সংখ্যালঘু ইস্যু সৃষ্টি করতে মিডিয়া এত তৎপর কেন?
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৮ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:৩২:০৩ সকাল
ঘটনাস্থল বরিশালের চরকাউয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ। ব্যাডমিন্টন খেলায় তর্ক বিতর্ককে কেন্দ্র করে কয়েকজন হিন্দু যুবক পারভেজ নামের একটি মুসলমান ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে জবাই করে হত্যা করে। পরিকল্পিত বলছি। কারণ - সাথে করে তারা ছোরা নিয়েই এসেছিল। ব্যাডমিন্টন খেলার আগেও পারভেজ এর সাথে ঝগড়া হয়েছিল।
বাবা সেলিম গাজী অভিযোগ করেন, ক্রিকেট খেলা নিয়ে কিছুদিন আগে পীযূষ, শান্ত, শ্যামল, ধীমানসহ কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর ছেলের হাতাহাতি হয়েছিল। ওই ঘটনাকে মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার ব্যাডমিন্টন খেলার সময় পরিকল্পিতভাবে পারভেজকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। বাধা দিতে গেলে শামীম গাজী ও জহিরুল ইসলাম নামক আরো দুজনকে কোপানো হয় যাদের অবস্থা আশংকাজনক।
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় হিন্দুপাড়ায় কিছু বাড়িঘর পোড়ানো হয়, তবে কেউ হতাহত হয়নি।
এ ঘটনা নিয়ে প্রথম আলোর রিপোর্ট- ”খেলা নিয়ে খুন, তারপর হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন।”
রিপোর্ট এর শিরোনাম শুনে মনে হয় খেলা নিয়ে খুন করা কোন অপরাধ নয় তবে রক্তপাতহীন অগ্নিকান্ড বিরাট অপরাধ ।
প্রতিবেদনটি শুরু হয়েছে মর্মস্পর্শী আবেগ দিয়ে-পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে গলায় রশি বাঁধা দুটি গরু। ধান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখানে-সেখানে পড়ে আছে গৃহস্থালি নানা সামগ্রী—সব পোড়া। ঘরের আশপাশে থাকা গাছের নারকেলগুলো পর্যন্ত পুড়ে গেছে। ভস্মীভূত ঘরগুলোর নানা জায়গা থেকে (ঘটনার ২৭ ঘণ্টা পর) ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এই চিত্র বরিশালের চর কাউয়ার কালীখোলা গ্রামের পণ্ডিতবাড়ির। এক দিন আগেও যাঁদের বাড়িঘর ছিল, গতকাল শনিবার সেই হিন্দুদের পাওয়া গেল ত্রাণের লাইনে।
সাথে পুড়ে যাওয়া একটি বাড়ির ছবি।
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/75520
/খেলা_নিয়ে_খুন_তারপর_হিন্দুদের_বাড়িঘরে_আগুন
খুবই প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন-
১। জবাই করে পরিকল্পিত বর্বর হত্যাকান্ড বেশি অপরাধ নাকি স্বজন হারানো ক্ষুব্ধ জনতার রক্তপাতহীন অগ্নিকান্ড বেশি অপরাধ ? ( আমি মোটেও অগ্নিকান্ডকে সমর্থন করছিনা। কিন্তু একটু ভাবুন যার সন্তানকে জবাই করা হয়েছে, যে গ্রামের সন্তানকে জবাই করা হয়েছে তাদের ক্ষোভ আর অনুভূতির কথা একটু ভাবুন। আদৌ কি ভালো মন্দ বিবেচনা করার মত অবস্থায় তারা ছিলেন?)
২। ইত্তেফাকসহ কয়েকটি মিডিয়া জবাই এর কথা বললেও প্রথম আলো কেন স্রেফ কুপিয়ে হত্যার কথা বলছে?
৩। নিহত পারভেজ এর লাশের ছবি না দিয়ে পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ির ছবি দেয়ার উদ্দেশ্য কি? দুটি গরু হত্যার নিয়ে মর্মস্পর্শী মায়াকান্না কিন্তু পারভেজ এর নির্মম খুনকে কোন ঘটনাই মনে করা হচ্ছেনা কেন?
৪। ধরুণ পারভেজ নয়, কোন এক গ্রামের হিন্দু ছেলে নিহত হয়েছে অপর এক গ্রামের হিন্দু ছেলের হাতে। সেক্ষেত্রে ও কি অনুরূপ প্রতিক্রিয়া হতোনা? তখন কি মিডিয়া ঘটনা এতটা ফোকাস করতো নাকি এড়িয়ে যেত?
৫। নরসিংদীতে মেয়র লোকমান হত্যার পর আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগ এর নজিরবিহীন তান্ডব, নৈরাজ্য ও রেলগাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় প্রথম আলোর রিপোর্ট ছিল- শোকের শহরে ক্ষোভের আগুন, যা অন্যায়ের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন। তাহলে কি শোকগ্রস্ত হয়ে ক্ষোভ জানানোর অধিকার শুধু আওয়ামীলীগ এর আছে? আর কারো নেই?
৬। সংঘাত উস্কে দিয়ে , বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রাষ্ট্র প্রমাণ করে এসব মিডিয়া কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে?
৭। এদেশে কি সংখ্যাগুরুদের কোন অধিকার থাকতে নেই? ৯০% সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়েও কেন সংখ্যালঘু কর্তৃক নির্যাতিত হতে হবে? এমনকি নির্যাতিত হওয়ার পরও কেন মিডিয়ার হলুদ সাংবাদিকতার কারণে উল্টো দোষী সাব্যস্ত হতে হবে? কেন থানা পুলিশ কর্তৃক সংখ্যাগুরুদের হয়রানির শিকার হতে হবে?
প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে একটু হৃদয় দিয়ে বিবেক দিয়ে চিন্তা করার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন