হ্যাডম সমাচার
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৯:৫৬:৩৩ রাত
হেডম বা হ্যাডম একটি আঞ্চলিক শব্দ যা বিশেষ করে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়।
একটি গল্প দিয়ে শুরু করি।
তিন লোক-একজন অন্ধ, একজন খোঁড়া আর একজন ফকির। অন্ধ বলছে-ঐ দেখ, দেখ, আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে।
খোঁড়ার প্রতিক্রিয়া-দিমু একখান লাত্থি। তুই কানা আকাশের চাঁদ দেখলি ক্যামতে?
ফকির লাফিয়ে উঠে বলে- মার লাত্থি, যত টাহা লাগে আমি দিমু।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই সবাই হ্যাডম শব্দটির মর্মার্থ বুঝতে পেরেছেন। এর অর্থ ক্ষমতার প্রদর্শন বা দাপটের বহিঃপ্রকাশ।
হ্যাডম থাকুক বা নাই থাকুক, কিঞ্চিৎ সুযোগ পাইলেই হ্যাডম কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী তাহা প্রদর্শন করিতে আমরা কম বেশি সিদ্ধহস্ত।
রাস্তায় গাড়ি একটি আরেকটিকে ওভারটেক করে, গতির প্রতিযোগীতা করে। একেবারেই ফায়দাবিহীন অহেতুক কর্ম। কিন্তু কারণ একটাই। ঐ যে হ্যাডম! গার্লস স্কুল কলেজের সামনে রোমিওরা যে হাত ছেড়ে বাইক/মোটরবাইক চালানোর কসরত দেখায় কিংবা গর্জন তুলে এঁকেবেঁকে মোটরবাইক চালায় তাহাও ঐ হ্যাডমেরই প্রকাশ বৈকি। ভাবে তাহার হ্যাডম প্রতিভায় বালিকারা ইমপ্রেসড হয়ে প্রেম নিবেদন করিবে। তবে হিতে বিপরীতও ঘটে যায়। সাহসী বালিকার চপ্পলের বারি কপোলে জুটে যায় আর কি!
হাসান সাহেব এর ছেলে ইংলিশ মিডিয়াম এ পড়ে। বন্ধু কামাল সাহেব এর প্রেস্টিজে লাগে। একমাত্র মেয়েকে বাসা হতে ১০ কি.মি. দূরে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে ভাবেন মেয়ের সারাজীবনের গতি হয়ে গেল, হ্যাডমও দেখানো হলো।
খান সাহেব ছেলের বিয়েতে কুড়ি লক্ষ টাকা কাবিন করেছেন। তা শুনে চৌধুরী সাহেব তার ছেলের বিয়ের মোহরানা ধার্য্য করেছেন পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। নগদতো আর পরিশোধ করতে হয় না। একটু হ্যাডম দেখাতেই বা সমস্যা কি?
কুরবানী ঈদে রাকিব সাহেব লক্ষ টাকায় গরু কিনলেন। উট না কিনলে আর সম্মান থাকে না হাবিব সাহেব এর। দুই লক্ষ টাকায় উট কিনেই বাড়ি ফিরলেন। বলি - এটা কুরবানী নাকি হ্যাডমের প্রতিযোগিতা!
আমাদের নারীকূলই বা হ্যাডম দেখাতে পিছিয়ে থাকবেন কেন? পাশের বাসার নীলা ভাবীকে উনার স্বামী বিবাহ বার্ষিকীতে হিরের আংটি গিফট করলেন। তা দেখে আপনার ঘরনীই বা চুপ থাকবে কেন?
"এই শুনেছো! নীলা ভাবী এবার জন্মদিনে হীরের আংটি গিফট পেয়েছেন বর হতে। তুমি কিন্তু এবার আমাকে একটি হীরের নেকলেস দিবে বলে রাখলাম।"
পাশাপাশি ফ্লাটে বাস করা দুই পরিবার। মিসেস জামান আসলেন মিসেস রাশেদ এর বাসায়।
-"আরে ভাবী আসেন আসেন। তা কি মনে করে এতদিন পর?"
-"আরে ভাবী কতদিন গল্প করি না আপনার সাথে। তাই আজ নিজেই চলে আসলাম।"
-"দারুণ কাজ করেছেন, বসুন বসুন। তা ভাবী এবার ঈদের শপিংটা কোথায় করছেন? আমরা এবার শপিং এর জন্য ব্যাংকক যাচ্ছি। টিকেটও কাটা হয়ে গেছে। আপনারাও চলুন না। মরার এই দেশে কি আর ভালো কিছু পাওয়া যায়?"
-" আরে না ভাবী। আমার পছন্দ সিঙ্গাপুর। জিনিসপত্রের দামটা একটু বেশি হলেও সব এক্সক্লুসিভ আইটেম পাওয়া যায়। আগামীকালই আপনার ভাই টিকেট কাটবেন।"
(দুই মহিলা এতক্ষণ যা বলছে তা ছিল স্রেফ চাপাবাজি)।
এবার হাত কচলাতে কচলাতে মিসেস জামান বলেন, " ভাবী বলছিলাম কি, আপনার কাছে ৫০০ টাকা হবে?"
-"নারে ভাই, আপনার ভাই গতমাসের বেতন এখনও পায় নি।"-মিসেস রাশেদ এর জবাব।
এই হচ্ছে অবস্থা।
গাঁও গেরামে নতুন কাঁচা পয়সার মালিক হলে হ্যাডম দেখানো চাই। প্রয়োজন হোক বা না হোক, ২০/৩০ লাখ টাকা খরচ করে বড় পাকা বাড়ি করা চাই। এটাও একটা হ্যাডম বৈকি।
জনৈক বাল্যবন্ধু এখন সরকারী কর্তা। সেই সুবাধে আমাকে হ্যাডম দেখালেন। হুমকি ধামকি, একেবারে মাস্তানি ভাষায়! দেখে নিবে, টিবে। আমি পাল্টা হুমকি দেয়া হতে বিরত থাকলাম। বাল্যবন্ধুকে হুমকি দেয়ার মত শিক্ষা, যোগ্যতা বা রুচি কোনটাই অর্জন করতে পারি নি। এটাও আমার হ্যাডমেরই অভাব বৈকি।
এই হ্যাডম দেখাতে গিয়ে কত যে ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটে তার ইয়ত্তা নেই। হ্যাডমের বাড়াবাড়িতে খুন খারাবি পর্যন্ত ঘটে থাকে। মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা বিনষ্ট হচ্ছে স্রেফ হ্যাডমের বাড়াবাড়িতেই। স্রেফ হ্যাডম দেখানোর জন্যই যেনতেনভাবে সম্পদ বৃদ্ধি ও তা প্রদর্শনের একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা সর্বত্র পরিলক্ষিত।
হ্যাডম প্রকাশে সংযত হোন। আপনি মহাবিশ্বের মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার অতি ক্ষুদ্র একটি সৃষ্টিমাত্র। মহাবিশ্বের তুলনায় আপনার তুলনা একটি ধূলিকণার চেয়েও লক্ষ কোটি গুণ ক্ষুদ্র।
বিষয়: সাহিত্য
৪৮৪৫ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাল্যবন্ধুর শুভবুদ্ধি হবে আশা রাখি।
জ্বি ভাই এই সব কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের অবদান। আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ হে অহংকারী সম্প্রদায়, নিশ্চয় তোমার অহংকার আমার জমিনকে ছিড়তে পারবে না, আর তুমি বুক ফুলিয়ে আমার পাহাড় থেকে উচু করতে পারবে না।
কথায় আছে না! অহংকার পতনের মূল। অহংকারই যত হ্যাডামের কারণ।
জাযাকাল্লাহ খাইর
হ্যাডম দিয়েই শেষ,
হ্যাডম ছাড়া কেমন যেন
লাগেনা গো বেশ।
হ্যাডম দেখায় বউয়ের সামনে
হ্যাডম বড় অস্ত্র
হ্যাডম আবার লেংটা করে
খুলে নেয় যে বস্ত্র।
হ্যাডম মন্ত্রীর হ্যাডম নেত্রী
হ্যাডমে সব শেষ,
হ্যাডম জ্বালায় নি:শ্বেস জাতি
কাটেনা তার রেশ।
আপনার হ্যাডম শির্ষক লিখাটা খুব ভাল লাগায় কবিতার মাধ্যমে আমি্্ও একটু হ্যাডম দেখানার মিছে চেষ্টা করলাম মাত্র। হ্যাডম জিন্দাবাদ। হ্যাডমের মাঝে আপনি্ও বেচে থাকুন।
সুন্দর ছন্দময় কবিতার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানবেন।
হ্যাডম দিয়েই শেষ,
হ্যাডম ছাড়া কেমন যেন
লাগেনা গো বেশ।
হ্যাডম দেখায় বউয়ের সামনে
হ্যাডম বড় অস্ত্র
হ্যাডম আবার লেংটা করে
খুলে নেয় যে বস্ত্র।
হ্যাডম মন্ত্রীর হ্যাডম নেত্রী
হ্যাডমে সব শেষ,
হ্যাডম জ্বালায় নি:শ্বেস জাতি
কাটেনা তার রেশ।
আপনার হ্যাডম শির্ষক লিখাটা খুব ভাল লাগায় কবিতার মাধ্যমে আমি্্ও একটু হ্যাডম দেখানার মিছে চেষ্টা করলাম মাত্র। হ্যাডম জিন্দাবাদ। হ্যাডমের মাঝে আপনি্ও বেচে থাকুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন