নিশীথ দ্বীপের রাজকন্যা
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২৭ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৫৯:৫৩ সকাল
রান্না শেষে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছিলো প্রিয়ন্তি! আজ ভালোবাসার মানুষটির জন্য নিজ হাতে রান্না করেছে-খাসির কোরমা, আনারস ইলিশ আর সবজি, আর দই! স্বামীর জন্য রান্না করতে এতো তৃপ্তি মিলে জানা ছিলো না তাঁর! যদিও পার্থ খাওয়া পিছেনে খুব বেশি সময় দিতে মোটেও পছন্দ করে না আর খাবারে উপচে পড়া টেবিল সেটা তো ভীষন রকমের অপছন্দ! মানবিক আর নৈতিকতার বোধে অটল এমন আদর্শ একজন মানুষকে আল্লাহ প্রিয়ন্তির জীবন সাথী হিসেবে মিলিয়ে দিয়েছেন যা শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না!
ঘড়ি দেখলো প্রিয়ন্তি, পার্থর আসার সময় হয়ে গিয়েছে! ভাবতেই দরজায় শব্দ শুনলো!
আসসালামুআলাইকুম বলে ঘরে প্রবেশ করে পার্থ ! মিষ্টি হেসে সালামের জবাব দিয়ে সামনে আসে ! এই সময়টার জন্য সারাদিন অপেক্ষায় প্রহর গুনে প্রিয়ন্তির অথচ পার্থ যখন সামনে আসে তখন মনে হয় মন জুড়ে ভালোবাসার যে আকুলতা বিরাজ করছিলো নিমিষেই উধাও হয়ে যায়! তখন শুধু পার্থর কথাই শুনতে ইচ্ছে করে,তাঁকেই দেখতে ইচ্ছে করে, ওর কন্ঠের জাদুর পরশে মন হারিয়ে যেতে চায় কথার সমুদ্রে!
পার্থ বাইরে থেকে এলেই গোসল সেরে নেয়, সাদা ধবধবে পান্জাবীতে কি অদ্ভুত শান্ত দেখায় তাঁকে! টুক টাক কথার ফাঁকে খাওয়া শেষে দুজন বারান্দায় এসে পাশাপাশি দাঁড়ায়!
বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছে অসম্ভব কাজপ্রেমী এই মানুষটাকে! খুব বেশি অবসর নেই বললেই চলে, তবে আজ অন্য রকম একটি দিন কারন আজ পার্থ নিজেই বলেছে সমস্ত কাজ আলমারিতে তালা বন্ধ করে রেখে এসেছে, আজ শুধু ওরা দুজন দুজনকেই সময় দিবে!
পরিষ্কার মেঘ মুক্ত আকাশে তারাদের কানামাছি খেলা, চাঁদোয়া আলোয় চারিপাশ নীলাভ আবরন ছড়িয়ে আছে, বাগানে গন্ধের রাজা গন্ধরাজ, বেলী, হাস্নাহেনার মৌ মৌ মাতাল করা মোহিত সুবাস- প্রকৃতিও যেন ভালোবাসার ক্ষনটিকে নতুন করে জানিয়ে দিচ্ছে !
কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকায় পার্থ 'র পানে! অপার সরলতার সৌন্দর্য আবারো গ্রাস করতে চায় প্রিয়ন্তি ! চোখে চোখ মেলে তাকিয়ে মনের কথা গুলো বলতে এতো দ্বিধা,লজ্জা,সংকোচ এসে ভিড় করতে চায় মনে কেনো কেই বা জানে!
নিস্তব্ধতা ভেংগে বলে কিছু বলছো না যে? কি ভাবছো আনমনে?নিজেকে শাষন করে প্রিয়ন্তি, জড়তা কাটিয়ে বলে- বলবো?
আজ তোমার কথা শুনবো বলেই তো এতো আয়োজন, দরদ ভরা কন্ঠে জবাব দেয় পার্থ ! পার্থর বলা প্রতিটি শব্দ, কন্ঠ, পার্থর স্পর্শ সব কিছু প্রিয়ন্তির হৃদয়ে ভালোবাসার কাঁপন জাগিয়ে তুলে!
প্রিয়ন্তি তাঁর জমিয়ে রাখা অব্যক্ত ছটফট করতে থাকা কথার মালা বিছিয়ে দেয়-
আমি ছিলাম কোন এক নিশীথ দ্বীপের অধিবাসিনী, সবুজ ঘাস, সারি সারি কাশ ফুল, বুনো হাঁস, উড়ে যাওয়া বকের ঝাঁক, রাতের আকাশে নক্ষত্রদের লুকোচুরি, দিনে দিগন্ত উদ্ভাসিত রবি- ছবির মতো সুন্দর সেই দ্বীপ! এই নিয়ে ছিলাম আমি, আমার একান্ত রাজ্য, সেই রাজ্যে আমি একাকী এক রাজকুমারী! ঝিলের ধারে পা ডুবিয়ে মাছরাংগাদের সাথে খেলা করে আর পিউ কাঁহা পাখির সাথে কথা বলে সারা দিন পার হতো
আমার!
একদিম সাঁঝের বেলায় সবাইকে বিদায় দিয়ে আমি রাজকুমারী ঘুমাতে এলাম! পরদিন প্রভাত আসে, ধীরে উন্মোচিত তপ্ত সূর্য আলোক ছটায়, বকেরা সারি বেঁধে উড়ে যায়, পিউ কাঁহা পাখিরা ডাকে, রাতের তারারাও জ্বলে নিভে অপেক্ষায় একসময় সব ক্লান্ত হয়ে যায়, থমকে যায় যেনো শীতের রাত নির্জন নিস্তব্ধ প্রকৃতির মতো সব কিছুকে থামিয়ে দিলো, গ্রাস করে নিলো! রাজকুমারীর ঘুম আর ভাংগে না!
তারপর হঠাৎ একদিন এক শিশির ভেজা ভোরে এক আগন্তুকের আগমন! বড্ড নির্জন আর নিশীথ এই দ্বীপ থেকে খুঁজে বের করলো ঘুমন্ত রাজকুমারীকে! পায়ের কাছে রাখা সোনার কাঠি রুপোর কাঠি নাড়িয়ে জাগিয়ে তুললো রাজকুমারীকে! শুধু সমস্ত দ্বীপেই নয় রাজকুমারী আর আগন্তুকের অন্তরে তখন ভালোবাসা বসন্তের দোলা দিয়ে যায়!
পার্থ মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো প্রিয়তমা স্ত্রীর কথা গুলো! অভিভূত হয়ে বললো
-এখন তো ঘুম ভেংগেছে, বলো এখন কি চাও রাজকুমারী?
-একটা নিখাদ ভালোবাসার দ্বীপ গড়তে চাই! পাখিদের কিচির মিচির, শরতের বাতাসে কাশফুলেরা খেলবে..। রংগিন প্রজাপতিরা উড়বে মনের সুখে...।
-পার্থ সুর মিলিয়ে বলে তার পাদদেশে একটা কান্চনজংঘা, অনতিদূরে সারি সারি কৃষ্নচূড়া...
- রোজ শিশির ভেজা ভোরে তুমি একমুঠো রৌদ্র হয়ে আমায় আলোকিত করো! আর কিছু চাই না আমি! আবেগে জড়িয়ে আসতে চায় প্রিয়ন্তির কন্ঠস্বর ...........
-পার্থ প্রিয়ন্তির হাতে হাত রাখে, দুজনে দূর আকাশের শুক্লপক্ষের চাঁদের পানে দৃষ্টি দেয়, নীলভ চাঁদের আলোকচ্ছটায় দুজন মানবী অপূর্ব হয়ে ওঠে!
মুক্ত আকাশতলে আজকের রাতে ভালোবাসার এই কপোত-কপোতী তাদের মন ও কল্পনাকে দূর দিগন্তের সীমারেখা ছাড়িয়ে আরো বহু দূরে প্রসারিত করে দেয়! হঠাৎ এক খন্ড মেঘ এসে চাঁদ কে আড়াল করে ঢেকে নেয়, তাঁদের এ গোপন অভিসার চাঁদও বুঝি বুঝতে পারে!
বিষয়: বিবিধ
৩২৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন