বিরহ প্রেম এর কাব্য

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৬ মার্চ, ২০১৪, ১২:৪৩:০১ দুপুর

বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেল রুবাইয়ার অনাড়ম্বরে। তারপর স্বপ্নের দুটি বছর কিভাবে যে ফুরিয়ে গেল। সুখের দিনগুলো নাকি দ্রুতই ফুরোয়। এবার এমবিবিএস ফাইনাল দিবে রুবাইয়া। দু মাস পরেই পরীক্ষা। ওফ! কি যে ধকল যাচ্ছে পড়াশোনার। বিছানার সাথে পিঠের সম্পর্ক একপ্রকার হারাম। দৈনিক চার ঘন্টার বেশি ঘুমানোর সুযোগ নেই। পরীক্ষার পর মনমতো ঘুমাবে। এ ভেবে আবার বই হাতে নেয়। মেডিকেল এর বইগুলো খুবই নীরস, কাঠখোট্টা। আজ কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারছেনা রুবাইয়া। নষ্টালজিক হৃদয় বারবার ফেলে আসা সুখস্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত।



‘বৃষ্টির মতো দু চোখ বেয়ে, অশ্রু শুধু আমার ঝড়ে পড়ে,

তুমি নেই পাশে, তবুও তোমায় ভাবতেই ভালো লাগে।’
রুবাইয়া আপন মনে গুনগুনিয়ে ওঠে। গানের গলা বেশ সুন্দর ওর। গান শেষ করতে পারেনা। কন্ঠ ভারি হয়ে আসে। দু চোখে বেয়ে ঝরে পড়ে বাঁধ না মানা অশ্রু। হৃদয়টা হাহাকার করে ওঠে। কি এক রিক্ততা, শূণ্যতা আজ হৃদয়জুড়ে। ডায়েরীটা হাতে নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করে।

রুবাইয়ার চিঠিটা এ নিয়ে অনেকবার পড়লো আসিফ। বারবার পড়ে একটু তৃপ্তি পায়। এমন সোনাবউটির জন্য খুব গর্ব হয়।

‘কি দিয়ে ভূমিকা করবো? বাংলা সাহিত্যে প্রিয়কে নিয়ে যত ভালো সম্বোধন আছে সব তোমার জন্য। প্রযুক্তির এ যুগে চিঠি লিখে কেউ? আমি লিখছি। হয়তো ফোনে, মেইলে, স্কাইপে হৃদয়ের আকুতি ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারিনা। তাই চিঠি লিখছি। এটাকে কি বলবে তুমি? প্রেমপত্র? হিহিহি। আজ কত দূরে তুমি। আমি পথ চেয়ে থাকি প্রতিনিয়ত চাতক পাখির মতো। এই মুহুর্তে খুউব খুউব মিস করছি তোমাকে। আমার দু’চোখে এখন বাঁধভাঙ্গা কান্নার জোয়ার। ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানেনাতো মন, ঝড়ঝড় ঝড়ঝড় ঝড়েছে, তোমাকে আমার মনে পড়েছে..’। তুমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। পরম করুণাময় এর কাছে এ নিয়ে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তোমার বিশাল ব্যক্তিত্বের মতো বিশাল হৃদয়ের ভালোবাসায় তুমি আমাকে পূর্ণ করেছো। বিয়ের আগে কত দ্বিধা, কত টেনশন! কেমন হবে আমার বর? তোমার পাঠানো ছবিতে বুদ্ধিদীপ্ত ও সুন্দর চেহারা দেখে মনে মনে প্রার্থনা করেছিলাম-হে আল্লাহ! সুন্দর চেহারার মতো তার মনন ও চরিত্র ও যেন সুন্দর হয়। আল্লাহ আমার প্রার্থনা কবুল করেছেন।

স্কলারশীপটা পেয়েও তুমি বেঁকে বসলে। প্রেয়সী নববধূকে রেখে যাবেনা। আমিই বুঝিয়েছিলাম তোমায়।ক্যারিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তুমি বলেছিলে-আমার কাছে ক্যারিয়ারের চেয়ে আমার সোনাবউ বেশি ইমপর্ট্যান্ট। মৃদু ধমকে বলেছিলাম - এত স্ত্রৈণ হওয়া ঠিক নয়। এফআরসিএস টা শেষ করে এসো। এর মাঝে আমিও এমবিবিএস টা শেষ করে ফেলি। যাওয়ার আগের দিন রাতে তোমাকে জড়িয়ে আমার সে কি কান্না! সে কান্না ছুঁয়েছিল তোমাকেও।

বাসর রাতের কথা কি মনে আছে তোমার? তোমার পলকহীন দৃষ্টিতে খুব লজ্জা লাগছিল। তুমি আমাকে নজরুলের অমর গান শুনিয়ে দিলে-‘তুমি সুন্দর! তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কী মোর অপরাধ? চাঁদেরি হেরিয়া কাঁদে চকরিণী, বলেনাতো কিছু চাঁদ। চেয়ে চেয়ে দেখি ফোটে যবে ফুল, ফুল বলেনাতো সে আমার ভুল.....’ তোমার আবেগজড়ানো সুরেলা ঝংকারে আমি বিমোহিত হয়ে গিয়েছিলাম। শেষ রাতে উঠে আমাকে নিয়ে ছাদে গেলে। নিভু নিভু চাঁদ এর সাথে অগণিত তারার মেলা। আমি কিছুতেই জড়তা কাটাতে পারছিলামনা। আমার লজ্জা দেখে তুমি হেমন্তের গান ধরলে- ‘ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলনা, ও বাতাস আঁখি মেলনা, আমার প্রিয়া লজ্জা পেতে পারে। সে যে কাছে এসেও ফিরে যেতে পারে….’ সে রাতে তোমার অসাধারণ সব গান আর কবিতা শুনে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। তোমার গান কবিতা তন্ময় হয়ে শুনেছিলাম। তোমার সুন্দর রোমান্টিক মন দেখে আমি খুব আপ্লুত হয়েছিলাম।

সেদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি জানালা গলে জ্যোস্নার আলো ঘরে এসে পড়েছে। জ্যোস্না রাত তোমার বরাবরই প্রিয়। তোমাকে ফোন দিলাম। তোমার কন্ঠে তালাত মাহমুদ এর কালজয়ী গানটি মুগ্ধ হয়ে শুনলাম,

‘আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়,

মনে পড়ে মোরে প্রিয়।

চাঁদ হয়ে রবো, আকাশের ও গাঁয়।

বাতায়ন খুলে দিও।

সেথা জোছনায় আলোরও কণিকায়,

যেন সে তোমার প্রেমেরও……..’।


আমিও গাইলাম,

‘এই রাত তোমার আমার,

ঐ চাঁদ তোমার আমার।

শুধু---দুজনের,

এই রাত শুধু যে গানের

এই ক্ষণ এ দুটি প্রাণের।

কুহু কুজনের………।’


হাজার মাইল দূরে। কিন্তু মনে হচ্ছিল, এইতো তুমি! হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়। গানে কবিতায় পার করেছি সেই রাত। গান কবিতায় হাজার মাইল দূরে থেকেও তুমি আমার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছো। শেষে তুমি গাইলেঃ

‘এই রুপালী চাঁদে তোমারি হাত দুটি

মেহেদী লাল রঙে আমি সাজিয়ে দিতে চাই..’

আমিও সুর মিলালাম

‘আহা কি শোনালে, মন রাঙালে

এভাবে সারাটি জীবন যেন

তোমাকে কাছে পাই।…’


আসিফ মনে পড়ে তোমার নেপালের সেই পাহাড়ী গ্রামটির কথা? ছবির মতো সুন্দর এমন গ্রাম আর কখনো দেখিনি। তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে- হানিমুন কোথায় হবে? সাগরে নাকি পাহাড়ে? আমি বলেছিলুম- টস হোক। তুমি বলেছিলে-না দুটোতেই নিয়ে যাব আমার সোনাবউকে নিয়ে। প্রথমেই ছুটে গেলে কক্সবাজার। এক সপ্তাহের ট্যুরে আমার জীবনের সেরা সময়গুলোর একটি। কলাতলী বীচ, ইনানী বীচ, হিমছড়ি, সেন্টমার্টিন, ছেঁড়াদ্বীপ। গভীর রাতে হোটেল অবকাশ এর ছাদে বসে জ্যোস্নালোকিত সেন্টমার্টিন বীচ ও সমুদ্রের সে কি ভয়াবহ সৌন্দর্য্য। সে এক মায়াময় ব্যাপার, স্বপ্নময় জগত। তুমি বললে, চোখ বন্ধ প্লিজ। চোখ বন্ধ করলাম। চোখ খুলে দেখি এক গুচ্ছ লাল গোলাপ আমার খোঁপায় আর এর গলায় বকুল এর মালা। ওহ! কি রোমান্স!

তুমি বললে- একটি গান গাও।

আমি গাইলাম-

‘ফুলের মালা পরিয়ে দিলে আমায় আপন হাতে,

জ্যোস্না রাতের স্বপন আমার নামলো আঁখি পাতে।……’


তুমি গাইলে- ‘তুমি যে আমার কবিতা, আমারও বাঁশির রাগিণী। আমারও স্বপন, আধো জাগরণ, চিরদিন তোমারি……’।

আমি গাইলাম- ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে,

জোনাকীর আলো নিভে আর জ্বলে শালমহুয়ার বনে…’


এরপর গাইলাম- ‘আমার মাঝে নেই এখন আমি, স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে স্বর্গে নামি। যেন অন্যরকম এক ভালোবাসাতে, ডুবে আছি তুমি কাছে আসাতে। মন যেন এক উদাস কবি, ভালো লাগে চাঁদ, ভালো লাগে রাত, ভালো লাগেরি সবি…’ নজরূল ও বাদ গেলনা। ‘প্রিয় এমনও রাত যেন যায়না বৃথা, ঐ চাপা রঙের শাড়ি…… ’।

সবশেষে গাইলাম-‘ঘুম ঘুম চাঁদ, ঝিকিমিকি তারা এ মাধবী রাত।আসেনিতো বুঝি আর জীবনে আমার..’ আমার সুন্দর মনের সুন্দর বরটি সাথে ছিল বলেই এ সুন্দর জায়গাগুলো সৌন্দর্য্যের চরমতম রূপ নিয়ে ধরা পড়েছে আমার চোখে। কক্সবাজার হতে ফেরার পনের দিনের মধ্যে তুমি আবার কাঠমুন্ডুর বিমান টিকেট নিয়ে হাজির। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলামনা।

গতকাল আম্মু এসেছিলেন বেড়াতে। পাশের বাসার নবজাতক ফুটফুটে বাচ্চাটিকে দেখে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন-ইশ! আসিফ দেশে থাকলে এতদিনে আল্লাহ আমার রুবিকেও এমন একটা বাবু দিতেন। এরপর দুই বেয়াইন মিলে এ নিয়ে কি হাসাহাসি, খুঁনসুটি। আম্মুটা যেন কি! খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। আচ্ছা আমাদের বাবুটা কেমন হবে দেখতে? আমি চাই ঠিক তোমার মতো হোক। এই যা! গাছে কাঁঠাল না ধরতেই গোঁফে তেল দিচ্ছি। হিহিহি! সেদিন সত্যি সত্যি স্বপ্ন দেখেছিলুম। একটা ফুটফুটে শিশু আমার। ছেলে না মেয়ে সেটা স্বপ্নে বুঝা যায়নি। তবে তোমার মতোই নাক, চোখ, মুখ, ললাট সব। কোলে নেয়ার জন্য খুব কাড়াকাড়ি করছি আমরা দুজন। একবার তোমার কোলে, একবার আমার কোলে। --------

লন্ডনে নাকি খুব শীত পড়ছে এবার। সাবধানে থেকো। ঠান্ডা বাঁধিয়োনা। কাছে থাকলে তোমাকে উষ্ঞতায় ভরিয়ে দিতাম। চুম্বন নিও, ভালোবাসা জেনো।

তোমারই সোনাবউ।

সোনাবউ,

কতবার যে পড়েছি তোমার মিষ্টি রোমান্টিক নষ্টালজিয়ায় ভরপুর চিঠিটি! তোমাকে পেয়ে সত্যি আমি ধন্য।আমার জীবনে তুমি আল্লাহ্র অশেষ রহমত। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, এফআরসিএস গোল্লায় যাক। ছুটে যাই আমার সোনাবউ এর কাছে। আর মাত্র কটা দিন লক্ষী সোনা বউ। স্কলারশীপ এর পরিমাণ বেড়েছে আমার, নতুন একটা এলাউন্স পাচ্ছি। কিছু বাড়তি টাকা হাতে আসায় মা আর তোমার জন্য কিছু সুন্দর গিফট কিনলাম। কাল স্কাইপে তে দেখাব। মজার ঘটনা শুনবে? আমার সাথে স্কলারশীপ নিয়ে এসেছে হাসান। সে অবশ্য পাশ করেছে চমেক হতে। আমরা থাকিও পাশাপাশি। বেচারা দিল্লীকা লাড্ডু খাবে কিনা এ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। মানে পস্তানোর ভয়ে এগুতে চায়না। তাকে আমাদের গল্প বলি। তোমার চিঠিটার অংশবিশেষ তাকে পড়ে শুনাই। সে এখন কনভীন্সড, লাড্ডু খাবে। হাহাহা। দেশে পাত্রী ঠিক করে রাখার জন্য পরিবারকে জানিয়েছে।

একটা কবিতা লিখেছি, শুনবে? এই যা, চিঠিতে কবিতা শোনানো যায় নাকি? রাতে ছাদে যেও। তখন মুঠোফোনে কবিতা শোনাবো। তোমার গান শুনবো। আম্মুকে ছেড়ে, তোমাকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে কবি হেলাল হাফিজ এর মতো কষ্ট ফেরী করি। ‘কষ্ট নিবে কষ্ট, লাল কষ্ট নীল কষ্ট. …….প্রিয়জনদের ছেড়ে থাকার কষ্ট’।

সেদিন ছুটির দিনে লন্ডনের আকাশে মেঘ করেছিল, গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি সাথে। জানালার ধারে বসে তোমাকে ফোন দিয়েই আপন মনে গেয়ে ওঠলাম

‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনাতো মন,

কাছে যাবো কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।

যুঁথি বনে ঐ হাওয়া, করে শুধু আসা যাওয়া।

হায় হায়রে দিন যায়রে করে আঁধার এই ভুবন।….

শুধু ঝরে ঝর ঝর আজ বারি সারাদিন,

আজি যেন মেঘে মেঘে হলো মন যে উদাসীন…।’
গান শেষে তুমি হুহু করে কেঁদে ওঠলে। আমিও কেঁদেছিলাম অনেক দিন পর আকুল নয়নে।

সত্যিই রোমান্টিক সময়গুলো খুউব করে মনে পড়ছে আজ। তোমার লাজ নম্র মুখের অনাবিল সৌন্দর্য্য কত মুগ্ধ নয়নে উপভোগ করেছি! তোমার মুখে তুমি সম্বোধন শুনতে দুই মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল। প্রথম যেদিন আমাকে তুমি বলে ডাকলে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম। তুমি লজ্জায় চোখ বন্ধ রেখেছিলে আড়াই মিনিট। তোমার লাজরাঙা মুখ দেখার মত হয়েছিল।

সেন্টমার্টিন এ অবকাল হোটেল এর ছাদ এ বসে যে মোহনীয় মায়াময় রাত এর কথা কি ভুলে থাকা যায়? সাগরের শোঁশোঁ গর্জন, আকাশের মায়াবী চাঁদ আর তারার ঝিকিমিকি, সাগরের পানিতে রুপালী চাঁদের ঝিলিমিলি, গান কবিতায় দুজনের তৈরি সুরের মূর্চ্ছনা! সে কি এক স্বপ্নময় মায়াবী রাত! একবার আমি আনমনে গেয়ে উঠলাম, ‘এত সুর আর এত গান, যদি কখনো থেমে যায়, সেদিনও তুমি….’

তুমি থামিয়ে দিলে- এই গান চলবেনা। তার চেয়ে গান হোক, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হবে তুমি বলতো। যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়, তবে কেমন হতো…………’।

একের পর এক সুর মূর্চ্ছনা ইথারে ভেসে ভেসে যেন মিশে যাচ্ছিল নীল সাগরের শোঁ শোঁ ঢেউয়ের কাব্যিক ছন্দে। দুজনের স্বরতন্ত্রীতে সুরগুলো যেন অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করেছিল। সে স্বপ্নময় রাতে সুর যেন আর বাঁধ মানছিলনা। তুমি গেয়ে উঠলে-

‘এ শুধু গানের দিন

এ লগন গান শোনাবার।

এ তিথি শুধু গো যেন

দখিন হাওয়ার।।…’


আমি উদাসী মনে পংকজ উদাস এর গান গেয়ে উঠলাম-

‘তুমি খাঁচা হলে আমি হবো পাখি,

সারাদিন বসে দ্বারে তোমারি নাম ধরে করে যাবো ডাকাডাকি…

তুমি ফুল হলে আমি হবো মৌমাছি,

মধু আর মাধরীরে রবো কাছাকাছি…’


তুমি যখন আঁখি মুদে সুখের আবেশে সন্ধ্যা মুখার্জীর ‘ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা এ মাধবী রাত, আসেনিতো বুঝি আর জীবনে আমার…….’ গানটি গেয়েছিলে সে ক্ষণটি আমি এখনো চোখ বন্ধ করে অনুভব করি। সুখের আবেশে পূর্ণ কি অপরূপ এক মায়াবী মুখ।

আসার দিন এয়ারপোর্টে বিদায় নেয়ার সময় আমার বুক পকেটে যে চিঠি রেখে দিয়েছিলে সেটি আজো সযতনে রেখেছি। কয়েকটি ফটোকপি করেছি সে চিঠির। ক্লাস, রিসার্চ, প্র্যাকটিক্যাল শেষে যখন ক্লান্ত হই, বোর ফিল করি তখন তোমার চিঠিটা বের করে পড়ি। মনটা ভালো হয়ে যায়। কত আদেশ উপদেশ। সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ রাখতে বলেছো। কুরআন হাদীস অধ্যয়ন ও যথাযথ ধর্মচর্চা করার উপদেশ। খুব ভালো লাগলো। এরপর তোমার রচিত দুটি অসাধারণ কবিতা। চিঠির শেষে রোমান্সপূর্ণ ভালোবাসার আকুতি ‘ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখ তোমার মনের ….…….’। ‍তুমি যে প্রিয়া, আমার অর্ধাঙ্গিণী, তোমাকে ভুলে থাকা যায়?

তোমার ভিসার ব্যবস্থা করছি। আল্লাহ চাহেতো পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর লন্ডন আসছো তুমি। বৃষ্টির দিনে, চাঁদের আলোতে আমরা টেমস নদীর তীরে হাঁটবো। কবিতা লিখবো, গাইবো গান। তুমি গান লিখবে, আমি সুর করে গাইবো। আবার আমার লেখা গানে তুমি সুর দিবে। এফআরসিএস শেষে আমরা আবার দেশে ফিরে যাব। দুজনে মিলে একটা হাসপাতাল করবো। আমাদের ছোট ছোট দুটি বাবু থাকবে। তারপর?

‘তার আর পর নেই, নেই কোন ঠিকানা,

যা কিছু গিয়েছে থেমে, যাক থেমে যাকনা।

যা কিছু পেয়েছি কাছে, তাই সঞ্চয়,

যা কিছু পেলামনাকো সে আমার নয়…….

…………….

মনে রেখ আমিও ছিলাম,

ছোট্ট জীবন আর কিছু হাসিগান,

আমি তোমাকে দিলাম।…’


আর মাত্র দু’টি মাস। অপেক্ষায় রইলাম। মিষ্টি চুম্বন আর ভালোবাসা জেনো

তোমারই স্বপ্নবর।



(ফুটনোটঃ গল্প কবিতা সাহিত্য-এসব বিষয় কোনোকালেই অতটা ভালো বুঝতামনা, এখনো বুঝিনা খুব একটা । তবে ব্যস্তময় জীবনে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারিনা বলে, ছুটির দিনে ঘুরতে যেতে পারিনা বলে বউ এর কাছে প্রায়ই আনরোমান্টিক বলে খোঁটা শুনতে হয়। নিজেকে রোমান্টিক প্রমাণ করতেই বিরহ এর রোমান্স নিয়ে গল্প লেখার দুঃসাহস দেখিয়ে ফেললাম। Happy Happy Big Grin)

বিষয়: সাহিত্য

৪০০৭ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

192895
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯
পলাশ৭৫ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:০৬
143645
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : জেনে প্রীত হলুম। Good Luck Good Luck
192897
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:০২
ইকুইকবাল লিখেছেন : বিশাল বড় পড়ে পড়ে দেখব। লেখক তো মাশাআল্লাহ মজাদার। আপনার লেখা নিয়মিত পড়ি আর দিনদিন মুগ্ধ হই। ধন্যবাদ এগিয়ে যান সাথেই আছি
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:০৭
143646
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : না পড়িয়াই মুগ্ধ হলেন ক্যামনে- গবেষণার বিষয়Happy :Thinking :Thinking
192899
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:০৩
রাইয়ান লিখেছেন : বাপরে ..... কি রোমান্টিসিজম ! বিরহ যে প্রিয় মানুষটিকে অনুভবের আরো একান্তে নিয়ে আসে ....এই মিষ্টি লেখাটি তারও একটি উপমা ! ভাবির আর সাধ্যই নেই আপনাকে নিরস বলার .... সে দরজা আজ আপনি নিজের হাতেই বন্ধ করে দিলেন ..... Big Grin Tongue

আরো একটা জিনিস বুঝলাম .... আপনি অনেক গান শোনেন ! Music Music
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:০৮
143647
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : হাহাহা। ঠিক ধরেছেন। Angel Angel Good Luck Good Luck
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:১১
143648
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : বলতে পারেন, মিষ্টি কথায় বউকে ফাঁকি দেয়ার একটা বুদ্ধি বের কর্লাম। Tongue Tongue

সময়ের সাথে কুলাতে পারিনা যখন কি আর করা! বউ মাঝে মাঝে বলে- ফেসবুক আমার সেকেন্ড বউ আর ব্লগ নাকি থার্ড বউ। হাহাহা।
192901
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:২৪
বাকপ্রবাস লিখেছেন : Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Rose Rose খুব গোছানো, দারুণ লেগেছে
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫০
144464
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ কবি সাহেব।
192906
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:৪৮
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : এক কথায় বলবো- আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম কোন এক অচেতন পুরীতে...
বউ জামাই দু’জনই শিল্পী! শাহীন বদ্দা কইরে......ইশ্ কখন যে...........
192908
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:৫৩
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : রোমান্টিকতা যদি খারাপ না হয়ে থাকে, তবে এই গল্পটি স্টিকি করা হোক...
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫০
144465
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : MOney Eyes MOney Eyes MOney Eyes Waiting
192909
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:০২
নেহায়েৎ লিখেছেন : ব্লগে এত বড় গল্প পড়ার ধৈর্য্য হয়না। কিন্তু আজ পড়লাম আপনার রোমান্টিক গল্প দেখে। বড় বেশিই রোমান্টিক! মাঝে মাঝে কিছু অংশ পড়ে একা একাই লজ্জায় পড়ে যাই!!!
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫০
144466
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : Good Luck Good Luck Happy
192924
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৩৫
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : আমি কিছু কওমুনে।
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫০
144467
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone
192971
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৬
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : মনে রেখ আমিও ছিলাম,
ছোট্ট জীবন আর কিছু হাসিগান,
আমি তোমাকে দিলাম।…’

মাশাল্লাহ বেশ ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫১
144468
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : Happy Happy Happy
১০
193023
১৬ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৫০
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : এক গল্পে এত গান!!! চমৎকার গল্পটির উপস্থাপনা বেশ সুন্দর ও সাবলীল হয়েছে। ধন্যবাদ Thumbs Up Bee Rose Rose Rose
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫১
144469
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
১১
193058
১৬ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৪
মেরাজ লিখেছেন : এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিবা দূরে রও
মনে রেখে আমিও ছিলাম

বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দেব তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারই ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম

ভালবেসে আমি বারেবার
তোমারই ও মনে হারাবো
এ জীবনে আমি যে তোমার
মরণেও তোমারই হব
তুমি ভুলোনা আমারই নাম
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫১
144470
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : ওয়াও!! দারুণস!
১২
193129
১৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:০৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : উকিল মানুষ হঠাত এত রোমান্টিক হয়ে পড়লেন! কেইস টা কি? Thinking Thinking

তবে হৃদয় ছুঁয়ে গেল তাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫২
144472
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অনুর্বর মস্তিষেকর ততোধিক অনুর্বর কল্পনামাত্র!Tongue
১৩
193179
১৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:২৩
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। গানে গানে কেটে গেল বেলা । এ যেন তাই !
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫২
144473
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck
১৪
193309
১৭ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:২০
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : আহা। মনের মাধূরী মিশিয়ে কত দারুণভাবে আহত হৃদয়ের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন একজন ভালাবাসার প্রিয়কে পেতে্ কিন্তু নিষ্ঠুর প্রকৃতির ভালবাসা পাথর থেকেউ কঠিন হয়। ধন্যবাদ।
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫২
144474
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File