অভিজিৎ রায়ের হাদীস বিকৃতির নমুনা, ১ম পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:১২:৩২ রাত
মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়
দীর্ঘদিন ধরে কোরআন হাদীস বিকৃতি করে অনলাইনে প্রচার করছে। যে সব বাক্য হাদীসে বলা নাই তাও অভিজিৎ রায় উনার স্ক্রীনশটে দেয়া হাদীস গুলিতে ব্র্যাকেট আকারে দিয়ে দেয়। আমি এখন আপনাদের সামনে অভিজিৎ রায়ের কিছু হাদীস বিকৃতির নমুনা দেখাব। উম্মুল মুমেনীনদের নিয়ে লেখা অভিজিৎ রায়ের ১ম নোটে অভিজিৎ রায় বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের সালাত অধ্যায়ের ৩৬৭ নং হাদীস বর্ননা করেছেন যেখানে নাকি বলা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মুমেনীন সাফিয়ার রুপ লাবণ্য দেখে তাকে বিয়ে করতে পাগল হয়ে গেছিল। নাউযুবিল্লাহ। কিন্তু বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের সালাত অধ্যায়ের ৩৬৭ নং হাদীসে সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা কে নিয়ে কোন কথাই বলা নেই। বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের সালাত অধ্যায়ের ৩৬৭ নং হাদীস টি আমি এখানে হবুহু তুলে ধরছি - “ আবূ মা’মার ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে একটা বিচিত্র রঙের পাতলা পর্দার একটা কাপড় ছিল। তিনি তা ঘরের একদিকে পর্দা হিসাবে ব্যাবহার করছিলেন। রাসূল ﷺ বললেনঃ আমার সম্মুখ থেকে এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ সালাত (নামায) আদায় করার সময় এর ছবিগুলি আমার সামনে ভেসে ওঠে। ” আপনারা দেখেন এই হাদীসে আসছে ঘরের একটি পর্দার কথা কিন্তু অভিজিৎ রায় কি সুন্দর ভাবে ঘরের পর্দার জায়গায় উম্মুল মুমেনীন সাফিয়া কে টেনে নিয়ে আসছেন। হ্যা বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের সালাত অধ্যায়ের ৩৬৪ নং হাদীসে সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ৩৬৭ নং হাদিসে নয়। বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের সালাত অধ্যায়ের ৩৬৭ নং হাদীসে সাফিয়াকে নিয়ে এই জাতীয় কোন কথাই নাই। তাই আমরা প্রথমেই বুঝলাম যে অভিজিৎ রায় হাদিসের ক্রমিক নাম্বার অনুসারে আমাদের কাছে হাদীস বর্ননা করে নি। তাই এই অভিজিৎ রায় যে একটা ভণ্ড এর প্রথম প্রমান আমরা পেলাম। উম্মুল মুমেনীনদের নিয়ে লেখা অভিজিৎ রায়ের ১ম নোটে এই কুলাঙ্গার অভিজিৎ রায় বুখারী শরীফের একটি হাদীসে নিজে থেকে কয়েক লাইন লাগিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে চরম মিথ্যাচার করেছে। অভিজিৎ রায়ের ১ম নোটে সে লিখেছে- “৬২৮ সালের মে মাসে খাইবার দখলের পর যেদিন মোহাম্মদের দল সাফিয়ার পিতা, স্বামী, ভাই এদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে, ঠিক সেদিনই মোহাম্মদ সাফিয়াকে নিয়ে নিজের তাবুতে রাত কাটান। প্রথমে অবশ্য দিহাইয়া নামের এক জিহাদী সৈনিক সাফিয়াকে পছন্দ করেছিলেন উপভোগের জন্য। পরে আরেকজন সাহাবির মুখে নবীজী যখন সাফিয়ার রূপলাবণ্যের কথা শুনলেন, আল্লাহর রাসুল তাকে সামনে নিয়ে আসার জন্যে আদেশ দিলেন। নবীজী ভালভাবে তাকিয়ে দেখলেন এই অপূর্ব সুন্দর দেহবল্লরী তো তারই উপযুক্ত। নবী সেই সাহাবীকে বললেন, ‘একে আমার জন্যে রেখে তুমি অন্য কাউকে নিয়ে যাও’, এরপরই মহানবী সাফিয়াকে নিজের ‘স্ত্রী হিসেবে’ নির্বাচিত করে তার শয্যাসঙ্গি হন। বুখারী শরীফের ১:৮ :৩৬৭”
আমি আগেই আপনাদের কে বলছি যে বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের সালাত অধ্যায়ের ৩৬৪ নং হাদীসে সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহার কথা বলা হয়েছে, ৩৬৭ নং হাদিসে নয়। এখন দেখি তো বুখারী শরীফের ৩৬৪ নং হাদিসে কি বলা হয়েছে- “‘‘দিহাইয়া এসে বললেন- হে নবী , আমাকে বন্দিনী নারীদের মধ্য হতে একজন দাসীকে দিন। নবী বললেন- যাও তোমার যেটা পছন্দ সেটা নিয়ে নাও। উনি তখন সাফিয়া বিনতে হুইকে নিলেন। এক লোক এসে বললেন- হে নবী আপনি দাহিয়াকে সেই নারী দিয়েছেন যে নাকি খায়বারের সর্দারের স্ত্রী এবং সে কেবল আপনারই উপযুক্ত। নবী তখন তাকে সাফিয়াকে তাঁর কাছে আনার জন্য হুকুম করলেন। সাফিয়াকে তার সামনে আনা হলে, তিনি দেখে দিহাইয়াকে অন্য নারী নিতে বললেন ও সাফিয়াকে নিজের কাছে রেখে দিলেন এবং বিয়ে করলেন’ (বুখারী, বই ১, ভলিয়ুম-৮, হাদিস-৩৬৭)।’
এবার খেয়াল করুন- বুখারী শরীফের এই হাদিসে সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা কে বিবাহের কারন কি বর্ণিত আছে? এই হাদিসে এটা স্পষ্ট যে, গোত্রের সবচাইতে সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত মহিলাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিজের জন্য গ্রহন করার সুপারিশ করা হয়, এখানে রুপযৌবনের কোনও কথা বলে সুপারিশ করা হয় নি। অথচ মালাউন অভিজিৎ রায় লিখলঃ
‘‘আরেকজন সাহাবির মুখে নবীজি যখন সাফিয়ার রূপলাবণ্যের কথা শুনলেন, আল্লাহর রাসুল তাকে সামনে নিয়ে আসার জন্যে আদেশ দিলেন। নবীজী ভালভাবে তাকিয়ে দেখলেন এই অপূর্ব সুন্দর দেহবল্লরী তো তারই উপযুক্ত। নবী সেই সাহাবীকে বললেন, ‘একে আমার জন্যে রেখে তুমি অন্য কাউকে নিয়ে যাও’। (নাউজুবিল্লাহ)
দেখেন আপনারা হাদীসে কোথাও বলা নাই যে সাফিয়ার রুপ লাবণ্য দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকৃষ্ট হয়েছিলেন কিন্তু এই মালাউন অভিজিৎ রায় বুখারী শরীফের হাদীস বিকৃতি করে বলল যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি সাফিয়ার রুপ দেখে পাগল হয়ে গেছিল। নাউযুবিল্লাহ। শুধু তাই নয় এই অভিজিৎ রায় তার নোটে ও ব্লগে এই কথাও বলেছে যে সাফিয়া নাকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রক্ষিতা ছিল। নাউযুবিল্লাহ। কিন্তু বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের সালাত অধ্যায়ের ৩৬৪ নং হাদীসেই বলা আছে যে সাফিয়া কে ঐদিনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ে করেছেন। আমি হাদিস থেকে আপনাদের কে লেখাটা দিচ্ছি- রাবী বলেনঃ নাবী ﷺ সাফিয়্যা (রাঃ)-কে আযাদ করে দিলেন এবং তাঁকে বিয়ে করলেন। রাবী সাবিত (রহঃ) আবূ হামযা (আনাস) (রাঃ)-কে জিজ্ঞেসা করলেনঃ নাবী ﷺ তাঁকে কি মোহর দিলেন? আনাস (রাঃ) জওয়াব দিলেন তাঁকে আযাদ করাই তাঁর মাহর। এর বিনিময়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করেছেন। এরপর পথে উম্মে সুলায়ম (রাঃ) সাফিয়্যা (রাঃ)-কে সাজিয়ে রাতে রাসূল ﷺ –এর খিদমতে পেশ করলেন। নবী ﷺ বাসর রাত যাপন করে ভোরে উঠলেন। তিনি ঘোষণা দিলেনঃ যার কাছে খানার কিছু আছে সে যেন তা নিয়ে আসে। এ বলে তিনি একটা চামড়ার দস্তরখান বিছালেন। কেউ খেজুর নিয়ে আসলো, কেউ ঘি আনলো। ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে হয় আনাস (রাঃ) ছাতুর কথাও উল্লেখ করেছেন। তারপর তাঁরা এসব মিশিয়ে খাবার তৈরি করলেন। এ-ই ছিল রাসূল ﷺ এর ওয়ালীমা। ”
শুধু তাই নয় বুখারী শরীফের ৫৪ অধ্যায় বিয়ে-শাদী অধায়্যের ৪৭৮২ নং হাদিসে বলা হয়েছে- “মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তিনদিন পর্যন্ত মদিনা এবং খায়বরের মধ্যবর্তী কোন এক স্থানে অবস্থান করেন। সেখানে তিনি সাফিয়া বিনতে হুয়ায়া (রাঃ)-এর সাথে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর আমি মুসলমানদেরকে ওয়ালীমার জন্য দাওয়াত করি, তাতে রুটি ও গোশত ছিল না। নাবী ﷺ চামড়ার দসত্মরখানা বিছাবার জন্য আদেশ করলেন এবং তাতে খেজুর, পনির এবং মাখন রাখা হল। এটাই রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর ওয়ালীমা। ” আবার সহীহ বুখারি শরীফের ৫১ অধ্যায় মাগাযী (যুদ্ধাভিযান) অধ্যায়ের ৪০৫৯ হাদিস টা আপনার একটু পড়ুন- “ হযরত আবূল ইয়ামান (রহঃ) হযরত রাসূল ﷺ এর সহধর্মিনী হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল ﷺ সহধর্মিনী হুয়াই এর কন্যা হযরত সাফিয়া (রাঃ) বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় ঋতুবতী হয়ে পড়েন। তখন রাসূল ﷺ বললেন, সে কি আমাদের (মদিনার পথে প্রত্যাবর্তনে) বাঁধ সাধল? তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূল ﷺ , তিনি তো তাওয়াফে যিয়ারাহ্ আদায় করে নিয়েছেন। তখন রাসূল ﷺ বললেন, তাহলে সেও রওয়ানা করুক। ”
এরকম বুখারী শরীফে অনেক হাদীসই পাওয়া যায় যেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন উম্মুল মুমেনীন। কিন্তু এই মালাউন অভিজিৎ রায় তার নোট ও ব্লগে বারবার মিথ্যাচার করেছে যে সাফিয়া নাকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রক্ষিতা ছিল। নাউযুবিল্লাহ। আমি অভিজিৎ রায়ের পা চাটা মুরিদদের কে বলতে চাই এই দেখেন আপনাদের বাপ অভিজিৎ রায় ঠিক এরকম ভাবেই হাদীস বিকৃতি করে আপনাদের কে ভুল বুঝাচ্ছে। অভিজিৎ রায়ের ভণ্ডামি গুলি ধরিয়ে দেবার জন্য এই মালাউন অভিজিৎ রায় আমাকে ব্লক করে রেখেছে। শুধু তাই নয় তাদের ভণ্ডামি গুলি মানুষ জেনে যাবে বলে এই অভিজিৎ রায়, মগাচীপ আসিফ মহিউদ্দীনের ওয়ালে তাদের বন্ধুরা ছাড়া আর কেউ কমেন্ট করতে পারে না।তাও নাকি তারা মুক্তমনা !
যখনই কোন নাস্তিক আপনাদের কে কোন হাদীসের রেফারেন্স দিবে তখনই আপনারা এই ওয়েবসাইট http://www.hadithbd.com এ গিয়ে দেখে নিবেন যে ঐ নাস্তিকের দেয়া হাদীস টা ঠিক আছে কিনা। বাংলাভাষায় সকল হাদিস আপনারা এই http://www.hadithbd.com ওয়েবসাইট থেকেই পাবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন