মহার্ঘ
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ২৬ জুলাই, ২০১৮, ০৯:৫০:৪৭ সকাল
অমলবাবু সিঁড়ি দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে হাঁক ছাড়লেন, “কই গো গিন্নী। তাড়াতাড়ি দরজা খোল। দেখে যাও কী নিয়ে আসচি।”
হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুললেন মনিকা দেবী। স্বামীর হাতে ঘোলা জলভর্তি এক লিটারের একটি বোতল। মনিকা দেবী প্রথমে ভাবলেন আখের রস। কিন্তু এমোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে আসতেই বুঝলেন, স্বামী আজ মহার্ঘ নিয়ে এসেছে।
“হ্যাঁ গো, তা দাম কত নিলো?” প্রসারিত হাসিতে স্বামীকে শুধান মনিকা দেবী।
- তা, দাম একটু বেশিই নিয়েছে গিন্নী। এক লিটার ৪০ রুপি।
- তাও ভালো পেয়েছো। তা একদম খাঁটিটা এনেছোতো। জল মেশায়নি তো!
- খাঁটিই হবে গিন্নী। তবে আরেক জায়গায় একগম গো-মাতার পেছন হতে সরাসরি সংগ্রহ করা যায়। সেটা ৬০ রুপি লিটার নেয়।
- আরে মিনসে! তুমি সারাজীবনই হাড়কেপ্পন রয়ে গেলে। তা ২০ রুপির জন্য অরিজিনালটা মিস করলে কেন? নিশ্চয়ই এটাতো জল মেশানো আছে। আর আনলে যখন ২ লিটার আনলে না কেন? আমি, তুমি, আমাদের বাবু সোনা পান করবো। আর প্রতিবেশিদেরও তো এক আধটু দিতে হয়।
- আরে সেটা আমি ভাবিনি মনে করছো! শুনো, এখান হতে পুরো ১০০ মিলি আলাদা একটি বোতলে ঢেলে রাখ। তারপর তার সাথে ৪০০ এমএল জল মেশাবে। ব্যস, হয়ে গেল আধা লিটার। প্রতিবেশী যেই আসুক ৪ চামচ মানে ২০ এমএল করে দেব। তাতেও ২৫ জনকে দেয়া যাবে। এতো মহার্ঘ্য। এর বেশি কি দেয়া যায় বলো।
মহার্ঘ
-----------------
অমলবাবু সিঁড়ি দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে হাঁক ছাড়লেন, “কই গো গিন্নী। তাড়াতাড়ি দরজা খোল। দেখে যাও কী নিয়ে আসচি।”
হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুললেন মনিকা দেবী। স্বামীর হাতে ঘোলা জলভর্তি এক লিটারের একটি বোতল। মনিকা দেবী প্রথমে ভাবলেন আখের রস। কিন্তু এমোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে আসতেই বুঝলেন, স্বামী আজ মহার্ঘ নিয়ে এসেছে।
“হ্যাঁ গো, তা দাম কত নিলো?” প্রসারিত হাসিতে স্বামীকে শুধান মনিকা দেবী।
- তা, দাম একটু বেশিই নিয়েছে গিন্নী। এক লিটার ৪০ রুপি।
- তাও ভালো পেয়েছো। তা একদম খাঁটিটা এনেছোতো। জল মেশায়নি তো!
- খাঁটিই হবে গিন্নী। তবে আরেক জায়গায় একগম গো-মাতার পেছন হতে সরাসরি সংগ্রহ করা যায়। সেটা ৬০ রুপি লিটার নেয়।
- আরে মিনসে! তুমি সারাজীবনই হাড়কেপ্পন রয়ে গেলে। তা ২০ রুপির জন্য অরিজিনালটা মিস করলে কেন? নিশ্চয়ই এটাতো জল মেশানো আছে। আর আনলে যখন ২ লিটার আনলে না কেন? আমি, তুমি, আমাদের বাবু সোনা পান করবো। আর প্রতিবেশিদেরও তো এক আধটু দিতে হয়।
- আরে সেটা আমি ভাবিনি মনে করছো! শুনো, এখান হতে পুরো ১০০ মিলি আলাদা একটি বোতলে ঢেলে রাখ। তারপর তার সাথে ৪০০ এমএল জল মেশাবে। ব্যস, হয়ে গেল আধা লিটার। প্রতিবেশী যেই আসুক ৪ চামচ মানে ২০ এমএল করে দেব। তাতেও ২৫ জনকে দেয়া যাবে। এতো মহার্ঘ্য। এর বেশি কি দেয়া যায় বলো।
ঘরে ঢুকে সোফায় গা এলিয়ে গিন্নীকে এক কাপ চা দিতে বলে পেপারে চোখ বুলাচ্ছিলেন অমলবাবু। খানিক পর।
- কইগো গিন্নী! সেই কখন হতে বললুম, এক কাপ চা দিতে।
- আরে মিনসে, কানের কি মাথা খেয়েছো? সেই আধাঘন্টা ধরে বলছি, পাঁচ মিনিটের মধ্যে দিচ্ছি।
চা পান শেষে অমলবাবু আর তার গিন্নী মনিকা দেবী স্নান সেরে নিলেন। মহার্ঘ্য বস্তু পবিত্র হয়ে গ্রহণ করতে হয়। অমলবাবু আধা গ্লাস পান করলেন। বমি বমি ভাব আসছে একটু। অনেক কষ্টে দমিয়ে রাখছেন। গিন্নীকে ডাকলেন।
- কইগো গিন্নী, পুরো গ্লাসের আদ্দেকটা খেয়ে নিলুম। তুমিও আদ্দেকটা নাও।
- এইতো আসছি।
মনিকা দেবী মুখে দিতেই হড়হড় করে বমি করে দিলেন। সকালের নাস্তায় যা যা খেলেন সব এখন ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
- গো-মাতার অভিশাপ পড়েছে, অভিশাপ। পই পই করে বললুম, খাঁটি জিনিস আনতে। তা মিনসে ২০ রুপির জন্য জল মেশানোটা এনেছে। মায়ের জিনিসে ভেজাল করেছ। তাইতো গো-মাতা রুষ্ট হয়েছে আর বমি হচ্ছে। আমাদের সোনাবাবুরে কিছুতেই এই ভেজাল গেলাবো না। এই আমি বলে রাখলুম। গিয়ে আবার খাঁটি জিনিসটাই আনো। হোক সেটা ৬০ রুপি।
ছুটির দিন বলে অমলবাবুর অবসর। তাই বিকেলে আবার বেরুলেন। পাড়ার গনেশদের গাভীটা বেশ হৃষ্টপুষ্ট। তবে সরাসরি মূত্র সংগ্রহ করতে চাইলে লিটারে ২০ টাকা বাড়তি নেয়। তা নিক। অমল বাবু গাভীর পায়ে পড়ে আগে প্রণাম ঠুকলেন। কাকুতি মিনতি করে অভিশাপ তুলে নেয়ার জন্য প্রার্থনা চললো। কিছুক্ষণ পর গাভিটি যেই লেজ তুলে জলবিয়োগ করতে গেল তখনই অমলবাবু সাথে নিয়ে আসা বোতলটি পেতে দিল। গাভিটি সুড়সুড়ি পেয়ে বিরক্ত হলো মনে হয়। পেছনের পা দিয়ে মারলো এক জোরসে লাথি। অমলবাবু পড়ে গিয়ে কোঁকাতে লাগলো।
“আরে মশাই। কী পাপ করলেন! গো-মাতাতো বেশ রুষ্ট আছে এখনো। এই দিন আমাকে” বলে গনেশ নিজেই সংগ্রহ করে দিল এক লিটার খাঁটি গো-মূত্র।
বাসায় এসে চার বছরের ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য খুব কসরত করে যাচ্ছেন অমল বাবু আর তার গিন্নী। ছেলে বলছে- “আম্মু, এটাতেতো হিসুর গন্ধ”।
- না বাবা। এভাবে বলে না। গো-মাতা রুষ্ট হবে। এটি মহাপবিত্র মহাঅর্ঘ্য। এটি ভক্তি নিয়ে পান করতে হয়। একটু খাও দিকিনি আমার বাবুসোনা।
- না, আমি হিসু খাবো না।
- ছি! বাবুসোনা এটা বলে না। গো-মাতা অনেক পবিত্র। তার এটাকে হিসু বলতে হয় না।
- গো-মাতা গো-মাতা বলছো কেন? তুমি কি আমার মা নও? গরুকে কেন মা বলবে? তুমিও বলছো মা, বাবাও বলছে। আমিও মা বলবো?
- হ্যাঁ, বাবা। গো-মাতা আমাদের সবার শ্রদ্ধার পাত্র, সবার মা। এই নাও একটু খাও। এটি খেলে তোমার শরীরের সকল অশূচি দূর হয়ে যাবে। তোমার আত্মা পবিত্র হবে। হা কর। এক কাপ মাত্র।” -বলে যেই না হা করে মুখে ঢাললো তখনই ছেলে মুখভর্তি করে বমি করলো।
মনিকা দেবী এক ঢোক গিলেছেন কষ্ট করে। বমি হয় নি এবার, তবে বমি বমি ভাবটি রয়ে গেছে। অমল বাবু পুরো গ্লাসের আদ্দেকটা গিলেছিলেন সকালে। এখন পেট গুড়গুড় চলছে।
“নিশ্চয়ই গো-মাতার অভিশাপ এখনো কাটে নি। গো-মাতা রুষ্ট হয়ে আছে। কাল সবাই আবার গো-মাতার পূজো দিতে হবে। নয়তো এই অভিশাপ কাটবে না।”
সিদ্ধান্ত হলো আগামীকাল সূর্যোদয়ের আগে সবাই গো-মাতার পূজো দিতে যাবে।
(এটি রম্য। কারো অনুভূতি বা বিশ্বাসকে আহত করা নয়, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান হতেই এটা লেখা। কোন ধর্মীয় গ্রন্থেই গোমূত্র পান করার কথা বলা নেই)।
ঘরে ঢুকে সোফায় গা এলিয়ে গিন্নীকে এক কাপ চা দিতে বলে পেপারে চোখ বুলাচ্ছিলেন অমলবাবু। খানিক পর।
- কইগো গিন্নী! সেই কখন হতে বললুম, এক কাপ চা দিতে।
- আরে মিনসে, কানের কি মাথা খেয়েছো? সেই আধাঘন্টা ধরে বলছি, পাঁচ মিনিটের মধ্যে দিচ্ছি।
চা পান শেষে অমলবাবু আর তার গিন্নী মনিকা দেবী স্নান সেরে নিলেন। মহার্ঘ্য বস্তু পবিত্র হয়ে গ্রহণ করতে হয়। অমলবাবু আধা গ্লাস পান করলেন। বমি বমি ভাব আসছে একটু। অনেক কষ্টে দমিয়ে রাখছেন। গিন্নীকে ডাকলেন।
- কইগো গিন্নী, পুরো গ্লাসের আদ্দেকটা খেয়ে নিলুম। তুমিও আদ্দেকটা নাও।
- এইতো আসছি।
মনিকা দেবী মুখে দিতেই হড়হড় করে বমি করে দিলেন। সকালের নাস্তায় যা যা খেলেন সব এখন ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
- গো-মাতার অভিশাপ পড়েছে, অভিশাপ। পই পই করে বললুম, খাঁটি জিনিস আনতে। তা মিনসে ২০ রুপির জন্য জল মেশানোটা এনেছে। মায়ের জিনিসে ভেজাল করেছ। তাইতো গো-মাতা রুষ্ট হয়েছে আর বমি হচ্ছে। আমাদের সোনাবাবুরে কিছুতেই এই ভেজাল গেলাবো না। এই আমি বলে রাখলুম। গিয়ে আবার খাঁটি জিনিসটাই আনো। হোক সেটা ৬০ রুপি।
ছুটির দিন বলে অমলবাবুর অবসর। তাই বিকেলে আবার বেরুলেন। পাড়ার গনেশদের গাভীটা বেশ হৃষ্টপুষ্ট। তবে সরাসরি মূত্র সংগ্রহ করতে চাইলে লিটারে ২০ টাকা বাড়তি নেয়। তা নিক। অমল বাবু গাভীর পায়ে পড়ে আগে প্রণাম ঠুকলেন। কাকুতি মিনতি করে অভিশাপ তুলে নেয়ার জন্য প্রার্থনা চললো। কিছুক্ষণ পর গাভিটি যেই লেজ তুলে জলবিয়োগ করতে গেল তখনই অমলবাবু সাথে নিয়ে আসা বোতলটি পেতে দিল। গাভিটি সুড়সুড়ি পেয়ে বিরক্ত হলো মনে হয়। পেছনের পা দিয়ে মারলো এক জোরসে লাথি। অমলবাবু পড়ে গিয়ে কোঁকাতে লাগলো।
“আরে মশাই। কী পাপ করলেন! গো-মাতাতো বেশ রুষ্ট আছে এখনো। এই দিন আমাকে” বলে গনেশ নিজেই সংগ্রহ করে দিল এক লিটার খাঁটি গো-মূত্র।
বাসায় এসে চার বছরের ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য খুব কসরত করে যাচ্ছেন অমল বাবু আর তার গিন্নী। ছেলে বলছে- “আম্মু, এটাতেতো হিসুর গন্ধ”।
- না বাবা। এভাবে বলে না। গো-মাতা রুষ্ট হবে। এটি মহাপবিত্র মহাঅর্ঘ্য। এটি ভক্তি নিয়ে পান করতে হয়। একটু খাও দিকিনি আমার বাবুসোনা।
- না, আমি হিসু খাবো না।
- ছি! বাবুসোনা এটা বলে না। গো-মাতা অনেক পবিত্র। তার এটাকে হিসু বলতে হয় না।
- গো-মাতা গো-মাতা বলছো কেন? তুমি কি আমার মা নও? গরুকে কেন মা বলবে? তুমিও বলছো মা, বাবাও বলছে। আমিও মা বলবো?
- হ্যাঁ, বাবা। গো-মাতা আমাদের সবার শ্রদ্ধার পাত্র, সবার মা। এই নাও একটু খাও। এটি খেলে তোমার শরীরের সকল অশূচি দূর হয়ে যাবে। তোমার আত্মা পবিত্র হবে। হা কর। এক কাপ মাত্র।” -বলে যেই না হা করে মুখে ঢাললো তখনই ছেলে মুখভর্তি করে বমি করলো।
মনিকা দেবী এক ঢোক গিলেছেন কষ্ট করে। বমি হয় নি এবার, তবে বমি বমি ভাবটি রয়ে গেছে। অমল বাবু পুরো গ্লাসের আদ্দেকটা গিলেছিলেন সকালে। এখন পেট গুড়গুড় চলছে।
“নিশ্চয়ই গো-মাতার অভিশাপ এখনো কাটে নি। গো-মাতা রুষ্ট হয়ে আছে। কাল সবাই আবার গো-মাতার পূজো দিতে হবে। নয়তো এই অভিশাপ কাটবে না।”
সিদ্ধান্ত হলো আগামীকাল সূর্যোদয়ের আগে সবাই গো-মাতার পূজো দিতে যাবে।
(এটি রম্য। কারো অনুভূতি বা বিশ্বাসকে আহত করা নয়, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান হতেই এটা লেখা। কোন ধর্মীয় গ্রন্থেই গোমূত্র পান করার কথা বলা নেই)।
বিষয়: সাহিত্য
১২৫১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন