মুক্তমনাদের ব্যবচ্ছেদ, ১ম পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ২৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০১:৩৯ দুপুর

মুক্তমনা

বর্তমান Young Generation মুক্তমনা, অভিজিৎ রায় বলতে পাগল। এই মুক্তমনা ওয়েবসাইটে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে প্রচুর মিথ্যাচার করা হচ্ছে। সীরাত সম্পর্কে সঠিক পড়াশুনা না থাকায় শার্ট প্যান্ট পড়া অনেক ছেলেই নাস্তিকদের এইসব কথায় বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মুক্তমনাদের এই ভণ্ডামি গুলি পর্ব আকারে জনগণের সামনে প্রকাশ করব।

মুক্তমনারা প্রায়ই অভিযোগ করে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি মদীনার ইহুদীদের উপর অনেক অত্যাচার করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি দলে দলে মদীনার পুরুষ ইহুদীদের কে হত্যা করেছেন আর মহিলা ইহুদীদের কে দাসী বানাইছেন। আচ্ছা আমরা এখন দেখি তো মদীনার বিভিন্ন ইহুদী গোত্রের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিরকম আচরণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় আসেন তখন মদীনায় ২০ টার মত ইহুদী গোত্র ছিল। এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল বনু কোরায়জা, বনু নাদীরা, বনু কায়নুকা, বনু মোস্তালাক, বনু যানবা, বনু আওফ, বনু আন-নাজ্জার, বনু ছালাবা ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় আসার পর সকল ইহুদী গোত্র মদীনা সনদে সাক্ষর করে। বিভিন্ন ইহুদী গোত্রের সাথে মুসলমানদের শুধু এই শর্তটাই মদীনা সনদে লিখিত ছিল যে ইহুদীরা কখনোই মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করবে না। আচ্ছা আমরা এখন দেখি মদীনার ইহুদীরা ঠিক কতটুকু তাদের এই চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। ইহুদীদের বনু কাইনুকা এই গোত্রটি পেশায় ছিলো স্বর্ণকার। বদর যুদ্ধের কিছুদিন পরেই তাদের বাজারে এক মুসলিম মেয়ে এক ইহুদী স্বর্নের দোকানে একটি কাজে গিয়েছিল। তখন এক ইহুদি কর্মচারী ঐ মুসলিম মেয়েটির পোশাকে পেরেক মেরে চেয়ারের সাথে আটকে দিলে, উঠতে গিয়ে ঐ মুসলিম মেয়েটির জামা ছিঁড়ে যায়। মুসলিম মেয়েটির আর্তনাদ শুনে এক মুসলিম পথচারী এটা দেখে খেপে গিয়ে ঐ ইহুদী কর্মচারীকে কতল করলে, ইহুদী কর্মচারীর পক্ষের লোকেরা সবাই মিলে ঐ মুসলমানকে হত্যা করে ফেলে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু কাইনুকা গোত্র কে অবরোধ করলে তারা ১৫ দিন পর মুসলমানদের নিকট আত্মসমর্পন করে। ইহুদীদের ধর্ম গ্রন্থ তাওরাতের বিধান অনুসারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু চাইলেই পারতেন চুক্তিভংগকারী বনু কাইনুকা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদীদের কে হত্যা করতে আর সকল ইহুদী নারীদের কে দাসি বানাইতে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা না করে বনু কাইনুকা গোত্রের সকল ইহুদীকে এই শর্তে ক্ষমা করে দেন যে তারা মদীনা থেকে বের হয়ে অন্যত্র চলে যাবে।

বনু নাদের ছিলো মদীনার ইহুদীদের মাঝে সবচেয়ে বড় গোত্র। তাদের মূল ব্যবসা ছিলো খেজুর উৎপাদন। একটা সংঘর্ষে মুসলমান এবং ইহুদি বানু নাদের গোত্রের উভয়পক্ষের লোকজনের দ্বারা বনু আমির গোত্রের দুইজনের খুন হওয়ার ঘটনায় , ক্ষতিপূরণের একটা অংশ বানু নাদেরেরও বহন করা উচিৎ এই দাবী নিয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু নাদির গোত্রের গোত্রপতিদের কাছে আলোচনার জন্য গেলে বনু নাদের গোত্রের লোকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলে আপনি কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন আমরা নিজেরা আলোচনা করে আপনাকে জানাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাদের একটি ঘরের দেওয়াল সংলগ্ন জায়গায় বসে ছিলেন। সেই সময় বনু নাদির গোত্রের ইহুদীরা ঐ ঘরের ছাদ থেকে একটি বড় পাথর ফেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। ঠিক সেই সময় হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সাল্লাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বনু নাদীর গোত্রের এই পরিকল্পনা জানিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে সাথে সেখান থেকে উঠে গিয়ে পরে মদীনায় চলে যান। তারপর একটানা ৬ দিন ৬ রাত অবরোধ করে রাখার পর বনু নাদিরা গোত্রের ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ক্ষমা চায়। বনু কায়নুকা গোত্রের মত বনু নাদিরা গোত্রের সকল ইহুদীদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই শর্তে ক্ষমা করে দেন যে তারা মদীনা থেকে বের হয়ে অন্যত্র চলে যাবে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু চাইলেই পারতেন উনাকে হত্যা চেষ্টা করার অপরাধে ইহুদীদের ধর্ম গ্রন্থ তাওরাতের বিধান মতে বনু নাদিরা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদীদের কে হত্যা করতে ও বনু নাদিরা গোত্রের সকল ইহুদী নারীদের কে দাসী বানাইতে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা করেননি। এরপর আসল খন্দকের যুদ্ধের সময়। খন্দকের যুদ্ধের সময় যখন মুসলমানরা মদীনা নগরী ত্যাগ করে কাফেরদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত তখন বনু কোরায়জা গোত্রের ইহুদীরা চুক্তিভংগ করে মক্কার কাফেরদের সাথে হাত মিলিয়ে পিছন দিক থেকে মদীনা আক্রমন করার চেষ্টা চালায়। যদিও ইহুদী গোত্র বনু কোরাইজা গোত্রের সেই চেষ্টাটা সফল হয়নি। খন্দকের যুদ্ধের পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু কোরায়জা গোত্রকে অবরোধ করেন। যেহেতু বনু কোরায়জা গোত্র কাফেরদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ চলার সময় চুক্তি ভংগ করেছে তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু কোরায়জা গোত্রকে বলেন তোমাদের ব্যাপারে আমার ফয়সালা কি হবে ? তখন বনু কোরায়জা গোত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলেন তাদের মিত্র আওস গোত্রের হযরত সাদ ইবনে মুয়ায রাযিয়াল্লাহু আনহু যে ফয়সালা করবেন তাতেই তারা সম্মত আছে। হযরত সাদ ইবনে মুয়ায রাযিয়াল্লাহু আনহু ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের বিধান মতে যুদ্ধকালীন চুক্তি ভঙ্গের অপরাধে বনু কোরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদিকে হত্যা করা এবং ইহুদি নারীদের কে দাসী হিসাবে বিক্রি করে দেয়া হোক এই রায় দেন। এরপরে বনু কোরাইজা গোত্রের ৪০০ পুরুষ ব্যক্তিকে একই দিনে হত্যা করা হয় এবং নারী ও তাদের সন্তানদের কে দাসি হিসাবে সিরিয়ায় বিক্রি করে দেয়া হয়। এই এক বনু কোরায়জা গোত্র ছাড়া আর কোন ইহুদী গোত্রের প্রতিই মুসলমানরা এই রকম আচরন করেনি। বনী কুরায়জা গোত্রের সাথে মুসলমানদের এই আচরন করার কারন গুলি আমি বিস্তারিত ভাবে এই লিংক এ বলেছি

এরপরে হিজরি ৫ম সনে ইহুদী বনু মোস্তালাক গোত্রও যখন মদীনা আক্রমন করতে চায় তখন মুসলমানরা বনু মোস্তালাক গোত্র কে পরাজিত করে। প্রথমদিকে বনু মোস্তালাক গোত্রের ৬০০ পুরুষ কে বন্দী করা হয় কিন্তু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বনু মোস্তালাক গোত্রের গোত্রপতি হারিস ইবনে দিরারের কন্যা জুওয়াইহিয়া বিনতে হারিস কে বিয়ে করেন তখন সাহাবীরা বনু মোস্তালাক গোত্রের সেই ৬০০ পুরুষ বন্দীকেও মুক্ত করে দেন। এরপর ৭ম হিজরিতে মদীনা আক্রমন করার ব্যাপারে ইহুদীদের নতুন ষড়যন্ত্রের কারনে খায়বার যুদ্ধ হয়। খায়বার যুদ্ধে পরাজিত ইহুদীদের কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন নির্বাসন দেন নি। প্রতি বছর তাদের উৎপাদিত ফল ফসলের অর্ধেক ইহুদীরা মুসলমানদের কে দিবে এই শর্তে ইহুদীরা খায়বারেই থাকার অনুমতি পায়। কিন্তু এই খায়বার যুদ্ধের পর পরই এক ইহুদী মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দাওয়াত করে তারপর বকরীর মাংসের ভিতরে বিষ মিশিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনার পরেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বারের সকল ইহুদীদের কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। একটু চিন্তা করে দেখুন আপনারা এইবার ২য় বারের মতন ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করার পরিকল্পনা করার পরেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল ইহুদীদের কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।

যেই ২/১ টা ইহুদী গোত্রের নারীদের কে মুসলমানরা যুদ্ধবন্দী বানিয়েছিল তারা কিন্তু তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের বিধানমতেই যুদ্ধবন্দী নারী হিসাবে মুসলমানদের কাছে নীত হয়েছিলেন। প্রত্যেকটা যুদ্ধবন্দী নারীকে সাহাবীদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হয়েছিল যেন তারা Public Property তে পরিনত না হয়ে যায়। পরবর্তীতে সাহাবীরা তাদের কে বিয়ে করে তাদের কে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। উম্মুল মুমেনীন রায়হানা ও সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহারা কিন্তু প্রথমে যুদ্ধবন্দী নারী হিসাবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসেছিলেন। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেন। তাই আজকে আমরা হযরত রায়হানা ও হযরত সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহাকে উম্মুল মুমেনীন বলি। কিন্তু মুক্তমনায় হযরত রায়হানা ও হযরত সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রক্ষিতা বলা হয়েছে, নাউযুবিল্লাহ। আর মুসলমানরা একমাত্র বনু কুরায়জা, বনু হাওয়াজিন এই ২ টি ইহুদী গোত্রের নারীদের কেই যুদ্ধবন্দী বানিয়েছিল। এরপর আর কোন পরাজিত জাতিকেই মুসলমানরা দাস দাসী বানাইনি। প্রাচীন কালের দাস দাসী প্রথা কে ইসলামী শরীয়াহ কি আদৌ সমর্থন করে কিনা তা জানতে আপনারা আমার এই NOTE টি পড়ুন

তাইলে আমরা এখন দেখতে পারি মদীনার আশপাশে ২০ টার মত ইহুদী গোত্র থাকলেও মাত্র ৪ টা ইহুদী গোত্রের সাথে মুসলমানদের ঝামেলা হয়েছিল। আচ্ছা আপনারাই বলুন বনু কোরায়জা গোত্র যদি খন্দকের যুদ্ধের সময় মুসলমানদের সাথে করা তাদের যুদ্ধকালীন চুক্তিটি ভংগ না করত তাইলে কি তাদের এই করুন পরিণতি বহন করতে হত ? ৭০ খ্রিষ্ট পূর্বে রোমানরা যখন জেরুজালেম জয় করে তখন সকল ইহুদীদেরকে তারা হত্যা করে। ইসলাম পূর্ব যুগ থেকেই খ্রিষ্ঠানরা ইহুদীদের কে হত্যা করত। এমনকি এক ইহুদী গোত্র আরেক ইহুদী গোত্রকে আক্রমন করে পরাজিত সকল ইহুদী পুরুষদের কে দাস-দাসি বানানোর কাহিনীও বহু আছে। নাস্তিকদের কিন্তু কখনই খৃষ্টানদের দ্বারা ইহুদী নিপীড়নের এই কাহিনীগুলি নিয়ে আলোচনা করে না। গুরুতর অপরাধ থাকা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বনু কাইনুকা, বনু নাদীরা, বনু মোস্তালাক আর খায়বারের ইহুদীদের কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এই ব্যাপারটাও নাস্তিকরা কখনোই তাদের আলোচনায় আনবেনা।

আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে আরবের মানুষ জন খুবই খারাপ ছিল। সেই সময় মক্কার ও মদীনার কাফেররা কতটুকু হিংস্র ছিল তা আপনাদের কে একটু বলি। জাহেলিয়াত যুগে যুদ্ধক্ষেত্রেও মহিলাদের কে হত্যা করা হত না। কিন্তু মক্কী জীবনে নরাধম আবু জেহেল হযরত সুমাইয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা নামক একজন মহিলা সাহাবীকে হত্যা করেছিলেন শুধুমাত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহন করার অপরাধে। হযরত সুমাইয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা এই মহিলা সাহাবীই কিন্তু ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদ। হযরত সুমাইয়া রাযিয়াল্লাহু আনহার জীবনী জানতে এই লিংক এ যান

মক্কা ও মাদানী জীবনে প্রতি মুহূর্তে কাফেররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদের কে হত্যা করতে চাইত। আপনাদের কে আমি ২ টা উদাহরন দেই। হিজরতের ৩য় বছরে আযল ও কারা গোত্রের লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ৬ জন সাহাবী কে চান তাদের এলাকায় গিয়ে তাদের কে দ্বীন ইসলাম শিখানোর জন্য। ঐ ৬ জন সাহাবী ঐ গোত্রের কাছে উপস্থিত হলে ঐ গোত্রপতিরা ঐ ৬ জন সাহাবীর মাঝে ৪ জন সাহাবীকে হত্যা করে আর ২ জন সাহাবীকে দাস হিসাবে বাজারে বিক্রি করে দেয়। আবার ঐ একই বছর বনু সুলায়ম, বনু উসাইয়া, বনু রিল ও বনু যাকওয়ান গোত্র অনেক বলে কয়ে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার নামে প্রতিজ্ঞা করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে ৭০ জন সাহাবীকে নিজেদের গোত্রে নিয়ে যায় দ্বীন ইসলাম শিখবে বলে। যথারীতি ঐ মুনাফেক গোত্রপতিরা নিজেদের গোত্রে নিয়ে ঐ ৭০ জন সাহাবীকে হত্যা করে।

তাই জাহেলিয়াত যুগের পরিপ্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের প্রতি দু একটি কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যেমন কাব ইবনে আশরাফ নামক এক কবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে অনেক অশ্লীল কবিতা রচনা করত। তাকে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে তার অশ্লীল কবিতা রচনা করা ত্যাগ করেনি। তাই মদীনা জীবনে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পান তখন সেই অশ্লীল কবিতা রচনাকারী কাব ইবনুল আশরাফ কে হত্যা করেন। আর যুদ্ধকালীন চুক্তি ভঙ্গের অপরাধে তাওরাতের বিধান অনুসারে বনু কোরাইজা গোত্রের সকল ইহুদী পুরুষদের কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ইসলাম বিদ্বেষীরা প্রায়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাফেরদের প্রতি এই দুই একটি কঠোর সিদ্ধান্তকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে বড় করে সবার সামনে প্রচার করে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে উনার জীবনে হাজার হাজার কাফের/ইহুদীদের কে হত্যা না করে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এই তথ্য কখনো নাস্তিকরা কাউকে বলে না। সেই যুগে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয়ের পর পরাজিত যুদ্ধবন্দীকে হয় হত্যা করা হত নতুবা দাস দাসী হিসাবে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হত। বদর যুদ্ধে ৭০ জন কাফের মুসলমানদের হাতে বন্দী হলেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাম মাত্র মুক্তিপণের মাধ্যমে ঐ সকল কাফেরদের কে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। অনেক কাফের আবার মুক্তিপণ দিতেও পারছিল না। তাদের কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্ত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু চাইলেই পারতেন ঐ ৭০ জন কাফেরদের কে হত্যা করতে বা দাস হিসাবে বাজারে বিক্রি করে দিতে।

আবার খায়বার যুদ্ধের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পুরা আরব উপদ্বীপের একচ্ছত্র অধিপতি তখন কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাইলেই পারতেন ঐ সকল সাহাবীদের কে হত্যাকারী বনু সুলায়ম, বনু উসাইয়া, বনু রিল ও বনু যাকওয়ান গোত্রপতিদের কে হত্যা করতে। কিন্তু তা না করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সকল কেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তারপর মক্কা বিজয়ের পর সকল কাফেরকে ক্ষমা করে দেয়ার ইতিহাস তো আমরা সবাই জানি। এই যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সারা জীবনে এত এত কাফের/ইহুদীদের কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাইলেই পারতেন ঐ সকল কাফের/ইহুদীদের কে হত্যা করতে বা দাস হিসাবে বাজারে বিক্রি করে দিতে। ইহুদী ও কাফেরদের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই মহানুভবতা গুলি কিন্তু নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা সব সময় পাশ কাটিয়ে যায়। নাস্তিকরা সারাদিন খালি বনু কোরায়জা গোত্র আর অশ্লীল কবিতা রচনাকারী কাব ইবনুল আশরাফের হত্যার ঘটনা গুলি ফুলিয়ে ফাপিয়ে সবার কাছে প্রচার করে। আরে সেই সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি দুই একটি কঠোর সিদ্ধান্ত না নিতেন তাইলে কাফেররা ও ইহুদীরা মিলে সকল সাহবীদের কে হত্যা করে ফেলত। সীরাত সম্পর্কে সঠিক পড়াশুনা না থাকায় শার্ট প্যান্ট পড়া অনেক মুসলমান ছেলেই নাস্তিকদের কথায় এখন বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই মুক্তমনাদের ভণ্ডামি জানার জন্য যারা এখনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী ভাল ভাবে পড়েননি তাদের কে সীরাতে ইবনে হিশাম/নবীয়ে রহমত/আর রাহিকুল মাখতুম পড়ার অনুরোধ করছি। সত্যিকথা বলতে কি আমরা আমাদের নিজেদের জীবন সম্পর্কে যতটুকু জানি এর চেয়েও বেশী আমাদের কে জানতে হবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী সম্পর্কে। তাইলেই আমরা মুক্তমনাদের ভণ্ডামি নিজেরাই ধরতে পারব।

ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব

আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অস্তিত্ত্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমান

আল কোরআনের ব্যাকরণগত সৌন্দর্য্যের কিছু অসাধারন দিক

বনী কুরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদি হত্যা করা প্রসঙ্গে একটি পর্যালোচনা

ইসলামি শরীয়াহ কি কখনই দাস দাসী প্রথাকে সমর্থন করেছিল

আমাদের মুসলমানদের কেন একটি কেন্দ্রীয় খিলাফত রাষ্ট্র প্রয়োজন ?

হাতের কাছে রাখার মত কয়েকটি চমৎকার ইসলামী বই

পুরুষ জাতির বহু বিবাহ প্রথা কে ইসলামী শরীয়াহ আসলে কতটুকু সমর্থন করে

হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম ২য় পর্ব

মেসওয়াক করার ফযীলত

আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" এই হাদীস টির মূল ব্যাখ্যা টি কি ?

সিজদায়ে সাহু সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল

সহিহ শুদ্ধ ভাবে নামায পড়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় মাসলা

মার্ক জুকারবার্গ তো একজন নাস্তিক তাইলে তার আবিস্কৃত ফেইসবুক ব্যবহার করা কি আমাদের জন্য ঠিক হচ্ছে

সন্ত্রাসবাদী হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাস রাম লক্ষন রাবন কিংবা রাম মন্দির যে ঠাকুরমার ঝুলি ছাড়া আর কিছুই না

বিষয়: বিবিধ

১৮২৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

167282
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:০৩
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : হে আল্লাহ! তুমি ইসলামকে সকল প্রকার বিদ্বেষ থেকে রক্ষা কর।
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:১২
121249
এনামুল মামুন১৩০৫ লিখেছেন : আমিন-
167285
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:১২
এনামুল মামুন১৩০৫ লিখেছেন : আপনার লেখাগুলা ভালো লাগে। আপনার বিরুদ্ধে অনেকে অনেক কথা বলে। কিন্তু যে যাই বলুক আমরা আপনার সাথে আছি- চালিয়ে যান-
170454
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৮
সজল আহমেদ লিখেছেন : ভাই মুক্তমনাদের নিয়ে আপনার প্রায় সবগুলা পোষ্টই পড়ছি|ফেবু নোটগুলোও পড়ছি|
সবগুলোই চমৎকার লেগেছে!!
ভাই একটু সমস্যায় আছি
কিছু কিছু নাস্তিক প্রশ্ন করে বসছেঃ-দুনিয়ার এত জায়গা থাকতে আল্লাহ পাক কেন মসজিদে থাকেন?

এটা নিয়ে কিছু ১টা লিখেন|

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File