ঘর হতে দু্ই পা ফেলিয়া (প্রথম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৮ মে, ২০১৪, ০৫:০২:০৭ বিকাল
পাহাড়, সাগর, নদী, ঐতিহাসিক স্থাপনা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বরাবরই আমাকে কাছে টানে। প্রতি বছর তাই শীত মৌসুমে হেথায় হোথায় একটু ঢুঁ মারা হয়। কিন্তু এবার শীত মৌসুমে রাজনৈতিক অস্থিরতা হেতু সুযোগটি আসছিলোনা একদম। এদিকে বউয়ের অব্যাহত তাগাদা- কক্সবাজার এবার যেতেই হবে। আমি কক্সবাজার ইতোপূর্বে ৪/৫ বার গিয়েছি বিধায় একটু ফাঁকিবাজির তালেও ছিলাম।
শেষমেষ অবশ্য বউকে ছেলেসহ চট্টগ্রাম ছোটভাইয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম কয়েকদিন বেড়িয়ে দুই জা মিলে কক্সবাজার ঘুরে আসবে। কিন্তু চট্টগ্রাম কয়েকদিন থাকার পর গিন্নী বেঁকে বসলেন। ছেলের বাবাকে ছাড়া কক্সবাজার গিয়ে নাকি কোনো মজা নেই, ফানসে লাগবে। বউ সে যাত্রায় ফিরে এল। :
অগত্যা কি আর করা! এ গরমে কক্সবাজার ট্যুর এর প্ল্যান করতে হলে আবার। পরিকল্পনা চূড়ান্ত হল এভাবে- চট্টগ্রাম ১ দিন থেকে বান্দরবান এর নীলগিরি যাব। সেখানে ১ দিন অবস্থান করে কক্সবাজার যাওয়া হবে এবং সেখানে ৩ দিন। এরপর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় গিয়ে ১ দিন অবস্থান এবং বাকি দুই দিন ভ্রমণ সময় ধরলাম।
অফিস হতে যথারীতি উইক এন্ড সহ ৮ দিনের ছুটি নিলাম। ৬ই মে রওয়ানা হলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। আমাদের সাথে কক্সবাজার আরো কিছু ব্লগার বন্ধুও কেউ সপরিবারে কেউ একা যোগ দেয়ার কথা।
প্ল্যান ছিল চট্টগ্রাম পার্কী বীচে যাব। কিন্তু ছোটভাই প্রস্তাব দিল Foy's Lake এর Sea World ট্যুরের। Foy's Lake আগে অনেকবার যাওয়া হলেও Sea World যাওয়া হয়নি। এদিকে ছোটভাই সী ওয়ার্ল্ড এর প্রশংসায় ভাবীকে মুগ্ধ করে ফেলেছে। সুতরাং বউয়ের কথায় সায় দিয়ে আমি ও প্রস্তাবটা লুফে নিলাম।
Foy's Lake এর প্রবেশ পথে সী ওয়ার্ল্ড এর জন্য পৃথক টিকেট কাউন্টার রয়েছে। লাঞ্চসহ ৬৫০ টাকা প্রতিজন। আমি, স্ত্রী, আমার ছেলে, ছোটভাই- ৪ জন, তিনটি টিকেট নিলাম। ছোটবাচ্চাদের টিকেট ফ্রী। ছোটভাই এর স্ত্রী অসুস্থ থাকায় আমাদের সাথে যোগ দিতে পারেনি।
ফয়েজলেক হতে বোটে করে সী ওয়ার্ল্ড নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসার সুব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।
ফয়েজলেক এর কিছু দৃষ্টিনন্দন ছবি-
সী ওয়ার্ল্ড এ গিয়ে আমরা মেতে উঠলাম বিভিন্ন এডভেঞ্জারপূর্ণ রাইডে- Wave Pools, Slide World, Family Pool, Tube Slides, Multi-Slide, Waterfall, Doom Slide. সেখানে আবার রাইডে চড়ার আনুষঙ্গিক উপকরণসমূহ ভাড়া করতে হয়। Tube Slides এ চড়ার আগে ভয়ে ঘেমে গেলাম। ছোটভাই এর দেখাদেখি ভয় ঝেড়ে নেমে পড়লাম। ওয়াও!! হেব্বী মজা!!! দুরন্ত কিশোরবেলায় ফিরে গেলাম। লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে উপভোগ করলাম। Wave Pools এবং Waterfall এ ও দারুণ এনজয় করলাম। পয়সা উসুল হয়ে গেলো।
মেয়েদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিলনা বিধায় আমার স্ত্রীকে লেকভ্রমণ আর আমাদের ফটো তুলেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। বেচারী! কিছু কমবয়সী ছেলেমেয়ে চোখে পড়লো যারা স্কুল ফাঁকি দিয়ে সী ওয়ার্ল্ড এ মেতেছে। সবকয়টারে ধরে কষে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে হলো, অনেক কষ্টে এ ইচ্ছে নিবৃত্ত করলাম।
সী ওয়ার্ল্ড এ আমরা-
ফয়েজলেক হতে লাঞ্চ করে বের হয়েই দেখা হলো প্রিয় ব্লগার মামুন সিদ্দিক এর সাথে। আমাদের সাথে একটা মাইক্রোবাস ছিল। মামুন ভাই শত ব্যস্ততা ফেলে আমাদের সাথী হলেন। এবার গন্তব্য এয়ারপোর্ট ও নেভাল একাডেমি। ফোনে যোগাযোগ হলো অনেক ব্লগার ও লেখক বন্ধুর সাথে। ব্যস্ততার কারণে সকলে আসতে পারেননি। তবে প্রিয় ব্লগার জামালউদ্দীন ভাই সপরিবারে নেভাল একাডেমিতে আসবেন জানালেন। পথিমধ্যে গলফ ক্লাব ও অনেক সুন্দর পর্যটন স্পট পড়লো। কিন্তু সময় স্বল্পতাহেতু যাওয়া হলোনা।
শাহ আমানত বিমানবন্দরে একটু যাত্রাবিরতি করলাম। হাল্কা নাস্তা ও খানিকক্ষণ ঘোরাঘুরি শেষে আবার রওয়ানা হলাম নেভাল একাডেমির উদ্দেশ্যে। একটু পরেই পৌছে গেলাম। সেখানে জামাল ভাই জারিফা, জারিফার ছোট্ট তুলতুলে ছোটভাই ও জারিফার আম্মু ছাড়াও উনার নববিবাহিতা শ্যালিকা ও উনার বর নিয়ে আগেই উপস্থিত ছিলেন। জারিফার আম্মু ও খালা আমার বউকে সহজেই আপন করে নিলেন। দুই গ্রুপে দারুণ জমে উঠলো বৈকালিন আড্ডা। একটু পর আমাদের সাথে যোগ দিলেন ব্লগার নজরুল ভাই।
জামাল ভাইয়ের প্রিয় কন্যা জারিফা মনি পেঁয়াজু খাচ্ছে।
কর্ণফুলি নদীর তীরে চমৎকার আড্ডা শেষ হতে হতে সময় ৭ টা পেরিয়ে গেল। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চা ও বিশেষ পেঁয়াজু চলল। মাঝখানে আসর ও মাগরিব নামাজ আদায় করলাম নদী লাগোয়া ছোট্ট মসজিদে। এবার ফেরার পালা। জামাল ভাই প্রস্তাব দিলেন শ্যালিকার বিয়ে উপলক্ষে রাতে ডিনার করাবেন সবাইকে। জামাল ভাইয়ের এমন চমৎকার অফার কি ফিরিয়ে দেয়া যায়? গাড়ি ঘুরিয়ে রওয়ানা হলাম জিইসি মোড়ে। চমৎকার রেষ্টুরেন্টটির নাম এ মুহুর্তে মনে পড়ছেনা। সেখানে জামাল ভাই সবাইকে ডিনার করালেন। হায়দরাবাদী বিরিয়ানীটা বেশ লেগেছে!
চলবে (আগামী পর্বে সমাপ্ত)।
বিষয়: বিবিধ
২০৬২ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো ভ্রমণ কাহিনী। অপেক্ষায় রইলাম আগামী পর্বের। কক্সবাজারে আমারও যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যাওয়া হয়নি।
চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন