শ্রমিকদের ন্যূনতম আট হাজার টাকার বেতন দাবি ও বাস্তবতা

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০২:০৪:১৪ দুপুর

শ্রমিক অসন্তোষ ও বিক্ষোভের মুখে দেশের শতশত গার্মেন্টস শিল্প আজ বন্ধ হওয়ার পথে। বিক্ষোভকারী সবাই কি শ্রমিক। সহজ জবাব না, এরা বেশিরভাগ ভাড়াটে বহিরাগত সন্ত্রাসী। বেশিরভাগ শ্রমিক এসব সহিংসতার বিপক্ষে। কারণ নিজের ভাল পাগলেও বুঝে। কারণ শ্রমিকরা জানে- গার্মেন্টসশিল্প বন্ধ হলে বেতনের অংক নিয়ে নয়, তখন তাঁদের আহাজারি করতে হবে চাকরি হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে।

আজ বামপন্থী রাজনীতিকরা শ্রমিক ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের উস্কানি দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পে নৈরাজ্য চালাচ্ছে।

নষ্ট বামেরা মুখে অনেক মানবতার কথা বলে। কিন্তু আমি আমার এ ক্ষুদ্র জীবনে বামদের দ্বারা মানবতার কোন মংগল হয়েছে এমন কোন উদাহরণ দেখিনি। বর্তমানে গার্মেন্টসশিল্প ধ্বংস করার জন্য এরা শ্রমিক নামের কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসীকে উস্কানি দিচ্ছে। শ্রমিক নেতাদের এত অর্থবিত্তের উৎস কি?

গার্মেন্টস এর আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক। আপত্তিটা আট হাজার টাকায় নয়, আপত্তিটা হচ্ছে ন্যূনতম শব্দটিতে। অর্থাৎ কোন যোগ্যতা ব্যতিরেকেই একজন অদক্ষ শ্রমিককে শুরুতেই আট হাজার টাকা বেতন দিতে হবে।

কোন যোগ্যতা ছাড়াই 15-16 বছরের (বাস্তবে এর চেয়ে কম বয়সী গার্মেন্টসকর্মীও আছে) একজন শ্রমিক আট হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করলো। তাহলে 27-28 বছর বয়সে এসে সে শ্রমিক ওভারটাইম সহ প্রায় 25 হাজার টাকা বেতন পাবে। বিপরীতে এ বয়সে মাস্টার্স পাশ শেষে সকল শিক্ষিত ব্যক্তি কি এ বেতনে চাকরি শুরু করতে পারেন? আমি দেখেছি- এম.এ. পাশ করা মেয়ে স্কুলে 6-7 হাজার টাকা বেতনে চাকরি করছে।

কোন যোগ্যতা ছাড়া গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন আট হাজার টাকা করার দাবি যদি যৌক্তিক হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নেয়া শিক্ষকদের ও অন্যান্য পেশাজীবিদের ন্যূনতম বেতন চল্লিশ হাজার টাকা দাবি করা কি অযৌক্তিক?

গার্মেন্টস কর্মীরা কষ্টকর জীবন যাপন করে -এ নিয়ে দ্বিমত করছিনা। কিন্তু চিন্তা করুন - এদের যদি এ আশ্রয়টুকু না থাকতো তাহলে আরো কতটা অসহায় তাঁরা হতো। আমি নিজে গ্রামে দেখেছি- দরিদ্র এসব ছেলে মেয়েদের আরো চরম করুণ অসহায় অবস্থা যখন গার্মেন্টশিল্প ছিলনা। এছাড়া এক পরিবারে একাধিক ছেলে মেয়ে জব করলে কষ্টটা অনেকাংশে লাঘব হয়। দরুণ একটি দরিদ্র পরিবারেরি তিন সহোদর/সহোদরা পাঁচ হাজার টাকা বেতনে (অভিজ্ঞতার সাথে সাথে বেতন বৃদ্ধি পায়) গার্মেন্টস এ চাকরি করে এবং তাঁদের ঘরে মোট সদস্য ছয় জন। তাহলে মোটামুটি তাঁদের চলে যায়। আবার মুদ্রার বিপরীত পিঠ এর কথা ভাবেন। সমাজে মধ্যবিত্ত/নিম্নমধ্যবিত্ত নামে একটা শ্রেণী আছে যারা মুখ ফুটে নিজেদের কষ্টের কথা জানাতে পারেনা প্রবল আত্মসম্মানবোধ এর কারণে। ধরুণ একটি পরিবার। বাবা অবসরজীবি, মা গৃহিণী, দু কন্যা পড়ুয়া, একমাত্র বড় ছেলে এম.এ. পাশ করে বসে আছে। জব পাচ্ছেনা। আপাতত-দশ-পনের হাজার টাকার একটা চাকরি পেলেও বর্তে যায়। কেমন করে চলছে এদের সংসার -একটু হৃদয় দিয়ে ভাবুন। এদের কষ্ট সে গার্মেন্টসকর্মীদের কষ্টের চেয়ে অনেক অনেক বেশি, তবে সেটা অব্যক্ত। তাঁদের নীরব কান্না আমাদের চোখে পড়েনা। এরা ঘরে কিছু না থাকলে পেটে পাথর বেঁধে থাকবে এরপরও সেটা ব্যক্ত করবেনা। এমন অব্যক্ত যন্ত্রণা আজ বাংলার লাখো লাখো শিক্ষিত পরিবারের ঘরে। এদের কথা বলার কেউ নাই।আজ সময় এসেছে আমাদের এদের কথাও ভাবার, একটু এদের পাশে দাঁড়ানোর।

মূলত শ্রমিকদের জন্য বামদের লোকদেখানো মায়াকান্নার আড়ালে রয়েছে দেশের গার্মেন্টসশিল্পকে ধ্বংস করে ভিনদেশের স্বার্থ রক্ষা করা। প্রিয় শ্রমিক ভায়েরা, বামদের মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস করে দেশের সর্বনাশ ডেকে এনে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারবেননা।



বিষয়: বিবিধ

১৯৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File