চরমোনাই পীর ও ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৫ জুন, ২০১৬, ০১:১৩:০৫ দুপুর
এ বিষয়টি নিয়ে লিখার ইচ্ছে ছিল না। তবে অনেকবছর পূর্বের একটি ঘটনা মনে পড়ায় শেয়ার করতে ইচ্ছে হল। ১৯৯৬ সাল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এর পূর্বমুহুর্ত। মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আবার ভারতের কাছে বন্ধক হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় এ নির্বাচনের মাধ্যমে।
তো যেটা বলছিলাম। আমি তখন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। আমার নানাবাড়ি সেখানে। চৌদ্দগ্রাম হতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ছিলেন ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। সেখানে তাহের ভাই ছিলেন সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী এবং তাঁর পক্ষে গণজোয়ারও ছিল যথেষ্ট। প্রচার প্রচারণা চলছে বেশ জোরালোভাবে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপকার অধ্যাপক গোলাম আজম এর সমাবেশ আহবান করা হলো চৌদ্দগ্রাম পাইলট স্কুল ময়দানে। চৌদ্দগ্রামের ইতিহাসে এত বড় সমাবেশ ইতোপূর্বে আর হয় নি। মাঠ, রাস্তা, আশেপাশের সকল ভবন ছাড়াও কয়েক কি.মি. লোকে লোকারণ্য ছিল। জামায়াতের বিজয় অন্য দুই বিরোধী প্রার্থীও প্রায় নিশ্চিত ধরে নিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, অন্য দুই প্রার্থী ছিলেন যথাক্রমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টির কাজী জাফর আহমেদ এবং আওয়ামী লীগ হতে বর্তমান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক।
অধ্যাপক গোলাম আজম সমাবেশ করে যাওয়ার পর শুরু হলো ডাঃ তাহের ও জামায়াত এর বিরুদ্ধে চরমোনাই পীর কর্মীদের ব্যাপক প্রোপাগান্ডা। কয়েকদিন পর চরমোনাই এর তৎকালীন পীর চৌদ্দগ্রামে এলেন দলীয় সমাবেশে। তিনি ফতওয়া দিয়ে গেলেন, “জামায়াতকে ভোট দেয়া হারাম, হারাম, হারাম।” বলাবাহুল্য, সাধারণ মানুষ ইসলামের প্রতি ভালবাসা থাকলেও জ্ঞান কম ছিল। লেবাস থাকলে এবং বিশেষ করে পীর অলীর কথা তারা কোন যাছাই বাছাই ছাড়াই মেনে নেন। পীরের সে ফতওয়া ব্যাপকভাবে প্রচার করলো আওয়ামীলীগ কর্মীরা এবং সেটা জামায়াতের ভোটব্যাংকে আঘাত করলো ভালভাবেই। তখন দৈনিক ইনকিলাব ছিল মুনাফেকীর ভূমিকায়। খেয়াল করে দেখলাম, যেসব আসনে জামায়াতের শক্তিশালী প্রার্থী ছিল সেসব আসনেই চরমোনাই পীর সমাবেশ করে উক্ত ফতওয়া দিয়ে এসেছেন এবং দৈনিক ইনকিলাব বেশ গুরুত্ব দিয়ে সে ফতওয়া প্রচার করেছে।
আওয়ামীলীগ এর সাথে চোরমোনাই পীর এর দহরম মহরম সম্পর্ক এখন ওপেন সিক্রেট। বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা যেখানে নিজের বাড়িঘরেই থাকতে পারেন না, সেখানে সারাদেশে কিভাবে চোরমোনাই পীর সমাবেশ করে বেড়ান? কিছুদিন পূর্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারা মহাসমাবেশ করেছিল। সে সমাবেশে পীরসাহেব এর ভাষণ হতে তাদের মনের ইচ্ছা ভালভাবেই প্রকাশ পেয়েছেঃ
“আমরা অনেক আগেই বলেছিলাম, বিএনপি হলো মুনাফিক শক্তি, বিএনপি মুনাফিক শক্তি, বিএনপি মুনাফিক শক্তি।................
বিএনপিকে বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না। এই মুনাফিককে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবেনা।”- চরমোনাই এর পীর সৈয়দ রেজাউল করীম।
বিএনপি’র ক্ষমতা আসা তারা ঠেকাবে যেকোন মূল্যে, তাহলে বুঝুন কাদেরকে তারা ক্ষমতায় দেখতে চায়।
চোরমোনাই পীরের ভ্রান্ত আকীদাসমূহ নিয়ে আলোচনা করে লেখার কলেবর বাড়াতে চাচ্ছি না। ইউটিউবে তার প্রচুর ভিডিও বক্তব্য পাবেন যেগুলো সরাসরি শিরক ও কুরআন হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। আগ্রহী কেউ নিজ দায়িত্বে দেখে নিতে পারেন। তবে আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম যখন একবার তার সৎমায়ের এবং দুই সৎভাইয়ের সাক্ষাতকার পড়লাম। বাবার রেখে যাওয়া সম্পূর্ণ সম্পত্তি যে ঘৃণ্য প্রক্রিয়ায় বর্তমান পীর সৎমা ও সৎভাইদের বঞ্চিত করে নিজে আত্মসাৎ করেছে সেটা বলার ভাষা নেই। ভিটেমাটি হতে সৎমাকে উচ্ছেদ করার জন্য হেন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করেন নি। রাতের বেলায় টিনের চালে দলবল বেধে ঢিল ছোঁড়া ও উঠোনে মলত্যাগ করে আসার মত হীন কাজও করেছেন এ পীর। এসবই তার সৎমায়ের ভাষ্য। ২০০৬ সালে একটি সাপ্তাহিকে প্রকাশিত এ সাক্ষাৎকার তখন বেশ আলোড়ন তুলেছিল।
বিষয়: বিবিধ
১৭২২ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কারামতের মাধ্যমে আপনার ক্ষতি করে দিতে পারে।
০ ভালই চালিয়েছেন । চালিয়ে যান । আপনাকে / আপনার মতের সাথে মিল আছে এরকম ভাইদের নিয়ে জামায়াত ফিনিক্স পাখির মত এ সময়ে বের হয়ে আসবে । যুদ্ধাপরাধীদের এই বিচার প্রক্রিয়া আপনাদেরকে অনেক কিছু আত্মস্থ করতে শিখিয়েছে।
০ এক কথা পর পর ৩ বার উচ্চারণ করলে কথার ওজন বাড়ে । এরকম কথাই আমরা ''জানি কম , বুঝি বেশী '' মুসলমানেরা ভালই খাই । সেটা যদি পীরের কাছ থেকে আসে তাহলে তো একে নির্জলা সত্যই বলে মনে করি ।
চরমোনাইয়ের মাহফিলে বাঁশের প্যান্ডেল বেয়ে আশেকানদের বানরের মত ওঠানামা দৃশ্যটা দেখে বেশ মজাই পাই । এটা হলিউডি মুভি স্ট্রিপ টিজের পারফরমারদের প্যারালাল একটা একটিভিটি ।
চরমোনাইয়ের পোস্টে এরকম কিছু ছবি দিলে খুশি হব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন