রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনে সংঘটিত একটি অপ্রকাশিত মুজেজা জানুন
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৪১:১৯ রাত
রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াসের কাছে ইসলাম গ্রহন করার দাওয়াত দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে চিঠিটা প্রেরন করেছিলেন সেই চিঠিটায় একটি শব্দ ছিল তা হল اُرَيْسِيٌن উরায়সিয়্যীন বা য়ূরায়সিয়্যীন। সেই اُرَيْسِيٌن উরায়সিয়্যীন বা য়ূরায়সিয়্যীন শব্দের অর্থ হল আরিয়ুস মিসরীর অনুসারী। এখন আরিয়ুস মিসরী কে যার কথা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াস কে ? Arius (280-336) ছিলেন একজন সত্যিকার হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লামের অনুসারী যিনি খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে খ্রিষ্টানদের Doctrine of Trinity বা তিন খোদা বা ত্রিতত্ববাদ মতবাদের বিরুদ্ধে একাই লড়ে গেছেন। সেই সময়ে অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার গির্জা পবিত্র পিতা, পবিত্র পুত্র ও পবিত্র আত্মা এই তিন খোদা বা ত্রিতত্ববাদ বা Trinity এই মতবাদ প্রচারে ব্যস্ত ছিল। আপনি যদি সেই সময়ে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার গীর্জার ভিতরে ঢুকতেন তাইলে তথাকথিত যীশু ও মরিয়মের অনেক মূর্তিও সেখানে দেখতে পারতেন। কিন্তু আরিয়ুস সেই খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে খৃষ্টান ধর্মের শিরকী বিশ্বাসে আঘাত হানেন। আরিয়ুস হলেন সেই ব্যক্তি যিনি সেই ৪র্থ শতাব্দীতে তাওহীদ তথা একত্ববাদের ধ্বনি তুলেন ও খালিক ও মাখলুক তথা স্রষ্টা ও সৃষ্টি অর্থ্যাৎ খ্রিষ্টানদের ভাষায় “ পিতা-পুত্রের” মাঝে পার্থক্য করার আহবান জানান। এক আরিয়ুসই পুরা বায়যান্টাইন সাম্রাজ্য ও খ্রিষ্টান গীর্জাকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল। আরিয়ুসের সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল এই যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার সত্তাই আদি, অনন্ত চিরন্তন ও চিরস্থায়ী। আল্লাহ সুবহানাতায়লাই অনস্তিত্ব থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লামকে অস্তিত্ত্বে এনেছেন। সেইজন্য হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কোন আদি সত্ত্বা নন। বরং এমন একটা সময় গিয়েছে যখন হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লামের কোন অস্তিত্ত্বই এই পৃথিবীতে ছিল না। তাই আল্লাহ সুবহানাতায়ালার মৌলিক গুনাবলীর ভিতরে ওয়াহদানিয়াত/এককত্ব ও আবাদিয়্যাত/চিরন্তনত্ব রয়েছে এবং আল্লাহ সুবহানাতায়লা তাঁর সত্ত্বা থেকে সরাসরী কাউকে পয়দা করেন না। তাই এটা আল্লাহ সুবহানাতায়লায় শান নয় যে তিনি যমীনে প্রকাশিত হবেন। পুত্র স্বয়ং খোদা নন বরং আল্লাহ সুবহানাতায়লার হুকুমের প্রকাশ। অর্থাৎ আল কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ৯১ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাতায়লা হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম সম্পর্কে যা বলেছেন-“ আমি তার গর্ভে স্বীয় রুহ (আমার নির্দেশ) ফুকে দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার ছেলেকে জগৎবাসীর জন্য এক বিরাট নিদর্শন বানিয়েছিলাম। ” ঠিক সেই কথাটি আরিয়ুস সেই খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে প্রচার করতেন।
শুধু তাই নয় খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বের সাথে কিভাবে অবাধে গ্রিক পৌত্তলিক দর্শন/Greek pagan philosophy মিশ্রিত হচ্ছে এটা নিয়ে আরিয়ুস সব সময় খুব আক্ষেপ করতেন। কারন ঠিক সময়ে খৃষ্টানরা গীর্জার ভিতরে তথাকথিত যীশু ও মরিয়মের অনেক মূর্তি রেখে গ্রীকদের মত মূর্তি পুজা শুরু করে দিয়েছিল।
সেই সময়ে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া গীর্জার প্রধান ও মিশরের আর্চ বিশপ আলেকজান্ডার ছিলেন হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লামের উপরে ঈশ্বরত্বের সমর্থক। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আলেকজান্ডার আরিয়ুস কে মিশর থেকে বহিস্কার করেন। সেই সময় বায়যান্টাইন সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন কন্সটানটাইন। কন্সটানটাইনও Doctrine of Trinity বা তিন খোদা বা ত্রিতত্ববাদ মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই স্বাভাবিক ভাবে কন্সটানটাইনও আরিয়ুসের একত্ববাদ মতবাদ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং আরিয়ুসের লিখিত সকল বই পত্র আগুনে জ্বালিয়ে দেবার আদেশ দেন। এমনকি কারো কাছে যদি আরিয়ুসের কোন বই পত্র পাওয়া যেত বা কেউ যদি আরিয়ুসের শিষ্যত্ব গ্রহন করত তাইলে বায়যান্টাইন সাম্রাজ্যের সম্রাট কন্সটানটাইন তাদের কেও হত্যা করত। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আরিয়ুস আর বেশী কাজ করতে পারেন নাই।
এমনকি আরিয়ুসকে পরে বিষ প্রয়োগে শহীদও করা হয়
হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লামের চতুর্থ আসমানে চলে যাবার পর সেই খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে একমাত্র আরিয়ুসই Doctrine of Trinity বা ত্রিতত্ববাদ মতবাদের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিলেন। বর্তমান খ্রিষ্টান জগত যেরকম ভাবে বার্নাবাসের বাইবেল কে লুকিয়ে রাখে, বার্নাবাসের বাইবেল খ্রিষ্টানদের কে নিষেধ করে ঠিক তেমনি আরিয়ুস সম্পর্কে সকল তথ্য উপাত্ত শয়তানের উপাসক পোপ মুছে ফেলেছে। আরিয়ুস সম্পর্কে খুব কম তথ্যই পাওয়া যায়। কিন্তু যেহেতু স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াসের কাছে প্রেরিত চিঠিতে اُرَيْسِيٌن উরায়সিয়্যীন বা আরিয়ুসের অনুসারী শব্দটি উচ্চারন করেছেন তাই আরিয়ুস সব সময় মুসলমানদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াস ছিলেন গোপনে গোপনে আরিয়ুসের অনুসারী। এটা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা ওহীর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াসের কাছে প্রেরিত চিঠিতে اُرَيْسِيٌن উরায়সিয়্যীন বা আরিয়ুসের অনুসারী শব্দটি উচ্চারন করেছেন। বিভিন্ন রাজা বাদশাহর কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যতগুলো চিঠিপত্র পাঠিয়েছিলেন কোন চিঠিপত্রেই اُرَيْسِيٌن শব্দটির উল্লেখ নাই। এই اُرَيْسِيٌن শব্দটি শুধু মাত্র রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াসের ক্ষেত্রেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবহার করেছেন। اُرَيْسِيٌن কোন আরবী শব্দও নয়। আর এই اُرَيْسِيٌن শব্দটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকেই প্রথম সাহাবীরা শুনেন। তবে অনেকে বলেন যে উরাইসিয়্যীন উরায়সীর বহুবচন আর শব্দটি কৃষিজীবিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু উরাইসিয়্যীন শব্দের অর্থ যদি কৃষিজীবিই হবে তাইলে তো পারস্য সম্রাট খসরুর ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই শব্দটি ব্যবহার করতেন। কারন ইরানের সাসানী সাম্রাজ্যের মানুষের মূল পেশাই ছিল কৃষিকাজ। কৃষির উপরেই ইরানের অর্থনীতির বেশীর ভাগ নির্ভরশীল ছিল। তাই রোমকরা অগ্নি উপাসক ইরানীদের কে উরাইসিয়্যীন বলে অভিহিত করত। শুধু তাই নয় আরবরাও ইরানীদের কে ফাল্লাহীন বা কৃষক বলে অভিহিত করত। কিন্তু রোমকরা যুদ্ধাস্ত্রের সাজ-সরঞ্জাম ও শিল্পকর্মে নিয়োজিত ছিল। তাই রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াসের কাছে প্রেরিত চিঠিতে উরাইসিয়্যীন শব্দটি দ্বারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কৃষিজীবি বুঝাননি।
আমরা সবাই জানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন উম্মী বা নিরক্ষর। মক্কায় কোন ইহুদী খ্রিস্টান বাস করত না। আর মদীনায় যে সকল খ্রিস্টানরা বাস করত তারাও ছিল শিরকপূর্ণ মতবাদ বা Doctrine of Trinity এর অনুসারী। মদিনার খ্রিষ্টানরা কেউই আরিয়ুসের অনুসারি ছিল না বা আরিয়ুস নিয়ে মদীনার খ্রিষ্টান জগতে কখনো আলোচনাও হয় নি। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে জানতেন যে রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াস গোপনে গোপনে আরিয়ুসের অনুসারী ছিলেন এবং ঠিক সেই কারনে রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াসের কাছে প্রেরিত চিঠিতে রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াস কে যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম اُرَيْسِيٌن উরায়সিয়্যীন বা আরিয়ুসের অনুসারী বলে সম্বোধন করেছেন এটা অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি মুজেজা। আরিয়ুস উনি অবশ্যই একজন মুসলমান ছিলেন যিনি একাই খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে পুরা বায়যান্টাইন সাম্রাজ্য ও আলেকজান্দ্রিয়া গীর্জার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। শয়তানের উপাসক খ্রিষ্টান পাদ্রীরা আরিয়ুস ও বার্নাবাসের বাইবেলের কথা গোপন রেখে সাধারন খ্রিষ্টানদের কে Doctrine of Trinity এর ন্যায় একটি শিরকপূর্ন মতবাদের ভিতরে আবদ্ধ করে রেখেছে।
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর লেখা “নবীয়ে রহমত” বইটাতে আরিয়ুস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া প্রাচীন তাফসিরকারক গনও আরিয়ুস কে নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন খ্রিষ্টান পন্ডিত সাহসও পায় নাই আরিয়ুস কে নিয়ে কিছু লিখতে।
ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব
আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অস্তিত্ত্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমান
আল কোরআনের ব্যাকরণগত সৌন্দর্য্যের কিছু অসাধারন দিক
বনী কুরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদি হত্যা করা প্রসঙ্গে একটি পর্যালোচনা
ইসলামি শরীয়াহ কি কখনই দাস দাসী প্রথাকে সমর্থন করেছিল
আমাদের মুসলমানদের কেন একটি কেন্দ্রীয় খিলাফত রাষ্ট্র প্রয়োজন ?
হাতের কাছে রাখার মত কয়েকটি চমৎকার ইসলামী বই
পুরুষ জাতির বহু বিবাহ প্রথা কে ইসলামী শরীয়াহ আসলে কতটুকু সমর্থন করে
হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম ২য় পর্ব
মেসওয়াক করার ফযীলত
আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" এই হাদীস টির মূল ব্যাখ্যা টি কি ?
সিজদায়ে সাহু সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল
সহিহ শুদ্ধ ভাবে নামায পড়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় মাসলা
মার্ক জুকারবার্গ তো একজন নাস্তিক তাইলে তার আবিস্কৃত ফেইসবুক ব্যবহার করা কি আমাদের জন্য ঠিক হচ্ছে
সন্ত্রাসবাদী হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাস রাম লক্ষন রাবন কিংবা রাম মন্দির যে ঠাকুরমার ঝুলি ছাড়া আর কিছুই না
বিষয়: বিবিধ
২৬৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন