সেলিব্রেটি হয়েও অপমানিত ভারতের মুসলিম নামধারী মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা

লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ০৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:১৩:২৩ দুপুর



" প্রথমত আমি তোমাকে চাই, দ্বীতিয়ত আমি তোমাকে চাই, তৃতীয়ত আমি তোমাকে চাই, শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে চাই " বাংলা গানের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় একটা গান যেই গানটি উঠতি বয়সের প্রেমে পড়া সকল তরুন তরুণীরা অবশ্যই শুনে থাকে। হ্যাঁ এই গানটি গেয়েছেন কলকাতার বিখ্যাত সংগীত শিল্পী কবীর সুমন। আর ১০ টা ছেলের মত আমিও জানতাম কবীর সুমন একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছেন। কিন্তু সেইদিন ফেইসবুকে উনার অফিসিয়াল পেইজ Kabir Sumon এর একটি পোষ্ট পড়ে আমি প্রথম জানতে পারলাম কবীর সুমন একটি হিন্দু পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন, উনার আগের নাম ছিল সুমন চট্টোপাধ্যায়। ২০০০ সালে উনি মুসলমান হয়ে সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে কবীর সুমনে পরিনত হন। অনেকেই তখন বলা শুরু করে যে সাবিনা ইয়াসমিন কে বিয়ে করার জন্য সুমন চট্টোপাধ্যায় মুসলমান হয়েছেন। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের বুকে আন্তঃ ধর্মীয় বিয়ে নতুন কিছু না। শাহরুখ খান, আমির খান, সাইফ আলী খানদের স্ত্রীরা কেউই মুসলমান নন। সেই হিসাবে সুমন চট্টোপাধ্যায় হিন্দু ধর্মে থেকেই সাবিনা ইয়াসমিন কে বিয়ে করতে পারতেন। সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে কবীর সুমনে রূপান্তরিত হওয়ার কারনে এই কবীর সুমন কে বর্তমানে পদে পদে অপমানিত হতে হচ্ছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে কবীর সুমন বর্তমানে একজন পার্লামেন্টারিয়ান বা সংসদ সদস্য। তৃণমূল কংগ্রেস থেকে মনোনয়ন নিয়ে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের সি পি এমের প্রার্থীকে প্রায় ৫৯ হাজার ভোটে হারিয়ে কবীর সুমন একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মুসলমান হবার কারনে উনাকে পদে পদে যে অপমানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে এই বিষয় টা উনি গত ৩০ অক্টোবর উনার অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে উল্লেখ করেন। এই লিংক https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=592233644147043&id=128049513898794 এ গেলে আপনারা কবীর সুমনের মুল পোস্ট টি পড়তে পারবেন।

একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য হবার কারনে কবীর সুমন কে অনেক সরকারী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে হয়। অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তারা উনাকে সবার সামনে সুমন চট্টোপাধ্যায় নামে সম্বোধন করে। তখন অনুষ্ঠানের মাঝেই সবার সামনে কবীর সুমন কে বলতে হয় সেই ২০০০ সালেই আমি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে কবীর সুমনে রূপান্তরিত হয়েছি। দয়া করে আপনারা আমাকে আমার মুসলমান নাম কবীর সুমন বলেই ডাকুন। এমনকি মুসলমান হবার কারনে উনাকে সবার সামনে এই কথাও জিজ্ঞাস করা হয় যে মুসলমান হবার সময়ে আপনি কি মুসলমানী করেছিলেন ? অর্থ্যাৎ পদে পদে বাংলা গানের এই স্বনামধন্য শিল্পী কে এই হিন্দুরা সবার সামনে প্রতিনিয়ত অপমান করে যাচ্ছে।

মুসলমান হবার কারনে একজন সাংসদ সদস্য হবার পরেও উনাকে হিন্দুরা সবার সামনে প্রতিনিয়ত কি পরিমান অপমান করছে তা উনার লেখা থেকেই পড়ুন- “ক'দিন আগে, এম পি হিসেবেই আমি গড়িয়ার এক আবাসন সমবায়ে গিয়েছিলাম বাসিন্দাদের কিছু অভিযোগের কথা শুনতে। তাঁদের নর্দমা দরকার, জল দরকার। সুন্দর সভা হচ্ছে। প্রবীণ প্রবীণারা বসে। খুবই ভদ্র পরিবেশ। হঠাৎ তাঁদের এক (হিন্দু) মুখপাত্র আমায় সব্বার সামনে জিজ্ঞেস করলেন: " আচ্ছা, আপনি রোজ নামাজ পড়েন?" জল-নিকাশ, নর্দমা, জল সরবরাহ, রাস্তাঘাট, কর্পোরেশনের অনুজ্ঞা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। সেই শিক্ষিত, অধ্যাপক, সমবায়-পদাধিকারী কিন্তু আমায় দিব্যি জিজ্ঞেস করতে পারলেন এটা। আমি যদি "চট্টোপাধ্যায়" থাকতাম, উনি কি আমায় জিজ্ঞেস করতে পারতেন :"আপনি রোজ গায়ত্রী জপ করেন? আহ্নিক করেন?" - হা হা। এখন পর্যন্ত দু'জন "বন্ধু" (এখন আর নন) আমায় খাটো গলায় জিজ্ঞেস করেছিলেন : "আচ্ছা, আপনাকে/তোমাকে কি ইয়ে... মানে... ইসে... মানে ..." আর বলে উঠতে পারছিলেন না। তাই আমিই তাঁদের সাহায্য করেছিলাম: "সুন্নৎ/মুসলমানি করতে হয়েছে?" তাঁরা এক গাল হেসে বলেছিলেন - "হ্যাঁ হ্যাঁ, ঐটাই।" আমি তাঁদের বলেছিলাম - আমার সুন্নৎ/মুসলমানি হয়েছিল ছ'বছর বয়সেই। পারিবারিক ডাক্তার হিমাংশুবাবু করে দিয়েছিলেন - ফাইমোসিস হয়েছিল কি না। “

শুধু তাই নয় সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে কবীর সুমনে রূপান্তরিত হওয়ার কারনে শিবের লিঙ্গ/Penis পুজা করা হিন্দু অভিভাবক রা তাদের ছেলে মেয়েদের কে আর কবীর সুমনের গান শুনতে দেয় না। কবীর সুমনের গানের অনেক ভক্ত কেঁদে কেটে উনাকে বলছে যে -"দাদা আপনি আবার মুসলমান হয়ে যান। আপনি হিন্দু থেকে মুসলমান হবার কারনে আমার পিতা আপনার গানের সকল ক্যাসেট ফেলে দিয়েছে। " শেষমেশ ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে কবীর সুমন বললেন- “আমি এক গণতান্ত্রিক দেশের আয়করদাতা নাগরিক। আমি যে ধর্ম ইচ্ছে নেব, যে নাম ইচ্ছে বানাবো নিজের নামে, তাতে কার কী? হিন্দু হলে এ-দেশে সেকিউলার হওয়া যায় সরাসরি। হিন্দু নামধারী automatically সেকিউলার। মুসলমান হলেই অমনি সে সেকিউলার হওয়ার অধিকার খোয়ালো। অমনি সে মৌলবাদী। এখনও বারবার এটাই দেখছি। অতএব আমি এক গর্বিত মুসলমান। আমার পুরো নাম হচ্ছে মহম্মদ ইয়াকুব আসিফ কবীর আরিফ হেদায়তুল্লাহ্ সুমন শেখ “

কবীর সুমন নামধারী মুসলমান তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি এই ব্লগটি লিখেছি অন্য উদ্দেশ্যে। আমার লেখার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে ভারতের মুসলিম বিদ্বেষী বিষাক্ত আবহ সম্পর্কে ধারণা দেয়া। যদি আমরা আমাদের দেশের হিন্দুদের ব্যাপারে সাবধান না হই, এই বিষাক্ত আবহ আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনলাইনে ইতিমধ্যেই যা ছড়িয়ে পড়েছে হিন্দুদের দৌরাত্মে

একটু চিন্তা করে দেখুন ভারতে মুসলমানদের কে এত চাপে রাখা হয় যে সুমন কবীরের মতো সেলিব্রেটিকেও অপমানিত হতে হয় পদে পদে।

বিপরীতে বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়াবাড়িকে এতটাই প্রশ্রয় দেয়া হয় যে, হিন্দুরা তাদের কুৎসিত জিহবা বের করা কালী পূজা/দেওয়ালি উপলক্ষ্যে আতশবাজি ফাটিয়ে গোটা সিলেট শহর কাঁপিয়ে দিতে পারে।

তাছাড়া এই আওয়ামী আমলে মুসলমান কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দিয়ে হিন্দুদেরকে ব্যাপকহারে উচ্চপদে পদোন্নতি দেয়া হয়, অন্যদিকে ভারতে মুসলমানদের কে সরকারী চাকরিতে নেয়াই হয়না।

একটু চিন্তা করে দেখুন কবীর সুমনের মত একজন সাংসদ সদস্য যদি মুসলমান হবার কারনে পদে পদে এত অপমান সহ্য করতে হয় তাইলে ভারতের কোন সাধারন হিন্দুর পক্ষে কি সম্ভব মুসলমান হওয়া ? আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে প্রথম আলো পত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতায় একটা খবর পড়েছিলাম যে কলকাতার এক হিন্দু শিল্পপতীর মেয়ে মুসলমান হয়ে তারপর এক মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করেছিল। কিছুদিন সংসার করার পর ঐ মেয়ের পিতা ঐ হিন্দু শিল্পপতী তার মেয়ের Husband কে হত্যা করে তারপর রেললাইনের পাশে ফেলে রাখে যেন পুলিশের খাতায় এটা একটা আত্মহত্যা হিসাবে গণ্য হয়। কিন্তু ঐ হিন্দু শিল্পপতীর মেয়ে শক্ত ভাবে অভিযোগ করে যে তার Husband কে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনাটা তখন জ্যোতি বসুর মসনদ কেও কাপিয়ে দেয়।

শাবানা আজমী আর ইমরান হাশমী মর মত বলিউঠ তারকাদের কেও মুম্বাই শহরে ফ্ল্যাট কিনতে দেয়া হয়নি

আর IPL এ পাকিস্তানি খেলোয়ারদের কে আনতে চাওয়াও শিব সেনা শাহরুখ খানকে সরাসরি দেশত্যাগ করতে বলেছে।

ভারতের মুসলমানরা ভারতের জনসংখ্যার শতকরা বিশভাগ হলেও সরকারী চাকুরীতে মুসলমানদের চাকরীর হার শতকরা ২ ভাগেরও কম। ভারতের মুসলমানদের কে কোন সরকারী চাকুরিই দেয়া হয় না। কিন্তু ভারতের কারাগার গুলিতে মুসলমান হাজতী কয়েদীদের হার শতকরা ৪০ ভাগেরও বেশী। ছোট খাট অনেক অপরাধেই ভারতের মুসলমানদের কে সাজা দিয়ে দেওয়া হয়। যেই নরেন্দ্র মোদীর অনুসারীরা ২০০২ সালে গুজরাটের হাযার হাযার মুসলমান মেয়েদের কে ধর্ষন করে তারপর আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে সেই নরেন্দ্র মোদীকেই এখন হিন্দুরা তাদের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত করবে। ছি।

বর্তমানে ভারতের বুকে মুসলমান হয়ে জন্মানোর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কিছু নেই।

ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব

আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অস্তিত্ত্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমান

আল কোরআনের ব্যাকরণগত সৌন্দর্য্যের কিছু অসাধারন দিক

বনী কুরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদি হত্যা করা প্রসঙ্গে একটি পর্যালোচনা

ইসলামি শরীয়াহ কি কখনই দাস দাসী প্রথাকে সমর্থন করেছিল

আমাদের মুসলমানদের কেন একটি কেন্দ্রীয় খিলাফত রাষ্ট্র প্রয়োজন ?

হাতের কাছে রাখার মত কয়েকটি চমৎকার ইসলামী বই

পুরুষ জাতির বহু বিবাহ প্রথা কে ইসলামী শরীয়াহ আসলে কতটুকু সমর্থন করে

হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম ২য় পর্ব

মেসওয়াক করার ফযীলত

আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" এই হাদীস টির মূল ব্যাখ্যা টি কি ?

সিজদায়ে সাহু সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল

সহিহ শুদ্ধ ভাবে নামায পড়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় মাসলা

বিষয়: রাজনীতি

৫৫৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File