নাস্তিকতাঃ একটি জঙ্গি ও ভ্রান্ত বিশ্বাস (পর্ব ২)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ০৫:৩৯:৩২ বিকাল
স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে সহজে বোধগম্য কিছু যুক্তি-প্রমাণঃ (চলমান)
সুনিয়ন্ত্রিত মহাবিশ্বঃ
প্রতিদিন নিয়ম করে পূর্বদিকে সূর্য উদিত হওয়ার মাধ্যমে দিন শুরু হচ্ছে হচ্ছে এবং পশ্চিম দিকে সূর্য অস্ত যাওয়ার মাধ্যমে দিবাবসান হয়ে রাতের আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট নিয়মে অমাবশ্যা পূর্ণিমা হচ্ছে। বস্তুতঃ পৃথিবী, সৌরজগত, মহাবিশ্ব সবই একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে চলছে। সুনিয়ন্ত্রিত এই নিয়মের যিনি পরিচালক তিনিই মহানস্রষ্টা, তিনিই সর্বশক্তিমান। বিজ্ঞানী নিউটন বলেছিলেন, “বিশ্বের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর দিয়ে স্থান ও কালের হাজার হাজার বিপ্লব অতিক্রম করেছে। তা স্বত্বেও তাতে যে শৃঙ্খলা ও সুনিয়ন্ত্রণ পরিলক্ষিত হয়,তা একজন নিয়ন্ত্রক ছাড়া সম্ভব নয়।”
এই নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটলেই মহাসাংঘর্ষিক ও মহাধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আধুনিক মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এমনটাই মত প্রকাশ করছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যখন সৌরজগতের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপর্যয় ঘটবে এবং পৃথিবীর স্বাভাবিক ঘূর্ণন ব্যাহত হবে তখন চন্দ্র, সূর্য, পৃথিবী প্রচন্ড গতিতে কক্ষপথ হতে ছিটকে পড়বে।সাড়ে ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কুরআনে কত সুনির্দিষ্ট করে সেই ভয়ংকর মহাপ্রলয় সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছেঃ
“(সেদিন) পর্বতমালা সমেত পৃথিবী ছিটকে পড়বে এবং একটি মাত্র ধাক্কায় তারা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। সেদিনই সংঘটিত হবে মহাপ্রলয়। এবং আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, আর সেদিন তাদের (আকাশের সব কিছুর) বাঁধন বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে।” (৬৯:১৪-১৬।
“আর পর্বতমালাকে দেখেছো? মনে করছ তা অনড়। অথচ (কিয়ামতের দিন) তারা মেঘপুঞ্জের মত উড়তে থাকবে।”(২৭:৮৮)।
জীবজগতের শ্বাস-প্রশ্বাসঃ
শুধু মানুষ নয়, শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করা ছাড়া কোন জীবের পক্ষেই বেঁচে থাকা অসম্ভব। এমনকি বৃক্ষ, লতা, গুল্ম প্রভৃতি উদ্ভিদও শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করা ছাড়া বাঁচতে পারে না। প্রাণীকুল ফুসফুসের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করলেও উদ্ভিদ করে পাতার সাহায্যে। মানুষসহ সব প্রাণী শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে বাতাস থেকে অক্সিজেন নেয় এবং শ্বাস ছাড়ার মাধ্যমে শরীরের ভিতরে জমা হওয়া দূষিত কার্বন-ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। অন্যদিকে উদ্ভিদরা পাতার সাহায্যে বাতাস থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে নির্মল অক্সিজেন পরিত্যাগ করে। উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে বেঁচে থাকার জন্য পারস্পরিক নির্ভর কি সুন্দর এই বাস্তুসংস্থান পদ্ধতি! এটি মহান স্রষ্টারই বাতলে দেয়া পদ্ধতি।একজন মহান স্রষ্টা ছাড়া স্বয়ংক্রিয় ভাবেই এটা হয় সেটি স্রেফ একটি অন্ধ ও অযৌক্তিক বিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
পরিবেশ পরিস্থিতি উপযোগী সক্ষমতাঃ লক্ষ প্রজাতির মধ্যে মানুষ হচ্ছে বিদ্যা বুদ্ধিতে শ্রেষ্ঠ। দৈহিক আকৃতিতে সবচেয়ে সুন্দর। একমাত্র মানুষেরই স্বাভাবিক বাকক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন, একটি মানবশিশু হাঁটতে শিখতে কমবেশি দুই বছর সময় নেয়। গরুর বাছুর জন্ম নেয়ার ক্ষণিককাল পর হতেই দৌড়ঝাপ দেয়, লাফায়। শীতপ্রধান এন্টার্কটিকা অঞ্চলে বাস করে মরুভল্লুক যার ত্বকের নিচে রয়েছে পুরু চর্বির স্তর যার ফলে হিমাংকের নিচের তাপমাত্রাও তাকে কাবু করতে পারে না। এভাবে পরিবেশ পরিস্থিতি উপযোগী একটি সক্ষমতা দেয়া হয়েছে সকল প্রাণীকূলকে স্বাভাবিকভাবে টিকে থাকার জন্য। কোন এক মহানিয়ন্ত্রক মহাশিল্পী ছাড়া এই সুন্দর শৈল্পিক পদ্ধতি কিভাবে সম্ভব? মহানস্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সেই মহানিয়ন্ত্রক মহাশিল্পী।
গবাধিপশুকে মানুষ লালন পালন করে। তার গোশত খায়। প্রতিবছর কোটি কোটি গবাধিপশু জবাই করা হচ্ছে মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য। কিন্তু গবাধিপশুর কোন অভাব হচ্ছে না। অপরদিকে মুক্ত স্বাধীনভাবে বিচরণ করা বাঘ সিংহের মতো হিংস্র পশুগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি সেভাবে হচ্ছে না বরং অনেকক্ষেত্রে এগুলি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। মানুষের পক্ষে যেটা ক্ষতিকর সেটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে আর যেটি মানুষের জন্য খুব প্রয়োজন সেটি প্রতিনিয়ত হত্যার পরও সংখ্যাস্বল্পতা দেখা যাচ্ছে না। কি চমৎকার ভারসাম্য! কোন গায়েবী শক্তি ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে কি আদৌ এটি সম্ভব? এটি তার পক্ষেই সম্ভব যিনি এই মহাবিশ্বের মহাস্রষ্টা। তিনিই সর্বশক্তিমান আল্লাহ।
মনীষীদের জীবন হতে কিছু উদাহরণঃ
১।ফ্যান্সিস বেকন তিন শতাব্দী আগেই বলেছেন, “সামান্য দর্শনজ্ঞান মানুষকে নাস্তিক করে আর গভীর জ্ঞান মানুষকে ধর্মের দিকে নিয়ে যায়।”
২। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর সাথে কিছু নাস্তিকদের তর্কযুদ্ধ হবে। সাজ সাজ রব। নির্দিষ্ট দিনে সবাই হাজির। শুধু ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এলেন না। নির্দিষ্ট সময়ের দীর্ঘক্ষণ পর হাজির হলেন ইমাম। তিনি দেরী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করছেন-“আমি আসার সময় পথে একটি বড় জলাশয় পড়লো। কিন্তু পার হওয়ার জন্য কোন নৌকা ও মাঝি ছিল না। বেশ কিছুক্ষণ পর একটি গাছ এসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নৌকা হয়ে গেল। আমি উঠে পড়লাম এবং নিরাপদে পার হলাম।” নাস্তিকরা হো হো করে উঠলো, বললো-“কি উদ্ভট অসম্ভব গল্প শুনাচ্ছেন আমাদের। একটি গাছ স্বয়ংক্রিয় ভাবে নৌকা হয়ে গেল! আর এই উদ্ভট গল্প আমাদের বিশ্বাস করতে বলেন?”
“সামান্য ছোট একটি নৌকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হতে পারে না আর এই মহাবিশ্ব কোন স্রষ্টা ছাড়া এমনি এমনি তৈরি হয়ে গেল? তাহলে আমার গল্পের চেয়ে তোমাদের দাবিটা ঢের বেশি উদ্ভট নয় কি?”
নাস্তিকদের মুখে আর রা নেই। তাদের বড় একটি অংশ নাস্তিকতা ছেড়ে ইসলাম কবুল করলো।
৩। বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনকে নিয়ে অনুরূপ একটি গল্প। একদিন তিনি ল্যাবে বসে আছেন। নতুন একটি প্রজেক্ট এর জন্য একটি নমুনা কাঠামো তৈরি করলেন। তার এক নাস্তিক বন্ধুর আগমন ঘটলো কিছুক্ষণ পর। ল্যাবে নমুনা কাঠামোটি চোখে পড়লো বন্ধুর। সেদিকে অঙ্গুলি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, এটি কখন তৈরি করলে?
–না, এটি আমি তৈরি করি নি।
-তাহলে কে?
-কেউ না।
- মানে! কেউতো নিশ্চয়ই এটি তৈরি করেছে। কে সে?
