রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে উম্মুল মুমেনীন হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহা
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ০৭ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:১১:৩৯ রাত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের কোন কিছুই উম্মতের কাছে গোপনীয় বা লুকায়িত ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় খুলাখুলী ভাবে উম্মতের কাছে উনার জীবনের সব কিছু বর্ণনা করেছেন। আমি এখন আপনাদের সামনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী উম্মুল মুমেনীন হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত একটি হাদিস বলব। এই হাদিসটি মুসলিম শরীফের সালাম অধ্যায়ের ৫৪৯২ নাম্বার হাদীস। উম্মুল মুমেনীন হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ “রমজানের শেষ ১০ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে নব্বীতে ইতিকাফরত অবস্হায় থাকতেন। সেই সময় আমি রাতের বেলা একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলাম। কিছু সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে কথা বললাম, তারপর আমার ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য আমার সাথে উঠে দাড়ালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহাকে বিদায় দেওয়ার জন্য মসজিদে নব্বীর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে আসেন। তখন মসজিদে নব্বীর রাস্তার পাশ দিয়ে ২ জন আনসার ব্যক্তি যাচ্ছিলেন। এই ২ আনসার ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এক মহিলার সাথে দেখতে পেয়ে দ্রুত চলে যেতে লাগল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ২ আনসার ব্যক্তিকে বললেনঃ তোমরা দুইজন একটু থাম। এই মহিলা হচ্ছে সাফিয়্যা বিনত হুয়াই আমার স্ত্রী। এই কথা শুনে তারা দুই জন বলল, সুবহানাল্লাহ! ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা তো কিছু মনে করিনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ শয়তান মানুষের শিরায় শিরায় চলাচল করে। তাই আমি শংকিত হয়েছিলাম যে, শয়তান তোমাদের উভয়ের অন্তরে আমার সম্পর্কে কোন কুধারণা কিংবা কোন সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে। ”
এখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু চাইলে ঐ ২ আনসার ব্যক্তিকে ঐ মহিলা অর্থাৎ উনার স্ত্রী হযরত সাফিয়্যা বিনত হুয়াই সম্পর্কে কিছু নাও বলতে পারতেন। কিন্তু আমরা এই হাদিসটা পড়ে বুঝতে পারি যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় চাইতেন উনার দাম্পত্য জীবন/বৈবাহিক জীবনের খুটিনাটি সম্পর্কে উম্মতরা জানুক। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর এই দিকটা কিন্তু আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী উম্মুল মুমেনীন হযরত সাফিইয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকেই জেনেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের এরকম অনেক কাহিনী শুধুমাত্র উম্মুল মুমেনীনদের কাছ থেকেই জানা যায়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি উম্মুল মুমেনীন হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহার ছিল অন্তহীন ভালবাসা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন অন্তিম রোগশয্যায় হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার গৃহে শায়িত তখন হযরত সাফিইয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছিলেন- “আল্লাহ সুবহানাতায়ালা যেন আপনার দুঃখ কষ্ট গুলোকে আমার দুঃখ কষ্টে পরিণত করে দেন। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা যেন আপনার অসুখ বিসুখ গুলাকে আমার শরীরে স্থানান্তর করে দেন। “সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই এর এই কথা শুনে অন্যান্য উম্মুল মুমেনীনরা একজন আরেকজনের দিকে এমনভাবে তাকাতে লাগলেন যে উনারা সাফিইয়্যা বিনতে হুয়াই এর কথায় সন্দেহ পোষণ করছে। সেই সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সাফিইয়্যা বিনতে হুয়াই এর দিকে লক্ষ্য করে বললেন- “ আল্লাহ্র কসম! সাফিয়া সত্য বলেছে।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যান্য স্ত্রীদের মতই হযরত সাফিইয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন ইলম ও ফিকাহ শাস্ত্রের কেন্দ্র। প্রায়ই প্রচুর সংখ্যক মহিলা সাহাবী ও মহিলা তাবেঈন উনার গৃহে বিভিন্ন মাসলা মাসায়েল জানতে ভিড় করত। হযরত সাফিয়্যা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত মোট ১০ টি হাদীস বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর সময় যখন সাহাবী ও উম্মুল মুমেনীনদের জন্য ভাতা নির্ধারন করা হয় তখন হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহার জন্য মাসিক ১২০০০ দীনার ধার্য করা হয়। হিজরি ৩৫ সালে বিদ্রোহীরা যখন হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহুকে গৃহবন্দী করে ফেলেন তখন উম্মুল মুমেনীন হযরত সাফিইয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহাই উনার দাসীর মাধ্যমে হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহুর গৃহে খাবার ও পানি পৌছিয়ে দিতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বিয়ে হবার পর হযরত সাফিইয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহা উনার কানের স্বর্নের ২ টা দুল ফাতেমা রাযিয়াল্লাহু আনহা কে দিয়ে দেন। হযরত সাফিইয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহা ভাল রান্না করতে পারতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন উনার অন্য স্ত্রীদের গৃহে অবস্থান করতেন তখনও মাঝে মাঝে হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহা ভাল খাবার রান্না করে অন্য উম্মুল মুমেনীনদের গৃহে পাঠাতেন।
হিজরি ৫০ সনের রমযান মাসে ৬০ বছর বয়সে হযরত সাফিইয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহা মদীনায় ইন্তেকাল করেন। সেই সময় সম্মনিত সাহাবী ও ইসলামের ইতিহাসের ৬ষ্ঠ খলিফা হযরত মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা হজ্জ আদায় করার জন্য মদীনা হয়ে মক্কায় যাচ্ছিলেন। হযরত মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহুই হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহার জানাজার নামায পড়ান। জান্নাতুল বাকীতে উনাকে দাফন করা হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বিয়ে হবার আগে হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহার ২ বার বিয়ে হয়েছিল। উনার প্রথম বিয়ে হয়েছিল বনু কোরায়জা গোত্রের বিখ্যাত কবি ও সর্দার সালাম ইবনে মাশকামের সাথে। কিন্তু এই বিয়ে বেশীদিন টিকে নাই। সালাম ইবনে মাশকামের সাথে ছড়াছাড়ি হবার পর খায়বারের বিখ্যাত আল-কামুস দুর্গের নেতা ও হিজাজের বিখ্যাত সর্দার কিনানা ইবনে আবিল হুকায়ক এর সাথে উনার ২য় বিয়ে হয়। ৭ম হিজরিতে খায়বার বিজিত হবার পর সুরক্ষিত কামুস দূর্গের পতন ঘটে এবং কিনানা নিহত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই কে নিজের জন্য পছন্দ করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফিইয়্যা বিনতে হুয়াই কে বলেছিলেন তুমি যদি মুসলমান হয় তাইলে দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে। এরপর সাফিইয়্যা বিনতে হুয়াই মুসলমান হন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই কে বিয়ে করেন। দাসত্ব থেকে মুক্তিই ছিল এই বিয়ের দেন মোহর।
উম্মুল মুমেনীনদের জীবনের কোন কিছুই গোপনীয় ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবিত থাকা অবস্থায় যেমন উম্মুল মুমেনীনরা প্রায় সময় শুকনা খেজুর আর পানি খেয়ে জীবন ধারন করতেন, ইসলামি খেলাফতের গৌরবজ্জোল সময়েও উম্মুল মুমেনীনরা একদম সাধাসিধে জীবন যাপন করে গেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু কুলাঙ্গার নাস্তিক ব্লগার থাবা বাবা, আসিফ মহিউদ্দীন এই উম্মুল মুমেনীনদের চরিত্র কে নিয়ে “লাড়ায়ে দে”, “মহাপবিত্র আহম্মোকপিডিয়া ও একটি শান্তির ধর্ম” এইসব অশ্লীল ব্লগ ও ফেইসবুক নোট লিখে। আর যথারীতি স্যামহোয়ার ইন ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, আমার ব্লগ, সচলায়তন ব্লগের মডারেটর রা উম্মুল মুমেনীনদের কে নিয়ে লেখা এইসব চটি পোস্ট গুলি বহাল তবিয়তে প্রথম পাতায় রাখত। আখিরাতের ময়দানে বাংলাদেশের মুসলমানরা কিভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফায়াত প্রত্যাশা করবে এখন এটাই আমার প্রশ্ন ?
ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব
আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অস্তিত্ত্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমান
আল কোরআনের ব্যাকরণগত সৌন্দর্য্যের কিছু অসাধারন দিক
বনী কুরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদি হত্যা করা প্রসঙ্গে একটি পর্যালোচনা
ইসলামি শরীয়াহ কি কখনই দাস দাসী প্রথাকে সমর্থন করেছিল
আমাদের মুসলমানদের কেন একটি কেন্দ্রীয় খিলাফত রাষ্ট্র প্রয়োজন ?
হাতের কাছে রাখার মত কয়েকটি চমৎকার ইসলামী বই
পুরুষ জাতির বহু বিবাহ প্রথা কে ইসলামী শরীয়াহ আসলে কতটুকু সমর্থন করে
হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম ২য় পর্ব
মেসওয়াক করার ফযীলত
আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" এই হাদীস টির মূল ব্যাখ্যা টি কি ?
সিজদায়ে সাহু সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল
সহিহ শুদ্ধ ভাবে নামায পড়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় মাসলা
বিষয়: বিবিধ
৩০৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন