চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিঃ এবার শিরোপা কার?

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ০৮ জুন, ২০১৩, ১১:০১:২০ সকাল

৬ই জুন, ২০১৩ ইং কার্ডিফ এর সোফিয়া গার্ডেনে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের মাধ্যমে মাঠে গড়িয়েছে টুর্নামেন্ট এর সপ্তম আসর। খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ নেই। এরপরও আগ্রহের কমতি নেই এই দেশের লাখো ক্রিকেটপ্রেমীর । তাঁদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু উপমহাদেশের দুই ক্রিকেট পরাশক্তি - ভারত আর পাকিস্তান। কার হাতে উঠছে এবারের শিরোপা- এই নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আর ভবিষ্যতবাণী চলছে ক্রিকেটবোদ্ধাদের মধ্যে।

পেছন ফিরে দেখাঃ

আইসিসি এর সাবেক প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া ছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্বপ্নদ্রষ্টা। ১৯৯৮ সালে মিনি ওয়ার্ল্ড কাপ নাম দিয়ে নক-আউট ফরম্যাট এ প্রথম টুর্নামেন্ট শুরু হয়। সেই টুর্নামেন্ট এর আয়োজক হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। তবে সেবার ও বাংলাদেশ স্রেফ দর্শক হয়েই ছিল। ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর মাধ্যমে প্রথম শিরোপা ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে। ২০০০-০১ এ কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আসরে বাংলাদেশ এবং কেনিয়া অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে প্রথমবারের মত। সেই আসরের ফাইনালে ক্রিস কেয়ার্নস এর সেঞ্চুরীর সুবাদে বিস্ময়করভাবে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে নিউজিল্যান্ড। ২০০২-০৩ এ টুর্নামেন্ট এর তৃতীয় আসর বসে শ্রীলংকায়। ঝড়োবৃষ্টিতে ফাইনাল ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় ভারত ও শ্রীলংকা যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ট্রফি ভাগ করে নিয়েছিল সেবার। ২০০৪ এ স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ফাইনালে পরাজিত করে ৪র্থ আসরের শিরোপা ঘরে তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৬-০৭ এবং ২০০৯-১০ এ যথাক্রমে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত শেষ দুটি আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া।

এক নজরে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিঃ

মৌসুম - আয়োজক- অংশগ্রহণকারী- চ্যাম্পিয়ন - রানার্স আপ

দেশের সংখ্যা

১৯৯৮-৯৯- বাংলাদেশ - ৯- দক্ষিণ আফ্রিকা -ওয়েস্ট ইন্ডিজ

২০০০-০১ -কেনিয়া - ১১ - নিউজিল্যান্ড- ভারত

২০০২-০৩ - শ্রীলংকা - ১২- ভারত/শ্রীলংকা যুগ্মভাবে -

২০০৪ ইংল্যান্ড -১২ - ওয়েস্ট ইন্ডিজ -ইংল্যান্ড

২০০৬-০৭ ভারত - ১০ - অস্ট্রেলিয়া -ওয়েস্ট ইন্ডিজ

২০০৯-১০ দক্ষিণ আফ্রিকা -১০- অস্ট্রেলিয়া -নিউজিল্যান্ড

২০১৩ ইংল্যান্ড -৮- ? ?

এবার ট্রফি কার হাতেঃ

গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান ওডিআই র‌্যাঙ্কিং তিন হলেও অনেকেই এগিয়ে রাখছেন তাদের। শেন ওয়াটসন এর মত অলরাউন্ডার, ডেভিড ওয়ার্নার এর মত হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান আর একঝাঁক ম্যাচ উইনার যে দলে আছে তাদেরকে এগিয়ে রাখতেই হয়। স্বাগতিক হিসেবে ইংল্যান্ড এর সম্ভাবনার কথাও বেশ জোর গলায় জানান দিচ্ছেন অনেকে। চতূর্থ আসরের আয়োজক হয়েও শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি সেবার ইংল্যান্ড, রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এবার দলে রয়েছেন তারকা ব্যাটসম্যান এলিস্টার কুক, ইয়ন মরগ্যান এর পাশাপাশি জেমস আন্ডারসন ও রবি বোপারার মত বোলার এবং টিম ব্রিসনান এর মত অলরাউন্ডার। এরা ঠিকমত জ্বলে ঊঠতে পারলে এবার ইংল্যান্ড এর বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। আর র‌্যাঙ্কিং এর প্রথম দল হিসেবে ভারতেরও রয়েছে জোরালো সম্ভাবনা। বছরের শুরুতে নিজেদের মাটিতে ইংল্যান্ড এর বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ জয় করার পর শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে ভারতীয় দলের মনোবল ও এখন বেশ তুঙ্গে। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন একঝাঁক ব্যাটসম্যান সমৃদ্ধ দলটি ঘরের মাঠের নৈপূণ্য এর ধারাবাহিকতা যদি ইংল্যান্ডে ও বজায় রাখে, তবে শিরোপার দৌড়ে তাদের আটকিয়ে রাখাটা বেশ কঠিনই হবে। প্রথম ম্যাচে ইতিমধ্যে দাপুটে জয় দিয়ে তাঁদের সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছে।



চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপাটি এখনো অধরাই রইল পাকিস্তানের কাছে। পাকিস্তান বরাবরের মতই আনপ্রেডিক্টেবল। তবে শেষ চারটি ওডিআই সিরিজের তিনটিতেই জয় পেয়েছে তারা। বছরের শুরুতেই ভারতের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জিতার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে ৩-২ এ সিরিজ হার। সম্প্রতি আবার স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড এর বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ জয় করে পাকিস্তান মোটামুটি উজ্জীবিত। দলটির রয়েছে শক্তিশালী বোলিং অ্যাটাক। তবে ব্যাটিং ও ফিল্ডিং দূর্বলতার কারণে পাকিস্তানকে ভুগতে হবে। প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ২ উইকেট এর পরাজয় এই আশংকাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। তবে দলটি পাকিস্তান, অলওয়েজ আনপ্রেডিক্টেবল! সবমিলিয়ে মিসবাউল হক এর নেতৃত্বাধীন তারুণ্যনির্ভর দলটির শিরোপাপ্রাপ্তির সম্ভাবনা নাকচ করা যায়না। দীর্ঘদিন ফর্মহীনতার কারণে হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান এবং অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি এবার বাদ পড়েছেন পাকিস্তান দল হতে। ক্রিকেটবিশ্ব দারুণ মিস করবে এই সুপারস্টারকে। শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাও ট্রফির অন্যতম দাবিদার। হাশিম আমলা ও এবি ডি ভিলিয়ার্স এর মত ব্যাটিং তারকারা একাই ম্যাচ জয়ের ক্ষমতা রাখেন। তবে তীরে এসে তরী ডুবানোর মত ভুঁড়ি ভুঁড়ি উদাহরণ এই দলের রয়েছে। তাইতো চোকার খ্যাতিটাকেই তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

শ্রীলংকাকে নিয়ে জোর সম্ভাবনার কথা খুব একটা শোনা না গেলেও বাজিমাৎ করতে পারে দলটি। যদিও গত মার্চে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ এর সাথে শ্রীলংকার পারফরম্যান্সকে হতাশাজনকই বলা চলে। তবে ব্যাটিংয়ে তিলকরতেœ দিলশান ও বোলিং এ ল্যাসিথ মালিঙ্গা বেশ ধারাবাহিক ফর্মে আছেন। গেইলনির্ভর ওয়েস্টইন্ডিজকে আন্ডারডগ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে বোলিংয়ে কেমার রোচ, সুনীল নারাইনরা ঠিকমত পারফর্ম করতে পারলে টি২০ বিশ্বকাপ এর মত এই শিরোপাটিও দখলে নিতে পারে তারা। ইতিমধ্যে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে দারুণ উজ্জীবিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাঝে মাঝে চমক দেখালেও নিউজিল্যান্ড এর তেমন একটা সম্ভাবনা নেই বলেই ধারণা মনে হচ্ছে।

তবে এই সব কিছুই আগাম অনুমান মাত্র। খেলাটা ক্রিকেট- চরম অনিশ্চয়তায় মোড়ানো, ঘটতে পারে অনেক নাটকীয় ঘটনা। আগামী ২৩ শে জুন, ২০১৩ ইং এজবাস্টনে অবসান ঘটবে সকল জল্পনা কল্পনার ।

বিষয়: বিবিধ

১০৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File