আনন্দময় দিন ছিল না পহেলা বৈশাখের দিনটা ছিল একটি দুশিন্তাগ্রস্থ দিন যে আমি কি আজ আমার ভিটামাটি রক্ষা করতে পারব কিনা। কর্পোরেট সংস্কৃতির কবলে পরে আমরা পহেলা বৈশাখের দিনে অনেক নাচগান করলেও আমাদের পূর্ব পুরুষরা সারা বছর এই পহেলা বৈশাখের দিনটা কে ভয় পেত। সত্যিকার অর্থে পুণ্যাহ নববর্ষ কোন আনন্দদায়ক উৎসব ছিল না আমাদের পূর্ব পুরুষদের জন্য।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন