মেঘ পাহাড়ের দেশে (প্রথম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ২৬ জুলাই, ২০১৫, ১০:৩১:৫৭ রাত
বেশ কাজের চাপ যাচ্ছিল। একটু রিফ্রেশ হওয়া জরুরী ছিল। কিন্তু সময়ই বের করতে পারছিলাম না। অবশেষে ঈদের ছুটিকেই বেছে নিলাম। ঈদের ছুটির সাথে আরো কয়দিন ছুটি নিয়ে ঈদের একদিন পরই রওনা হয়েছিলাম ভারতবর্ষ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে।
এক সপ্তাহের ভারত ট্যুর শেষে আজ (২৬/০৭/২০১৫ ইং) নিরাপদে দেশে ফিরলাম। আলহামদুলিল্লাহ।
যেখানে যেখানে গিয়েছিলামঃ দার্জিলিং, শিলিগুঁড়ি, নিউ জলপাইগুঁড়ি, কোলকাতা, নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্মৃতি বিজড়িত পলাশী, মুর্শিদাবাদ, চন্দননগর, কাশিমবাজার, ফারাক্কা বাঁধ, মালদা....। অনেক মিশ্র অভিজ্ঞতা আছে। ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করবো ইনশাল্লাহ।
এ পর্বে থাকছে মেঘ পাহাড়ের দেশ - দার্জিলিং ভ্রমণের বর্ণনা।
ভ্রমণের জন্য ভারতকে বেছে নেওয়ার কারণঃ
- ইতিহাস ঐতিহ্যঃ ভারতের ইতিহাস অনেক ঐতিহ্যে ও বৈচিত্র্যে ভরপুর। ৭১২ সালে মুহাম্মদ বিন কাসিম এর সিন্ধু জয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষের ইতিহাস নতুন মোড় নেয়। ভারতের সাথে জড়িত আছে বাংলার ইতিহাসও। দিল্লীর শাসন, ইলিয়াস শাহী বংশের শাসন, পাঠানদের শাসন, মোঘল শাসন, ইংরেজ শাসন এর পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে উত্তেজনাকর ইতিহাস। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ, ১৭৯৯ সালে সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম শাসক মহীশূরের টিপু সুলতান এর সাথে ইংরেজদের যুদ্ধ, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র- এসব ইতিহাস বারবার ইতিহাসউৎসাহীদের আকৃষ্ট করে।
- মেঘ পাহাড়ের দেশ -দার্জিলিং এর হাতছানি।
ঈদের আগেই শ্যামলী পরিবহন হতে ২০শে জুলাই এর টিকেট করে নিলাম (ফিরতি টিকেটসহ), রুট-বুড়িমারী, লালমনিরহাট টু চ্যাংড়াবান্ধা, কোচবিহার টু শিলিগুঁড়ি, জলপাইগুঁড়ি।
বিভিন্ন বইপত্র পড়ে, ম্যাপ ঘাটাঘাটি করে ভ্রমণপ্ল্যান ড্রাফট করলাম, মাঝে মাঝে সেই প্ল্যান আবার চেঞ্জ করে চূড়ান্ত করলাম। নির্দিষ্ট দিনে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রওনা হলাম আল্লাহর নাম নিয়ে। রাত ৮ টায় ঢাকার আরামবাগ কাউন্টার হতে শ্যামলী পরিবহন এসি গাড়ি রওনা দিল। এসি হলেও শ্যামলী পরিবহনের গাড়িটি যথাযথ মানসম্মত নয়, সিট কভারে গা ঘিনঘিন করা ময়লা। এরচেয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী গ্রীনলাইন পরিবহনের ভলবো, স্ক্যানিয়া আরএম২ অনেক অনেক ভাল। তাদের দু/একটি ভাল গাড়িও আছে। তবে পুরনো গাড়িটিও তারা এখনো ব্যবহার করছে। আমার ভাগ্য এত খারাপ যে, আসার পথেও এই গাড়িতেই আসতে হলো। লালমনিরহাট পেরুনোর আগেই গাড়ির এসি নষ্ট হয়ে গেল। দু’ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে তা মেরামত করা হল।
যাওয়ার সময় গাড়িতে আমি একটি ছাতা ও কিছু টুকিটাকি জিনিস ফেলে গিয়েছিলাম। বর্ডার পেরিয়েই মনে পড়লো, সাথে সাথে ফোনও দিলাম যেন কাউন্টারে রেখে দেয় এবং ফেরার পথে নিতে পারি(ঐ পাড়ে কয়েক কিমি পর্যন্ত বাংলাদেশের মোবাইলের নেটওয়ার্ক থাকে)। কিন্তু আমার জিনিসগুলি আর ফেরত পেলাম না। আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী বাসটির যাত্রীসেবার বেহাল দশা আমাকে খুব আহত করেছে।
সে যাই হোক। ভোরের আলো ফোটার আগেই আমরা বুড়িমারি চলে আসলাম। কাস্টমস খুলবে সকাল আটটায়, তার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। গাড়ি হতে নেমে স্থানীয় একটি নামাযঘরে ফজরের সালাত আদায় করলাম। বুড়িমারিতে বুড়ির হোটেল নামে একটি হোটেল আছে। সেখানে নাস্তা সারলাম।
বুড়িমারি নামের সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা অবশ্য জানতে পারলাম না। দুই পাড়ে সবার কাস্টমস চেকিং, মানি এক্সচেঞ্জ ও আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হতে হতে বেলা এগারোটা (ইন্ডিয়ান সময়) বেজে গেল। এই ছয়ঘন্টারও বেশি সময় খুব বিরক্তিকর কেটেছে। দুই দেশের আধাঘন্টা সময়ের পার্থক্যের জন্য আমি আর ঘড়ির সময় বদলানোর প্রয়োজনবোধ করলাম না। আমি ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ডলার এনডোর্স করা ছাড়া ক্যাশ ডলার নিয়েছিলামও পর্যাপ্ত। কিন্তু পরে বুঝলাম এটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ টাকা-> ডলার->রুপি->টাকা---এসব কনভার্শনের গ্যাপ এ পড়ে আপনার বেশ কিছু টাকা নষ্ট হবে। অাগের অভিজ্ঞতাসম্পন্নরা দেখলাম তাই সরাসরি বাংলা টাকা নিয়ে বর্ডার পেরুনোর পর চ্যাংড়াবান্ধা হতে রুপি কিনে নিল।
চ্যাংড়াবান্ধা হতে শিলিগুঁড়ি মাত্র ৮০ কিমি। শ্যামলী পরিবহনের আর একটি গাড়ি আমাদের নিয়ে গেল (বাংলাদেশের গাড়ি বর্ডার পর্যন্ত যায়)। দু’ঘন্টার মধ্যেই পৌছে গেলাম শিলিগুঁড়ি। বাস থামলো একটি ফাইভস্টার হোটেল এর সামনে-হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজা।
শিলিগুঁড়ি নেমে জনাপাঁচেক মিলে একটি জীপ ভাড়া করলাম ১,৩০০ রুপিতে। ‘দার্জিলিং’ যাওয়ার উদ্দেশ্যে। একজোড়া নবদম্পতিও ছিল আমাদের সাথে, হানিমুন এর জন্য এসেছে।
ভূ-পৃষ্ঠ হতে দার্জিলিং ২,১৭৩ মিটার তথা ৭,১২৯ ফুট উঁচু। এই উচ্চতা পেরুতে অনেক আঁকাবাঁকা, উঁচু পাহাড়ী বাঁক অতিক্রম করতে হয়। পিলে চমকানো ভয় ধরানো রাস্তা। এই বুঝি উঁচুতে উঠতে গিয়ে নিচে পড়ে গেল, বাঁক ঘুরতে গিয়ে বুঝি বিপরীত হতে আসা গাড়ির সাথে সংঘর্ষ লেগে গেল! তবে এখানকার ড্রাইভারগুলি খুব দক্ষ।
দার্জিলিং যাওয়ার পথে চাবাগান এবং অনেক নয়নজুড়ানো দৃষ্টিনন্দন স্থান পড়লো। সাদা পেজা তুলার মতো মেঘ আর পাহাড়ের সে কি অসাধারণ মিতালি!
মেঘ পাহাড়ের দেশে
যাচ্ছি মেঘে ভেসে
মেঘগুলি সব হেসে গেয়ে দিচ্ছে চুমু পাহাড় গায়,
ছন্দময় তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে উড়ে যায়।
পাহাড়গুলি চুপটি করে
বসে থাকে ঘাপটি মেরে
হাত বাড়িয়ে মেঘ মিতালি
মেঘের সাথে কোলাকুলি।
নামটি তার দার্জিলিং,
আমিই হলাম তার নতুন কিং
তলোয়ার হাতে আমি রাজা
কসুর হয়েগা হবে সাজা।
দার্জিলিং এ দেখার মত অনেক কিছুই আছে। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেলওয়ে স্টেশন ঘুম, টয়ট্রেন, টাইগার হিল (যেখান হতে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্গা), বাতাসিয়া লুপ বা গোর্খাল্যান্ড, মলে মার্কেট......। সেই সব গল্প আগামী পর্বের জন্য তোলা থাক। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন।
বিষয়: সাহিত্য
২১৪৭ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি শিলিগুড়ি গিয়েছিলাম তামাবিল-শিলং হয়ে। সেই পথ কিন্তু খুবই সুন্দর। দার্জিলিং এ যাওয়ার কথা থাকলেও ধর্মঘট থাকায় যেতে পারিনি। আগে জানলে আপনার সাথে ঝুলে যেতাম!! বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ ও চুরলিয়া দেখার শখ মনের মধ্যে ছিলই আরো বেড়ে গিয়েছিল আবদুল হাই শিকদার এর "সিরাজদেীলা মুর্শিদাবাদ" এবং "কবিতির্থ চুরুলিয়া" পড়ে। শ্যামলি পরিবহন সম্পর্কে অভিযোগ থাকলেও এই রুটে এরা ছাড়া আর কোন পরিবহন এ সরাসরি শিলিগুড়ি পেীছা যায়না মনে হয়। এর অর্ধেক মালিকানা কিন্তু দাদাদের!! কাঞ্চনজংঘা এখনও অদেখা রয়ে গেল!!
ছহিহ সালামতে ফিরেছেন।
নিশ্চয়ই বাকী পর্বগুলো...জম্পেশ হবে।
পাশাপাশি ছবিযুক্ত হলে তো কথাই নেই।
লিখতে থাকুন, সাথে আছি ইন শা আল্লাহ
তিনি সাথে থাকলে আরো কতই না মজা হত।
আপনি তো মনে হয় লন্ডনের বাসিন্দা, তাই না?
মন্তব্য করতে লগইন করুন