ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৭ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৪৯:৫১ দুপুর
ইচ্ছে ছিল এবারের ঈদের ছুটিতে সপরিবারে দেশের বাইরে কোথাও ঘুরে আসা। কিন্তু সমায়াভাবে ছেলের পাসপোর্টটা করা হয় নি। তাই সে পরিকল্পনা বাদ দিলাম। তবে নিজ দেশেও যে দেখার মতো অনেক কিছু আছে সেটা বলাই বাহুল্য।
ঈদের আগে পরে মিলিয়ে এবার টানা ৯ দিন ছুটি পেলাম। ৩০ শে এপ্রিল হাফ বেলা অফিস করে দুপুর দেড়টায় ময়ূর ৭ লঞ্চে চড়ে বসলাম পরিবারের সাথে একত্রিত হওয়ার উদ্দেশ্যে। উল্লেখ্য যে, আমার স্ত্রীর কর্মস্থল লক্ষ্মীপুর জেলায়। একমাত্র ছেলে মায়ের সাথেই থাকে।
(সদরঘাট) ঢাকা টু চাঁদপুর লঞ্চভ্রমণটা খুউব উপভোগ্য। এ রুটের লঞ্চগুলি বেশ আধুনিক, বড়সড়, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন। লঞ্চে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের আমি নিয়মিত যাত্রী, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই যাওয়া হয়। এ সুবাদে জানি- চাঁদপুর যাওয়ার সেরা তিনটি লঞ্চ হচ্ছে রফরফ-২, ময়ুর-৭ ও ঈগল-৩। এদের বাইরের ও ভেতরের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে এবং আপনি ভুলেই যাবেন যে এটি বাংলাদেশের কোনো লঞ্চ! ডেকে ভাড়া ১০০ টাকা, চেয়ার ১৫০ টাকা, প্রথম শ্রেণী ২০০ টাকা, বিজনেস ক্লাস ২৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৩০০ টাকা, ডাবল কেবিন ৬০০ টাকা। আরো আছে এসি কেবিন (সিঙ্গেল ও ডাবল), ফ্যামিলী কেবিন (এসি ও নন এসি) ও ভিআইপি কেবিন।
তবে দিনের বেলায় নদীপথের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চাইলে কেবিন না নেওয়াই ভাল। প্রথম শ্রেণী বা বিজনেস ক্লাস নিবেন। বাক্স পেটরা সিটে রেখে লঞ্চের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে উপভোগ করুন নদীপথের অপরূপ নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। দোতলা বা তিনতলা হতে দেখতে ভাল লাগবে বেশি।
মাত্র সোয়া তিন ঘন্টার জার্নি। বুড়িগঙ্গা, মেঘনা নদীর দৃশ্য এবং নদীতীরে স্থাপিত ডকইয়ার্ড, শিল্প কারখানাসহ নানাবিদ স্থাপনা, নদীর মাঝে ছোট ছোট চর, নদীর পানিতে সূর্য ও মেঘের লুকোচুরির প্রতিচ্ছবি -এসব সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সময়টা বেশ ভাল কেটে যায়। ভাগ্য ভাল হলে দেখতে পাবেন গাঙচিল এর ঝাঁক এর দলবেঁধে উড়াউড়ি।
বুড়িগঙ্গায় এমন দুটি ব্রীজ পাড়ি দিতে হয়-
নদীতে সূর্য আর মেঘের লুকোচুরি লুকোচুরি গল্পের প্রতিচ্ছবি -
লঞ্চ ছাড়াও নদীতে চলছে নৌকা, ট্রলার ও বিভিন্ন ধরনের জলযান-
গাঙচিল এর ঝাঁক। ঘুরে ঘুরে এরা দীর্ঘক্ষণ একই ছন্দে ও তালে উড়তে থাকে-
নদীর এমন মোহনীয় রূপ দেখে আপনি মনের অজান্তেই গেয়ে উঠবেন-
ও রূপালী নদীরে, রূপ দেখে তোর হয়েছি পাগল......
লঞ্চে করে প্রথমে চাঁদপুর নেমে পরে সিএনজিচালিত বেবিট্যাক্সিতে করে গন্তব্যস্থলে পৌছলাম। ইফতারীর বেশ আগেই পৌছে গেলাম বাসায়। ঈদের আগে ৬ দিন ছুটি। বউয়ের সাথে প্ল্যান করতে বসলাম কীভাবে এ অবসরকে কাজে লাগানো যায়। রোজা রেখে ভ্রমণ করা একটু দুরূহ বটে। প্রতিদিনতো আর ভ্রমণ করা যাবে না। রোজার দিনে একটু বাড়তি ইবাদত করার বিষয়ও আছে। তাই ঠিক হলো দুই দিন। প্রথম দিন চাঁদপুর মোহনা যাবো। তারপর দিন এর কথা পরে বলছি।
যে কথা সে কাজ। পরদিন জুমার সালাত পড়েই রওনা করলাম সপরিবারে। ছেলে খুব খুশী। বিশেষ করে সপ্তাহশেষে আমি যখন আসি সে তখন খুশীতে আত্মহারা থাকে। তাকে তখন ভালভাবে সঙ্গ দিই, তার আম্মুসহ তাকে ঘুরতে নিয়ে বের হই। সে যাই হোক। সিএনজি থ্রী হুইলার এ করে চাঁদপুর কালিবাড়ি নামলাম। চাঁদপুর রেলস্টেশনটিও নিকটেই। এখান থেকে অটো বেবীট্যাক্সিতে করে চাঁদপুর মোহনা ১০ টাকার ভাড়া। যথাসময়ে মোহনায় পৌছে গেলাম। পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া- এই তিন নদীর মোহনাই হচ্ছে চাঁদপুর মোহনা। নদীভাঙ্গন হতে রক্ষার জন্য ব্লক ফেলে উপকূলে বাঁধ দেয়া হয়েছে। উত্তাল সাগরের মত শোঁ শোঁ গর্জন করে তিন নদীর মিলিত বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে কুলে।
ঘন্টাদুয়েক ছিলাম এখানে। মোহনায় দাঁড়িয়ে নদীর রূপ আর গোখরা সাপের রাগসম শোঁ শোঁ গর্জন নিয়ে কুলে আছড়ে পড়া বড় বড় স্রোতের দৃশ্য উপভোগ করলাম। এবার ফেরার পালা। কিন্তু ইলিশ না কিনেই! নিকটেই ছিল ইলিশের আড়ত। তাজা ইলিশ কেনার আনন্দে মনপ্রাণ নেচে উঠলো। তবে গিয়ে একটু আশাহত হলাম। বরফ দেয়া ইলিশ সব। এরপরও চাঁদপুর এর ইলিশ বলে কথা। এটিই সবচেয়ে সেরা ইলিশ। দরদাম করে তিনটি প্রমাণ সাইজের ইলিশ কিনে ফেললাম ২৫০০ টাকায়। তিনটির ওজন আড়াই কেজি হবে। বরফ দেয়া হলেও ঠকি নি। বাসায় এনে ফ্রীজে রেখে দিয়েছিলাম। ঈদে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম ইলিশগুলি। সবাই খেয়ে খুব প্রশংসা করলেন। স্বয়ং আমার আম্মা বললেন- গত দশ বছরে এমন স্বাদের ইলিশ আর খাওয়া হয় নি। যে ইলিশগুলির ওজন এককেজির বেশি সেগুলির দাম চড়া। ১৫০০ টাকা হতে ২২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি। নিলামেও মাছ বিক্রয় হচ্ছে বেশ। বেপারীরা নিলামে কিনে নিচ্ছেন।
কিছু সুখস্মৃতি নিয়ে ফিরে এলাম চাঁদপুর হতে। আসার পথে রেষ্টুরেন্ট এ ইফতার সেরে নিলাম। ফিরতে ফিরতে প্ল্যান করছি পরেরদিন কোথায় যাওয়া যায়। মাথায় এল তাজা ইলিশ এর সন্ধানে যাবো। প্রয়োজনীয় খোঁজ খবরও নিয়ে রাখলাম।
পরদিন সকাল সকাল বের হলাম তাজা ইলিশ এর সন্ধানে। রায়পুর এর খাসেরহাট পর্যন্ত গেলাম সিএনজিতে। এরপর ব্যাটারীচালিত রিক্সায় চেপে বসলাম। ৫০ টাকা ভাড়ায় পৌছে দিল স্লুইস গেইট। যাওয়ার পথের দৃশ্যাবলী খুব সুন্দর, উপভোগ করার মতো। জাইকার অর্থায়নে ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত এ স্লুইস গেইট ও পারিপার্শি্বক পরিবেশও চমৎকার।
স্লুইস গেইট এর পাশেই স্থানীয় বাজার। তুলনামুলক তাজা ইলিশ পেলাম কিছু। মাঝারী সাইজের এক হালি কিনে নিলাম। মাছবিক্রেতার কাছে জিজ্ঞেস করলাম-জেলেদের কাছ হতে সদ্য ধরা ইলিশ মাছ পাওয়ার উপায় কী?
তিনি জানালেন, ভোররাতে যেতে হবে নদীতে। কোথায় কিভাবে যাবো? জিজ্ঞেস করতে বললো- আমার সাথে যেতে পারেন। পরে একদিন তাকে সাথে নিয়ে ঐ অভিযানে যাবো জানিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
বিষয়: সাহিত্য
২০৩৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ এগুলোর ভাড়া কেমন ? কোন হোটেল / রিসর্ট আছে থাকার জন্য ?
ইলিশের দাম ঢাকার চেয়ে কম মনে হল না ।
বরিশাল গিয়ে ইলিশ এনেছিলাম । কেবিনে না রেখে ওদের ডিপ ফ্রিজে রেখেছিলাম । ২০০ টাকা নিয়েছিল । এখানে কি সেরকম ব্যবস্থা আছে?
আল্লাহ আমাদের দেশটাকে বেশী সুন্দরভাবেই সাজিয়ে দিয়েছেন ।
জ্বী, ইলিশের দাম সেখানে বেশি। কারণ হচ্ছে চাঁদপুরের ইলিশ। ঢাকায়ও চাঁদপুরের ইলিশ এর দাম বেশি হবে। তবে ঢাকায় অরিজিনাল জিনিস পাওয়া মুশকিল। ঠকার সম্ভাবনা বেশি। সিঙ্গেল এসি কেবিন ৫০০, ডাবল ১২০০, ফ্যামিলী কেবিন ননএসি ১৫০০, ফ্যামিলী কেবিন এসি ২০০০, ভিআইপি কেবিন সম্ভবত ৩,৫০০ টাকা।
চাঁদপুর শহরে থাকার জন্য হোটেল/রিসোর্ট আছে থাকার জন্য।
ইলিশ সোলার বাক্সে বরফসহ্ প্যাক করার ব্যবস্থা আছে। এর জন্য বাড়তি কিছু টাকা নিবে।
ফাবিআয়ী আলাই রাব্বিকুমা তুকাযযিবান।
ইলিশ এর ভাগ আমরা পেলাম না!
আগে জানলে ঈদের দিন আপনার বাড়িতে উপস্থিত হতাম। তাজা ইলিশ এর অভিযান এর সময় কিন্তু অবশ্যই খবর দিবেন। না হলে.......
চাঁদপুর গিয়েছি প্রায় ১০-১২ বছর আগে। লঞ্চ ঘাট এর পাশে খুব সুন্দর জায়গা।
আমাদের বাড়ীর পাশ্বেই মেঘনা। কত জ্যান্ত ইলিশ ধরেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন