কোলকাতা টু মুর্শিদাবাদ
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:০৭:১৪ বিকাল
আমার ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল স্রেফ পর্যটন নয়, ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ।
ভারতের ইতিহাস অনেক ঐতিহ্যে ও বৈচিত্র্যে ভরপুর। ৭১২ সালে মুহাম্মদ বিন কাসিম এর সিন্ধু জয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষের ইতিহাস নতুন মোড় নেয়। ভারতের সাথে জড়িত আছে বাংলার ইতিহাসও। দিল্লীর শাসন, ইলিয়াস শাহী বংশের শাসন, পাঠানদের শাসন, মোঘল শাসন, ইংরেজ শাসন এর পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে উত্তেজনাকর ইতিহাস। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ, ১৭৯৯ সালে সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম শাসক মহীশূরের টিপু সুলতান এর সাথে ইংরেজদের যুদ্ধ, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র- এসব ইতিহাস বারবার ইতিহাসউৎসাহীদের আকৃষ্ট করে।
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও ঐতিহাসিক পলাশী যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত মুর্শিদাবাদ ভ্রমণের প্ল্যান ছিল অাগে থেকেই।
পলাশী, ভাগিরথী নদী, খোশবাগ, হাজারদুয়ারি, নিমকহারাম দেউরী- ইতিহাসে পড়া কত কিছু দেখা বাকি। এক অন্যরকম উত্তেজনা নিয়ে কোলকাতা হতে রওনা হলুম সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ভাগিরথী এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে। ঘন্টা দুয়েক পরে এল বেলডাঙ্গা স্টেশন। এখান হতে অনতিদূরেই ঐতিহাসিক সেই পলাশী প্রান্তর যেখানে ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা ও রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ, রাজভল্লব, জগৎশেঠ, উঁমিচাঁদ, কৃষ্ঞনাথদের ষড়যন্ত্রে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হওয়ায় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয় এবং জাতিকে ১৮৮ বছরের গোলামির পিঞ্জর পরিয়ে দেয়। মনের অজান্তেই বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও অক্ষম ক্রোধে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে। তবে এই ঐতিহাসিক স্থানটি পর্যটকদের জন্য সংরক্ষণের তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি ভারত সরকারের পক্ষ হতে। বর্তমানে পলাশী একটি গ্রাম পঞ্চায়েত মাত্র।
রাত সাড়ে দশটায় নামলাম বহরমপুর স্টেশনে। বহরমপুর (ইংরেজি: Baharampur), ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার প্রধান শহর ও পৌরসভা এলাকা । কলকাতা থেকে বহরমপুরের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। বহরমপুরের হোটেল পাওয়া নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে এ পর্ব শেষ করছি।
রেলস্টেশন হতে রিক্সায় হোটেল খুঁজতে বের হলাম। কোলকাতার মতো এখানেও বেশ বিড়ম্বনায় পড়লাম এ নিয়ে। বহরমপুর ব্যস্ততম শহরগুলির একটি। প্রচুর সরকারী বেসরকারী অফিস এখানে, তাই আগে হতে বুকিং না দিলে হোটেল কক্ষ পাওয়া কঠিন। কোথাও মিলছে না, ২/১টি যাও মিললো বাংলাদেশী হওয়ায় রাজি হলো না। রিক্সা নিয়ে সারা শহর চষে বেড়ালাম, ইতিমধ্যে রাত বাজে ১২ টা। সারা দিনের ভ্রমণক্লান্তিতে শরীর আর এগুচ্ছে না, ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। একটি হোটেল কক্ষ পেলে বর্তে যাই, কিন্তু হোটেল যে মিলছে না।
অবশেষে একটি হোটেলে কক্ষ মিললো। পরিচয়পত্র হিসেবে পাসপোর্ট শো করলাম। বাংলাদেশী জেনে এবার শুরু করলো ধাপ্পাবাজি। বিদেশীদের জন্য কোনো আলাদা রেট না থাকলেও আমার কাছ হতে ডাবল ভাড়া আদায় করলো। আবার থাকতে দিলো হোটেলস্টাফদের থাকার জন্য একটি কক্ষে। এদিকে হোটেলবয় তিনজনের টিপস আদায় করলো যা ভাড়ার প্রায় অর্ধেক। খুব ক্লান্ত, তাই বিনা তর্কে সব মেনে নিলাম। হোটেলেই খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। পয়সা দিলাম, হোটেল বয় খাবার এনে দিল। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকাল সকাল যেতে হবে মুর্শিদাবাদ এর ঐতিহাসিক স্থানগুলি পরিদর্শনে।
চলবে..............
বিষয়: সাহিত্য
২৬৩৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভ্রমণ বৃত্তান্ত জেনে ভালই লাগছে।
০ কলিকাতা ঘুরে আপনি আপনার বাংআলী সত্ত্বাকে রিফ্রেস করে আপগ্রেডেড করেছেন । দেশে ফিরে নিজেকে একজন উঁচুস্তরের বাংআলী হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন ।
হোটেল কস্টের কথা জেনে খারাপ লাগলো! বইতে পড়তাম কোলকাতাবাসীদের সাথে ঢাকাবাসীদের খুব মিল! কেমন দেখলেন?
শুকরিয়া!
http://www.bd-monitor.net/blog/blogdetail/detail/1980/ohidul/67501#.Vgy8tV5mjIU
http://www.bd-monitor.net/blog/blogdetail/detail/1980/ohidul/68743#.Vgy9Al5mjIU
মন্তব্য করতে লগইন করুন