মেঘ বৃষ্টি বর্ষার যত গান .......

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৭ জুন, ২০১৩, ০১:২১:৫২ দুপুর



বাংলা গানে বার বার ফিরে আসে মেঘ বৃষ্টি বর্ষা। আষাড় শ্রাবণের রিমঝিম বৃষ্টি কখনো কখনো মনকে উদাস করে দেয়, বিরহকাতর মনটা হাহাকার করে উঠে, আবার কখনো কখনো এই বৃষ্টিই শরীরে ও মনে রোমান্স এর ঢেউ জাগিয়ে তোলে। তাইতো রোমান্টিক ও বিরহের গানের বিরাট অংশ জুড়েই শুধু বৃষ্টিবিলাস, বর্ষার বন্দনা।

উপমহাদেশের বিখ্যাত কন্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রোমান্স ও বিরহের সমন্বয়ে যে অসাধারণ সুর সৃষ্টি করেছেন তাঁর "এই মেঘলা দিনে একলা...." গানে তা যেকোন রুচিশীল শ্রোতাকেই বিমোহিত করে। গানটির পুরো লিরিকটিই তুলে দেয়ার লোভ সামলাতে পারছিনা।

এই মেঘলা দিনে একলা

ঘরে থাকেনাতো মন

কাছে যাবো তবে পাবো

ওগো তোমার নিমন্ত্রণ ।

যুঁথি বলে ওই হাওয়া

করে শুধু আসা যাওয়া ।।

হায় হায়রে দিন যায়রে

ভরে আঁধারে ভুবন

কাছে যাবো তবে পাবো

ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

শুধু ঝরে ঝর ঝর

আজ বারি সারাদিন

আজ যেন মেঘে মেঘে

হলো মন যে উদাসীন ।।

আজ আমি ক্ষণে ক্ষণে

কি যে ভাবি আনমনে ।।

তুমি আসবে ওগো হাসবে

কবে হবে সে মিলন

কাছে যাবো তবে পাবো

ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

এই মেঘলা দিনে একলা

ঘরে থাকেনাতো মন

কাছে যাবো তবে পাবো

ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।

আমাদের জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম অসাধারণ মমতা দিয়ে লিখেছেন -শাওন রাতে যদি -গানটি। বৃষ্টির দিনে মান্না দে'র কন্ঠে গানটি শুনলে মনের অজান্তেই ভিজে উঠবে আপনার দুটি চোখ।

শাওন রাতে যদি স্নরণে আসে মোরে

বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে

ভুলিও স্মুতি মম, নিশীথ স্বপন সম

আচলের গাথামালা ফেলিও পথ পরে ।।

ঝুরিবে পুবালি বায় গহন দূর বনে

রহিবে চাহি তুমি একেলা বাতায়নে

বিরহি কুহু কেকা গাহিবে নীপশাখে

যমুনা নদী পাড়ে শুনিবে কে যেন ডাকে

বিজলী দ্বীপশিখা খুজিবে তোমায় প্রিয়া

দুহাতে ঢেকো আখি যদি গো জলে ভরে ।।

তবে সংগীতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিবিলাস সম্ভবত কবিগুরু রবি ঠাকুরের।

কালজয়ী সব গানে তিনি তুলে ধরেছেন বৃষ্টির সৌন্দর্য, বর্ষায় বিরহকাতর ও রোমান্সপ্রিয় মানব মানবীর ভাবনা।


এমন দিনে তারে বলা যায়

এমন ঘনঘোর বরিষায় -

এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে

তপনহীন ঘন তমসায়।।

সে কথা শুনিবে না কেহ আর,

নিভৃত নির্জন চারি ধার।

দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,

আকাশে জল ঝরে অনিবার -

জগতে কেহ যেন নাহি আর।।

সমাজ সংসার মিছে সব,

মিছে এ জীবনের কলরব।

কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে

হৃদয় দিয়ে হৃদি-অনুভব -

আঁধারে মিশে গেছে আর সব।।

বলিতে ব্যথিবে না নিজ কান,

চমকি উঠিবে না নিজ প্রাণ।

সে কথা আঁখিনীরে মিশিয়া যাবে ধীরে,

বাদলবায়ে তার অবসান -

সে কথা ছেয়ে দিবে দুটি প্রাণ।।

তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার

নামাতে পারি যদি মনোভার!

শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে

দু কথা বলি যদি কাছে তার

তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।।

আছে তো তার পরে বারো মাস -

উঠিবে কত কথা, কত হাস।

আসিবে কত লোক, কত-না দুখশোক,

সে কথা কোনখানে পাবে নাশ -

জগৎ চলে যাবে বারো মাস।।

ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,

বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।

যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে

সে কথা আজি যেন বলা যায়

এমন ঘনঘোর বরিষায়।।

- আজি ঝরঝর মুখরও বাদল দিনে, জানিনে জানিনে..

-বাদল দিনে প্রথম কদম ফুল

-পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে...


রবিঠাকুরের এই গানগুলি আজো বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে আনন্দ, রোমান্স ও বিরহের উৎস হিসেবে সুর তোলে।



ব্যান্ড এর গানেও আষাঢ় শ্রাবণ সুর তুলেছে সমান মাত্রায়। তবে সেই ৯০ এর দশকে ডিফারেন্ট টাচ ব্যান্ডের -শ্রাবণের মেঘগুলো -গানটি দিয়ে অসম্ভব বাজিমাত করে, ব্যান্ডের জগতে জনপ্রিয়তায় এই গানটিকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে খুব কম গানই। ব্যান্ডের গান সাধারণত কালজয়ী হয়না। তবে এই থিওরিকে ভুল প্রমাণ করে গানটি আজো সমান জনপ্রিয়, আজো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এর নবীন বরণ কিংবা বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে এই গানটি গাওয়ার অনুরোধ পান আমন্ত্রিত শিল্পীরা, আজো হাজারো তরুণ এই গানের সুরে উন্মাতাল হয়, উদাস হয়, সুর মেলায়।

শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে

অঝোরে নামবে বুঝি শ্রাবনে ঝড়ায়ে ..

আজ কেন মন উদাসী হয়ে

দূর অজানায় চায় হারাতে (২)

শ্রাবনের মেঘ – - – - – - – - – শ্রাবনে ঝড়ায়ে ..

কবিতার বই সবে খুলেছি

হিমেল হাওয়ায় মন ভিজেছে

জানালার পাশে চাপা মাধবী

বাগান বিলাসী হেনা দুলেছে ।।

আজ কেন মন – - – - – - – চায় হারাতে ।।

মেঘেদের যুদ্ধ শুনেছি

সিক্ত আকাশ কেঁদে চলেছে

থেমেছে হাঁসের জল কেলী

পথিকের পায়ে হাঁটা থেমেছে…।।

আজ কেন মন – - – - – - – চায় হারাত।

হৈমন্তী শুক্লা দরদী গলায় গেয়েছেন বিরহকাতর প্রেয়সীর মনের হাহাকার ।

ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুয়ো না,

আমার এতো সাধের কান্নার দাগ ধুয়ো না,

সে যেন এসে দেখে,

পথ চেয়ে তার কেমন করে কেঁদেছি ।।

দোহাই গানের বীণা,

মনকে ভরে তুলো না, ।।

দেখেই তাকে ব্যথার এ গান ভুলো না,

সে যেন এসে শোনে,

তার বিরহে কী সুর আমি সেধেছি ।।

ক্লান্ত প্রদীপ ওগো,

হঠাৎ আলোয় ফুটো না,।।

দেখেই তাকে উজল হয়ে উঠো না,

সে যেন এসে জানে,

কোন আঁধারে এ রাত আমি বেঁধেছি ।।

মেঘলা দিনের চমৎকার আরো কয়টি গান---

অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে যেন এক মুঠো রোদ্দুর আমার দুচোখ ভরে তুমি এলে- রুনা লায়লা (অসাধারণ একটি গান)।

আকাশ এত মেঘলা যেওনাকো একলা, এখনি নামবে অন্ধকার– সতিনাথ।

আষাঢ় শ্রাবন মানেনাতো মন ঝরঝর – লতা মুঙ্গেশকর।

এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না – রুনা লায়লা।

মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর - শ্রীকান্ত।

শেষ করছি শ্রীকান্তের "বৃষ্টি তোমাকে দিলাম" গানটির সম্পূর্ণ লিরিক দিয়ে।

আমার সারাটি দিন, মেঘলা আকাশ

বৃষ্টি তোমাকে দিলাম ।।

শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম

আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ

বৃষ্টি তোমাকে দিলাম

হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি

বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি

হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি

বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি

তাতেই কাছে ডেকে

মনের আঙিনা থেকে

বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরিয়ে দিলাম

আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম

তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা

এ আমার স্বপ্ন সুখের ভাবনা

চেয়েছি পেতে যাকে চাইনা হারাতে তাকে

বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম

আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম

শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম

আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম।



বিষয়: সাহিত্য

৫৯৭৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

374440
১২ জুলাই ২০১৬ সকাল ১১:১৩
সিকদারর লিখেছেন : বর্ষায় সিক্ত পোস্টে মন্তব্যর খরা !!!!
আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। খুব সুন্দর এবং ভিন্নধর্মী পোস্ট বিশেষ করে টুডে ব্লগে । এই জাতিয় পোস্ট এই ব্লগে কম পাওয়া যায় ।
১২ জুলাই ২০১৬ সকাল ১১:৫৬
310635
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : মন্তব্যের খরা নয় মুহতারাম। এ পোস্ট বেশ পুরনো এবং বেশ অনেকগুলি মন্তব্য ছিল। টুডে ব্লগের টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে পুরনো মন্তব্যগুলি মুছে গিয়েছে।
১২ জুলাই ২০১৬ সকাল ১১:৫৭
310636
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। মন্তব্যের খরা নয় মুহতারাম। এ পোস্ট বেশ পুরনো এবং বেশ অনেকগুলি মন্তব্য ছিল। টুডে ব্লগের টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে পুরনো মন্তব্যগুলি মুছে গিয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File