ঈমানের একটি সূক্ষ দিক জানুন
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৩০:২৭ রাত
আমাদের মাঝে প্রায়ই এরকম একটা ইচ্ছা জাগে যে ইস আমরা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে জন্ম নিতে পারতাম, তাইলে তো আমরা সাহাবী হতাম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে চাক্ষুস দেখতে পারতাম। আসলে এই ইচ্ছাটা যে শুধু আমাদের মাঝেই জাগে তাই নয় অনেক তাবেঈনদের হৃদয়েও এই ইচ্ছাটা জাগত। আপনাদের কে একটা ঘটনা বলি সাহাবী হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রাযিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এক দিন এক তাবেয়ি এসে বলল - “ আপনি কত সৌভাগ্যবান! আপনি আপনার এই দুই চোখ দ্বারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কথাবার্তা বলতে পেরেছেন। ইস! আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন সাহাবী হতে পারতাম! ‘’ তখন ঐ তাবেইনের কথা শুনে হয়ে সাহাবী হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রাযিয়াল্লাহু আনহু ঐ তাবেয়ীকে বললেন –“ এই ব্যক্তি বর্তমান কে ছেড়ে অতীত কে নিয়ে টানাটানি করছে। আমাদের সময় অনেকেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখে ঈমান এনেছিল। কিন্তু তারপর জিহাদ, ক্ষুধার তীব্রতা, কাফেরদের অত্যাচার, প্রলোভন প্রভৃতি অনেক কারনেই অনেকেই পরে আর ঈমান ধরে রাখতে পারে নি, অনেকে আবার মুনাফিক হয়ে মৃত্যু বরন করেছে। আবার কেউ কেউ তো কাফেরদের অত্যাচারের ভয়ে মুসলমানই হয় নি। তাই বলা যায় না এই ব্যক্তি ঐ সময়ে জন্ম গ্রহন করলে তার কপালে ঈমান জ়ুটতো কিনা বা সে মুনাফিক হয়ে মারা যেত কিনা ? তারপর সাহাবী হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রাযিয়াল্লাহু আনহু ঐ তাবেয়ী কে বললেন- " কে কোন সময় জন্ম গ্রহন করবে এটা একান্তই আল্লাহ সুবহানাতায়ালার ইচ্ছা। বরং তুমি আল্লাহ সুবহানাতায়ালার কাছে এই কারনে কৃতজ্ঞ হয় যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার তোমাকে এমন একটা সময়ে জন্ম গ্রহন করিয়েছেন যে মুসলমান হবার কারনে কেউ তোমাকে কিছু বলছে না এবং তুমি খুব সহজেই ঈমানের মত এক মহামূল্যবান বস্তু পেয়েছ।”
[তথ্যসূত্রঃ হায়াতুস সাহাবাহ রাযিয়াল্লাহু আনহুম, লেখক মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ কান্ধলভী রহমাতুল্লাহ, অনুবাদ হাফেয মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের, দারুল কিতাব, ৫০, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০]
এই সাহাবীর কথা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমরা এখন যে সময়ে জন্ম গ্রহন করেছি এই জন্য আমাদের কে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কারন বর্তমান পৃথিবীতে যে কোন ধর্মের লোক ইসলাম নিয়ে যত পড়াশুনাই করুক না কেন কেউ তাকে বাধা দিতে পারবে না। ইউরোপ আমেরিকায় প্রতিদিন প্রচুর শিক্ষিত খৃস্টান মুসলমান হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এইজন্য উনাদের কে কোন সমস্যার মাঝে পরতে হচ্ছে না। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে যে কোন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ইহুদী চাইলেই এখন খুব সহজেই মুসলমান হতে পারে। কেউ তাকে বাধা দিবে না। কিন্তু মক্কী জীবনে একজন কাফের ঈমান আনবে আর ঈমান আনার পর অন্য কাফেররা তার উপর অত্যাচার করবে না এটা কল্পনাও করা যেত না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে সেই সময় মক্কার কাফেররা যে কতটুকু হিংস্র ছিল তা আপনাদের কে এখন একটু বলি। জাহেলিয়াত যুগে যুদ্ধক্ষেত্রেও মহিলাদের কে হত্যা করা হত না। কিন্তু মক্কী জীবনে নরাধম আবু জেহেল দ্বীন ইসলাম গ্রহন করার অপরাধে হযরত সুমাইয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা নামক একজন মহিলা সাহাবীর লজ্জাস্থানে বর্শা দিয়ে আঘাত করে উনাকে শহীদ করে ফেলেছিল। হযরত সুমাইয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা এই মহিলা সাহাবীই কিন্তু ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদ। বাংলা ভাষায় হযরত সুমাইয়া রাযিয়াল্লাহু আনহার জীবনীটা জানতে এই লিংক http://farabiblog.com/?p=91 এ যান।
আর আমাদের ঈমানের যে অবস্থা আমরা যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে জন্ম গ্রহণ করতাম তাইলে আমরা তো সবাই মুনাফিকদের খাতায় নাম লিখাতাম। মক্কার কাফেরদের সামাজিক বয়কটের কারনে শাব ই আবু তালেবে সাহাবীরা একটানা ৩ বছর অবরুদ্ধ ছিলেন। সেই সময় গাছের পাতা খেয়ে উনারা বেঁচে ছিলেন। আমরা কি পারতাম সাহাবীদের মত গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারন করতে ? আমরা সেই সময়ে জন্ম গ্রহণ করলে ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আমরা ঠিকই আবু জেহেল, আবু লাহেবের বশ্যতা স্বীকার করে লাত উজ্জার পূজা শুরু করে করতাম। মক্কী জীবনে এরকম বহুত কাফের আজ মুসলমান হয়ে কাল আবার কাফের হয়ে গেছে। তাই যারা আজকে এই কথা বলে যে ইস আমরা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে জন্ম নিতে পারতাম, তাইলে তো আমরা সাহাবী হতে পারতাম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে চাক্ষুস দেখতে পারতাম তারা আসলে একটা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। বরং আমাদের উচিত প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করা যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের কে একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করিয়েছেন। ঈমানের মত সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের কে না চাইতেই দিয়ে দিয়েছেন। আর হ্যা হাদিসে বলা হয়েছে যে যার প্রতি যার ভালবাসা থাকবে তার হাশরও হবে তার সাথে। আমাদের হৃদয়ে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদের প্রতি সত্যিকারের ভালবাসা থাকে তাইলে আমরা অবশ্যই জান্নাতে সাহাবীদের সাথে থাকব। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের সবাই কে একজন মুসলমান হিসাবে মৃত্যুবরন করার তৌফিক দান করুক।
ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব
আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অস্তিত্ত্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমান
আল কোরআনের ব্যাকরণগত সৌন্দর্য্যের কিছু অসাধারন দিক
বনী কুরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদি হত্যা করা প্রসঙ্গে একটি পর্যালোচনা
ইসলামি শরীয়াহ কি কখনই দাস দাসী প্রথাকে সমর্থন করেছিল
আমাদের মুসলমানদের কেন একটি কেন্দ্রীয় খিলাফত রাষ্ট্র প্রয়োজন ?
হাতের কাছে রাখার মত কয়েকটি চমৎকার ইসলামী বই
পুরুষ জাতির বহু বিবাহ প্রথা কে ইসলামী শরীয়াহ আসলে কতটুকু সমর্থন করে
হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম ২য় পর্ব
মেসওয়াক করার ফযীলত
আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" এই হাদীস টির মূল ব্যাখ্যা টি কি ?
সিজদায়ে সাহু সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল
সহিহ শুদ্ধ ভাবে নামায পড়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় মাসলা
মার্ক জুকারবার্গ তো একজন নাস্তিক তাইলে তার আবিস্কৃত ফেইসবুক ব্যবহার করা কি আমাদের জন্য ঠিক হচ্ছে
সন্ত্রাসবাদী হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাস রাম লক্ষন রাবন কিংবা রাম মন্দির যে ঠাকুরমার ঝুলি ছাড়া আর কিছুই না
বিষয়: বিবিধ
১২৬৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন