সংঘাত উসকে দিচ্ছে মিডিয়া

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ২৭ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:১৮:২১ দুপুর

দেশের আপামর জনসাধারণ যখন একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছে তখন বেশিরভাগ মিডিয়ার চরম অনৈতিক ভূমিকা পরিস্থিতিকে সংঘাতময় করে তুলছে। সোজা কথায় এসব মিডিয়া সরকারকে সমঝোতার পথে নানাভাবে নিরুত্সাহিত করে সংঘাতকে উসকে দিচ্ছে।

এসব দলকানা মিডিয়ার ভূমিকা সর্বদাই বিতর্কিত ছিল। মিডিয়ার দলীয় ভূমিকা থাকতে পারে। সেটার প্রভাব থাকবে সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয় ইত্যাদিতে। কিন্তু আপত্তি সেখানেই যেখানে দলান্ধ হয়ে মিডিয়া মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্ক সৃষ্টির জন্য ইতিবাচক বিষয়কে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে, সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিয়ে অর্ধসত্য তথ্য পরিবেশন করে, সংবাদ বিকৃতি করে, সত্যকে মিথ্যা কিংবা মিথ্যাকে সত্যরূপে তুলে ধরার জন্য গোয়েবলসীয় ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে এসব মিডিয়ার উদ্দেশ্যমূলক, প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত ভূমিকা হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে প্রতিটি সচেতন ও বিবেকবান মানুষকে।



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে স্বভাবসুলভ বিরোধী দলকে অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণের পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের একটি অস্পষ্ট প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। সরকারপ্রধান কে হবেন, সর্বদলীয় বলতে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব দল নাকি প্রধান কয়েকটি দল, নাকি শুধু বিএনপি আর আওয়ামী লীগ, উপদেষ্টা সংখ্যা কত এবং কোন দল থেকে কতজন—এইসব প্রশ্নের কোনো জবাব ছিল না প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে। এরপরও শান্তিপ্রিয় জনগণ কিছুটা আশায় বুক বেঁধেছিল সমঝোতার সম্ভাবনায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা, সরকারের একাধিক মন্ত্রী-এমপির সরকারপ্রধান নিয়ে অহেতুক বাগাড়ম্বরে প্রমাণ হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রীর অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন প্রস্তাবটি ছিল স্রেফ আইওয়াশ, সেখানে আন্তরিকতার লেশমাত্র ছিল না। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে বেগম জিয়াকে প্রধান অতিথি করে আয়োজিত পেশাজীবী সম্মেলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আবার অনুমতি প্রদান এটাও প্রমাণ করে, সরকার বেশ ভীত-সন্ত্রস্ত। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের অতি বাগাড়ম্বর ও সমন্বয়হীন বক্তব্যেও এটা প্রমাণিত।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক নিয়ে অসত্য বক্তব্য দিয়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অনৈতিক চরিত্রকেই তুলে ধরেছেন। পরদিন জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যকে অসত্য ও ভিত্তিহীন বলার পাশাপাশি দৃঢ়তার সঙ্গে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, বিএনপি না এলে জাপা নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু লক্ষণীয়, বেশিরভাগ মিডিয়াই এই ইস্যুতে সৈয়দ আশরাফের মিথ্যাচার নিয়ে প্রশ্ন না তুলে এরশাদ সাহেবের অবস্থানকেই বিতর্কিত করতে সচেষ্ট ছিল।

এসব মিডিয়া অতি সম্প্রতি সবচেয়ে অনৈতিক ও নোংরা ভূমিকা পালন করেছে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্কিত করার জন্য সাবেক কিছু জীবিত উপদেষ্টাকে মৃত হিসেবে তুলে ধরে মিথ্যা সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধোঁয়াশাচ্ছন্ন প্রস্তাবের বিপরীতে ২১ অক্টোবর হোটেল ওয়েস্ট ইন-এ সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া দেশ ও জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে চমত্কার গঠনমূলক বক্তব্যের পাশাপাশি নিজ ও পরিবারের ওপর সরকারি প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণা দেন এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে একটি সুস্পষ্ট, সময়োপযোগী ও সর্বজনীন প্রস্তাব তুলে ধরেন যেখানে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের জন্য সমান সুযোগ ছিল। এমনকি সংবিধান সংশোধন না করা ও অনির্বাচিতদের নিয়ে সরকারি দলের গোঁ-ধরার বিষয়টি মাথায় রেখে বেগম জিয়া এটাও বলেছিলেন, প্রয়োজনে তাদেরকে (দুই দলের প্রস্তাবিত দশজন উপদেষ্টা) রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যদের মতো নির্বাচিত করে আনা যেতে পারে। অর্থাত্ সদিচ্ছা থাকলে সংবিধানের ভেতরে থেকেই বেগম জিয়ার প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুযোগ আছে।

বেগম জিয়ার চমত্কার প্রস্তাবের পর দেশের সাধারণ মানুষ অনেক আশায় বুক বেঁধেছিল—আর সংঘাত নয়, এবার সমঝোতা হবে। কিন্তু সংঘাত ও উস্কানিপ্রিয় মিডিয়া বেগম জিয়ার সুন্দর প্রস্তাবকে বিতর্কিত করতে সব ধরনের অপকৌশল প্রয়োগ করে। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের দুই কমন উপদেষ্টা বাদেও উপদেষ্টা সংখ্যা ২০ জন। এই ২০ জনের মধ্যে ৭ জনকেই মৃত দেখিয়ে সংবাদ প্রচার করে বেশ কিছু অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়া। কয়েকজন সাবেক উপদেষ্টার নিমরাজি মনোভাবকেও তাদের অনীহা হিসেবে তুলে ধরে সংবাদ প্রচার করে এসব মিডিয়া। অনুসন্ধানে দেখা গেল—৭ জন নয়, পরলোকে গেছেন মাত্র ২ জন। পরদিন বিডিনিউজ২৪.কম নামের অনলাইন সংবাদমাধ্যম অন্য একটি সংবাদের সঙ্গে ফুটনোট হিসেবে তাদের ভুল স্বীকার করে যা সহজে দৃশ্যমান নয়। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, তারা ভুল করে স্বীকার করেছে। মৃতের মিথ্যা সংবাদটি বেশ হাইলাইটস করা হলো, ভুলের স্বীকৃতি কেন অন্য সংবাদের সঙ্গে ফুটনোট হিসেবে?

মাত্র কয়দিন আগে মিডিয়া জগতে নাস্তিক্যবাদের গুরু ও পচা আলু খ্যাত হলুদ সাংবাদিকতাকে শিল্পে রূপ দেয়া একটি প্রথম সারির পত্রিকার একজন কর্তাস্থানীয় ব্যক্তি যিনি আবার আত্মঘোষিত কবি, সদম্ভে উস্কানি দিয়েছিলেন এই বলে—‘বিরোধীদের সঙ্গে (তার ভাষায় যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সহযোগী) কোনো নির্বাচন নয়, যুদ্ধ হতে পারে।’ সংঘাত, সংঘর্ষ যে এদের একান্ত কাম্য, এই উস্কানিমূলক বক্তব্যেও তা সুস্পষ্ট।

বর্তমানে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে প্রভাবশালী কূটনীতিকদের জোরালো ভূমিকা সমঝোতায় সহায়ক হতে পারে। তবে বহির্বিশ্বের কূটনৈতিক তত্পরতাকেও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ বলে বিতর্কিত করতে সচেষ্ট হলুদ মিডিয়াগুলো। কিছুদিন আগে জাতিসংঘ মহাসচিব ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার সমঝোতার উদ্যোগও মূলত ভেস্তে যায় সরকারের আন্তরিকতার অভাব ও এসব মিডিয়ার উদ্দেশ্যমূলক বিতর্ক সৃষ্টির কারণে।

কোনো দেশের বিরোধমূলক ইস্যুতে জাতিসংঘ ও বহির্বিশ্বের কূটনৈতিক তত্পরতা একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত বিষয়। আজ যখন এ রকম ইতিবাচক কূটনৈতিক তত্পরতা অতীব প্রয়োজন তখন সংঘাতপ্রিয় এসব মিডিয়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটাকে বিদেশি হস্তক্ষেপ বলে বিতর্কিত করতে চাইছে। অথচ ২০০৬-২০০৭ সালে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী ও ভারতীয় হাইকমিশনার বীণা সিক্রি যখন কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে চরম একপেশে ও প্রটোকল বহির্ভূত অনৈতিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, তখন তাদের অনৈতিক ভূমিকাকেই স্বাগত জানিয়েছিল হলুদ সাংবাদিকতা ও তথ্যসন্ত্রাসে লিপ্ত গণমাধ্যমগুলো।



Click this link

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/10/27/222166#.UmynVVNp416

দেশের সাধারণ জনগণের একান্ত চাওয়া একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং এজন্য প্রয়োজন নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা। সদিচ্ছা থাকলে সরকার ও বিরোধী দলের দুই রূপরেখার সমন্বয় করেও সমঝোতার পথ খুঁজে নেয়া সম্ভব। জনগণও সমঝোতা চায়, শান্তি চায়, সংঘাত নয়। জনগণের ভাষা আমাদের মিডিয়া মোঘলরা যত দ্রুত অনুধাবন করতে পারবেন ততই দেশের মঙ্গল। সংঘাতকে উস্কে দিয়ে আখেরে কেউ লাভবান হবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও এর জনগণ।

সংঘাত নয়, সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সরকার গঠনের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিতর্কমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক—এটাই হোক আমাদের সবার কাম্য।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File