বিশ্বস্ত ও দায়িত্বশীল সূত্রে প্রাপ্ত খবর
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:৫৫:৪৯ দুপুর
বাড়ির কাছারী ঘরের সম্মুখে বসিয়া আয়েশে মজিয়া পা যুগল মেঝেতে ছাড়াইয়া এক হস্তে মাটিতে ভর দিয়া অপর হস্ত দিয়া বিড়ির সুখ টানে অতিশয় মগ্ন চাচা সলিমউদ্দীন। এই সময় হন্তদন্ত হইয়া ভাতিজা কলিমুদ্দীনের আগমন। সুখ টানে কিঞ্চিত বিঘ্ন ঘটিয়া যাওয়ায় অতিশয় বিরক্তি নিয়া ভাতিজার দিকে অগ্নিদৃষ্টি হাঁকিলেন চাচা সলিমউদ্দীন।
‘কি হে বৎস! এই অসময় কেন আসিলে? আমি কি তোমার পাকনা ধানে মই দিছিলাম? তবে কেন সুখ টানে বিঘ্ন ঘটাইতে আসিলে?’
‘চাচা গত সপ্তদিবস পূর্বে এক আচানক ঘটনা ঘটিয়া গিয়েছিল এ বাংলার আকাশে।’
-ভূমিকা আমার বড়ই অপছন্দ। যাহা ঘটিয়াছে সোজা সাপ্টা খোলাসা করিয়া বলিয়া ফেল। বেশি কথা বলা দিন দিন এ জাতির অতিশয় খারাপ স্বভাবে পরিণত হইয়া যাইতেছে । এ জন্যই এ জাতির উন্নতিতে এত বিলম্ব ঘটিতেছে। কাজের চাইতে কথা বেশি, তেল মাখে দিবানিশি। এ জাতির ভবিষ্যত নিয়ে আমি অতিশয় উদ্বিগ্ন।
-চাচা আমিতো সংক্ষেপেই বলিতে চাহিয়াছিলাম। আপনিইতো খামোখা বেশি বকিয়া যাইতেছেন।
-খামোশ! জ্ঞানী ব্যক্তির মুখে মুখে তর্ক করা আর একটি খারাপ স্বভাব। এ জাতির ভবিষ্যত সত্যিই অন্ধকার। তোমার আচানক ঘটনা সংক্ষেপে বলিয়া বিদেয় হও বাছা।
-চাচা বিশ্বস্ত ও দায়িত্বশীল সূত্রে একটি খবর প্রাপ্ত হয়েছি। গত সপ্তদিবস পূর্বে দিবাকর মহাশয় পশ্চিমদিকে উদিত হয়েছিল এবং পূর্ব দিকে অস্তগামী হয়েছিল।
সুখটান শেষ করিয়া চাচা সলিমউদ্দীন ভাতিজা কলিমউদ্দীন এর দিকে উত্তম করিয়া দৃষ্টি হাঁকিলেন। বলিলেন-সন্দেহের অবকাশ নেই তোমার মাথা কিঞ্চিৎ বিগড়িয়েছে। বলি ভরদুপুরে হাঁটাচলা করিওনা। রবিবাবুর প্রখর উত্তাপে তোমার মতিভ্রম ঘটিয়াছে। তাই ভুলভাল বকিতেছ।
-চাচা মোটেই ভুলভাল বকিতেছিনা। ঘটনা ঠিকই ঘটিয়াছিল। তবে এই আচানক ঘটনার রেশ সইতে না পারিয়া এই দেশের তাবত লোকের দৃষ্টি বিভ্রম ও মতিবিভ্রম ঘটিয়াছে। তাই তাহারা পূ্র্বদিককে পশ্চিম এবং পশ্চিমকে পূর্ব ভাবিয়াছিল। সেই হেতু এই মহা আচানক ঘটনা কাহারো দৃষ্টিতে ধরা পড়েনি।
-ও তাই বল, তাই বল। তাইতো বলি সেদিন আপন চক্ষে অবলোকন করিলাম যাদু মিয়া বাসে আগুন দিল। কিন্তু পত্রিকায় পড়িলাম, টিভিতে শুনিলাম যাদু মিয়া নয়, আগুন দিছে কদু মিয়া। এখন বুঝিলাম সেই আচানক ঘটনার রেশ সইতে না পাড়িয়া আমি ভুল ভাল দেখিয়াছি। যাহা দেখিয়াছি তাহা সঠিক নহে, যাহা শুনিয়াছি তাহাই তবে সঠিক।
- চাচা এবার তবে ঠিকই বুঝিয়াছেন। সেদিন এক হাম্বাদিককে দেখিলাম হিন্দু পাড়ায় আগুন দেয়ার জন্য পাড়ার কয়েকজন মাস্তানকে টাকা বিতরণ করিতেছিল। গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আমি সব দেখলুম। পরে সেই হাম্বাদিকের পেপারেই পড়লুম, টিভিতে শুনলুম মাস্তানরা আগুন দেয়নি, এখানে সংখ্যালঘু নির্যাতন ঘটিয়াছে, সাম্প্রদায়িক শক্তি ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে।
সেই তান্ডবে দুটি গাছের শ দুয়েক পাতা ধরণীতে পতিত হইয়াছে, ফুলে ফুলে অলির উপস্থিতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খড়ের গাঁদার আগুনে ভস্মীভূত হয়ে এক হালি ইঁদুর অক্কা পেয়েছে, মাধবদের মুরগী যে হাফডজন ডিম খড়ের গাঁদায় পাডিয়াছিল সেগুলো সিদ্ধ হইয়া গিয়াছে। এ অতিশয় তান্ডবময় ঘটনায় সারা দেশে নিন্দাবাক্যের ঝড় বয়ে গেল। চুশীল সমাজ, মানবাধিকার কমিশন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের সব শক্তি নিন্দা বাক্য ও বিবৃতি নিয়ে তৈরি হয়েই ছিল। ঘটনা ঘটিবার ক্ষণকাল পরই এসব নিন্দা বাক্য ও বিবৃতি আওড়িয়ে আওড়িয়ে তাহাদের চাপার জোর অতিশয় বৃদ্ধি পাইয়াছে। ফটোশপড ছবিতে পত্রিকার পাতা ভরাট হয়ে গিয়েছে। পরে বুঝিলাম-যাহা দেখিয়াছি ভুল দেখিয়াছি, যাহা শুনিয়াছি তাহাই অতিশয় সত্যি।
- তা বটে! তা বটে!! তবে তুমি যে কি একটা অতিশয় বিদঘুটে শব্দ উচ্চারণ করিলে। কি যেন-হাম্বাদিক।
- বিদঘুটে নয়, বিদঘুটে নয়। এরা অতিশয় সত্যবাদী এক প্রাণীর নাম। এ দেশে আচানক ঘটনা যাহাই ঘটিয়া থাকে তাহাই অতিশয় সত্যতার সাথে প্রকাশ করিয়া থাকেন তাহারা। আমরা আমজনতা নিজ চউক্ষে তো আর সত্যি কিছু দেখিনা। যা দেখি সব ভুল ভাল দেখিয়া থাকি। এ হাম্বাদিক মহাশয়রা আমাদের সত্য ঘটনা জন্ডিস রোগে কাবু পত্রিকা ও টিভির মাধ্যমে প্রকাশ করিয়া থাকেন। এইতো সেদিন দেখিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রহাতে নিয়ে একদল জঙ্গি তাড়া করিতেছিল সাধারণ ছাত্রদের। পরে শুনিলাম না তাহারা জঙ্গি নয়, তাহারা বিশ্ববিদ্যালয়কে সন্ত্রাস মুক্ত করার জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছিল। তাহারা যাহাদেরকে দৌড়ানি দিয়েছিল তাহারাই ভয়ংকর জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক শক্তি। শুধু অস্ত্র থাকলে জঙ্গি হয়না। হাম্বাদিকরা যাহাদের জঙ্গি বলিবে তাহারাই আসল জঙ্গি। যাহা আমরা স্বচক্ষে দেখিব তাহা ভুল, হাম্বাদিকদের মাধ্যমে যাহা শুনিতে পাইবো তাহাই সঠিক। জয় হাম্বাদিকতার জয়।
চাচাও সুর ধরে শ্লোগান দেন- জয় হাম্বাদিকতার জয়।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৫৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জয় হাম্বাদিকতার জয়, জয় হাম্বাদিকতার জয়, জয় হাম্বাদিকতার জয়, জয় হাম্বাদিকতার জয়
আস্তে বলুন ভ্রাতা। হাম্বাদিক শুনিতে পাইলে লাল দালানের অন্নের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
বিঃদ্রঃ দুইবার পেস্ট হইয়াছে লিখাটি।
না এখন মাইন্ড করলেও আর রাগ করিনা।
পড়িয়া ব্যাপক মজা পাইলাম।
বাংলাদেশীরা শোনা কথায় বিশ্বাস করে , দেখে নয় ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন