প্রতারণার ডিজিটাল রূপ!
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ০২ জুলাই, ২০১৩, ১০:১০:০১ সকাল
অনলাইনে অনেক ধরনের প্রতারণার কথা আমরা জানি। ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, অনলাইনে আয়ের নামে প্রতারণা—এসব হরহামেশাই ঘটছে। তবে আজ আমি অন্যরকম এক প্রতারণার কথা তুলে ধরব। বেশ কিছুদিন ধরে মানুষের ক্যারিয়ার নিয়ে প্রতারণা করে টু পাইস কামাচ্ছে একটি বিশেষ চক্র। প্রলোভনে পড়ে আপনিও হতে পারেন এই প্রতারণার শিকার।
এই চক্র প্রথমেই বিডিজবস ডটকম ও অন্যান্য জনপ্রিয় জবসাইটে খুবই চটকদার ভাষায় বিদেশে চাকরির বিজ্ঞাপন দেয় Tangail International, Monjil Overseas ইত্যাদি নামে। মাত্র দুটি ক্লিক করে আপনি অনলাইনে আবেদনও করে ফেললেন যথারীতি। এর কিছুদিন পরই আপনি ইমেইলে বিদেশি কোম্পানি থেকে অফার লেটার পাবেন এবং এই তথ্য আপনার মুঠোফোনেও খুদে বার্তা দিয়ে জানিয়ে দেয় তথাকথিত সেই বিদেশি কোম্পানির বাংলাদেশী এজেন্ট। অফার লেটারে আপনার যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আকর্ষণীয় বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ থাকে। উল্লেখ্য, এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা শিক্ষিত, চৌকস ও স্মার্ট তরুণ-তরুণী। এদের সঙ্গে গুলশান-বনানী এলাকার কিছু প্রাইভেট মেডিকেল ক্লিনিক ও কিছু বিদেশিরও যোগসাজশ থাকে।
অফার লেটারে একটি মেডিকেল ক্লিনিকের নাম দেয়া থাকে এবং খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে (২/৩ দিন) মেডিকেল চেকআপ করে মেডিকেল রিপোর্ট ও পাসপোর্টসহ আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাগজপত্র বাংলাদেশী এজেন্টের কাছে প্রেরণের শর্ত থাকে। উল্লেখ্য, মেডিকেল টেস্ট বাবত যে টাকা নেয়া হয় তার একটি অংশ পায় ওই বাংলাদেশী এজেন্ট। সময় স্বল্পতার কারণে অফার লেটারে উল্লিখিত বাংলাদেশী এজেন্টের ঠিকানা সঠিক কিনা সেটাও আপনার পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হবে না। কারণ তারা ঢাকার বাইরের কোনো শহরের (সেটা হতে পারে সিলেট বা চট্টগ্রাম) একটি ঠিকানা দেয় বটে। তবে সেটি অবশ্যই ভুয়া ঠিকানা।
বিদেশে মোটা অংকের বেতন ও আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধার কথায় প্রলুব্ধ হয়ে ঠিকানা যাচাই করা বা তাদের সন্দেহ করার কথা তখন কারোই মাথায় আসে না। এছাড়া বাংলাদেশী এজেন্ট নামের সেই প্রতারক চক্রের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে (অফার লেটারে মোবাইল নাম্বার উল্লেখ থাকে) অনেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিও তাদের চৌকস উপস্থাপনার কারণে প্রতারিত হওয়ার পথেই এগিয়ে যায়। ফলাফল যা হওয়ার তাই। অনেকে আগ বাড়িয়ে বর্তমান কর্মস্থলে ইস্তফাও দিয়ে বসেন। কোনো পেশাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইন্টারভিউয়ের আগে অফার লেটার প্রদান রীতিমত অসম্ভব—এ বিষয়টি একবারও চিন্তা করার প্রয়োজন তখন মাথায় আসে না।
বেশকিছু টাকা-পয়সা খরচ করে নির্দিষ্ট ক্লিনিক থেকে মেডিকেল চেকআপ করে রিপোর্ট ও পাসপোর্টসহ বাংলাদেশী এজেন্টের কাছে পাঠানোর পর শুরু হয় প্রতারণার ২য় ধাপ। ফাইল প্রসেসিং/প্রফেশনাল ফি হিসেবে তখন আদায় করা হয় বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা। সাধারণত এরপরই লাপাত্তা হয়ে যায় এই প্রতারক চক্র। মোবাইল নাম্বারগুলোও বন্ধ করে দেয়, নতুন নাম্বার থেকে শুরু হয় নতুন শিকারের পরিকল্পনা। অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য শিকারের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেলে রাজধানীর কোনো অভিজাত হোটেলে একজন বিদেশিকে নিয়ে পাতানো ইন্টারভিউয়ের আয়োজনও করা হয়। অনুসন্ধানে এই প্রতারক চক্র Tangail International এবং Monjil Overseas-এর যথাক্রমে ০১৬৮১৮৯০২০৭, ০১৯৮৫৮৬৩৮৪৩ এবং ০১৯৮৬২৩৬২০১—এই তিনটি মোবাইল নাম্বারের সন্ধান পাওয়া যায় যার সবক’টিই এখন বন্ধ।
ডিজিটাল বাংলাদেশে এভাবেই চলছে ডিজিটাল জোচ্চুরি, ডিজিটাল প্রতারণা। কিন্তু দেখার কেউ নেই। তবে সচেতন না হলে, একটু চোখ-কান খোলা না রাখলে আপনিও হতে পারেন এর নির্মম শিকার।
আজকের আমার দেশ এ প্রকাশিত মূল লেখাটির লিংক এখানে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন