বাংলাদেশের বিচার বিভাগ আসলে কতটুকু স্বাধীন ?

লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ০৯ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:২৯:১৪ রাত



বাংলাদেশের বিচার বিভাগ যে কতটুকু পক্ষপাত দুষ্ট আর কতটুকু একচোখা তা আমি ৬ মাস জেল খাটার সময় হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। শুধু পক্ষপাত দুষ্ট বললে ভুল হবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ পুরাপুরি নির্বাহী বিভাগের আদেশে চলে। কার জামিন হবে কার জামিন হবে না এগুলি সব আইন মন্ত্রণালয় থেকে ঠিক করে দেয়া হয়। আপনারা জানেন যে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে নাস্তিকত্যবাদ প্রচারের নামে অনলাইনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মুমেনীনদের কে গালিগালাজ করা হচ্ছে। পুলিশ বাহিনী RAB তা দেখেও না দেখার ভান করত। থাবা বাবা/রাজীব মারা যাওয়ার পর রাজীবের জানাজার ইমাম কে হত্যার হুমকি দেয়ার জন্য আমাকে ২৪ ফেব্রুয়ারী পুলিশ গ্রেফতার করে। ঢাকার মিন্টু রোডের ডিবি অফিসে আমাকে একটানা ৭ দিন রিমান্ড নেয়া হয়। তখন পর্যন্ত কিন্তু কোন নাস্তিক ব্লগারদের কেই গ্রেফতার করা হয় নি। এমনকি মার্চের ১৩ তারিখে রাজীবের জানাজার ইমাম কে হত্যার হুমকি দেয়ার জন্য যখন আমার নামে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১) ধারা ও পেনাল কোড ৫০৬ ধারা মোতাবেক মামলা হয় তখনো আসিফ মহিউদ্দীন আল্লামা শয়তানদের গ্রেফতার করা হয় নি। তথ্য প্রযুক্তি আইনে আমার মামলার চার্জ গঠন হয় জুন মাসের ৪ তারিখে আর আসিফ মহিউদ্দীন আল্লামা শয়তানদের চার্জ গঠন হয়েছে এই কিছুদিন আগে ৮ ই সেপ্টেম্বর। অর্থ্যাত্‍ আমার চার্জ গঠনের ৩ মাস পর এই নাস্তিকদের নামে চার্জ গঠন হল। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে আমার মামলার ১ম সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হয় আগস্টের ২৬ তারিখে আর আসিফ মহিউদ্দীন আল্লামা শয়তানদের এখনো সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হয়নি। ঢাকার জর্জকোর্টে আমার পরবর্তী ২য় সাক্ষ্য গ্রহন ২৯ অক্টোবর আর আসিফ মহিউদ্দীন আল্লামা শয়তানদের ১ম সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হবে নভেম্বরের ৬ তারিখে। আসিফ মহিউদ্দীন আল্লামা শয়তানরা মাত্র ৩ মাসেই জর্জ কোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যায় আর আমি ফারাবী একটানা ৬ মাস কাশিমপুর কারাগারে জেল খাটার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলাম। যদিও আমার আত্মীয় স্বজনরা আমার জন্য মোট ৭ বার ঢাকার জর্জকোর্টে জামিন আবেদন করেছিল কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমি ঢাকার জর্জকোর্ট থেকে আর জামিন পেলাম না। আসিফ মহিউদ্দীন আল্লামা শয়তানদের মামলা ছিল ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ জহুরুল হকের কোর্টে আর আমার মামলাও ছিল ঠিক একই কোর্টে একই জজের কাছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ জহুরুল হক আসিফ মহিউদ্দীন আল্লামা শয়তানদের কে ঠিকই জামিন দিতে পারলেও কিন্তু আমার আত্মীয় স্বজনরা মোট ৭ বার এই ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ জহুরুল হকের কাছে জামিন চেয়েও জামিন পেল না। আপনারা জানেন যে ঈদের আগে বাংলাদেশের কোর্ট থেকে প্রচুর জামিন হয়। বড় বড় শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও ঈদের আগে জামিন পেয়ে যায়। ঈদুল ফিতরের ঠিক ১ সপ্তাহ আগে আমার উকিল ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ জহুরুল হকের কাছে আমার জামিনের আবেদনে এই কথা বলে -“ ইসলামের বিপক্ষে কথা বলার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি আইনে অভিযুক্ত ৪ জন নাস্তিক ব্লগার কে আপনি জামিন দিয়ে দিছেন, আর আমার মক্কেল ইসলামের পক্ষে কথা বলার জন্য তার নামেও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে। যেহেতু আমার মক্কেল ফারাবীর কারাবাস ঐ ৪ জন নাস্তিক ব্লগারের চেয়ে অনেক বেশী তাই আমার মক্কেল আপনার কাছে জামিন পেতেই পারে। কারন এই ৫ জনের মামলাই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিভিন্ন ধারায়।“ কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমি ঢাকার জর্জকোর্ট থেকে আর জামিন পেলাম না। পরবর্তীতে আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজন কে প্রচুর অর্থ খরচ করে হাইকোর্ট থেকে আমার জামিন নিতে হল। তাও আবার মাত্র ৬ মাসের জন্য আমি অস্থায়ী জামিন পেলাম। আর আসিফ মহিউদ্দীন আল্লামা শয়তানরা জর্জ কোর্ট থেকেই স্থায়ী জামিন পেয়ে গেল। একই দেশে ফারাবীর জন্য এক আইন আর কুলাঙ্গার নাস্তিক ব্লগারদের জন্য আরেক আইন।

আমার চার্জশীটে বলা হয়েছে থাবা বাবা/রাজীব মারা যাওয়ার পর আমি নাকি রাজীবের লেখা ফেইসবুক ও ব্লগে শেয়ার করে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চেয়েছি। আমি থাবা বাবা/রাজীবের মৃত্যুর পর রাজীব সম্পর্কে একটাও মিথ্যা কথা লিখি নাই। রাজীবের প্রত্যেকটা লেখার লিংক উল্লেখ করে আমি রাজীবের মৃত্যুর পর রাজীব কে নিয়ে Status দিছি। আমার Time Line এ ফেব্রুয়ারী মাসের ১৬তারিখ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত আমার Status গুলি পড়লেই আমার কথার সত্যতা আপনারা খুজে পাবেন। আমার নামে মাত্র ১ টা মামলা থাকলেও আমার কোর্টের আগের দিন বিকাল বেলায় আমাকে ডান্ডাবেড়ি পড়ানো হত। এই ডান্ডাবেড়ি পরেই আমাকে গোসল করা, রাতে ঘুমানো, নামায পড়া ও কোর্টে যেতে হত। গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এই ডান্ডাবেড়ি পরিয়েই আমাকে ঢাকার জর্জ কোর্ট/ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে নিয়ে যাওয়া হত। কিন্তু জেল কোডের বিধান মতে কারো নামে ৩ টা মামলে থাকলেই শুধু তাকে ডান্ডাবেড়ি পড়ানো যায়। কিন্তু আমার নামে ছিল মাত্র একটি মামলা তাও আবার কোন হত্যা বা অস্ত্র মামলা নয়। এইখানে উল্লেখ্য আমাকে জেলখানায় ডান্ডাবেড়ি পড়ানো হলেও আসিফ মহিউদ্দীন আল্লামা শয়তানদের কে কিন্তু কখনোই জেলখানায় ডান্ডাবেড়ি পড়ানো হয় নি। যদিও আমার ও আসিফ মহিউদ্দীন, আল্লামা শয়তানদের নামেও ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিভিন্ন ধারায় ১ টি মামলাই হয়েছিল। একই দেশে আমাকে ডান্ডাবেড়ি পড়ানো হয় আর কুলাঙ্গার নাস্তিক ব্লগারদের কে ডান্ডাবেড়ী পড়ানো হয় না, ছি। জুনের ৪ তারিখ আমার কোর্ট থাকায় জুনের ৩ তারিখ বিকাল বেলায় আমাকে জেল কর্তৃপক্ষ ডাকে ডান্ডাবেড়ি পড়তে। আমি তখন একটা পন করেছি যে আমি আর ডান্ডাবেড়ি পড়ব না। আমি যখন আমার পায়ে ২০ কেজি ওজনের ডান্ডাবেড়ি পড়তে রাজি হচ্ছি না তখন সিআইডি জমাদার বদরুল এসে বলল- ”ফারাবী তোমার নামে মাত্র ১ টা মামলা থাকলেও উপরের নির্দেশে তোমাকে ডান্ডাবেড়ি পড়তে হবে। “ জেল খানায় উপরের নির্দেশ বলতে বুঝায় আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ কে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ, নিম্ন আদালত, আর জেল খানার অবস্থা। যে ব্যক্তি সারা জীবন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মুমেনীনদের কে গালিগালাজ করে গেল মরার পর সে হয়ে গেল ২য় মুক্তিযুদ্ধার ১ম শহীদ, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নালা ডাস্টবিন অলি গলী পার হয়ে নরকের কীট রাজীবের বাসায় চলে যায়, মাত্র ৩ মাসেই আসিফ মহিউদ্দীন আল্লামা শয়তানরা জামিন পেয়ে যায় আর শুধু মাত্র নাস্তিকদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যই আমি ৬ মাস জেল খাটি, জেল খানার ভিতর ডান্ডাবেড়ি পরি। ভাই জেলখানায় ডান্ডাবেড়ি পড়তে পড়তে আমার পায়ে ফোস্কা পড়ে গেছে। মাঝে মাঝে রাতের বেলা আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় মনে হয় এখনো আমি জেল খানার ভিতরে ডান্ডাবেড়ি পরে আছি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারর যারা আমার সাথে এই কঠোর আচরন গুলি করেছে আমি তাদের সকলকেই ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি চাই না আমার কারনে কোন মুসলমান আখিরাতে কোন সমস্যায় পড়ুক।

ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব

আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অস্তিত্ত্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমান

আল কোরআনের ব্যাকরণগত সৌন্দর্য্যের কিছু অসাধারন দিক

বনী কুরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদি হত্যা করা প্রসঙ্গে একটি পর্যালোচনা

ইসলামি শরীয়াহ কি কখনই দাস দাসী প্রথাকে সমর্থন করেছিল

আমাদের মুসলমানদের কেন একটি কেন্দ্রীয় খিলাফত রাষ্ট্র প্রয়োজন ?

হাতের কাছে রাখার মত কয়েকটি চমৎকার ইসলামী বই

পুরুষ জাতির বহু বিবাহ প্রথা কে ইসলামী শরীয়াহ আসলে কতটুকু সমর্থন করে

হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম ২য় পর্ব

মেসওয়াক করার ফযীলত

আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" এই হাদীস টির মূল ব্যাখ্যা টি কি ?

সিজদায়ে সাহু সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল

সহিহ শুদ্ধ ভাবে নামায পড়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় মাসলা

বিষয়: রাজনীতি

২৭৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File