- বললামতো। এটি কেউ তৈরি করে নি। এমনি এমনি তৈরি হয়েছে। আশ্চর্য হচ্ছো কেন?
- বন্ধু, তুমি সুস্থ আছ তো? এমন উদ্ভট কথা বলছো আর আমি অবাক হবো না?
- এটি একটি বড় পরিকল্পনার নমুনা কাঠামো মাত্র। এই ক্ষুদ্র জিনিসটি তৈরি করতে যদি একজন কারিগর প্রয়োজন হয়, তাহলে এই বিশাল মহাবিশ্ব একজন মহাকারিগর ছাড়া কিভাবে সৃষ্টি হওয়া সম্ভব বন্ধু?
বলাবাহুল্য, নাস্তিক বন্ধুর মুখে আর কোন যুক্তিই আসে নি।
৪। বিশিষ্ট তাবিঈ ইমাম জা'ফার সাদিক(রহ.) এর যুক্তি:-বিশিষ্ট তাবিঈ ইমাম জা'ফর আস সাদিক (মৃত ৮৪ হি এর সামনে এক নাস্তিক সৃষ্টকর্তা আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করে। তখন ইমাম জা'ফার তাকে বলেন, তুমি কখনো সমুদ্রে নৌকায় চড়েছো?
সে বলল, হ্যাঁ।
তিনি বললেন,তুমি কখনো তাতে ভয়ে সম্মুখীন হয়েছো?
সে বলল, হ্যাঁ। সে আরো বলল,একদিন ভীষণ ঝর উঠেছিল যা নৌকাটিকে ভেঙে ফেললো এবং মাঝিদের ডুবিয়ে মারলো। তখন আমি একটি তক্তায় শুয়ে পড়লাম। অতঃপর তক্তাটাও আমার হাত থেকে সরে গেল। তারপর সমুদ্রের ঢেউগুলো আমাকে ঝাপটা মারতে মারতে এক কিনারায় ফেলে দিল।
এবার ইমাম সাহেব বললেন,প্রথমে তো তোমার ভরসা ঐ নৌকা এবং ওর মাঝির উপরে ছিল, তারপর ঐ তক্তাটির উপরে,হয়তো তা তোমাকে উদ্ধার করবে।তারপর এইসব যখন তোমার হাত ছাড়া হয়ে গেল তখন তুমি নিজেকে নিশ্চয়ই মৃত্যুর হাতে সঁপে দিয়েছিলে?নাকি বাঁচার আশা করিছিলে?সে বলল তারপরেও আমি বাঁচার আশার করেছিলাম।তখন ইমাম সাহেব বললেন, তাহলে তুমি কার কাছে বাঁচার আশা করেছিলে? সে চুপ হয়ে গেল। তিনি বললেন, ঐ মরণাপন্ন অবস্হায় তুমি যার কাছে আশা করেছিলে এবং যিনি তোমাকে ডুবে মরা থেকে বাঁচিয়েছন তিনিই আল্লাহ।
৫। চিকিৎসাবিদ অলিভার বলেছিলেন, “জ্ঞান যত বাড়তে থাকে, বিজ্ঞান ততই ধর্মকে ভ্রুকুটি করা থেকে বিরত হয়।”
৬।ডোনাল্ড হেনরী পোটার বলেন, “আমার বক্তব্য হলো,যদি এই ধারাবাহিক সৃষ্টি সমর্থিত থিউরী সমর্থন করতে হয়,তাহলে আমি অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা আল্লহকে মেনে নিব।”
৭।ড.অস্কার লিও ব্রউয়ার বলেন, “নাস্তিকতার অর্থ হচ্ছে দ্বন্দ আর যুদ্ধ।বৈজ্ঞানিক হিসেবে এর কোনটিই আমি চাই না।থিউরি হিসেবে আমি নাস্তিকতাকে অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত বলে মনে করি।”
৮। মারলিন বুকস ক্রীডার বলেন, “সাধারণ মানুষ হিসেবে এবং বিজ্ঞানের অধ্যয়ন ও গবেষণায় জীবন উৎর্গকারী হিসেবে স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে আমার মনে সন্দহের কোনো অবকাশ নেই।”
(চলবে.............)
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৫ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
কত সহজ সরল উপমা৷ শ্রমলদ্ধ লেখাটটি চালিয়ে যান৷ অনেক তথ্য উপাত্ত পেলাম৷ ধন্যবাদ৷
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে তথ্যবহুল উপস্থাপনা অসাধারণ লাগলো।
মহান রব আমাদের সকলকেই অনুধাবন ও সেই মোতাবেক অনুশীলন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন