গোলাপের সুরভিতে, চমকে দিন প্রিয়াকে (ভ্রমণ)

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৩ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:২৯:১৫ দুপুর

আপনার প্রিয়তমা স্ত্রী রোজ রোজ অপবাদ দেয়- আপনি আনরোমান্টিক, আপনি তাকে ভালোবাসেন না।

ভাবছেন কিভাবে এ অপবাদের জবাব দেয়া যায়। কী করবেন? কবিতার মতো দূরন্ত ষাঁড়ের পেছনে লাল কাপড় বাঁধবেন? বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে নিয়ে আসবেন ১০৮ টি নীল পদ্ম?? না, এর কোনটিই প্রয়োজন নেই। এর চাইতেও উত্তম ব্যবস্থা আছে। আচ্ছা, এমন হলে কেমন হয়? গোলাপের রাজ্যে নিয়ে প্রিয়তমাকে “এই হাজারো গোলাপ শুধু তোমারই জন্য” বলে চমকে দিবেন। হ্যাঁ, সেটাই বলছি। ঢাকার কাছেই আছে গোলাপ গ্রাম।

সরকারী ছুটির দিন ছিল। সকাল সাড়ে নয়টায় বউ আর ছেলেকে নিয়ে রওনা করলাম গোলাপ গ্রামের উদ্দেশ্যে। গুলিস্তান হতে দিশারী পরিবহনে এসে নামলাম মিরপুর ১ নাম্বার। টানা কয়েকদিন ছুটি পেয়ে ঢাকাবাসীরা বেশিরভাগ ঢাকাছাড়া। তাই যানজটের শহর ঢাকার চিরায়ত রূপ অনুপস্থিত, ফাঁকা রাস্তায় দশটার মধ্যেই পৌছে গেলাম মিরপুর। সেখান হতে রিক্সায় তুরাগতীরে অবস্থিত দিয়াবাড়ি বটতলা। এরপর ট্রলারযোগে সাদুল্লাপুর। ট্রলারে সময় লাগে আধা ঘন্টার মতো। এ সময়টা বেশ উপভোগ করার মতো। নদীর চিরায়িত রূপের সাথে কাশবনের মনমাতানো সৌন্দর্য আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য ভূবনে। নদীর জলে সূর্যমামার রূপালী ঝিলিক ধাঁধিয়ে দিবে আপনার চোখ। সময়টা কিভাবে কেটে যাবে টেরই পাবেন না একদম।















একটি বটগাছের নীচে ট্রলার ভিড়লো, সাদুল্লাপুর পৌছে গেলাম। এটি সাভার থানার বিরুলিয়া ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত। ছোট আকারের একটি বাজার। ছোট ছোট কিছু দোকানপাট আছে, খাবার হোটেল, মিষ্টির দোকানও আছে। এবার দেখার পালা। একটি ব্যাটারী চালিত রিক্সা ভাড়া করলাম ঘন্টা হিসেবে। রিক্সাঅলা একটি স্থানে এসে থামলেন। আমরা রিক্সা হতে নেমে দেখতে থাকলাম। যতদূর চোখ যায় শুধু গোলাপ বাগান। একটি বাগানে ঢুকলাম। গোলাপের কাঁটায় বউয়ের ওড়না আটকে একটু ছিঁড়ে গেল। তা দেখে আমি কবিতা আওড়ালাম- ‘কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?’

কয়েকটি বাগান ঘুরে আবার রিক্সায় চড়লাম। দক্ষিণ হতে উত্তরে সাদুল্লাপুর, মোস্তাপুর, শ্যামপুর কয়েকটি গ্রাম কয়েক কিমি জুড়ে বিস্তৃত আর রাস্তার পশ্চিম ও পূর্ব পাশে দৃষ্টিসীমার মধ্যে সারি সারি গোলাপ বাগান। অনেক গোলাপ বাগানের মাঝে মাঝে পেঁপে, পেয়ারা এসব ফলজ বৃক্ষ এবং কুমড়ো, লাউ, ঝিঙ্গে এসব ফসল চোখে পড়লো। এখানকার মাটি লাল যা ফুল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কয়েকস্থানে মাটির ঘরও দেখলাম। এসব ঘর বেশ মজবুত হয়।











আমাদের রিক্সা চলছে। একটু পর চোখে পড়লো অন্য রকম একটি বাগান। সবুজ লম্বা ডাঁটার মাঝে সাদা সাদা সব ফুল। পরে জানলাম এটা হচ্ছে গ্লাডিউলাস। এখানে শ্যামপুরে বড় আকারে ফুলের বাজার বসে। বিকেল হতে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।



গোলাপ গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য বেশ মুগ্ধ করার মতো। গোলাপের সুরভিতে একটি বেশ রোমাঞ্চকর অনুভূতি আপনার মনেপ্রাণে এনে দিবে সতেজ স্নিগ্ধ অনুভূতি! বাগানগুলিতে সারিবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে কাঁঠাল ও মেহগনি বৃক্ষ। দেখতে বেশ।











মোস্তাপুরের একস্থানে এসে দেখলাম মেহগনির বাগান। সেখানে নানাজাতের পাখির কিচিরমিচির এর সাথে নীচে দলবেঁধে বিচরণ করছে রাজহাঁস। মাঝে মাঝে চোখে পড়লো ছোট ছোট ফুলের আড়ত। এখানে ফুল তুলে এনে চাষীরা গুছিয়ে বাঁধাই ছাটাই করে, বেচাকেনা করে।





একসময় জোহরের আযান হলো। রিক্সা নিয়ে মসজিদে চলে এলাম। এখানে কয়েকটি মসজিদ আছে। আমরা সাদুল্লাপুর বাজারের নিকট মসজিদটিতে চলে এলাম। মসজিদে প্রবেশ এর পর ওয়ালে এর ইতিহাস চোখে পড়লো। ঐতিহাসিক প্রাচীন বেগুনবাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দাতাঃ নবাব শাহ সলিমুল্লাহ বাহাদুর চৌধুরী সাহেব, স্থাপিতঃ ১৮১৮ ইং।





পুরো গোলাপগ্রাম এখনো নবাব এস্টেটের আওতাভুক্ত। তাই গ্রামবাসী তথা মূলত গোলাপচাষীরা এস্টেট হতে জায়গা ইজারা নিয়ে বসবাস করেন। একসময় এখানে নবাবদের সংরক্ষিত শিকার কানন ছিল। নামাযশেষে ফেরার পথে নবানদের দানকৃত একটি ঈদগাহও চোখে পড়লো।

আর একটু এগিয়ে অবাক হওয়ার পালা। ছোট একটি জমিতে ঝুরঝুরে আর্দ্র লাল মাটিতে গোলাপের কাঁটা বিঘত পরিমাণ কেঁটে খুব ঘন করে পোঁতা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করে যা জানলাম, এ কাঁটা হতে কুঁড়ি বের হবে। এরপর তার মাঝে গোলাপ গাছের কলম করা হবে। আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে এগুলি গোলাপ চারা হিসেবে বিক্রয়ের উপযোগী হবে। ভাবলাম জানুয়ারীর দিকে আবার যাবো, কিছু গোলাপের চারা কিনতে হবে।





ফেরার পালা এবার। একরাশ সুখ ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এলাম। মিরপুর এক নাম্বার এসে ঢাকা বিরিয়ানীতে চিকেন বিরিয়ানী আর বোরহানী সহযোগে দুপুরের খাবার সারলাম।

বিষয়: সাহিত্য

১৭৮৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378653
১৩ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০৩:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমতকার ছবি গুলির জন্য অনেক ধন্যবাদ। তবে এই গ্রামে কি অন্য কোন ফসল হয় না? এটা পরিবেশ এর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
একটা সমস্যা আছে!!
বউ যদি দাবি করে যে সব গোলাপ যখন আমার তবে এগুলা বস্তা ভরে নিয়ে চলো তবে অাপনার পকেট ও ঘাড় উভয়ের কি অবস্থা হবে তা কি ভেবে দেখেছেন!!!
১৩ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৯
313675
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অন্যান্য ফসলও হয়। এখানকার লাল মাটি খুব উর্বর। তবে গোলাপ চাষে লাভ বেশি বলে এটার চাষ বেশি হয়।

Tongue Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone
378655
১৩ অক্টোবর ২০১৬ বিকাল ০৫:০৮
স্বপন২ লিখেছেন : ভালো লাগলো / অনেক ধন্যবাদ /
১৩ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১০
313676
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : Thank u
378659
১৩ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:২৭
আফরা লিখেছেন : দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ,ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া , একটি গোলাপের উপর একটি প্রজাপ্রতি ।
ভাইয়া এই একেবারে আমার দাদা বাড়ির কাছে গিয়েছিলেন । অবশ্য আমি কখনো যাইনি দাদাবাড়ি ।
গোলাপ ফুলের ছড়াছড়ি খুব ভাল লাগল !ধন্যবাদ ভাইয়া
১৩ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১২
313677
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আপনার সেই দিনে দাওয়াত দিবেন। গোলাপগ্রাম হতে গোলাপ এনে দুজনকে গিফট করবো ইনশাল্লাহ।
378685
১৪ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০১:৫১
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam. Wonderful writing and beautiful pictures mashallah. Really enjoyable.
১৪ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৬:২৯
313680
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : Assalamu alaikum wa rahmatullahi wa barakatuhu. Zajakallahu khairan for your appreciation.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File