পরকীয়া একটি সামাজিক ব্যাধি, প্রতিকার জরুরী

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৮ মে, ২০১৭, ১২:০৫:৪৫ দুপুর



পরকীয়ার ঘটনা দেশে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি এখন একটি সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীবাদী বা পুরুষবাদী দৃষ্টিকোণ হতে এটাকে বিশ্লেষণ করার কোনপ্রকার সুযোগ নেই। প্রয়োজন কারণগুলি অনুসন্ধান করা এবং প্রতিকার ও প্রতিরোধে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া। পরকীয়ার প্রসঙ্গ আসলেই অনেকে আঙ্গুল তোলেন প্রবাসীদের স্ত্রীদের প্রতি। কিন্তু পরকীয়াতো একা করা যায় না। লম্পট পুরুষটাও যে দায়ী সেটা আমরা ভুলে যাই। আসলে প্রবাসী বা অপ্রবাসী মূলত কোন ফ্যাক্টর নয়। ঘরে সুন্দরী স্ত্রী রেখেও যেমন অনেক লম্পট পরকীয়ায় জড়ায় তেমনি স্বামীর বর্তমানেও অনেক দুশ্চরিত্রা নারী জড়িয়ে পড়ে এ ন্যক্কারজনক নোংরামীতে। পরকীয়ায় জড়িত হয়ে এসব হীন চরিত্রের লোকেরা স্বামী/স্ত্রী এমনকি সন্তানের মায়া তুচ্ছ করে পালিয়েও যাচ্ছে অন্যের হাত ধরে। অবুঝ সন্তানদের ভবিষ্যত হয় অন্ধকার। অনিশ্চিত ও গ্লানিকর জীবনের টানাপোড়নে পড়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেসব সন্তান বখে যায়। বেছে নয় অন্ধকারময় পংকিল অপরাধীর জীবন। সুতরাং পরকীয়ার কুপ্রভাবও সুদূরপ্রসারী।

পরকীয়ার কিছু ঘটনা এতটাই নোংরা আর নৃশংস যে সেসব ভাবতেও আঁতকে উঠতে হয়। পরকীয়ায় জড়িয়ে সন্ত্রাসী দিয়ে নিজ স্বামী বা স্ত্রীকে খুন করার ঘটনা অহরহই শোনা যায়। শুধু কি তাই? নিজ সন্তানকে খুন করার ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে পরকীয়ার কারণে। শিশু সামিউলের কথা মনে পড়ে? সামিউলের মাতো প্রবাসীর স্ত্রী ছিল না। পরকীয়ায় জড়িয়ে নিজ সন্তান সামিউলকে হত্যা করে ডীপফ্রীজে লুকিয়ে রেখেছিল পাষন্ড মা। বছর তিনেক আগের ঘটনা। যাত্রাবাড়িতে পঞ্চাশোর্ধ এক নারী ঘরে অসুস্থ স্বামীকে রেখে এক লম্পট ড্রাইভারের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিল। সে অবৈধ সম্পর্কে বাধা ছিল মহিলার যুবক ছেলে। ৫০ হাজার টাকায় খুনী ভাড়া করে নিজ ছেলেকে খুন করে মহিলা।

সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা তুলে ধরা যাক।

এক. ৬০ উধর্ব কবি ও সাহিত্যিক (!) সাহাবুদ্দীন নাগরী। পরকীয়ায় জড়িয়ে খুন করেন নুরুল ইসলাম নামক এক ব্যক্তিকে যার স্ত্রী সুমির সাথে তার পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক চলছিল। নুরুল ইসলামের জ্ঞাতসারেই ও ইচ্ছেতেই তার স্ত্রী সুমির সাথে অবৈধ সম্পর্ক চলতো নাগরীর। এমনকি নুরুল ইসলাম বাসায় থাকা অবস্থাতেই সুমির সাথে অবৈধ কাজে জড়িত হতো সাহাবুদ্দীন নাগরী। এজন্য বেকার নুরুল ইসলামকে সংসারের খরচসহ প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা দিতেন নাগরী। একদিন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সুমি আর নাগরী মিলে হত্যা করে নুরুল ইসলামকে।

দুই. এ ঘটনাটিও বেশ নোংরা। মামীর সাথে ভাগ্নের পরকীয়া এবং এক পর্যায়ে মামী খুন। এক নারী তার প্রবাসী স্বামীর আপন ভাগ্নের সাথে ৮ বছর ধরে পরকীয়া করছিল। মাঝখানে উক্ত নারী জড়িয়ে পড়ে আরো এক ভাগ্নের সাথে। তার কিছুদিন পর উক্ত নারী নিজ বাসায় এক সেনাসদস্যের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ে তার প্রথম পরকীয়া প্রেমিক ভাগ্নের কাছে। ক্ষিপ্ত হয়ে ভাগ্নে তাকে খুন করে।

পরকীয়ার কারণগুলি ও এর প্রতিকার সম্পর্কে এবার অনুসন্ধান করা যাক।

-ধর্মীয়, নৈতিক ও পারিবারিক শিক্ষার অভাবে আল্লাহভীরুতা লোপ পায়। তখন ব্যক্তির মনে পাপবোধ থাকে না বিধায় অশ্লীলতা ও নোংরামিতে সহজে জড়িয়ে পড়ে। অন্তরে পরকালীন শাস্তির ভয় থাকলে কেউ পরকীয়ায় জড়াবে না।

-আকাশ সংস্কৃতি ও নীল ছবির ছোবল তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। স্কুল পেরুনোর আগেই অনেক ছেলে মেয়ের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দিচ্ছে অভিভাবকরা। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে এরা সহজেই হাতের নাগালে পাচ্ছে নীল ছবি। পরিণতি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিটিআরসি আন্তরিকভাবে চাইলে পর্ণসাইটসমূহ বন্ধ করা কোন ব্যাপার নয়। মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর অনেক দেশে পর্নসাইট বন্ধ।

- বিজ্ঞাপনে পরকীয়া ও অশ্লীলতার হাতছানিঃ আমাদের দেশে কিছু বিজ্ঞাপন আছে সরাসরি অশ্লীল এবং যৌন সুড়সুড়িদায়ক। কিছু জন্মবিরতিকরণ সামগ্রীর বিজ্ঞাপনে পরোক্ষভাবে পরকীয়ার আহবান জানানো হয়। এসব বন্ধ করা আশু জরুরী।

-কঠিন বিবাহ প্রথাঃ বিয়ের মোহরানা, দেনাপাওনা, খাওয়া দাওয়ার অনুষ্ঠান সব মিলিয়ে বিয়েপ্রথা আমাদের দেশে এমন কঠিন করে রাখা হয়েছে যে অনেকে বিয়ের বয়স পেরিয়েও বিয়ে করতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ফলাফল ব্যভিচার আর পরকীয়া বাড়ছে। যে সমাজে বিয়ে কঠিন সে সমাজে ব্যভিচারের প্রসার ঘটাই স্বাভাবিক। বিধবাদের বিয়ের প্রতি আমাদের সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজমান। একজন বিধবা নারী নতুন করে বিবাহবন্ধনে জড়ালে আত্মীয় স্বজন নানা বিরূপ মন্তব্য করে থাকে। ফলে অনেকেই এসব মন্তব্য হজম করার ভয়ে বিয়ের দিকে এগুতে চায় না। গোপন পরকীয়াতেই অনেকে তখন সমাধান খুঁজে। স্ত্রী বিয়োগের পর পুরুষদের বিয়েকেও পরিবার ও সমাজ কর্তৃক সহজভাবে গ্রহণ করা হয় না। মৃত্যুশয্যায় শায়িত স্বামীকে তার স্ত্রী কিংবা স্ত্রীকে তার স্বামী ওয়াদা করায়, আমি মারা গেলে তুমি আর বিয়ে করবে না। ওয়াদা অনেকে রক্ষা করে বটে কিন্তু আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবে জড়িয়ে পড়ে ব্যভিচার আর পরকীয়ায়। লোকে কী বলবে, ছেলে মেয়ে বড় হচ্ছে – এসব কথা বলে পরিবার হতেই নিরুৎসাহিত করা হয়। ভাবটা এমন, প্রয়োজনে গোপনে অবৈধ কিছু করুক কিন্তু বিয়ে করে কারো মুখে চুন কালি না দিক! এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা উচিত।

-আমাদের সমাজে শালী দুলাভাই, দেবর ভাবী এসব সম্পর্ককে ঠাট্টা তামাশা আর মজাদার মনে করা হয়। এবং তাদের মাঝে টুকটাক মজা করা, আদি রসাত্মক কথাবার্তাকে দোষনীয় মনে করা হয় না। কিন্তু এসব টুকটাক রসিকতা হতে এক সময় সেটা পরকীয়ায় রূপ নেয়। তাই আত্মসম্মান বিকিয়ে এসব অপ্রয়োজনীয় রসিকতাকে সরাসরি না বলা উচিত।

-বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ের মতামতকেও গুরুত্ব দেয়া উচিত। জোর করে কিছু চাপিয়ে দিলে ফলাফল হীতে বিপরীত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকে বিয়ের পর স্বামী/স্ত্রীকে অবহেলা করে এবং পূর্বতন প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যায়। অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরী। আপনার সন্তান কোন অবৈধ সম্পর্কে যেন জড়াতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। জোর জবরদস্তি নয়। ধর্মীয়, নৈতিক শিক্ষায় তাকে আলোকিত করুন। কেউ যদি একান্তই কোন সম্পর্কে জড়িয়ে যায় তাহলে সেটাকে বিয়েতে রূপ দেয়ার চেষ্টা করুন।

-বিয়েতে অত্যধিক দেরী করাও পরকীয়ার অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত পুরুষরা সাধারণত দেরীতে বিয়ে করেন পারিবারিক অনেক টানাপোড়েন এর কারণে। ছেলে উপার্জনক্ষম হলে পরিবারের চাহিদারও যেন শেষ থাকে না। বাড়ি কর, জমি কেন, বোন বিয়ে দাও—এভাবে একের পর এক চাহিদা বাড়তেই থাকে। এসব চাহিদা পূরণ করে সঠিক বয়সে বিয়ে করা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আল্লাহভীরুতার অভাবে জৈবিক চাহিদা পূরণে অনেকে বেছে নেয় পরকীয়া ও ব্যভিচারের ধ্বংসাত্মক পথ।

এছাড়া আরো অনেকগুলি কারণ আছে। তবে ঘুরে ফিরে এ কারণগুলিই প্রধান। প্রতিকার/প্রতিরোধ ব্যবস্থাও এসকল কারণের মধ্যেই নিহিত।

(মুহাম্মদ ওহিদুল ইসলাম, ১৮/০৫/২০১৭ ইং)।

বিষয়: বিবিধ

২৮৬৮ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383018
১৮ মে ২০১৭ দুপুর ০২:৪৯
আবু জারীর লিখেছেন : পরকীয়া সমাজে একটা বেধী হিসেবে আধিকাল থেকেই ছিলা যা এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এখনই নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এটা মারাত্বক বিপর্যায় ডেকে আনবে।
ধন্যবাদ।
২০ মে ২০১৭ সকাল ০৯:২৩
316394
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইরান।
383023
১৮ মে ২০১৭ বিকাল ০৫:৪১
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : এই দেশটায় সুকুনের নজর পরছে,দেশের প্রত্য়েকটি স্তম্ভ ভেঙ্গে গুরিয়ে দিচ্ছে,কিছু নামসর্বোস্ব ইসলামি দলকে দায়ীত্ব দেয়া হচ্ছে ইসলামের বারোটা বাজানোর জন্য়,আর হক্ পন্থিরা ষ্টীমরুলারের নীচে ! ঘুনে ধরা সমাজে পরকিয়া নয় সমকিয়ারও দাবি করছে প্রগতিশীলরা ! অনেক ধন্যবাদ পিলাচ।
২০ মে ২০১৭ সকাল ০৯:২৩
316395
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : ভেরি রিসেন্ট নিউজ। মোহাম্মদপুরে সমকামিতার অভিযোগে ২৯ জন গ্রেপ্তার।
383031
১৮ মে ২০১৭ রাত ০৮:২৬
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : এক্সচেললেনট
২০ মে ২০১৭ সকাল ০৯:২৩
316393
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইরান।
383034
১৮ মে ২০১৭ রাত ০৯:৪৮
হতভাগা লিখেছেন : দুনিয়াটা হচ্ছে গিভ এন্ড টেক এর জায়গা । বিয়েও এর বাইরে নয় । কেউ যদি দেখে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সে শুধু লুজার সাইডেই থাকছে , কর্তব্য পালনের বিনিময়ে কিছুই পাচ্ছে না - এরকম পরিস্থিতিতে যে কেউই স্বার্থপর ও রেকলেস হয়ে উঠবে ।

বিয়ের ফলে খুব নগন্য সংখ্যক মানুষই সুখী হয় ।
২০ মে ২০১৭ সকাল ০৯:২২
316391
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : কিন্তু বিয়েটাই বৈধ বন্ধন ও জৈবিক চাহিদাকে বৈধতা দেয়।
২০ মে ২০১৭ সকাল ১০:২০
316396
হতভাগা লিখেছেন : ঘর কা মুরগী ডাল বরাবর আর চুরি করে খাওয়া পানি শরবতের মত মিষ্টি লাগে।
383036
১৮ মে ২০১৭ রাত ১০:৪৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
২০ মে ২০১৭ সকাল ০৯:২২
316392
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইরান।
383741
০৮ আগস্ট ২০১৭ দুপুর ০২:৪২
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া আপনার বাস্তবসম্মত লিখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। জাজাকাল্লাহ।
383901
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সন্ধ্যা ০৬:০২
ছালসাবিল লিখেছেন : Day Dreaming Day Dreaming Day Dreaming Day Dreaming ভাইইইইইয়া জেনা বেরেইইই চোলবেবেবে Day Dreaming Day Dreaming শেষকালে Day Dreaming Eat
384020
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সকাল ০৮:১৬
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : সময়োপযোগী লেখা ! ভাল লাগল! ধন্যবাদ আপনাকে !
384232
১৮ অক্টোবর ২০১৭ সকাল ০৯:৪৬
মোস্তফা সোহলে লিখেছেন : ভাল লিখেছেন।
সবার আগে আমাদেরকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
১০
384326
২৯ অক্টোবর ২০১৭ সকাল ১১:২৯
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : বাস্তবসম্মত লিখা, ধন্যবাদ। পরকীয়া বিস্তারে ভুমিকা রাখছে একশ্রেণির মিডিয়া/দালাল/পর্নসাইট সহ তথাকথিত নারী বাদীরা। আসলে জাহেলিয়াতের অমানিশা চলছেই!!!বরং দিন দিন বাড়বে এবং সতর্ক হবে আমাদেরকেই-যারা এর থেকে বাচঁতে চাই।
১১
385878
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বিকাল ০৫:৫৩
মুহাঃ মাসউদুল হাসান মামুন লিখেছেন : অনেক সুন্দর লাগলো। ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File