সহীহ হাদীস ও মাজহাব বিতর্কঃ কিছু প্রাসঙ্গিক বক্তব্য

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ০৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:১৬:২৭ দুপুর

সহীহ হাদীস ও মাজহাব নিয়ে বর্তমানে বেশ জোরেশোরে বিতর্ক হয় ফেসবুকে, ব্লগসহ ভার্চূয়াল জগতে। দুপক্ষ হতেই এ নিয়ে নানা যুক্তি বিশ্লেষণ চলে। তবে বিষয়টি অনেক সময় এমন পর্যায়ে পৌছে যে, সেটা হানাহানি, বিভেদ, বিভ্রান্তি ও দলাদলিতে উপনীত হয়।

এ বিষয়ে আমার বক্তব্য -মাজহাব মানুন আর সহীহ হাদীস মানুন সমস্যা নেই। কিন্তু কোন অবস্থাতেই সীমালঙ্ঘন করা যাবেনা। মনে রাখবেন- মাজহাব সমূহ সংশ্লিষ্ট যুগশ্রেষ্ঠ আলেমরা প্রণয়ন করে যাননি। চার আলেম এর কেউ মাজহাব লিপিবদ্ধ করে যাননি। উনারা মারা যাওয়ার শতশত বৎসর পরে বই আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে যেগুলো কালের বিবর্তনে পরিবর্তনও হয়েছে। সহীহ হাদীস এর মর্যাদা অবশ্যই মাজহাব এর চেয়ে উপরে। কারণ হাদীস রাসূল (সাঃ) এর বাণী।

হানাফী মাজহাবে আছে- সারা বিশ্বে একই দিন ঈদ পালন করা ফরজ।

কিন্তু আমাদের দেশের হানাফী মাজহাব এর একনিষ্ঠ ভক্ত আলেমরাও সেটা মানেননা।

এমনকি সেইসব সম্মানিত আলেমরাও নিজেরা ভুলের উর্ধ্বে নন বলে স্বীকৃতি দিয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন- তোমরা সহীহ হাদীস পেলে সেটাকেই আমার মত বলে জেনে রেখ।

অনেকে আবার যুক্তি দিয়ে বলেন- কোন কোন সহীহ হাদীস অপর সহীহ হাদীস এর সাথে বিরোধপূর্ণ। এটা হতে পারে। স্থান-কাল-পাত্র বলে একটা কথা আছে। রাসূল (সাঃ) হয়তো এমন কোন কথা বলেছিলেন যা তখনকার সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতি ও স্থান কাল পাত্র অনুযায়ী উপযোগী ছিল কিন্তু সেটা সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য নয়।

এখতেলাফপূর্ণ প্রচুর বিষয় আছে যেসব বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ আছে, থাকাটাই স্বাভাবিক। সকলের যুক্তিগ্রাহ্য মতকে সম্মান করুন। যাছাই বাছাই শেষে নিজের বিবেক যেটা বলবে সেটা অনুসরণ করুন। নিয়্যত ও বিবেক পরিষ্কার থাকলে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি থাকলেও আল্লাহ অবশ্যই কবুল করে নিবেন।

এবার কোরআন হাদীস এর রেফারেন্সসহ কিছু আলোচনা করা যাক।

আল্লাহ্‌ বলেন:

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا

“আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল কোন বিষয় ফায়সালা করলে কোন ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোন অধিকার নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করবে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।” (সূরা আহযাবঃ ৩৬)

আল্লাহ্‌ পাক আরো বলেন:

فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ

“তোমরা কোন বিষয়ে মতবিরোধ করলে তার সমাধানে জন্যে আল্লাহ্‌ এবং রাসূলের শরণাপন্ন হবে।”

মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার নির্দেশ দিয়ে আল কোরআনে আল্লাহর ঘোষণা-“তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধর, এবং কখনোও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না [সূরা আলে ইমরান, ১০৩]”

বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে মহানবী (সাঃ) এর বিখ্যাত উক্তি-“

আমি তোমাদের নিকট দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এ দুটোকে আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা গুমরাহ হবে না। সে দুটো হল আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত।”

উপসংহারঃ

মাজহাব মানুন, কোন সমস্যা নেই। সমস্যা তখনই যখন মাজহাব মানতে গিয়ে কোরআন সুন্নাহ এর নির্দেশ এর বরখেলাপ করেন, নিজেরটাকেই শুধু একমাত্র সঠিক ভাববেন ও অন্য সবাই ভ্রান্ত, আক্বীদা খারাপ কিংবা আরো খারাপ বিশেষণ এ বিশেষিত করবেন। কুরআন এ আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার থাকার নির্দেশ দেয়া আছে। মাজহাব ও সহীহ হাদীস নিয়ে আপনি গঠনমূলক তর্ক করতে পারেন কিন্তু যখনই আপনি এটা নিয়ে বিতর্ক ও হানাহানিতে লিপ্ত হবেন তখনই বুঝতে হবে-আপনি সীমা লঙ্ঘন করছেন, ঐক্য বিনষ্ট করছেন, মাজহাব মানতে গিয়ে কুরআনের নির্দেশ লঙ্ঘন করছেন।

সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথ প্রদর্শণ করুন। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৪০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File