রুখে দাঁড়াও হলুদ সাংবাদিকতা

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৩৫:০৮ দুপুর

শিরিন আক্তার (১৯)। একজন গার্মেন্ট কর্মী। থাকেন যাত্রাবাড়ীর ডেমরায়। স্বামীর সঙ্গে রাগ করে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন নেভানোর আগেই অর্ধদগ্ধ হয়ে যায় মেয়েটির শরীর। প্রতিবেশীরা মহিলার স্বামীকে বুদ্ধি দেয়, ‘হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলবি, শিরিন অবরোধের আগুনে দগ্ধ হয়েছে। তাহলে বিনা খরচে চিকিত্সা পাবি, আবার সরকারের কাছ থেকে সাহায্যও পাবি।’ কিন্তু পরে হাসপাতালে মহিলা ও তার স্বামীর অসংলগ্ন কথাবার্তায় ধরা পড়ে প্রকৃত ঘটনা। ঘটনা দ্রুত ধরা পড়ায় সরকারের নগ্ন ও কট্টর সমর্থক বিডিনিউজ২৪.কম এবং সমকাল যথাসাধ্য চেষ্টা করেও প্রকৃত ঘটনা আর লুকোতে পারেনি। সত্য প্রকাশ হয়ে পড়ে। আগের প্রতিবেদন পরিবর্তন করে নতুন করে ‘চুলার আগুনে দগ্ধকে অবরোধের বলি বানানোর চেষ্টা’—শিরোনামে রিপোর্ট করতে বাধ্য হয় বিডিনিউজ২৪.কম।

http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article708462.bdnews

এ ঘটনা নিয়ে চরম মিথ্যাচার করে হাতেনাতে ধরা পড়ার পর রাতারাতি ভোল পাল্টে সমকালের পরিবর্তিত রিপোর্ট—পুরোটাই সাজানো নাটক।

http://www.nowbd9.com/samakal/2013/12/03/6184.htm

অথচ এ সাজানো ঘটনা নিয়েই অবরোধকারীদের দায়ী করে অনেক আবেগময় মর্মস্পর্শী লিড স্টোরি করে সমকালসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকা। টেলিভিশনের খবরে রিপোর্টার এর কৃত্রিম কান্নার সঙ্গে বিউগলের করুণ সুর বাজিয়ে অবরোধকারীদের ওপর শতভাগ দোষ চাপিয়ে ফলাও করে ঘটনাটি এমনভাবে প্রচার করা হয় যেন ঘটনাস্থলে রিপোর্টার উপস্থিত থেকে চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলেন।

চুলার আগুনে দগ্ধ এ অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে অবরোধের বলি বানানোর হীন প্রচেষ্টা করেছে ইয়েলো নিউজ মেকাররা। এ ঘটনা নিয়ে ইত্তেফাকের নজিরবিহীন হলুদ সাংবাদিকতার রূপটাও একটু দেখুন।

http://www.nowbd6.com/ittefaq/2013/12/03/6342.htm

‘আমার পেটে বাচ্চা আমাকে নামতে দাও পরে আগুন দিও’ শিরোনামে ইত্তেফাকের রিপোর্টটির চুম্বক অংশ। আগুন থেকে বাঁচতে শিরিনার আকুতি ‘ভাই, ভাইরে আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমার পেটে ছয় মাসের বাচ্চা আছে। আমাকে বাস থেকে নামতে দাও। আগুন দিলে পরে দিও।’ সন্তানের জন্য নিজেকে বাঁচাতে হাতজোড় করে পিকেটারদের কাছে এই আকুতি জানিয়েছিলেন গার্মেন্ট কর্মী শিরিনা বেগম। কিন্তু পাষণ্ড পিকেটারদের মন গলেনি এতে। আগুনে ঝলসে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে চিকিত্সাধীন শিরিনা। হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছেন তিনি। নিজের কথা যতটা না ভাবছেন, তার চেয়ে বেশি ভাবছেন অনাগত সন্তানের কথা। বার বার চিকিত্সকের কাছে জিজ্ঞাসা করছেন ভালো আছে তো তার সন্তানটি। শত চেষ্টা সত্ত্বেও চিকিত্সকরা কোনো আশার বাণী শোনাতে পারছেন না শিরিনাকে। গত সোমবার আলট্রাসনোগ্রামসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিত্সকরা জানতে পেরেছেন নিষ্ঠুর আগুনের আঁচ লেগেছে শিরিনার পেটের সন্তানের গায়েও।

হয়তো ভাবছেন, ভিকটিম থেকে মিথ্যা বক্তব্য শুনে ভুল রিপোর্ট করেছে সাংবাদিক। দুঃখিত, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ রিপোর্টটির বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে ওই সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং সে অনুযায়ী চাক্ষুষ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

এটাকে কি আপনি সাংবাদিকতা বলবেন? পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হওয়া ও স্বজন হারানোদের আর্তনাদ, আহাজারি কি এদের চোখে পড়ে না? আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যুর একটি ঘটনাও কেন হাতেনাতে ধরা পড়ছে না? অবরোধের তীব্রতা ঢাকার বাইরেই সবচেয়ে বেশি। কই ঢাকার বাইরে তো সহিংসতার বলি হয়ে কেউ আগুনে পুড়ে মরছে না। আগুনে পোড়ানোর ঘটনাগুলো শুধু ঢাকায়ই ঘটছে, অথচ ঢাকাতেই বিরোধী দলের অবস্থান সবচেয়ে দুর্বল, উপরন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাপট ঢাকায়ই সবচেয়ে বেশি। তাহলে ঢাকায় কারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে, যেখানে মাঠ সরকারের দখলে? আজ ভাবার সময় হয়েছে। পেট্রোল বোমার ধ্বংস ক্ষমতা তো এত নয় যে এত বড় বিহঙ্গ পরিবহনের বাস নিমিষেই দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে দেবে। বিহঙ্গর মালিক পঙ্কজ দেবনাথ কীভাবে দলীয় মনোনয়ন পেল? তবে কি আগে থেকেই বাসে শক্তিশালী বোমা রাখা হয়েছিল? এরপর নিজের গাড়ি পুড়িয়ে অবরোধকারীদের ওপর দোষ চাপিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করলেন? সাংবাদিক নামের হলুদ সাংবাদিক ও নিউজ মেকাররাও কি এসবে জড়িত? ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট ঘিরে এসব সাংবাদিকের সিরিজ প্রতিবেদনও কি সন্দেহ করার জন্য যথেষ্ট নয়? উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে মিল্কি হত্যাকাণ্ড ঘটানো হলেও সেটা ধরা পড়ে গেছে সিসি টিভিতে। আজ মানসচক্ষু উন্মোচন করে প্রতিটি বিবেককে সিসি টিভির ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজের বিবেকের কাছেই জবাব পেয়ে যাবেন সব জিজ্ঞাসার।

অনেক হয়েছে, আর নয়। হলুদ মিডিয়ার সাজানো নাটকে নিউজ মেকারদের ইচ্ছের বলি হচ্ছে অনেক নিরীহ প্রাণ। আজ এসব হলুদ সাংবাদিক আর নিউজ মেকারদের রাস টেনে ধরার সময় হয়েছে। এসব সাংবাদিক নামের নিউজ মেকারদের নষ্টা নারীর সঙ্গে তুলনা করতেও ঘৃণা হয়। এখনই সময় রুখে দাঁড়ানোর। হলুদ সাংবাদিকতাকে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হলে অচিরেই পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে হবে গোটা জাতিকে।

কারণ এসব হলুদ সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য দেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করা, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা, একদলীয় বাকশালকে প্রতিষ্ঠিত করে দেশকে ভারতীয় আগ্রাসনের বলি বানানো।

বিশ্বব্যাংকের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাবিশ্বে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করা লোকের ৬০ ভাগেরই বাস ভারতে। ভারত এমন একটি জাতি যারা টয়লেট থেকে কূটনীতি কোথাও শিষ্টাচার মানে না। এ অশিষ্টাচারী ভারতের কাছে দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করার জন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে দেশ স্বাধীন করেননি।

মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা-গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা আজ হলুদ সাংবাদিকতার কারণে হুমকির সম্মুখীন। সময়ের সাহসী সাংবাদিক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান আজ কারারুদ্ধ। তার অপরাধ কোনো অপশক্তির পরোয়া না করে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার চর্চা শুরু করেছিলেন

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/12/08/227544#.UqQi_Cdp414

হলুদ সাংবাদিকতা ও তথ্য-সন্ত্রাস নিপাত যাক।

বাকস্বাধীনতা মুক্তি পাক। বাংলার সিংহ মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে খুলে দেয়া হোক সব বন্ধ মিডিয়া।


বিষয়: বিবিধ

১৫২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File