বিন্দুর ছেলে-সাত

লিখেছেন লিখেছেন ঝিঙেফুল ০৭ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:২৫:৪৬ দুপুর



নূতন বাড়িতে যাদব, অন্নপূর্ণা ও অমুল্য ব্যতীত আর সকলেই আসিয়াছিল। বাহির হইতে বিন্দুর পিসি, পিসির মেয়ে, নাতি-নাতনি, বাপের বাড়ি হইতে তাহার বাপ-মা, তাঁহাদের দাস-দাসী প্রভৃতিতে সমস্ত গৃহ পরিপূর্ণ হইয়া গিয়াছিল। এখানে আসিবার দিনটাতেই শুধু বিন্দুকে কিছু বিমনা দেখাইয়াছিল, কিন্তু পরদিন হইতেই সে ভাব কাটিয়া গেল। রাগ পড়িলেই অন্নপূর্ণা আসিবেন, ইহাতে বিন্দুর লেশমাত্র সংশয় ছিল না। এখানে পূজা দিয়া লোকজন খাওয়াইতে হইবে, সে তাহারই উদ্যোগ-আয়োজনে ব্যস্ত হইয়া পড়িল।

বিন্দুর বাপ জিজ্ঞাসা করিলেন, মা, তোর ছেলেকে দেখছি নে যে?

বিন্দু সংক্ষেপে কহিল, সে ও-বাড়িতে আছে।

মা প্রশ্ন করিলেন, তোর জা বুঝি আসতে পারলেন না?

বিন্দু কহিল, না।

তিনি নিজেই তখন বলিলেন, সবাই এলে ও-বাড়িতেই বা থাকে কে? পৈতৃক ভিটে বন্ধ করেও ত রাখা চলে না।

বিন্দু চুপ করিয়া কাজে চলিয়া গেল।

যাদব এ-কয়দিন প্রত্যহ সন্ধ্যার সময় একবার করিয়া বাহিরে আসিয়া বসিতেন, কথাবার্তা বলিয়া সংবাদ লইয়া ফিরিয়া যাইতেন, কিন্তু ভিতরে ঢুকিতেন না। গৃহপূজার পূর্বের রাত্রে তিনি ভিতরে ঢুকিয়া এলোকেশীকে ডাকিয়া তত্ত্ব লইতেছিলেন, বিন্দু জানিতে পারিয়া আড়ালে দাঁড়াইয়া শুনিতে লাগিল। পিতার অধিক এই ভাশুরের কাছে ছেলেবেলা হইতে সেদিন পর্যন্ত সে কত আদর পাইয়াছে, কত স্নেহের ডাক শুনিয়াছে, যাদব ‘মা’ বলিয়া ডাকিতেন, কোনদিন ‘বৌমা’ পর্যন্ত বলেন নাই, এই ভাশুরের কাছে জায়ের সহিত কলহ করিয়া কত নালিশ করিয়াছে, কোনটি তাহার কোনদিন উপেক্ষিত হয় নাই, আজ তাঁহার কাছে অপরিসীম লজ্জায় বিন্দুর কণ্ঠরোধ হইয়া গেছে। যাদব চলিয়া গেলেন। সে নিভৃতে ঘরের মধ্যে মুখে আঁচল গুঁজিয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কাঁদিতে লাগিল—চারিদিকে লোক, পাছে কেহ শুনিতে পায়।

পরদিন সকালবেলা বিন্দু স্বামীকে ডাকাইয়া আনিয়া বলিল, বেলা হচ্চে, পুরুত বসে আছেন—বঠ্‌ঠাকুর এখনো ত এলেন না!

মাধব বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, তিনি কেন?

বিন্দু ততোধিক বিস্মিত হইয়া বলিল, তিনি কেন? তিনি ছাড়া এ-সব করবে কে?

মাধব বলিল, হয় আমি, না হয় ভগ্নীপতি প্রিয়বাবু করবেন। দাদা আসতে পারবেন না।

বিন্দু ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, আসতে পারবেন না বললেই হ’ল? তিনি থাকতে কি কারো অধিকার আছে? না না, সে হবে না—তিনি ছাড়া আমি কাউকে কিছু করতে দেব না।

মাধব বলিল, তবে বন্ধ থাক। তিনি বাড়ি নেই, কাজে গেছেন।

এ-সমস্ত বড়গিন্নীর মতলব! তা হলে সেও আসবে না দেখচি। বলিয়া বিন্দু কাঁদ-কাঁদ হইয়া চলিয়া গেল। তাহার কাছে পূজা-অর্চনা, উৎসব-আয়োজন, খাওয়ান-দাওয়ান, সমস্তই একমুহূর্তে একেবারে মিথ্যা হইয়া গেল। তিনদিন ধরিয়া অনুক্ষণ সে এই চিন্তাই করিয়াছে, আজ বঠ্‌ঠাকুর আসিবেন, দিদি আসিবেন, অমূল্য আসিবে। আজিকার সমস্তদিনব্যাপী কাজকর্মের উপর সে যে মনে মনে তাহার কতখানি নির্ভর করিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া বসিয়া ছিল, সে কথা সে ছাড়া আর কেহই জানিত না। স্বামীর একটা কথায় সে-সমস্ত মরীচিকার মত অন্তর্ধান হইয়া যাইবামাত্রই উৎসবের বিরাট পণ্ডশ্রম পাষাণের মত তাহার বুকের উপর চাপিয়া বসিল।

এলোকেশী আসিয়া বলিলেন, ভাঁড়ারের চাবিটা একবার দাও ছোটবৌ, ময়রা সন্দেশ নিয়ে এসেচে।

বিন্দু ক্লান্তভাবে বলিল, ঐখানে কোথাও এখন রাখ ঠাকুরঝি, পরে হবে।

কোথায় রাখব বৌ, কাকে-টাকে মুখ দেবে যে!

তবে ফেলে দাও গে, বলিয়া বিন্দু অন্যত্র চলিয়া গেল।

পিসিমা আসিয়া বলিলেন, হাঁ বিন্দু, এ-বেলা কতখানি ময়দা মাখবে, একবার যদি দেখিয়ে দিতিস।

বিন্দু মুখ ভার করিয়া বলিল, কতখানি মাখবে তার আমি কি জানি? তোমরা গিন্নী-বান্নী, তোমরা জান না?

পিসিমা অবাক হইয়া বলিলেন, শোন কথা! কত লোক তোদের এ-বেলা খাবে, আমি তার কি জানি?

বিন্দু রাগিয়া বলিল, তবে বল গে ওঁকে। সে ছিল দিদি; অমূল্যধনের পৈত্যের সময় তিনদিন ধরে শহরের সমস্ত লোক খেলে, তা একবার বলেনি, ছোটবৌ ওটা কর্‌ গে, সেটা দেখ্‌ গে! তার একটা হাড়ের যা যোগ্যতা, এ বাড়ির সমস্ত লোকের তা নেই। বলিয়া আর একটা ঘরে চলিয়া গেল।

কদম আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, দিদি, জামাইবাবু বলচেন পূজোর কাপড়-চোপড়গুলো—

তাহার কথা শেষ হইবার পূর্বেই বিন্দু চেঁচাইয়া উঠিল, খেয়ে ফ্যাল্‌ আমাকে, তোরা খেয়ে ফ্যাল্‌! যা দূর হ সামনে থেকে।

কদম শশব্যস্তে পলায়ন করিল।

খানিক পরে মাধব আসিয়া কয়েকবার ডাকাডাকি করিয়া বলিল, ওগো শুনতে পাচ্ছ?

বিন্দু কাছে সরিয়া আসিয়া ঝঙ্কার দিয়া বলিয়া উঠিল, পাচ্ছি না। আমি পারব না। পারব না। পারব না! হ’ল?

মাধব অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল।

বিন্দু বলিল, কি করবে? আমার গলায় ফাঁসি দেবে? না হয় তাই দাও, বলিয়া কাঁদিয়া দ্রুতপদে সরিয়া গেল।

বেলা বাড়িয়া উঠিতে লাগিল।

বিন্দু বিনা কাজে ছটফট করিয়া এ-ঘর ও-ঘর করিয়া কেবলি লোকের দোষ ধরিয়া বেড়াইতে লগিল। কে তাড়াতাড়ি পথের উপর কতকগুলো বাসন রাখিয়া গিয়াছিল, বিন্দু টান মারিয়া সেগুলো উঠানের উপর ফেলিয়া দিয়া, কি করিয়া কাজ করিতে হয় শিখাইয়া দিল; কার ভিজা কাপড় শুকাইতেছিল, উড়িয়া তাহার গায়ে লাগিবামাত্র টানিয়া খন্ড খন্ড করিয়া ছিঁড়িয়া ফেলিয়া, কি করিয়া কাপড় শুকাইতে হয়, বুঝাইয়া দিল। যে কেহ তাহার সামনে পড়িল, সে-ই সভয়ে পাশ কাটাইয়া দাঁড়াইল।

পুরোহিত-বেচারা নিজে ভিতরে আসিয়া বলিলেন, তাই ত! বেলা বাড়তে লাগল—কোন বিলি-ব্যবস্থাই দেখিনে।—

বিন্দু আড়ালে দাঁড়াইয়া কড়া করিয়া জবাব দিল, কাজকর্মের বাড়িতে বেলা একটু হয়ই।বলিয়া আর একটা বাসন পা দিয়া ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিয়া আর একটা ঘরের মেঝের উপর নির্জীবের মত বসিয়া রহিল। মিনিট-দশেক পরে হঠাৎ তাহার কানে একটা পরিচিত কণ্ঠের শব্দ যাইবামাত্রই সে ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া দরজা দিয়া মুখ বাড়াইয়া দেখিল, অন্নপূর্ণা আসিয়া প্রাঙ্গণে দাঁড়াইলেন।

বিন্দু দুঃখে অভিমানে কাঁদিয়া ফেলিল। চোখ মুছিয়া সশব্দে সুমুখে আসিয়া গলায় আঁচল দিয়া হাতজোড় করিয়া বলিল, বেলা দশটা-এগারটা বাজে,আর কত শত্রুতা করবে দিদি? আমি বিষ খেলে তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় ত তাই না হয় বাড়ি গিয়ে এক বাটি পাঠিয়ে দাও। বলিয়া চাবিব গোছাটা ঝনাৎ করিয়া তাঁহার পায়ের নীচে ফেলিয়া দিয়া নিজের ঘরে গিয়া দোর দিয়া মাটির উপর লুটাইয়া পড়িয়া কাঁদিতে লাগিল।

অন্নর্পূণা নিঃশব্দে চাবির গোছা তুলিয়া লইয়া দোর খুলিয়া ভাঁড়ারে গিয়া ঢুকিলেন।

অপরাহ্নে লোকজনের যাতায়াত, খাওয়ানো-দাওয়ানো ভিড় কমিয়া গিয়াছিল; তবুও বিন্দু কিসের জন্য কেবলি অস্থির হইয়া ঘর-বার করিতে লাগিল।

ভৈরব আসিয়া বলিল, অমূল্যবাবু ইস্কুলে নেই।

বিন্দু তাহার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া বলিল, হতভাগা! ছেলেরা রাত্রি পর্যন্ত ইস্কুলে থাকে? নূতন লোক তুমি? ও-বাড়িতে গিয়ে একবার দেখতে পারনি?

ভৈরব বলিল, সে-বাড়িতেও তিনি নেই।

বিন্দু চেঁচাইয়া বলিল, কোথায় কোন্‌ ছোটলোকদের ছেলের সঙ্গে ডাংগুলি খেলচে। আর কি তার প্রাণে ভয়-ডর আছে, এইবার একটা চোখ কানা হলেই বড়গিন্নীর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়! তা হলে দশ হাত বার করে খায়—যা, যেখানে পাস খুঁজে আন।

অন্নপূর্ণা ভাঁড়ারের দোরে বসিয়া আর পাঁচজন বর্ষীয়সীর সহিত কথাবার্তা কহিতেছিলেন। ছোটবৌর তীক্ষকন্ঠ শুনিতে পাইলেন।

ঘন্টা-খানেক পরে ভৈরব আসিয়া জানাইল, অমূল্যবাবু ঘরে আছে, এল না। বিন্দু বিশ্বাস করিতে পারিল না।

এল না কি রে? আমি ডাকচি বলেছিলি?

ভৈরব মাথা নাড়িয়া বলিল, হ্যাঁ, তবু এল না।

বিন্দু এক মুহূর্ত চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, তার দোষ কি? যেমন মা, তেমনি ছেলে হবে ত! আমারো কটু দিব্যি রইল যে, অমন মা-ব্যাটার মুখ দর্শন করব না।

অনেক রাত্রে অন্নপূর্ণা বাটী ফিরিতে উদ্যত হইলে, পৌঁছাইয়া দিবার জন্য মাধব নিজে আসিয়া উপস্থিত হইল। বিন্দু দ্রুতপদে অদূরে আসিয়া স্বামীকে উদ্দেশ করিয়া ভীষণ-কন্ঠে বলিল, পৌঁছে দিতে ত যাচ্ছ, উনি জলস্পর্শ করেন নি, তা জান?

মাধব বলিল, সে তোমার জানবার কথা—আমার নয়। সমস্ত নষ্ট হয় দেখে, নিজে গিয়ে ডেকে এনেছিলাম, এখন নিজে পৌঁছে দিতে যাচ্ছি।

বিন্দু বলিল, বেশ ভাল কথা। তা হলে দেখচি তুমিও ঐদিকে।

মাধব জবাব না দিয়া বলিল, চল বৌঠান, আর দেরি ক’রো না।

চল ঠাকুরপো; বলিয়া অন্নপূর্ণা পা বাড়াইতেই বিন্দু গর্জন করিয়া বলিল, লোকে কথায় বলে দেইজী শত্রু। নিজের যা মুখে এলো, দশটা মিথ্যে সাজিয়ে বললে—কটকট করে দিব্যি করলে, চার দিন চার রাত ছেলের মুখ দেখতে দিলে না—ভগবান এর বিচার করবেন।

বলিয়া মুখে আঁচল গুঁজিয়া কান্না রোধ করিয়া রান্নাঘরের বারান্দায় আসিয়াই উপুড় হইয়া মূর্ছিত হইয়া পড়িল। একটা গোলমাল উঠিল; মাধব অন্নপূর্ণা দুইজনেই শুনিতে পাইলেন। অন্নপূর্ণা ফিরিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, কি হ’ল দেখি!

মাধব কহিল, দেখতে হবে না, চল।

কলহের কথাটা এ-কয়দিন গোপন ছিল, আর রহিল না। পরদিন বাড়ির মেয়েরা এক জায়গায় বসিলে, এলোকেশী বলিয়া উঠিলেন, জায়ে জায়ে ঝগড়া হয়েচে, ছেলের কি হ’ল, সে একবার আসতে পারলে না? ছোটবৌ বড় মিথ্যে বলেনি—যেমন মা, তেমনি ছেলে হবে ত! ঢের ঢের ছেলে দেখেছি বাবা, এমন নেমকহারাম কখন দেখিনি।

বিন্দু ক্লান্তদৃষ্টিতে একটিবার তাহার দিকে চাহিয়া লজ্জায় ঘৃণায় চোখ নিচু করিল।

এলোকেশী পুনরায় কহিলেন, তুমি ছেলে ভালবাস ছোটবৌ, আমার নরেন্দ্রনাথকে নাও—ওকে তোমায় দিলুম। মেরে ফেল, কেটে ফেল, কোনদিন কথাটি বলবার ছেলে ও নয়—তেমন সন্তান আমরা পেটে ধরিনে।

বিন্দু নিঃশব্দে বসিয়া রহিল। বিন্দুর মা জবাব দিলেন। তাঁহার বয়স হইয়াছে, জমিদারের মেয়ে, জমিদারের গৃহিণী, তিনি পাকা লোক। হাসিয়া বলিলেন, ও কি একটা কথা গা! অমূল্য ওর হাড়েমাসে জড়িয়ে আছে—না না, ওকে তোমরা অমন করে উতলা করে দিও না। বিন্দু, তোদের ঝগড়া দু’দিনের মা, তাই বলে ছেলে কি তোর পর হয়ে যাবে?

বিন্দু ছলছল চোখে মায়ের মুখের দিকে চাহিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। সন্ধ্যার সময় সে কদমকে ডাকিয়া বলিল, আচ্ছা কদম, তুই ত ছিলি, তুই বল্‌, আমার এত কি দোষ হয়েছিল যে, উনি অতবড় দিব্যি করে ফেললেন?

বিন্দু তাহাকে এ আলোচনা করিতে আহ্বান করিয়াছে, সহসা কদম তাহা বিশ্বাস করিতে পারিল না। সে অত্যন্ত সঙ্কুচিত হইয়া মৌন হইয়া রহিল।

তথাপি বিন্দু বলিল, না না, হাজার হোক তোরা বয়সে বড়, তোদের দুটো কথা আমাকে শুনতেই হয়, তুই বল্‌ না, এত দোষ আমার কি হয়েছিল?

কদম ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না দিদি, দোষ আর কি?

বিন্দু কহিল, তবে যা না একবার ও-বাড়িতে। দু’কথা বেশ করে শুনিয়ে দিয়ে আয় না—তোর আর ভয় কি?

কদম সাহস পাইয়া বলিল, ভয় কিছুই নয় দিদি, কিন্তু, কাজ কি আর ঝগড়া-বিবাদ করে? যা হবার তা হয়ে গেছে।

বিন্দু কহিল, না না, কদম, তুই বুঝিস নে—সত্যি কথা বলা ভাল। না হলে, ও মনে করবে, আমারি যেন সব দোষ, তার কিছুই নেই। বার করে দেব, দূর করে দেব, এসব কথা বলেনি ও? আমি কোনদিন তাতে রাগ করেচি? কেন ও লুকিয়ে টাকা দিলে? কেন একবার জানালে না?

কদম বলিল, আচ্ছা কাল যাব, আজ সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

বিন্দু অপ্রসন্ন হইয়া বলিল, সন্ধ্যা আবার কোথায় কদম,—তুই বড় কথা কাটিস্‌। শীতকালের বেলা বলেই অমন দেখাচ্চে, না হয় কাউকে সঙ্গে নে না—ওরে, ও ভৈরব শোন, হেবোকে ডেকে দে ত, কদমের সঙ্গে যাক।

ভৈরব বলিল, হেবোকে দিয়ে বাবু বাতি পরিষ্কার করাচ্চেন।

বিন্দু চোখ তুলিয়া বলিল, ফের মুখের সামনে জবাব করে!

ভৈরব সে চাহনির সুমুখ হইতে ছুটিয়া পলাইল। কদমকে পাঠাইয়া দিয়া বিন্দু বার-দুই এ-ঘর ও-ঘর করিয়া রান্নাঘরে আসিয়া ঢুকিল। বামুনঠাকরুন একা বসিয়া রাঁধিতেছিল। বিন্দু একপাশে বসিয়া পড়িয়া বলিল, আচ্ছা মেয়ে, তোমাকেই সাক্ষী মানচি—সত্যি কথা বল মেয়ে, কার দোষ বেশি?

পাচিকা বুঝিতে পারিল না, বলিল, কিসের মা?

বিন্দু বলিল, সেদিনের কথা গো! কি বলেছিলুম আমি? শুধু বলেছিলুম, দিদি, অমূল্যকে এর মধ্যে টাকা দিয়েচ? কে না জানে ছেলেদের হাতে টাকাকড়ি দিতে নেই। বললেই ত হ’ত, অমূল্য কান্নাকাটি করেছিল, দিয়েচি, চুকে যেত। এতে, এত কথাই বা ওঠে কেন, আর এমন দিব্যি-দিলেসাই বা হয় কেন? পাঁচটা ঘটিবাটি একসঙ্গে থাকলে ঠোকাঠুকি লাগে, এ ত মানুষ! তাই বলে এত বড় দিব্যি! ঐ একটি বংশধর—তার নাম করে দিব্যি? আমি বলচি মেয়ে তোমাকে, ইহজন্মে আমি আর ওর মুখ দেখব না। শত্রুর দিকে ফিরে চাইব, ত, ওর দিকে চোখ ফেরাব না।

বামুনমেয়ে স্বভাবত অল্পভাষিণী, সে কি বলিবে বুঝিতে না পারিয়া মৌন হইয়া রহিল।

বিন্দুর দুই চোখ অশ্রুপূর্ণ হইয়া উঠিল। তাড়াতাড়ি মুছিয়া ফেলিয়া ভাঙ্গা গলায় পুনরায় বলিল, রাগের মাথায় কে দিব্যি না করে মেয়ে? তাই বলে জলস্পর্শ করলে না! ছেলেটাকে পর্যন্ত আসতে দিলে না! এইগুলো কি বড়র মত কাজ? হাজার হোক, আমি ছোট, বুদ্ধি কম, যদি তার পেটের মেয়েই হতুম, কি করত তা হলে? আমিও তেমনি ওর নাম কখন মুখে আনব না, তা তোমরা দেখো।

বামুনঠাকরুন তথাপি চুপ করিয়া রহিল।

বিন্দু বলিয়া উঠিল, আর ও-ই দিব্যি দিতে জানে, আমি জানিনে? কাল যদি ও-বাড়িতে গিয়ে বলে আসি, একবাটি বিষ পাঠিয়ে না দাও ত তোমারো ওই দিব্যি রইল, কি হয় তা হলে? আমি দু’দিন চুপ করে আছি, তার পরে হয় গিয়ে ঐ দিব্যি দিয়ে আসবো, না হয়, নিজেই একবাটি বিষ খেয়ে বলে যাব, দিদি পাঠিয়ে দিয়েচে। দেখি, পাঁচজনে ওকে ছি ছি করে কি না! ও জব্দ হয় কি না!

বামুনঠাকরুন ভয় পাইয়া মৃদুস্বরে বলিল, ছি মা, ও-সব মতলব করতে নেই—ঝগড়া-বিবাদ চিরস্থায়ী হয় না—উনিও তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না, অমূল্যধনও পারবে না। এ ক’দিন সে যে কেমন করে আছে, আমরা তাই কেবল ভাবি!

বিন্দু ব্যগ্র হইয়া বলিল, তাই বল মেয়ে। নিশ্চয় তাকেও মারধর করে ভয় দেখিয়ে রেখেচে। যে একটা রাত আমাকে না হলে ঘুমুতে পারে না, আজ পাঁচ দিন চার রাত কেটে গেল! ও-মাগীর কি আর মুখ দেখতে আছে! ঐ যে বললুম, শত্রুর দিকে ফিরে চাইব ত ওর দিকে ইহজন্মে আর না।

বামুনঠাকরুন নিজের কবজির কাছে একটা কাল দাগ দেখাইয়া কহিল, এই দেখ মা, এখনো কালশিরে পড়ে আছে। সে রাত্রে তোমার মূর্ছা হয়েছিল, এ-সব কথা জান না। অমূল্যধন কোথা থেকে ছুটে এসে তোমার বুকের উপর পড়ে সে কি কান্না! সে ত আর কখন দেখেনি, বলে, ছোটমা মরে গেল। না দেয় তোমার চোখেমুখে জল দিতে, না দেয় বাতাস করতে—আমি টানতে গেলুম, আমাকে কামড়ে দিলে; বড়মা টানতে গেলেন, তাঁকে আঁচড়ে-কামড়ে কাপড় ছিঁড়ে এক করে দিলে। লোকে রুগীর সেবা করবে কি মা, তাকে নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। শেষে চার-পাঁচজন মিলে টেনে নিয়ে যায়।

বিন্দু নির্নিমেষ-চোখে তাহার মুখের পানে চাহিয়া কথাগুলো যেন গিলিতে লাগিল; তারপর অতি দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলিয়া ধীরে ধীরে উঠিয়া গিয়া ঘরে গিয়া দোর দিয়া শুইল।

দিন-চারেক পরে বিন্দুর পিতা, মাতা, পিসি প্রভৃতির ফিরিবার পূর্বের দিন মূর্ছার পরে বিন্দু চুপ করিয়া বিছানায় পড়িয়া ছিল। কদম বাতাস করিতেছিল, আর কেহ ছিল না। বিন্দু ইঙ্গিতে তাহাকে আরও কাছে ডাকিয়া মৃদুকণ্ঠে বলিল, কদম, দিদি এসেছেন রে?

কদম বলিল, না দিদি, আমরা এত লোক আছি, তাঁকে আর কষ্ট দেওয়া কেন?

বিন্দু ক্ষণকাল স্থির থাকিয়া বলিল, এই তোদের দোষ কদম। সব কাজেই নিজেদের বুদ্ধি খাটাতে যাস। এমনি করেই একদিন আমাকে মেরে ফেলবি দেখছি। পূজোর দিনেও ত তোরা একবাড়ি লোক ছিলি, কি করতে পেরেছিলি, যতক্ষণ না সেই একফোঁটা লোকটি এসে বাড়িতে পা দিলে?—ওরে, তোরা আর সে? তার কড়ে আঙুলের ক্ষমতাও তোদের বাড়িসুদ্ধ লোকের নেই।

বিন্দুর মা ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, জামাইয়ের মত আছে বিন্দু, তুইও দিন-কতক আমাদের সঙ্গে ঘুরে আসবি চল্‌।

বিন্দু মায়ের মুখের দিকে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, আমার যাওয়া না-যাওয়া কি তাঁর মতামতের উপর নির্ভর করে মা, যে তিনি বললেই যাব? আমার শত্রুর হুকুম না পেলে যাই কি করে?

মা কথাটা বুঝিয়া বলিলেন, তোর জায়ের কথা বলচিস? তাঁর আর হুকুম নিতে হবে না। যখন আলাদা হয়ে তোরা চলে এসেছিস, তখন উনি বললেই হ’ল।

বিন্দু মাথা নাড়িয়া বলিল, না, মা, তা হয় না। যতক্ষণ বেঁচে আছে ততক্ষণ যেখানেই থাক, সেই সব। আর যাই করি মা, তাকে না বলে বাড়ি ছেড়ে যেতে পারব না—বঠ্‌ঠাকুর তা হলে রাগ করবেন।

এলোকেশী এইমাত্র উপস্থিত হইয়া শুনিতেছিলেন, বলিলেন, আচ্ছা, আমি বলচি, তুমি যাও।

বিন্দু সে কথার জবাবও দিল না।

মা বলিলেন, বেশ ত, না হয়, লোক পাঠিয়ে তাঁর মত নে না বিন্দু!

বিন্দু আশ্চর্য হইয়া বলিল, লোক পাঠিয়ে? সে ত আরও মন্দ হবে মা! আমি তার মন জানি, মুখে বলবে ‘যাক’, কিন্তু ভেতরে রেগে থাকবে, হয়ত বঠ্‌ঠাকুরকে পাঁচটা বানিয়ে বলবে—না মা, তোমরা যাও, আমার যাওয়া হবে না।

মা আর জিদ করিলেন না, চলিয়া গেলেন। এইবার ফাঁকা বাড়ি প্রতি মুহূর্তে তাহাকে গিলিবার জন্য হাঁ করিতে লাগিল। নীচের একটি ঘরে এলোকেশীরা থাকেন, দোতলার একটি ঘর তাহার নিজের, আর সমস্তই খালি খাঁখাঁ করিতে লাগিল। সে শূন্যমনে ঘুরিতে ঘুরিতে তেতলার একটি ঘরে আসিয়া দাঁড়াইল। কোন্‌ সুদূর ভবিষ্যতে পুত্র-পুত্রবধুর নাম করিয়া এই ঘরখানি সে তৈরি করাইয়াছিল। এইখানে ঢুকিয়া সে কিছুতেই চোখের জল রাখিতে পারিল না। নীচে নামিয়া আসিতেছিল, পথে স্বামীর সহিত দেখা হইবামাত্রই সে বলিয়া উঠিল, হাঁ গা, কি-রকম হবে তবে?

মাধব বুঝিতে না পারিয়া বলিলেন, কিসের?

বিন্দু আর জবাব দিতে পারিল না। হঠাৎ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, না না, তুমি যাও—ও কিছু না।

পরদিন সকালবেলা মাধব বাহিরের ঘরে বসিয়া কাজ করিতেছিলেন, অকস্মাৎ বিন্দু ঘরে ঢুকিয়াই কান্না চাপিয়া বলিল, উনি চাকরি করচেন নাকি?

মাধব চোখ না তুলিয়াই বলিলেন, হুঁ।

হুঁ কি? এই কি তাঁর চাকরির বয়স?

মাধব পূর্বের মত কাগজে চোখ রাখিয়া বলিলেন, চাকরি কি মানুষ বয়সের জন্য করে, চাকরি করে অভাবে!

তাঁর অভাবই বা হবে কেন? আমরা পর, ঝগড়া করেচি, কিন্তু তুমি ত তাঁর ভাই?

মাধব বলিলেন, বৈমাত্রেয় ভাই—জ্ঞাতি।

বিন্দু স্তম্ভিত হইয়া গিয়া ধীরে ধীরে বলিল, তুমি বেঁচে থেকে তাঁকে কাজ করতে দেবে?

মাধব এবার মুখ তুলিয়া স্ত্রীর দিকে চাহিলেন, তার পর সহজ শান্তকণ্ঠে বলিলেন, কেন দেব না? সংসারে যে যার অদৃষ্ট নিয়ে আসে, তেমনি ভোগ করে, তার জীবন্ত সাক্ষী আমি নিজে। কবে বাপ-মা মরেচেন, জানিও নে; বড়বৌঠানের মুখে শুনি আমরা বড় গরীব, কিন্তু কোনোদিন দুঃখ-কষ্টের বাষ্পও টের পেলাম না। কোথা থেকে চিরকাল পরিষ্কার ধপধপে কাপড়জামা এসেচে, কোথা থেকে ইস্কুল-কলেজের মাইনে, বইয়ের দাম, বাসাখরচ এসেচে, তা আজও বলতে পারিনে। তার পরে উকিল হয়ে মন্দ টাকা পাইনে। ইতিমধ্যে কোথা থেকে কেমন করে তুমি একরাশ টাকা নিয়ে ঘরে এলে,—এমন অট্টালিকাও তৈরি হ’ল—অথচ, দাদাকে দেখ, চিরকালটা নিঃশব্দে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটেছেন, ছেঁড়া সেলাই-করা কাপড় পরেচেন—শীতের দিনেও তাঁর গায়ে কখন জামা দেখিনি—একবেলা একমুঠো খেয়ে কেবল আমাদের জন্যে—সব কথা আমার মনেও পড়ে না, পড়বার দরকারও দেখিনে—শুধু দিন-কতক আরাম করছিলেন, তা ভগবান সুদসুদ্ধ আদায় করে নিচ্চেন। বলিয়া সহসা সে মুখ ফিরাইয়া একটা দরকারী কাগজ খুঁজিতে লাগিল।

বিন্দু নির্বাক, স্তব্ধ। স্বামীর কত বড় তিরস্কার যে এই অতীত দিনের সহজ কাহিনীর মধ্যে প্রচ্ছন্ন ছিল, সে কথা বিন্দুর প্রতি রক্তবিন্দুটি পর্যন্ত অনুভব করিতে লাগিল, সে মাথা হেঁট করিয়া রহিল।

মাধব কাগজ খুঁজিতে খুঁজিতে কতকটা যেন নিজের মনেই বলিলেন, চাকরি বলে চাকরি! রাধাপুরের কাছারিতে যেতে আসতে প্রায় পাঁচ ক্রোশ—ভোর চারটেয় বেরিয়ে সমস্তদিন অনাহারে থেকে রাত্রে ফিরে এসে দুটি খাওয়া, মাইনে বারো টাকা।

বিন্দু শিহরিয়া উঠিল—সমস্ত দিন অনাহারে! মোটে বারো টাকা!

হাঁ, বারো টাকা! বয়স হয়েছে, তাতে আফিংখোর মানুষ, একটু-আধটু দুধটুকুও পান না; ভগবান দেখচি, এতদিন পরে দয়া করে দাদার ভবযন্ত্রণা মোচন করে দেবার উপায় করে দিয়েছেন।

বিন্দুর চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িল এবং যাহা কোনদিন করে নাই, আজ তাহাও করিল। হেঁট হইয়া স্বামীর দুই পা চাপিয়া ধরিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে বলিল, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, একটি উপায় করে দাও, রোগা মানুষ এমন করে দুটো দিনও বাঁচবেন না।

মাধব নিজের চোখের জল কোন গতিকে মুছিয়া লইয়া কহিল, আমি কি উপায় করব? বৌঠান আমাদের এক কণা চাল পর্যন্ত নেবেন না; কিছু না করলে তাঁদের সংসারই বা চলবে কি করে?

বিন্দু রুদ্ধস্বরে বলিল, তা আমি জানিনে। ওগো, তুমি আমার দেবতা, তিনি তোমার চেয়েও বড় যে! ছি ছি, যে কথা মনে আনাও যায় না, সেই কথা কিনা—বিন্দু আর বলিতে পারিল না।

মাধব বলিল, বেশ ত, অন্তত যাও বৌঠানের কাছে। যাতে তাঁর রাগ পড়ে, তিনি প্রসন্ন হন, তাই কর। আমার পা ধরে সমস্ত দিন বসে থাকলেও উপায় হবে না।

বিন্দু তৎক্ষণাৎ পা ছাড়িয়া উঠিয়া বসিয়া বলিল, পায়ে-ধরা অভ্যাস আমার নয়। এখন দেখচি, কেন সে-রাত্রে তিনি জলস্পর্শ করেন নি, অথচ তুমি সমস্ত জেনেশুনে শত্রুর মত চুপ করে রইলে! আমার অপরাধ বেড়ে গেল, তুমি কথা কইলে না!

মাধব কাগজপত্রে মনোনিবেশ করিয়া কহিল, না। ও বিদ্যে আমার দাদার কাছে শেখা। ঈশ্বর করুন, যেন অমনি চুপ করে থেকেই একদিন যেতে পারি।

বিন্দু আর কথা কহিল না। উঠিয়া গিয়া নিজের ঘরে দোর দিয়া পড়িয়া রহিল।

মাধব তখন উঠিবার উপক্রম করিতেছিল, বিন্দু আবার আসিয়া ঘরে ঢুকিল। তাহার দুই চোখ রাঙ্গা। মাধবের দয়া হইল, বলিল, যাও একবার তাঁর কাছে। জান ত তাঁকে, একটি বার গিয়ে শুধু দাঁড়াও, তাহলেই সব হবে।

বিন্দু অত্যন্ত করুণ-কণ্ঠে বলিল, তুমি যাও—ওগো, আমি ছেলের দিব্যি কচ্চি—

মাধব তাহার মনের ভাব বুঝিয়া কিছু উষ্ণ হইয়াই জবাব দিল, হাজার দিব্যি করলেও আমি দাদাকে বলতে পারব না। তিনি নিজে জিজ্ঞাসা না করলে গিয়ে বলব, এত সাহস আমার গলা কেটে ফেললেও হবে না।

বিন্দু তথাপি নড়িল না।

মাধব কহিল, পারবে না যেতে?

বিন্দু জবাব দিল না, হেঁট মুখে ধীরে ধীরে চলিয়া গেল।

-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বিষয়: বিবিধ

২২১৫ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

159959
০৭ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৮
গেরিলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৩
114792
ঝিঙেফুল লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদHappy Good Luck
159974
০৭ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:২৯
ইমরান ভাই লিখেছেন : Give Up Give Up Loser Loser Day Dreaming Day Dreaming Not Listening Not Listening Not Listening Not Listening I Don't Want To See I Don't Want To See I Don't Want To See Waiting Waiting Frustrated Frustrated Crying Crying Rose Rose Thumbs Down Thumbs Down It Wasn't Me! It Wasn't Me!
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৩
114793
ঝিঙেফুল লিখেছেন : Happy Happy Happy
160015
০৭ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৬
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৩
114795
ঝিঙেফুল লিখেছেন : Good Luck Happy
160164
০৭ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:৪৩
গন্ধসুধা লিখেছেন : গল্প লেখাটাও যে কি সাংঘাতিক আর্ট Rose
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৩
114796
ঝিঙেফুল লিখেছেন : হুমমমম.....Happy
160173
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:০৪
আলোর আভা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ ।
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৪
114797
ঝিঙেফুল লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদHappy Good Luck
160254
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:৫৬
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : Happy Happy Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Happy Happy
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৪
114798
ঝিঙেফুল লিখেছেন : Happy Good Luck
160261
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৭:৫২
শেখের পোলা লিখেছেন : ঘুরে গেলাম৷
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৪
114800
ঝিঙেফুল লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদHappy Good Luck
160352
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৪৪
নিলা পাথর লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৫
114801
ঝিঙেফুল লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদHappy Good Luck
160406
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৬
নতুন মস লিখেছেন : শুকরিয়া আপুনি।
ইহা একটি মন্তব্যের জবাবCool
০৯ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৩
115155
ঝিঙেফুল লিখেছেন : তাহলে মন্তব্য কি হবে?:Thinking :Thinking :Thinking
১০
160763
০৯ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৯
নতুন মস লিখেছেন : গল্পটি পড়া আপাতত বন্ধ রেখেছি আপু।
১০ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:১৮
115426
ঝিঙেফুল লিখেছেন : কেন?Happy
১১
162573
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৪৬
সায়েম খান লিখেছেন : ভাল লাগলো, ধন্যবাদ।
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:৪৬
156645
ঝিঙেফুল লিখেছেন : ধন্যবাদ.....দেরীতে জবাব দেয়ার জন্য দুঃখিত।
১২
164353
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৫৭
মোঃজুলফিকার আলী লিখেছেন : ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:৪৬
156646
ঝিঙেফুল লিখেছেন : ধন্যবাদ.....দেরীতে জবাব দেয়ার জন্য দুঃখিত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File