নাস্তিকতাঃ একটি জঙ্গি ও ভ্রান্ত বিশ্বাস (প্রথম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ৩০ মার্চ, ২০১৬, ০৩:৩৯:৫৮ দুপুর
স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে সহজে বোধগম্য কিছু যুক্তি-প্রমাণঃ
১। মহাবিশ্বের বিশালতাঃ এই মহাবিশ্ব যে কত বিশাল তা অনুমান বা ধারণা করতেও ব্যর্থ হয়েছেন আধুনিক বিজ্ঞানীরা। ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্রহ নক্ষত্র তারকা ছায়াপথ এর সমাহার এই মহাবিশ্ব। আমাদের পৃথিবী দূরে থাক, পুরো সৌরজগতটাই মহাবিশ্বের তুলনায় ধূলিকণাও নয়। শক্তিশালী দূরবীন দিয়ে বিজ্ঞানীরা কয়েকশ কোটি তারকার সন্ধান পেয়েছেন। বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘মীরা’ নামে একটি তারা আছে যাতে পৃথিবীর মত ৩৯০০ কোটি গ্রহকে ভরে রাখা যায়। এই মহাবিশ্ব যে কত দূর পর্যন্ত ছড়ানো আছে, তা বিজ্ঞানীরা বহু চেষ্টা করেও জানতে পারেন নি। একটি উদাহরণ দিয়ে মহাবিশ্বের বিশালতা সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা যাক।
আমরা জানি, আলোর গতিবেগ হচ্ছে প্রতি সেকেন্ড এ ১,৮৬,২৮৪ মাইল। দূর মহাকাশে এমন জ্যোতিষ্কের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যে তার আলো পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে ১৫ কোটি বছর। পৃথিবী হতে তাহলে সেই জ্যোতিষ্কের দূরত্ব দাঁড়াচ্ছে, (১৫,০০,০০,০০০ x ৩৬৫ x ২৪ x ৬০ x ৬০ x ১,৮৬,২৮৪) মাইল। ভাবা যায়? এই মহাবিশ্বের একজন মহাস্রষ্টা থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। আপনা আপনি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এটি স্রেফ পাগলের প্রলাপ বৈ আর কিছুই নয়।
২।পদার্থবিজ্ঞান এর যুক্তিঃ আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান দাবী করছে বস্তুজগতের পাশাপাশি সমান্তরালে বিপরীত জগৎ সৃষ্টি হয়ে আছে। আর সেই জগতে এ পৃথিবীতে যতো প্রকার সত্তা আছে,তার প্রতিটিরই বিপরীত সত্তা সৃষ্টি হয়ে বিদ্যমান আছে।অর্থাৎ আমাদের মানব সমাজের প্রত্যেকেরই একটি করে বিপরীত সত্তা তৈরী হয়ে আছে যাকে বলে ‘আইডেনটিক্যাল টুইন’। আগামীতে যতো মানুষ আসবে পৃথিবীতে, ঠিক ততোজনেরই বিপরীত সত্তা ঐ বিপরীত জগতে তৈরী হবে।
পৃথিবীর মানুষ প্রতিদিন যে কাজকর্ম করে,তার একটা প্রতিক্রিয়া বিপরীত জগতে সৃষ্টি হওয়া বিপরীত সত্তার উপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। পদার্থ বিজ্ঞানের রীতি অনুযায়ী এটি একটি চিরসত্য বিধান। কণিকা জগৎ বিষয়টি প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছে। সুতরাং বস্তুজগৎ ও প্রতিজগৎ অবশ্যই বিদ্যমান আছে। কোরআনে আরো বলা হয়েছে:
“আমি সৃষ্টি করেছি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায়।”(সূরা আন্ নাবা : ৮)।
আধুনিক মুফাস্সিররা এখানে জোড়ায় জোড়ায় বলতে পৃথিবীর মানুষ এবং পরকালের জন্য প্রতিবস্তু দিয়ে সৃষ্ট তার বিপরীত মানুষ কে বুঝিয়েছেন।পরকাল যেহেতু প্রমাণিত তাহলে স্রষ্টার অস্তিত্ত্বও প্রমাণিত সত্য।
৩। ঐতিহাসিক যুক্তিঃ আখিরাতে বিশ্বাস ব্যতীত মানুষের জীবনে নৈতিক উন্নতি অসম্ভব আর আখিরাতে বিশ্বাস করলে স্রষ্টাকেও বিশ্বাস করতে হবে। আর নৈতিক অধঃপতনই মানবগোষ্ঠীর ধ্বংসের আসল কারণ। পবিত্র কুরআনে বহু জাতির উদাহরণ পেশ করে বলা হয়েছে, আখিরাতে অবিশ্বাসের ফলে তাদের চরম নৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে এবং আল্লাহতায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
৪। নৈতিক দৃষ্টিকোণঃ মানুষের ভাল মন্দ জ্ঞান রয়েছে। তাই ভাল কাজের জন্য ভাল ফল স্বাভাবিক আকাঙ্খা মানুষের। মন্দ কাজেরও মন্দ ফল হওয়া উচিত। মানুষের এই নৈতিক সত্তার দাবী পূরণের জন্য আখিরাত অপরিহার্য। দুনিয়াতে হাজারো ভাল কাজ করেও অনেকে দুঃখ কষ্টে জর্জরিত থাকেন তেমনি জঘন্য সব অপরাধ করেও অনেকে রাজার হালে আরাম আয়েশে থাকেন, রাষ্ট্রক্ষমতাও লাভ করেন। আমাদের চোখের সামনেই এমন শত শত উদাহরণ আছে। সুতরাং ভাল কাজের জন্য উপযুক্ত পুরস্কার ও মন্দ কাজের জন্য যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থার জন্য আখিরাতের বিকল্প নেই।
দুনিয়া হলো বস্তু জগত আর আখিরাত হলো নৈতিক জগত। দুনিয়াতে মানুষ যা করে তার বস্তুগত ফল প্রকাশ পায়। কিন্তু নৈতিক ফল সর্বদা প্রকাশ পায় না। যেমন ধরুণ, কিছুদিন আগে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সোহাগী তনু নামের একজন তরুণীকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করলো জঘন্য অপরাধীরা। অপরাধটির বস্তুগত ফল প্রকাশ পেল যে, তরুণীটির সম্ভ্রমহানি ঘটেছে এবং মারা গিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীরা হয়তো প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অদক্ষতা বা দুর্বলতার সুযোগে ধরা নাও পড়তে পারে।কিন্তু এই জঘন্য অপরাধের যথোপযুক্ত শাস্তি হওয়া বিবেকের দাবি। এই শাস্তি নিশ্চিত করা হবে নৈতিক জগত তথা আখিরাতে। মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক। আখিরাতেই নৈতিক ফল প্রকাশ পাবে।
বিচারক ঘুষ খেয়ে অপরাধীকে ছেড়ে দিতে পারে কিংবা কোন ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে কিংবা প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে নিরপরাধীকে ফাঁসি দিতে পারে। আখিরাত ছাড়া এসব অন্যায়ের প্রতিকার সম্ভব নয়। একজন খুনি শত শত ব্যক্তিকে হত্যা করলো, কিন্তু দুনিয়ায় তাকে একবারের বেশি মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা যাবে না। আখিরাতে প্রতিটি হত্যার জন্য তাকে শাস্তি দেয়া যাবে।
অপরাধী অপরাধ সংঘটন করার পর যদি ধরা পড়ে তাহলে তার শাস্তি হয় দুনিয়ায়, কিন্তু যারা ধরা পড়ে না, তাদের শাস্তির জন্য আখিরাত প্রয়োজন। অপরাধী ধরা পড়লেও অনেক সময় সাক্ষীর অভাবে ছাড়া পেয়ে যায়। পরকালে অপরাধীর হাত পাও তার পাপের সাক্ষী দিবে। সঠিক বিচারের জন্যই পরকাল অত্যাবশ্যক।
দুনিয়ায় কত নির্দোষ লোক অহেতুক মজলুম হয়, পাপী লোক পুরস্কৃত হয়। এসবের সুবিচার এর জন্য আখিরাত অপরিহার্য।
প্রত্যেক কাজের পেছনেই কর্তার ভাল বা মন্দ নিয়্যত থাকে। কোন কাজের সঠিক মূল্যায়ন এর জন্য নিয়্যত জানা প্রয়োজন। কিন্তু একজনের মনের খবর অন্য জনের জানাটা অসম্ভব। নিয়্যত সম্পর্কে সঠিক জেনে কর্তার কাজটির সঠিক মূল্যায়ন করে যথোপযুক্ত পুরস্কার বা শাস্তির ব্যবস্থা শুধু পরকাল বা আখিরাতেই সম্ভব।
তাই আখিরাত বা পরকাল হতেই হবে। এটাই যুক্তির দাবী, এটাই ইনসাফের প্রয়োজন ও নৈতিকতা বোধের স্বাভাবিক পরিণাম। আর এই আখিরাতের ব্যবস্থা যিনি করেছেন তিনি দুনিয়া ও আখিরাতসহ মহাবিশ্বের মহান স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ।
(চলবে.............)
বিষয়: বিবিধ
১২৬০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন