বাংলাদেশের দার্জিলিং- নীলগিরি (ভ্রমণ)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ০১ অক্টোবর, ২০১৬, ০৫:০৮:৩৪ বিকাল
বউ নেট ঘেঁটে খোঁজ পেয়েছে নীলগিরির। বায়না ধরেছে যেতে। আমারো একটু একটু ইচ্ছে কিন্তু সময় সুযোগ মিলাতে পারছিলাম না।
পারিবারিক একটা কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। সাথে আছে ১৫ ই আগস্টের ছুটি। এর সাথে আরো দুই দিন ছুটি নিয়ে প্ল্যান করে ফেললাম বান্দরবান ভ্রমণের। প্রথম টার্গেট নীলগিরি, এরপর বাকিটা যা পারা যায়।
১৫ ই আগস্ট সকাল সাড়ে ছয়টায় আল্লাহর নাম নিয়ে রওনা করলাম চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট হতে পূর্বানী বাসে চড়ে। সাড়ে নয়টার মধ্যে পৌছে গেলাম বান্দরবান শহরে। শহরে প্রবেশের অনেক আগে হতেই পাহাড়ী রাস্তা শুরু। পাহাড়ী পথের বাঁকে বাঁকে সৌন্দর্যের হাতছানি। শহরের ৭ কিমি আগে চোখে পড়লো মেঘলা পর্যটন স্পট।
শহরে এসে একটি হোটেলে উঠলাম। হোটেল এর নাম -ফোরস্টার, তবে তারকামানে এটি ফোরস্টার নয় মোটেই। তবে চলনসই, মন্দ নয়। একটু রেস্ট নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। নাস্তা সেরে চললাম গাড়ির সন্ধানে নীলগিরি যাবো বলে। দেখে শুনে একটি ফোর হুইলার ল্যান্ড ক্রুইজার ভাড়া করে ফেললাম সারা দিনের জন্য। ভাড়া নিল ৪,০০০ টাকা। অনেকে দেখলাম দলবেঁধে চাঁদের গাড়ি ভ্রমণ করছে। চাঁদের গাড়িতে ভ্রমণ এডভেঞ্চারপূর্ণ, তবে আমার সাথে পরিবার থাকায় চাঁদের গাড়িতে ভ্রমণের ঝুঁকি নেই নি।
মোটামুটি দুই ঘন্টার মধ্যে পৌছে গেলাম নীলগিরিতে। বান্দরবান হতে নীলগিরি আসার পাহাড়ী আাঁকাবাঁকা ৫৫ কিমি রাস্তাটি অসম্ভব সুন্দর ও এডভেঞ্চারপূর্ণ। তবে বেশ ভয় ধরিয়ে দেয়। কোথাও কোথাও রাস্তা উঁচু নিচু পথে পুরো বৃত্তাকারে ঘুরে গিয়েছে। হঠাৎ নেমে গেল গাড়ি অনেক নীচেতো, আবার ঢালু রাস্তা বেয়ে উঠে গেল বেশ উপরে আবার বাঁক, বৃত্তাকার পথ। এই বুঝি বিপরীত দিকে হতে তীব্র বেগে ছুটে আসা গাড়ির সাথে সংঘর্ষ বেধে গেল! কিন্তু না, এখানকার ড্রাইভারগুলি খুব দক্ষ, অসম্ভব দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণ নেয় গাড়ির। পাহাড়ী রাস্তায় গাড়ি চালানোতে তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণেই এখানে বড় রকমের দূর্ঘটনার হার কম। রাস্তা হতে চোখে পড়ে দূরের গ্রাম আর পাহাড়গুলি শুভ্র শ্বেত মেঘের চাদরে আচ্ছাদিত। রোদের আলো সে মেঘের উপর প্রতিস্মরিত হয়ে ঝিকিমিকি আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে মাঝে মাঝে।
মেঘ পাহাড়ের এই মিতালি কতটা মনোমুগ্ধকর তা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব। শুধু ক্লান্তিহীন চোখে দেখে যেতে হয় আর অনুভব করতে হয়।
আমরা যখন নীলগিরিতে পৌছি তখন সূর্য মাথার উপরে। বলে রাখা ভাল, নীলগিরিতে পৌছার বেশ কিছু আগে একটি সেনা ক্যাম্প আছে। সেখানে আপনার পরিচয় এবং ফেরার সময়সহ যাবতীয় তথ্য এন্ট্রি করেই প্রবেশ করতে হয়। আপনার নিরাপত্তার প্রয়োজনেই এটি। নীলগিরি পর্যটন স্পটটিও সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত। এখানে একটি রিসোর্ট আছে-নীলগিরি হিল রিসোর্ট। থাকতে হলে আগেই যোগাযোগ করে বুকিং দিয়ে আসতে হয়।
বান্দরবানের মানচিত্রটা কালো পাথরে খোদাই করে টানানো আছে এখানে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও চলাচলের জন্য রাস্তা, সিঁড়ি আর নিরাপত্তা বেষ্টনী ইত্যাদি স্থাপনাও বেশ সুন্দর ও চমৎকারভাবে তৈরি করা হয়েছে। এখানে একটি হেলিপ্যাডও আছে।
নীলগিরি এসে মুগ্ধতা যেন কাটছেই না। কী সুন্দর মহান স্রষ্টা আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি! যেন একটি ভিন্ন জগত। ভূমি হতে ৩,২০০ ফুট উপরে মেঘ পাহাড়ের অনিন্দ্যসুন্দর মিতালি ভুলিয়ে দিবে আপনার সকল জাগতিক দুঃখ। পাহাড় হতে অনেক নীচে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ী গ্রাম, সে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলছে পাহাড়ী ঝর্ণায় সৃষ্ট ছোট নদী। ভেসে ভেসে মেঘগুলো চুমু দিয়ে যাচ্ছে নদীর পানিতে। কোথাও কোথাও মেঘ একস্থানে জমাট বেঁধে স্থির হয়ে আছে। সে এক অভূতপূর্ব
দৃশ্য!
কয়েকঘন্টা সময় কিভাবে কেটে গেল টেরই পেলাম না। এবার ফেরার পালা। ছেড়ে আসতে মন চাইছে না। তবুও যে আসতে হয়।
ফেরার পথে ছোটখাট একটা বিপদে পড়েছিলাম। সামান্য বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে একটি নীচু রাস্তা ব্লক হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিভিন্ন উপায়ে কাঠের তক্তা দিয়ে একটা একটা গাড়ি পার করার উপায় বের করা হয়েছিল। ফলে প্রায় এক ঘন্টা জ্যামে পড়তে হয়েছিল। যাদের গাড়ি ফোর হুইলার নয় তাদের দুর্ভোগ হয়েছিল বেশ। নেমে গাড়ি ধাক্কিয়ে অনেক সময় নিয়ে পার করতে হয়েছিল। ফোর হুইলার হওয়ায় আমরা সহজে পার হতে পেরেছিলাম।
নীলগিরি হতে ফেরার পথে চিম্বুক পাহাড় আর শৈলপ্রপাত ও দেখেছিলাম। পরদিন গিয়েছিলাম মেঘলা পর্যটন স্পট। সে পর্ব তোলা থাক আগামী পর্বের জন্য।
বিষয়: সাহিত্য
২৩০৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিলাচল ও নীলগিরি দুটাই অত্যন্ত সুন্দর।
হোটেল কি ঢাকাতে থাকতেই আগে বুকিং দেওয়া লাগে ? ঢাকা হতে আসা যাওয়ার খরচ , হোটেলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কেমন ? ২/৩ দিন থাকতে চাইলে সেটা কি সম্ভব ?
উপজাতিরা শুনেছি ওখানে বেশ হ্যাঁপা দেয় - সেটা কি সত্যি ?
সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটা সেটা হল - এখানে ম্যালেরিয়ার প্রাদূর্ভাব কেমন ? ঢাকা থেকে কি ঔষধ খেয়ে আসতে হয় ?
ঢাকা হতে বান্দরবানের সরাসরি বাস আছে,ফকিরাপুল আর কমলাপুর হতে ছাড়ে, ভাড়া ৮২০ টাকা জনপ্রতি। এস আলম, হানিফ ও ইউনিক পরিবহন যায় বান্দরবান।
বান্দরবান শহরের কেন্দ্রেই আছে হোটেল ফোরস্টার, এসি ফ্যামিলী কক্ষ পাবেন ১,৫০০ টাকায়; নন এসি ৮০০ টাকায়। মৌসুমভেদে ভাড়া কমবেশি হয়।
অতি আগ্রহ, অতি কৌতুহল এড়িয়ে চললে সমস্যা হয় না। আপনি তাদের(উপজাতিদের) অযথা বিরক্ত করলে তারা সেটা পছন্দ করবে না। নীলগিরি সেনা নিয়ন্ত্রিত বলে এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালোই। তবে বান্দরবান আরো কিছু পর্যটন এলাকা আছে যেখানে উপজাতিদের কাছ হতে টাকার বিনিময়ে খাদ্য ও আবাসন সেবা পাওয়া যায়।
আমরা ২ দিন ছিলাম। নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়, শৈলপ্রপাত, মেঘলা পর্যটন স্পট গিয়েছিলাম। সবচেয়ে ভালো হয় ৪/৫ দিন ট্যুর প্ল্যান করা। বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। তবে এসব কিছু ভালোভাবে দেখতে চাইলে আগে হতে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আসা উচিত।
ম্যালেরিয়ার প্রাদূর্ভাব বেশ। সতর্কতা হিসেবে আগে ঔষধ সেবন করে আসা ভাল। যদিও আমরা তা করি নি।
আপনার ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে লিখা ও ছবিগুলো সত্যিই অনবদ্য ও অনন্য।
ভাবীর রুচিবোধ প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশের মাটীতে এতো মনোমুগ্ধকর নয়নাভিরাম জায়গা আছে ভাবতেই ভালো লাগছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর লিখা ও ছবিগুলোর জন্য।
জাযাকাল্লাহ খাইরান।
সত্যিই আমাদের দেশে প্রচুর অনিন্দ্যসুন্দর পর্যটন স্পট আছে। সরকারী বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেসবের পরিচিত কম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন