স্টালিনের নৃশংসতার স্বীকার এক বাঙ্গালী বিপ্লবী
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ০৫ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৫৫:৪০ দুপুর
আপনি যখন কোন নাস্তিককে বলবেন যে সমাজতন্ত্রের ছদ্মবেশে নাস্তিক্যতাবাদ প্রচার করার সময় রুশ রাষ্ট্রনায়ক স্টালিন লাখ লাখ রুশ নাগরিক কে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তখন নাস্তিকরা তা একযোগে অস্বীকার করবে। আমি আপনাদের এখন এমন একটা তথ্যসূত্র দিচ্ছি যে নাস্তিকদের বাপও এটা মানতে বাধ্য হবে যে স্টালিন লাখ লাখ রুশ নাগরিক কে হত্যা করেছিল। ২০০৩ সালের প্রথম আলো ঈদ সংখ্যার ৩৬৫ পৃষ্ঠায় প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান "স্তালিনের নৃশংসতার শিকার এক বাঙ্গালী বিপ্লবী" নামক একটি প্রবন্ধে লিখেছেন যে গোলাম আম্বিয়া খান লোহানী রুশ ভাষায় উনাকে ডাকা হত গুলিয়াম লুগানি স্টালিনের নির্দেশে ১৯৩৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ফায়ারিং স্কোয়াডে উনাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। উনার জন্ম হয়েছিল ১৮৯২ সালে বাংলাদেশের সিরাজগজ্ঞে। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে উনি প্রথমে ১৯১৪ সালে লুহানী উচ্চ শিক্ষার্থে লন্ডনে যান এবং লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে স্কুল অফ ইকোনমিক্স এন্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সে ভর্তি হন। লন্ডনেই উনি ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবে অনুপ্রাণিত হয়ে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িত হন। তারপর আম্বিয়া খান লুহানি ১৯২১ সাল থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত ইউরোপের নানা শহরে কমিউনিজম আন্দোলনের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। লুহানি প্যারিসে অবস্থানকালে বিদেশের মাটিতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র দি মাসেস অব ইন্ডিয়া সম্পাদনা করতেন। ১৯২৫ সালে ফরাসি সরকার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী তত্পরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে উনাকে ফ্রান্স থেকে বহিস্কার করেন। ফলে লুহানী একেবারে মস্কো চলে যান। লুহানি রুশ সরকারের "কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক" তথ্যবিভাগে কাজ করতেন। মস্কোতে দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ীভাবে থাকাকালে লুহানী বহু ধরনের রাজনৈতিক তত্পরতায় যুক্ত ছিলেন। উনি মস্কোর কৃষক আন্তর্জাতিক (পেজেন্টস ইন্টারন্যাশনাল ) এ কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশের বিপ্লবীদের সাহায্য করার আন্তর্জাতিক সংগঠন 'মোপার' এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মস্কোয় অবস্থানের পুরা সময়টাতে লুহানী মস্কো পাবলিশিং হাউজেও কাজ করেছেন। উনি মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের উপর ক্লাসও নিতেন। রাশিয়া থেকেই উনি ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের দেখভাল করতেন। পরবর্তীতে যখন উনার সাথে স্টালিনের আদর্শিক দ্বন্দ শুরু হয় তখন উনি গ্রেফতার হন। জেলে থাকা অবস্থায় উনি অসংখ্যবার স্টালিনের কাছে অনুরোধ করেছিলেন উনাকে যেন ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু হাজার হাজার রুশ বুদ্ধীজীবীর সাথে সিরাজগজ্ঞের গোলাম আম্বিয়া খান লুহানীকেও স্টালিনের সাথে সামান্য মতপার্থক্যের কারনে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে হত্যা করা হয়। যখন লুহানিকে গুলি করে হত্যা করার জন্য ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে নিয়ে দাঁড় করানো হল তখন লুহানী কি একবার ভেবেছিলেন যে সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য উনি সারা জীবন এত কিছু করলেন আর সেই সবের বিনিময়ে এখন উনাকে স্টালিনের নির্দেশে মৃত্যুদন্ড দেয়া হচ্ছে। স্টালিন আবার ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করার ঠিক আগ মুহূর্তে মৃত্যুপথ যাত্রী ঐ মানুষটার ছবি তুলতে খুব পছন্দ করতো। ঐ ঈদ সংখ্যায় লুহানীর মৃত্যুর ঠিক আগ মুহুর্তের ছবি ছাপা হয়েছে।
১৯২৪ সালে প্যারিসে অবস্থানকালে লুহানী গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান। চিকিত্সার জন্য ৩১০০ ফ্রাঙ্ক চেয়ে উনি সিরাজগজ্ঞে উনার মা ও ভাই বোনের কাছে অনেকবার চিঠি লিখেছিলেন কিন্তু তত্কালীন সিরাজগজ্ঞ মহকুমার ব্রিটিশ এসডিও এন এল হিন্ডলে লুহানীর মা ও ভাই বোনকে টাকাটা পাঠাতে নিষেধ করেছিলেন। কারন উনারা ভাবছিলেন এই টাকা টা পেলে লুহানী আর কোনদিন ভারতবর্ষে আসবে না। যদিও ব্রিটিশ ভারত সরকার লুহানীর জন্য কক্স শিপিং এজেন্সীর মাধ্যমে ভারতে আসার জাহাজের টিকেট পাঠিয়েছিল কিন্তু সমাজতন্ত্র ও নাস্তিকতাকে পরিত্যাগ করে ভারতে আসতে উনি রাজি ছিলেন না।
স্টালিনের শাসনামলটা ছিল সন্দেহ অবিশ্বাস সন্ত্রাস নির্যাতন আর হত্যার মধ্যে গড়া এক নৃশংস শাসন ব্যবস্থা। সে নৃশংসতার শিকার হয়েছিলেন লাখ লাখ রুশ নাগরিক। তারা জানতেন না তারা কি অন্যায় করেছেন। শুধু রুশ নয়, নানা দেশ থেকে আগত সমাজতন্ত্র প্রিয় বিপ্লবীদের উপরও নেমে এসেছিল এই নিষ্ঠুর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। সিরাজগজ্ঞের গোলাম আম্বিয়া খান লুহানীও তাদেরই একজন। ডেভিড কিংয়ের অর্ডিনারী সিটিজেন্স: ভিকটিমস অব স্টালিন নামক ১৯০ পৃষ্ঠার এই বইয়ে আরো অনেক হতভাগা বিপ্লবীর ছবি আছে যারা স্টালিনের ফায়ারিং স্কোয়াডের শিকার হয়ে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।
নাস্তিকদের ধর্ম নাকি মানবতা। নাস্তিকদের মানবতা ধর্মের রুপ আমরা চীনের মাওসেতুং এর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে চীনা মুসলিম হত্যা আর স্টালিনের বুদ্ধিজীবি হত্যা দ্বারা বেশ ভালভাবেই বুঝে গেছি। নাস্তিকদের রাজনৈতিক গুরুরা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বাইরের দেশ না নিজ দেশের নাগরিকদের কেই এরা গনহারে হত্যা করেছে। আর এরাই নাকি বলে যে এই পৃথিবীতে সবাই নাস্তিক হয়ে গেলে আর কোন রাজনৈতিক সংঘাত থাকবেনা। কেন গোলাম আম্বিয়া খান লোহানীও তো নাস্তিক ছিলেন। কিন্তু কই সেও তো স্টালিনের নির্দেশে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুবরণ করলো।
জেলা সদরের যে কোন পাবলিক লাইব্রেরী বা সরকারী গণগ্রন্থাগারে গেলেই আপনারা পুরাতন প্রথম আলো ঈদ সংখ্যা গুলি সংগ্রহ করতে পারবেন। সেইখান থেকে ২০০৩ সালের প্রথম আলো ঈদ সংখ্যাটা উল্টাইলেই আপনারা আমার এই লেখার সত্যতা জানতে পারবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন