মহাগ্রন্থ আল কোরআনের অসাধারণ কিছু অলৌকিকত্ব (পঞ্চম ও শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ০৬ মার্চ, ২০১৪, ১১:৪৫:২৭ সকাল
( এ পর্বেই এ আলোচনার ইতি টানছি। একটু বড় হলেও পাঠককে ধৈর্য্যসহকারে পড়ার বিনীত অনুরোধ করছি। আল কুরআন নিয়ে মিশরের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. রশীদ খলিফা এর গবেষণা লব্ধ ফলাফল নিয়ে ই এই আলোচনা। এখানে আমার নিজস্ব বা মনগড়া কোনো বক্তব্য নেই। আল কুরআনের এ অসাধারণ মোজেযা শেয়ার করতে ভুলবেননা)।
কোরআন শরীফে শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তির রহস্য
কোরআন শরীফের ‘সূরা আল ফজর’ এর ৭ নং আয়াতে ‘ইরাম’ নামে একটি গোত্র বা শহরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘ইরাম’ এর নাম কোনো ইতিহাসে পাওয়া যায়না। তাই কোরআন শরীফের তাফসীরকারকরাও সুনির্দিষ্টভাবে এর অর্থ বলতে সক্ষম হননি।
১৯৭৩ সালে সিরিয়ার ‘এরলুস’ নামক একটি পুরনো শহরে খনন কার্যের সময় কিছু পুরনো লিখন পাওয়া যায়। এ সমস্ত লিখন পরীক্ষা করে সেখানে চার হাজার বছরের একটি পুরনো সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। এ লিখনগুলোর মধ্যে দেখা গেছে ‘ইরাম’ শহরের উল্লেখ আছে। এক সময় এরলূস শহরের লোকজন ‘ইরাম’ শহরের লোকজনের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করতো। এ সত্যটা আবিষ্কৃত হলো মাত্র সেদিন ১৯৭৩ সালে। প্রশ্ন হলো, দেড় হাজার বছর আগে নাযিল করা কোরআন শরীফে এই শহরের নাম এলো কি করে? আসলে কোরআন শরীফ হচ্ছে আল্লাহর বাণী, আর আল্লাহপাক এখানে ‘ইরাম’ শহরের উদাহরণ দিয়েছেন।
কোরআন শরীফে হযরত মুহাম্মদ(স) এর একজন দুশমন এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তার নামে সূরা আছে। সে হচ্ছে আবু লাহাব। ওহী নাযিল হওয়ার পর যদি আবু লাহাব ইসলাম কবুল করতো তাহলে কোরআন শরীফের আয়াতটি মিথ্যা প্রমাণিত হতো। কিন্তু আবু লাহাব ইসলাম কবুল করেনি এবং কোরআন শরীফের আয়াত চিরকাল সত্যিই রয়ে গেছে।
কোরআন শরীফে ‘সূরা রোম’ এ পারস্য সাম্রাজ্য ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে এবং যে সময় এই ওহী নাযিল হয় তখন মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা অকল্পনীয় ছিলো যে, রোমকদের যারা পরাজিত করলো তারা অচিরেই তাদের হাতে ধ্বংস হতে পারে। এ আয়াত নাযিল হবার ৭ বছর সময়ের মধ্যে, অর্থাৎ ৬২৭ খ্রীস্টাব্দে এসে সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
এ আয়াতে ‘ফী আদনাল আরদ’ বলে আল্লাহতা‘আলা গোটা ভূ-মন্ডলের যে স্থানটিকে সর্বনিম্ন অঞ্চল বলেছেন তা ছিলো সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও জর্ডানের পতিত ‘ডেড সী’ এলাকা। এ ভূখন্ডেই ৬২৭ খ্রীস্টাব্দে রোমানরা ইরানীদের পরাজিত করে। মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কৃত ভূ-জরিপ অনুযায়ী এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই এলাকাটা সারা দুনিয়ার মধ্যে আসলেই নিম্নতম ভূমি। ‘সী লেবেল’ থেকে ৩৯৫ মিটার নীচে। এ জায়গাটা যে গোটা ভূ-খন্ডের সবচেয়ে নীচু জায়গা এটা ১৪ শ বছর আগের মানুষ কি করে জানবে? বিশেষ করে এমন একজন মানুষ যিনি ভূ-তত্ত্ব, প্রাণী-তত্ত্ব ইত্যাদি কোনো তত্ত্বেরই ছাত্র ছিলেননা।
কোরআন শরীফের এক জায়গায় সমুদ্রের তরঙ্গ সম্বন্ধে বলা হয়েছে, ঢেউ যখন অগ্রসর হয় তখন দুটি ঢেউ এর মধ্যবর্তী স্থান অন্ধকার থাকে। আমরা জানি, হযরত মুহাম্মদ(স) ছিলেন মরুভূমির সন্তান, তিনি সমুদ্র কখনো দেখেননি। সুতরাং সমুদ্র তরঙ্গের মধ্যবর্তী স্থান যে অন্ধকার তা তিনি জানবেন কি করে? এতেও প্রমাণিত হয় যে, হযরত মুহাম্মদ(স) নিজে কোরআন রচনা করেননি। আসলেই প্রচন্ড ঝড়ের স্ময় দ্রুতগতির তরঙ্গসমূহ যখন বিক্ষুব্ধ হয় তখন তরঙ্গগুলোর মধ্যবর্তী অংশ সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হয়।
কোরআনের আরেকটি বিস্ময়কর বিস্ময় হচ্ছে, লোহা ধাতুটির বিবরণ। কোরআনের সূরা আল হাদীদে আল্লাহতা‘আলা বলেছেন, ‘আমি লোহা নাযিল করেছি, যাতে রয়েছে প্রচুর শক্তি ও মানুষদের জন্য প্রচুর কল্যাণ ’। লোহা নাযিলের বিষয়টি তাফসীরকারকগণ নানাভাবে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন; কিন্তু যেখানে আল্লাহতা‘আলার স্পষ্ট নাযিল শব্দটি রয়েছে সেখানে এত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দিকে না গিয়ে আমরা এর আক্ষরিক অর্থের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভাবনীও ঠিক একথাটিই বলেছে। পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন, লোহা উৎপাদনের জন্য যে ১৫ লক্ষ সেলসিয়াল ডিগ্রী তাপমাত্রা প্রয়োজন তার কোন উপকরণ আমাদের এই পৃথিবীতে নেই। এটা একমাত্র সূর্যের তাপমাত্রা দ্বারাই সম্ভব। হাজার হাজার বছর আগে সূর্য্ দেশে প্রচন্ড বিস্ফোরণের ফলে লোহা নামের এ ধাতু মহাশূণ্যে ছিটকে পড়ে। পৃথিবীর মাধ্যাকার্ষণ শক্তির টানে তা পৃথিবীতে নাযিল হয়। লোহা সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত তথ্য ঠিক এ কথাটিই প্রমাণ করেছে। দেড় হাজার বছর আগের আরব বেদুইনরা বিজ্ঞানের এই জটিল সূত্র জানবে কি করে?
এই সূরার আরেকটি অংকগত মোজেযাও রয়েছে। ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী ‘সূরা আল হাদীদ’ কোরআনের ৫৭ তম সূরা। আরবীতে ‘সূরা আল হাদীদ’ এর সংখ্যাগত মান হচ্ছে ৫৭। শুধু ‘আল হাদীদ’ শব্দের অংকগত মান হচ্ছে ২৬, আর লোহার আনবিক সংখ্যা মানও হচ্ছে ২৬।
কোরআনে অনেক জায়গায়ই একের সঙ্গে অন্যের তুলনা উপস্থিত করা হয়েছে। এ তুলনা উপস্থিত করার ব্যাপারে একটি অবিশ্বাস্য মিল অবলম্বন করা হয়েছে এবং তা হচ্ছে, সে দু‘টি নাম অথবা বস্তুকে সমান সংখ্যাতেই আল্লাহতা‘আলা তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন, কোরআন শরীফে সূরা ‘আল ইমরান’ এর ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আল্লাহতা‘আলার কাছে ঈসার তুলনা হচ্ছে আদমের মতো।’
এটা যে সত্য তা আমরা বুঝতে পারি। কারণ, মানবজন্মের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় উনাদের কারোরই জন্ম হয়নি। আদম (আ) এর মাতাও ছিলনা, পিতাও ছিলনা এবং ঈসা (আ) এরও পিতা ছিলোনা। এখন এই তুলনাটি যে কত সত্য তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন আমরা কোরআন শরীফে এ দু’টি নামের মোট সংখ্যা অনুসন্ধান করি। দেখা যাচ্ছে কোরআন শরীফে আদম(আ) ও ঈসা(আ) উভয়ের নামই পঁচিশবার এসেছে। কোরআনের বাণীগুলো যে মানুষের নয় তা বোঝা যায় এ দু’টি নামের সংখ্যার সমতা দেখে। আল্লাহতা‘আলা যেহেতু বলেছেন, এ দুটো একই রকম, তাই সেগুলোর সংখ্যা গণনাও ঠিক একই রকমের রাখা হয়েছে।
এই তুলনার ক্ষেত্রে আরেকটি অলৌকিক বিষয় হলো, যেখানে তুলনাটি অসম সেখানে সংখ্যা দুটিকেও অসম বলা হয়েছে। যেমন, কোরআনে বলা হয়েছে-সুদ ও বাণিজ্য এক নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এ শব্দ দুটির একটি কোরআনে এসেছে ছয়বার এবং অপরটি সাতবার।
বলা হয়েছে ‘জান্নাতের অধিবাসী ও জাহান্নামের অধিবাসী সমান নয়’। জান্নাতের সংখ্যা হচ্ছে আট, আর জাহান্নামের সংখ্যা হচ্ছে সাত।
সূরা ‘আরাফ’ এ এক আয়াতে আছে , ‘যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে কুকুরের মতো’। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয় যখন আমরা দেখি, ‘যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতকে অস্বীকার করে’-এই বাক্যটি কোরআনে পাঁচবার এসেছে। যেহেতু তাদের উদাহরণ দেয়া হয়েছে কুকুরের সাথে, তাই সমগ্র কোরআনে ‘আল কালব’ তথা কুকুর শব্দটাও এসেছে পাঁচবার।
‘সাবয়া সামাওয়াত’ কথাটার অর্থ হলো সাত আসমান। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোরআনে এই ‘সাত আসমান’ কথাটা ঠিক সাতবারই এসেছে। ‘খালকুস সামাওয়াত’ আসমানসমূহের সৃষ্টির কথাটাও ৭ বার এসেছে, সম্ভবত আসমান সাতটি তাই। ‘সাবয়ামু আইয়াম’ মানে সাতদিন। একথাটাও কোরআনে সাতবার এসেছে। অংকগত মোজেযা এখানেই শেষ নয়।
‘দুনিয়া ও আখেরাত’ এ দুটো কথা ও কোরআনে সমসংখ্যক বার এসেছে-১১৫ বার করে।
‘ঈমান ও কুফর’ শব্দ দুটোও সমপরিমাণে বলা হয়েছে, অর্থাৎ পঁচিশবার করে।
‘গরম’ ও ‘ঠান্ডা’ যেহেতু দুটো বিপরীতমুখী ঋতু, তাই এ শব্দ দুটো সমান সংখ্যক অর্থাৎ কোরআনে ৫ বার করে এসেছে।
আরবী ভাষায় ‘কুল’ মানে বলো, তার জবাবে বলা হয় ‘কালু’ মানে তারা বললো। সমগ্র কোরআনে এ দু’টো শব্দও সমানসংখ্যক বার এসেছে-৩৩২ বার করে।
‘মালাকুন’ কিংবা ‘মালায়েকা’ মানে ফেরেশতা বা ফেরেশতারা। কোরআনে এ শব্দটি এসেছে ৮৮ বার। একইভাবে ফেরেশতার চিরশত্রু ‘শয়তান’ কিংবা ‘শায়াতীন’-শব্দটিও এসেছে ৮৮ বার।
‘আল খবিস’ মানে অপবিত্র, ‘আত তাইয়েব’ মানে পবিত্র। সমগ্র কোরআনে এ দুটি শব্দ একই পরিমাণে এসেছে-সাতবার করে।
প্রশ্ন জাগতে পারে, দুনিয়ায় ভালোর চাইতে মন্দইতো বেশি, তাহলে এখানে এ দুটো শব্দকে সমান রাখা হলো কিভাবে? এ কথার জবাবের জন্য কোরআনের সূরা আনফালের 37 নং আয়াতটির প্রতি লক্ষ্য করা যাক। এখানে আল্লাহতা‘আলা বলেছেনঃ ‘অপবিত্রকে পবিত্র হতে আলাদা করার জন্য তিনি অপবিত্রকে একটার ওপর আরেকটা রেখে পুঞ্জীভূত করেন এবং সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে ফেলে দেন।’ এতে বোঝা যায়, যদিও পাপ পূণ্য সমান সংখ্যায় এসেছে, কিন্তু ‘পুঞ্জীভূত’ করা দিয়ে যে তার পরিমাণ বেশি তা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘ইয়াওমুন’ মানে দিন যা পবিত্র কোরআনে এসেছ 365 বার। বছরে যে 365 দিন, এটা কে না জানে। ইয়াওমুন শব্দের বহুবচন আইয়াম মানে দিনসমূহ, এ শব্দটি এসেছ 30 বার। আরবী ভাষায় চাঁদ হচ্ছে মাসের সূত্র সূচক, গড়ে বছরের প্রতি মাসে 30 দিন, এটাই হচ্ছে চান্দ্রবছরের নিয়ম। হতবাক হতে হয় যখন দেখি, চাঁদের আরবী প্রতিশব্দ ‘কামার’ শব্দটি কোরআনে মোট 30 বারই এসেছে।
‘শাহরুন’ মানে মাস, কোরআনে এ শব্দটি এসেছ মোট 12 বার। ‘সানাতুন’ মানে বছর যেটি কোরআনে এসেছে 19 বার। কারণ হিসেবে আমরা সম্প্রতি আবিষ্কৃত গ্রীক বিজ্ঞানী মেতনের ‘মেতনীয় বৃত্তের’ কথা উল্লেখ করতে পারি। তিনিই প্রথম এই তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন যে, প্রতি 19 বছর পর সূর্য্ ও পৃথিবী একই বৃত্তে অবস্থান করে।
কোরআনে ‘ফুজ্জার’(পাপী)শব্দটি যতবার এসেছে, ‘আবরার’ (পূণ্যবান) শব্দটি তার দ্বিগুণ এসেছে। অর্থাৎ ফুজ্জার 3 বার আর আবরার 6 বার। এর কারণ হচ্ছে শাস্তির তুলনায় পুরস্কারের পরিমাণ আল্লাহতা‘আলা সব সময় দ্বিগুণ করে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। কোরআনের সূরা সাবা’র 37 নম্বর আয়াতে আল্লাহতা‘আলা বলেছেন, ‘এ ধরনের লোকদের জন্যই (কেয়ামতে) দ্বিগুণ পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে। এটা হচ্ছে বিনিময় সে কাজের যা তারা দুনিয়ায় করে এসেছে’। এ কারণেই দেখা যায়, গোটা কোরআনে ‘পাপী’ ও ‘পূণ্যবান’ শব্দের মতো ‘আযাব’ শব্দটি যতোবার এসেছে, ‘সওয়াব’ শব্দটি তার দ্বিগুণ এসেছে। অর্থাৎ আযাব 117 বার, সওয়াব 234 বার।
কোরআনের একাধিক জায়গায় আল্লাহ বলেছেনঃ আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করলে তিনি তার বিনিময় বাড়িয়ে দিবেন। সম্ভবত এ কারণেই কোরআনে ‘গরীবী’ শব্দটি এসেছে 13 বার এবং বিপরীতে ‘প্রাচূর্য্’ শব্দটি এসেছে 26 বার।
কোরআনের করীমের বিভিন্ন জায়গায় গাণিতিক সংখ্যার এ আশ্চর্য্জনক মিল দেখে যে কোন পাঠকই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ভাবতে থাকে, এটা নিঃসন্দেহে কোন মানুষের কথা নয়।
কোনো একটি কাজ করলে তার যে অবশ্যম্ভাবী ফল দাঁড়াবে তার উভয়টিকে আশ্চর্য্জনকভাবে সমান সংখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে।
‘গাছের চারা উৎপাদন’ করলে ‘গাছ’ হয়; তাই এই দুটি শব্দ এসেছে 26 বার করে। কোনো মানুষ ‘হেদায়াত’ পেলে তার প্রতি ‘রহমত’ বর্ষিত হয়; তাই এ দুটো শব্দ কোরআনে এসেছে 79 বার করে। ‘হায়াতের’ অপরিহার্য্ পরিণাম হচ্ছে ‘মওত’- এ শব্দ দুটোও এসেছে 16 বার করে। আল্লাহতা‘আলা বলেছেন-‘যাকাত’ দিলে ‘বরকত’ আসে। কোরআনে এ দুটো শব্দই এসেছে 32 বার করে। ‘আবদ’ মানে গোলামী আর ‘আবীদ’ মানে গোলাম। গোলামের কাজ গোলামী করা, কোরআনে এই উভয় শব্দই 152 বার করে এসেছে। ‘মানুষ সৃষ্টি’ কথাটি এসেছে 16 বার, আর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘এবাদত’; সুতরাং তাও এসেছে 16 বার। ‘নেশা’ করলে ‘মাতাল’ হয়; তাই এ দুটো শব্দও এসেছে সমানসংখ্যক 6 বার।
কোরআনে ‘ইনসান’ শব্দটি এসেছে 65 বার। এবার ইনসান বানানোর উপকরণগুলোকে কোরআনের বিভিন্ন জায়গা হতে মিলিয়ে যোগ করে দেখা যাক। প্রথম উপাদান ‘তোরাব’ (মাটি) এসেছে 17 বার; দ্বিতীয় উপাধান ‘নুতফা’(জীবনকণা) এসেছে 12 বার; তৃতীয় উপাদান ‘আলাক’(রক্তপিন্ড) 6 বার; চতূর্থ উপাদান ‘মোদগা’ (মাংসপিন্ড) এসেছে 3 বার; পঞ্চম উপাদান ‘এযাম’ বা হাড় এসেছে 15 বার এবং সর্বশেষ উপাদান ‘লাহম’ এসেছে 12 বার। কোরআনে সূরা হজ্জ এ উল্লেখিত এ উপাদানগুলো যোগ করলে যোগফল ঠিক 65 হয়। আর এসব উপাদান দিয়ে যে ‘ইনসান’ বানানো হয়েছে তাও ঠিক 65 বারই উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহতা‘আলা কোরআনের ‘সূরা আল ক্বামার’ এর প্রথম আয়াতটিতে চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার সাথে কেয়ামতের আগমন অত্যাসন্ন কথাটি বলেছেন, আরবী বর্ণমালার আক্ষরিক মান হিসাব করলে তার যোগফল হয় 1390, আর এই 1390 হিজরী(1969 খ্রীস্টাব্দে) সালেই মানুষ সর্বপ্রথম চাঁদে অবতরণ করে। এটা কি স্রেফ ঘটনাচক্র নাকি কোরআনের অসাধারণ মোজেযা? কিন্তু আল্লাহতা‘আলার এই মহান সৃষ্টিতে তো ঘটনাচক্র বলতে কিছুই নেই। এ কারণেই হয়তো মানুষের প্রথম চাঁদে অবতরণের সালের সাথে কোরআনের আলোচ্য আয়াতটির সংখ্যামানের এ বিস্ময়কর মিল আমরা দেখতে পাচ্ছি। সুবহানাল্লাহ!
(মিশরের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. রশীদ খলিফা গবেষণার উপর ভিত্তি করে আল কোরআন একাডেমী, লন্ডন এর সৌজন্যে। )
পূর্ববর্তী ৪ পর্বের লিংক-Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৯ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লেখাটা সমৃদ্ধ এবং কুরআনের বিস্ময়কর মাজেজার প্রমান। জাযাকাল্লা সুন্দর লেখাটি উপহার দেবার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন