কিছু আনন্দময় সময়

লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ০১ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৩৪:৫২ রাত



বেশি কিছুদিন আগে আমাদের এক পরিচিত ভাই, যিনি খুব অমায়িক একজন লোক হিসেবে পরিচিত উনাদের জীবনে ঘটে এক করুন ঘটনা! এই দুর্ঘটনা আমাদের করো কাম্য ছিল না! তবে বিষয়টি আমাদের সকল প্রবাসী বাবা-মাদের নতুন করে ভাবনার যোগান দিয়েছে!

ঘটনার মূল চরিত্র উনার মেয়ে! আশা (ছদ্মনাম) টিনএজ মেয়েটির যে বয়সকে আমরা অনেকেই বলে থাকি sweet sixteen! তবে মেয়েটির জন্য sixteen যে মোটেই sweet ছিলো না তা বুঝা গেলো ঘটনার পর!

মেয়েটি যে কলেজে পড়তো ঘটনাক্রমে বয়সের দোষ বলি আর সময়ের দোষ বলি বা সঠিক পরিচর্যার বা গাইডেন্স এর অভাব বলি যাই হোক মেয়েটি তার সমবয়সী এক অমুসলিম ছেলেকে ভালোবাসতে শুরু করে! মোটেই একতরফা নয় ছেলে ও মেয়ে দুজনেই দুজনকে ভালোবাসে! একপর্যায়ে মেয়েটির পরিবার জানতে পারে এবং মেয়েকে সাবধান করা বা এটা কখনো মেনে নেয়া যাবে না, নানা ভাবে বুঝিয়েও লাভ হয়নি! মেয়েটি অবশেষে পালিয়ে চলে যেতেও প্রস্তুত ছিলো! ভাই-ভাবী উপায় না দেখে মেয়েকে নিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন! উনারা আর মেয়েকে নিয়ে এদেশে ফিরতে চান না! ঘটনাটি খুব আলোড়নের সৃস্টি করে আমাদের শহরে! আর বিশেষ করে টিনএজ মেয়ে এবং অভিভাবকদের উপর!

ঘটনার কিছুদিন পর আমাদের এক বাসায় দাওয়াত ছিলো! দাওয়াতে আমাদের দেশী ভাই-বোনদের যা হয়! আমরা কখনই সময়মতো উপস্হিত হতে পারি না! দুপুরের দাওয়াতে সবাই হাজির হন আড়াইটার পর থেকে!

যাই হোক আমরা কয়েকটা ফ্যামিলি চেস্টাকরি সময়মতো উপস্হিত হওয়ার জন্য! সেখানে কিছু টিনএজ মেয়েরা ছিলো যাদের সাথে আমার খুউব ভাব! ওদের সাথে কথা বলে এতো মজা পাওয়া যায় যেখানে ভাবীদের সাথে কথা বললে নাই নাই আর হায় হায় শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা সেখানে এসব কোমলমতী মেয়েদের সাথে কথা বলে নির্মল আনন্দের ঝর্নাধারার কূল কূল ধ্বনির মতো মনে হয়!

মেয়েদের সাথে কথার একপর্যায়ে ওরা প্রশ্ন করলো আন্টি, মুসলিম মেয়েরা কি আসলেই অমুসলিম ছেলেদের বিয়ে করতে পারবে না?

প্রশ্নটা আমাকে যতখানি না ভাবিয়েছে তার চেয়ে বেশী ভেবেছি ওদেরকে সুন্দর, সহজভাবে ইসলামের বিধানটি ওদের সামনে তুলে ধরতে! কেননা আমি মনে করি ইসলামকে আমি কিভাবে উপস্হাপন করছি তার উপর নির্ভর করবে কতটুকু গ্রহনযোগ্যতা পাবে তা যাদের আমি বলছি! সেজন্য বরাবর চেষ্টাকরি কথা কম বলতে কারন আমি যদি সঠিক ভাবে বুঝিয়ে বলতে সক্ষম না হই তবে ভালোর চেয়ে ক্ষতিই করব!

ভাবলাম গল্পছলে বিষয়টা ওদের বুঝিয়ে বললেই ভালো হবে, ওরা গল্প শুনবে এর মধ্যে শিক্ষনীয় বিষয়টিও বুঝে নিতে পারবে! ঝুলিতে থাকা মহিয়ষী মহিলা সাহাবী উম্মে সুলাইম এর ঘটনাটি ওদের বললাম-

উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান! উনি ছিলেন প্রবল ব্যক্তিত্বের অধিকারিনী সদ্য মুসলিমা একজন নারী! মদীনার যুবকদের একজন সৌন্দর্য, বিত্ত, ও শক্তিতে অন্যতম এক সুপুরুষ আবু তালহা উম্মে সুলাইম কে পছন্দ করলেন! আবু তালহা তখনো ইসলাম গ্রহন করেন নি! সেই তখন সৌন্দর্য -সম্পদ-শক্তি সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন সব মেয়েদের অত্যন্ত আকাংখিত একজন পুরুষ! আবু তালহা যখন উম্মে সুলাইম কে বিয়ের প্রস্তাব দিলো ভেবেছিলো তার মতো যুবকের প্রস্তাব পেয়ে উম্মে সুলাইম বুঝি খুশিতে ডগমগ করে উড়তে থাকবে! হায়! একি! চমকে গেলেন আবু তালহা, উম্মে সুলাইম খুশিতে ডগমগ না করে তাঁকে বলেছিলো-

তুমি কি জানোনা, তুমি যে উপাস্যের পূজা কর, সে মরুভূমিতে বেড়ে ওঠা একটা সামান্য গাছ মাত্র। ওমুক গোত্রের কৃতদাসরা সেটাকে কেটে তারপর এ আকৃতি দিয়েছে!

আবু তালহা বললেন- অবশ্যই জানি! তারপরো আবু তালহা বিয়ের জন্য জিদ ধরতে লাগলেন! মোহর হিসেবে অনেক সম্পদ আর আয়েশি বিলাসী জীবনের লোভ দেখালেন!

কিন্তু উম্মে সুলাইম নিজ অবস্হানে অটল! তিনি আবু তালহাকে সরাসরি বলেই দিলেন, হে আবু তালহা! তোমার মতো যুবককে ফিরিয়ে দেয়া যায়না, কিন্তু কী করবো? তুমি কাফির পুরুষ! আর আমি মুসলিম নারী! তোমাকে বিয়ে করা আমার জন্য বৈধ নয়। তবে, তুমি যদি ইসলাম গ্রহন করো , তবে সেটাই হবে আমার মোহর! তোমার কাছে আমি আর কিছু চাই না!

দ্বিতীয় দিন আবু তালহা আবার এলেন! এবার তিনি আরো বেশি অংকের মোহর ও আরো বেশি দামী উপদঢৌকনের লোভ দেখালেন! উম্মে সুলাইম অটল, অবিচল!। তাঁর এই নীতির প্রতি স্হিরতা দেখে , অবিচলতা দেখে আবু তালহার চোখে উম্মে সুলাইম কে আরো বেশি সুন্দরী ও আকর্ষনীয় করে তুললো! তিনি আবু তালহা কে বলতে লাগলেন, -

আবু তালহা, তুমি যে প্রতিপালকের উপাসনা করো, তুমি যদি সেগুলোর গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দাও, সব পুড়ে যাবে না?

উম্মে সুলাইমের একথা আচমকা আবু তালহারসমগ্র অস্তিত্ব কাঁপিয়ে তুললো! তিনি নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলেন রব কি কখনো পুড়তে পারে? জেগে উঠলো তার ঘুমন্ত মন! তিনি স্বীকৃতি দিলেন শাহাদাতের!

উম্মে সুলাইম কে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে আবু তালহা এতটাই খুশি হয়েছিলেন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, সমস্ত সম্পদ উম্মে সুলাইমের পায়ে ঢেলে দিবেন!

কিন্তু নিঃস্বার্থ, পবিত্রাত্না, গর্বিতা স্ত্রী তাকে বাধা দিয়ে বললেন-

হে আবু তালহা ! আমি তোমাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিয়ে করেছি! আমি আর কিছু চাই না!

আমি এটুকু বলে ওদের দিকে তাকিয়ে চুপ করে ছিলাম ওদের অনুভূতি বোঝার জন্য! ওরা বলে উঠলো আন্টি তার পর কি হলো?

তারপর উনারা একসাথে মুসলিম দম্পতি, জীবনসাথী হয়ে মহৎ মহৎ কাজ করে ইসলামের ইতিহাসে সোনালী অক্ষরে উনাদের নাম লিখে রেখে গেছেন!

শুধু মেয়েরাই নয়, ওদের মায়েরাও গভীর মনোযোগে শুনছিলো ঘটনাটি!

আর আমার পেটে ততোক্ষনে ক্ষিদেয় চুলো জ্বলছিলো! সবাই মিলে তখন আমরা খেতে বসলাম! আলহামদুলিল্লাহ, দাওয়াতে গিয়ে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মদের সাথে সুন্দর একটু সময় পার করতে পেরেছি!

বিষয়: বিবিধ

১৭৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File