মহাগ্রন্থ আল কোরআনের অসাধারণ কিছু অলৌকিকত্ব (পর্ব ১)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০৩:৪৭ দুপুর
মহাগ্রন্থ আল কোরআন! এক অপার বিস্ময়!! মানব জীবনের পথ নির্দেশনা। এটিই একমাত্র আসমানী কিতাব যেটি আজ পর্যন্ত অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত অবস্থায় থাকবে।
কারণ,আল-কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা নিজেই গ্রহণ করে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমিই কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষণকারী।’ (সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯)
এর পূর্বে নাযিল হওয়া প্রধান চারটি আসমানী কিতাবসহ মোট ১০৪ টি আসমানী কিতাবের একটিও আজ অবিকৃত অবস্থায় নেই, আছে একমাত্র আল কোরআন।
আজ আমরা মুসলিম সমাজের বিরাট অংশ ব্যক্তিবিশেষকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী মহা ক্ষমতাধর মনে করে প্রতিনিয়ত যে শিরক ও আল্লাহর নাফরমানী করছি সে কথা বলাই বাহুল্য। ভন্ড পীর, কবিরাজ, তান্ত্রিক, তাবিজ কবজ , মাজার এসবে আকৃষ্ট হয়ে আমরা দিন দিন প্রকৃত ইসলাম হতে দূরে সরে যাচ্ছি।
অথচ আল্লাহর প্রেরিত কিতাব আল কোরআন যে অসাধারণ মাজেযাপূর্ণ, অলৌকিকতায় ভরপুর সে বিষয়টি আমরা বেমালুম ভুলে যাই কোরআন চর্চার অভাবে।
মিসরের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. রশীদ খলীফা কোরআন নিয়ে এক ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি প্রাথমিকভাবে কোরআনের প্রতিটি অক্ষর যেভাবে কোরআনে সন্নিবেশিত আছে সেভাবেই তাকে কম্পিউটারে বিন্যস্ত করেন। কোরআনে 114 টি সূরার অবস্থান এবং 29 টি সূরা শুরুতে ব্যবহৃত ‘হরুফে মোকাত্তায়াত’ যে নিয়মে বিন্যস্ত আছে সে নিয়মের ভিত্তিতে তিনি হিসাব করতে শুরু করেন। এতে করে কোরআনের কিছু অলৌকিক তত্ত্ব তাঁর কম্পিউটার স্ক্রীনে ভেসে ওঠে। এ অলৌকিক তত্ত্বের একটি হচ্ছে এই যে, সমস্ত কোরআন গণিতের এক রহস্যময় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে। কোরআনের সর্বত্র একটি অভিনব ও বিস্ময়কর গাণিতিক সংখ্যার জাল বোনা রয়েছে। সমগ্র কোরআন যেন 19 সংখ্যাটির একটি সুদৃঢ় বন্ধন।
এই সংখ্যাটির মাধ্যমে গ্রন্থটিকে এমন এক গাণিতিক ফর্মূলায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে যেন এতে ব্যবহৃত বর্ণমালা, শব্দ ও আয়াতসমূহের কোথাও কোনোরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজন করা কারো পক্ষে সম্ভব না হয়।
কোরআন শরীফে উনিশ সংখ্যাটির মাজেজা
এই ফর্মূলাটি তৈরি হয়েছে 19 সংখ্যাটির গাণিতিক অবস্থান দিয়ে।
কোরআন শরীফের প্রত্যেকটি সূরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ আয়াতটি রয়েছে (সূরা আত তাওবা ব্যতীত)। সূরা ‘আত-তাওবা’র শুরুতে বিসমিল্লাহ না থাকলেও সূরা ‘নমল’ এ যেহেতু বাক্যটি দু’বার এসেছে তাই এর সংখ্যাও সূরা সংখ্যার মতো 114-ই থেকে গেলো।
এই ক্ষুদ্র আয়াতটি 4 টি শব্দ ও 19 টি অক্ষর দ্বারা গঠিত। শব্দ চারটি হচ্ছে, ‘ইসম’, ‘আল্লাহ’, ‘রহমান’ এবং ‘রহীম’। ইসম অর্থ নাম, আল্লাহ হচ্ছে স্রষ্টার মূল নাম, রহমান অর্থ দাতা, রহীম অর্থ করুণাময়।
সমগ্র কোরআনে ‘ইসম’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে 19 বার অর্থাৎ তা 19 দ্বারা বিভাজ্য। ‘আল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে 2698 বার, তাও 19 দ্বারা বিভাজ্য। ‘রহমান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে 57 বার, এটিও 19 দ্বারা ভাগ করা যায় এবং ‘রহীম’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে 114 বার যা 19 দ্বারা বিভাজ্য। কোরআনে বর্ণিত আল্লাহতা‘আলার সর্বমোট নামের সংখ্যা (মূল ও গুণবাচক মিলে) 114, যা 19 দ্বারা বিভাজ্য।
এই চারটি শব্দের গুণিতক সংখ্যার যোগফল হচ্ছে 152, একইভাবে বিসমিল্লাহ শব্দের গুণিতক সংখ্যার যোগফলও 152, যা 19 দ্বারা বিভাজ্য। এ ব্যাপারে আরেকটি জিনিসও কোরআন পাঠকের মনে দারুণ কৌতুহল সৃষ্টি করবে।
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বাক্যটির চারটি শব্দ কোরআনে যতবার এসেছে, এর অপরিহার্য্ গুণবাচক শব্দটিও ঠিক ততোবারই এসেছে। যেমন, ‘ইসম’ শব্দটি এসেছে 19 বার, এর অপরিহার্য্ গুণবাচক শব্দ ‘ওয়াহেদ’(একক), এই শব্দটিও এসেছে 19 বার। আল্লাহ শব্দটি 2698 বার এসেছে, এর অপরিহার্য্ গুণবাচক শব্দ হচ্ছে ‘যুল ফাদল’ (দয়ার আধার) কথাটিও এসেছে 2698 বার। ‘রহমান’ কথাটি এসেছে 57 বার, এর স্বাভাবিক পরবর্তী গুণবাচক শব্দ হচ্ছে ‘মাজীদ’(পবিত্র), তাও এসেছে 57 বার। রহীম এসেছে 114 বার, এর সম্মানসূচক পরবর্তী গুণবাচক শব্দ ‘জামেউ’ (একত্রকারী), এটাও এসেছে 114 বার।
আমরা জানি, রহমান হচ্ছে আল্লাহতা‘আলার দুনিয়ার নাম, অর্থাৎ এখানে সবার প্রতি তিনি দয়ালু। আখেরাতে তিনি দয়ালু শুধূ মুমিনদের জন্য, সেখানে যেহেতু সব নেক কাজের বিনিময় দ্বিগুণ, তাই তাঁর আখেরাতের দয়ালু ‘রহীম’ শব্দটি দুনিয়ায় ‘রহমান’ এর দ্বিগুণ অর্থাৎ 114 বার এসেছে।
আরবী ভাষার বর্ণসমূহের নিজস্ব একটা সংখ্যামান আছে। সে হিসেবে ‘বিসমিল্লাহ’ এর আয়াতটিতে ব্যবহৃত 19 হরফের সংখ্যামানের সমষ্টি হচ্ছে 786, ‘বিসমিল্লাহ’ এর আয়াতটিতে একই অক্ষরের পূণরাবৃত্তি বাদ দিলে মোট বর্ণ থাকে 10 টি এবং 19 সংখ্যায় ব্যবহৃত অংক দুটির যোগফল, 1+9=10.
‘বিসমিল্লাহ’ তে পুনরাবৃত্ত অক্ষরগুলোর সংখ্যামান হচ্ছে 406, এখন 786 থেকে 406 বাদ দিলে বাকী থাকে 380, তাও 19 দ্বারা বিভাজ্য।
এই ঊনিশটি বর্ণমালার ছোট বাক্যটি ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ দিয়ে আল্লাহতা‘আলা গোটা কোরআনকে যেন একটি দুশ্চ্ছেদ্য বাঁধনে বেঁধে রেখেছেন।
(চলবে.........)
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন