নতুন দিনের প্রহর গুনছি
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১০ জুন, ২০১৩, ১০:৩২:১৩ সকাল
বাকশাল দেখিনি। তবে ছোটবেলায় বাবার কাছে রক্ষীবাহিনীর অনেক নির্মমতার গল্প শুনেছি। আমার বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। এরপর একটু বড় হওয়ার পর প্রবীণ শিক্ষিত লোকদের কাছ থেকেও জেনেছি রক্ষীবাহিনীর নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা ও নারী নির্যাতনের গা শিউড়ে ওঠা ঘটনা।
অবাক হয়ে ভাবতাম, এসব কি আসলেই সত্যি ঘটনা? সত্যি যদি হয়ে থাকে তাহলে এরা কি আদৌ মানুষ ছিল? একদিন একটি মাসিক পত্রিকায় দেখলাম বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা। খটকা লাগল, আমি তো মুসলমান, ইসলাম আমার ধর্ম, সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের প্রভু, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রেরিত রাসুল। যারা অমুসলিম, তাদেরও নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস আছে। তাহলে একজন ধার্মিক ব্যক্তি কীভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হয়? নাস্তিক ছাড়া কি কেউ আদৌ ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে? একদিন স্থানীয় বাজারে একটি মিছিল হচ্ছিল। মিছিলের স্লোগান শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। তাদের মিছিল থেকে নানা কটু ভাষায় ধর্মকে অপমানিত করা হয়। অবাক হয়ে ভাবতাম, ধর্মের সঙ্গে এদের এত বিরোধ কেন? সব ধর্মই তো ন্যায় ও সততার কথা বলে, অন্যায় অপরাধকে নিরুত্সাহিত করে, পাপ থেকে মানুষকে দূরে রাখে। তাদের কর্মকাণ্ডেই আবার এর জবাব খুঁজতাম। ওই মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় সবাই ছিল সমাজের নষ্ট ও দুষ্ট চরিত্রের লোক। এলাকার বখাটে ছেলের দল ও সমাজের মদ্যপ, নারীলোভী, হিংস্র ও সন্ত্রাসী লোকদের আস্তানা ছিল ধর্মনিরপেক্ষ দলের অফিস। বুঝলাম, এরা শুধু ধর্মের নয়, সমাজ এবং রাষ্ট্রেরও প্রভূত ক্ষতিসাধন করছে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের অনেক অপকর্ম প্রত্যক্ষ করতে থাকি। একদিন কলেজে দেখলাম, ছাত্রলীগের ছেলেরা জোর করে মেয়েদের ট্রাকে তুলছে মিছিল করার জন্য। ভীত সন্ত্রস্ত মেয়েদের তারা চড়-থাপ্পড় মারছে ও নানাভাবে লাঞ্ছিত করছে। মেয়েদের কান্নাকাটি, চিত্কার, হৈচৈ—সে এক বিভীষিকাময় ব্যাপার! নিজেকে কখনও রাজনীতিতে জড়াইনি। তবে দেখতাম আমাদের মতো সাধারণ ছাত্রদের ওপর কথিত ছাত্র সংগঠনগুলো নানা নির্যাতন চালাত। এরই মধ্যে চলে এলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের নির্বাচন। যারা প্রতিনিয়ত এদেশের ধার্মিক লোকদের ধর্মব্যবসায়ী আখ্যা দিত সেই ধর্মনিরপেক্ষবাদীরাই নির্বাচনের আগে ধর্মকে অপব্যবহার করল হীন উদ্দেশ্যে। মাথায় পট্টি আর হাতে তসবীহ এর পাশাপাশি স্লোগান তোলা হলো—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, নৌকার মালিক তুই আল্লাহ।’ কপটতার কী শৈল্পিক রূপ! অতীত কৃতকর্মের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হলো। বিভ্রান্ত হলো জনমত। কিছুটা জনমত আর কিছুটা প্রশাসনিক কারচুপির মারপ্যাঁচে ক্ষমতাসীন হয়েই আবার স্বরূপে আবির্ভূত হয় তত্কালীন আওয়ামী লীগ সরকার। শপথ নেয়ার পরেই মাথার পট্টি খসে পড়ে, হাতের তসবীহ উধাও হয়ে যায়। ভিন্নমত দমন, চরম দলীয়করণ ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্ম অবমাননার পাশাপাশি সীমাহীন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যে দেশ সয়লাব হয়ে যায়। হাজারী, শামীম ওসমান, হাজী সেলিম, ইকবালসহ অগণিত গডফাদারের উদ্ভব ঘটে। ২০০১-এর নির্বাচনে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে পুনরায় গর্জে ওঠে জনতা। বেগম জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছিল। তবে হলুদ সাংবাদিকতা ও তথ্যসন্ত্রাস দমনে বিএনপি চরমভাবে ব্যর্থ হয়। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নেয়। ক্ষমতার শেষদিকে নজিরবিহীন সন্ত্রাস নৈরাজ্যে মেতে উঠে তখনকার বিরোধী আর বর্তমানের সরকারি দল। তথ্যসন্ত্রাসকে পুঁজি করে জাতির ঘাড়ে চেপে বসে কুখ্যাত ওয়ান-ইলেভেন সরকার। এসেই তারা এদেশের ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করার জন্য ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। বিএনপি নেতাকর্মীদের একের পর এক বায়বীয় অভিযোগে দুর্নীতি মামলায় ফাঁসানোর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে দলটিকে ভাঙার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা ছিল। পাতানো নির্বাচনে বিএনপিকে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। ফলাফল—ষড়যন্ত্র সফল এবং তিন-চতুর্থাংশ আসনে আওয়ামী লীগের জয়। জনগণের মাঝে তবু ক্ষীণ আশা ছিল, অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনায় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখবে। হ্যাঁ, দক্ষতা তারা রেখেছে বটে! ক্ষমতারোহণের অল্পকিছুদিনের মধ্যে খুবই দক্ষভাবে বিডিআরকে ধ্বংস করে। কুইকরেন্টালের মাধ্যমে কুইক দুর্নীতির পথ প্রশস্ত হলো। শেয়ারবাজার থেকে লক্ষ-কোটি টাকা লুট করে সর্বস্বান্ত করা হলো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। দুর্নীতির মহোত্সব চলতে থাকে। পদ্মা সেতু ও অপরাপর বড় বড় দুর্নীতির কারণে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও কলঙ্কিত হয় বাংলাদেশ। হলমার্ক ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, টাকার বস্তাসহ মন্ত্রীর ধরা পড়াসহ নজিরবিহীন সব দুর্নীতির ঘটনা ঘটে চলছে অব্যাহত গতিতে। অপরদিকে চলছে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বেপরোয়া সন্ত্রাস, ধর্ষণ, খুন, চাঁদাবাজি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমেও সঙ্ঘটিত হচ্ছে খুন-গুমের মতো নারকীয় ঘটনা। বিএনপির সিনিয়র নেতা এম ইলিয়াস আলী বছরাধিককাল আগে গুম হলেও তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে আজও জানা যায়নি। নগ্ন ও নোংরা দলীয়করণের কারণে নির্যাতিত নিপীড়তের শেষ আশ্রয়স্থল আদালতে আজ বিচারের বাণী কাঁদে নীরবে নিভৃতে। এরই মধ্যে প্রতিবাদী জনতার ওপর কয়েকদফা গণহত্যা চালানো হয়েছে। আর সরকারের এইসব কর্মকাণ্ডের নির্লজ্জ সমর্থন করে যাচ্ছে হলুদ মিডিয়াগুলো।
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। আজ আমাদের বাকস্বাধীনতা নেই, আছে পবিত্র ইসলামকে অবমাননার স্বাধীনতা। গণহত্যার খবর এড়িয়ে হলুদ সাংবাদিকরা প্রচার করেছে কথিত বৃক্ষনিধনের কাহিনী। প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের নারকীয় তাণ্ডব এইসব মিডিয়ার দৃষ্টি এড়িয়ে যায় কিন্তু বিরোধী জোটের কাল্পনিক তাণ্ডবের কথা বেশ জোরালো গলায় প্রচার করছে গোয়েবলসীয় নীতি অনুসরণ করে। হলুদ সাংবাদিকতার মুখোশ উন্মোচন করে সত্য প্রকাশে যখন আপসহীন ভূমিকা রেখে যাচ্ছে আমার দেশ তখন বাকশালীদের চক্ষুশূল হলেন জনপ্রিয় এ পত্রিকাটি। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হলো আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে, আমার দেশ-এর প্রেসে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হলো। আমার দেশ-এর অপরাধ কয়েক ডজন হলুদ পত্রিকার ভিড়ে একটিমাত্র পত্রিকা সত্য প্রকাশের মাধ্যমে বাকশালের মুখোশ উন্মোচন করেছে, নষ্ট নাস্তিক ব্লগারদের অপকর্ম তথ্যপ্রমাণসহ তুলে ধরেছে। একদিকে রুচিশীল ব্লগারদের প্লাটফর্ম জনপ্রিয় সোনার বাংলাদেশ ব্লগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে নষ্ট নাস্তিকদের নোংরা লেখাসমৃদ্ধ ব্লগসমূহ বহাল তবিয়তে নোংরামি ছড়াচ্ছে। এদিকে বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদের জন্য সারাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দেয়া হয় সেই কালো রাতে, যেদিন রাতের অন্ধকারে মতিঝিলের খোলা আকাশের নিচে নিরস্ত্র ঘুমন্ত জনতার ওপর চালানো হয় ন্যক্কারজনক গণহত্যা। গণমাধ্যমের গলা টিপে ফ্যাসিস্ট আচরণের মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করতে চাচ্ছে, চুরি করা অপরাধ নয়, চুরির সংবাদ প্রকাশ করাই অপরাধ। আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি বন্ধ করেও কি সরকার গণহত্যার ঘটনা লুকাতে পেরেছে? আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন, আল জাজিরা ও ইকোনমিস্ট এ তথ্যপ্রমাণসহ মতিঝিলের গণহত্যার ঘটনা প্রচারের পাশাপাশি উঠে এসেছে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার নামে ইয়েলো জার্নালিজমের নোংরা চিত্র। দেশের মানুষ আজ মুক্তির প্রহর গুনছে। নতুন দিনের অপেক্ষায় আজ দেশের মুক্তিকামী জনতা। তাঁরা স্বপ্ন দেখছে নতুন সূর্যোদয়ের। বাকশালী ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের সৃষ্ট কালো অন্ধকার দূরীভূত হয়ে নতুন সূর্য উঠবেই ইনশাল্লাহ। সেই নতুন সূর্যকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষমাণ দেশের কোটি কোটি মুক্তিকামী মানুষ।
- লেখাটি আজকের দৈনিক আমার দেশ এ প্রকাশিত হয়েছে।
Click this link
বিষয়: রাজনীতি
১৬৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন