প্রভাতে প্রানের জাগরন
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২২ মার্চ, ২০১৩, ০৬:০৩:৫৮ সকাল
টিক টিক টিক! ঘড়ির কাঁটা বিরামহীন ঘুরেই চলছে! সারাদিনের যান্ত্রিক কর্মব্যস্তার বাধাধরা নিয়ম কানুনের সীমানা পেরিয়ে নিকষ কালো রাতে বিছানায় গা এলিয়ে ঘুমের জগতে প্রবেশ করা! ঘুমানোর আগ পর্যন্ত পরের দিনের সমস্ত পরিকল্পনা গুটি গুটি পায়ে ভিড় জমায়! এক সময় চোখদুটি ক্লান্তিতে .... অপেক্ষায় আরেকটি নতুন দিন...
তখনো বাইরে স্তব্ধ চুপচাপ নিরব প্রকৃতি, একটু একটু করে পাখিদের কূ কূ ডাক, সূ্র্যমামার আড়মোড়া দিয়ে উঠি উঠি ভাব তার আগেই আলসামো ঝেরে উঠে যাওয়া! জানালায় দাঁড়িয়ে দেখি নতুন প্রভাতের সংবর্ধনা! কি অপরুপ সৌন্দর্য! এই নিত্য সুন্দর প্রভাত সবার দেখা উচিত! কি অপার মমতাভরা মায়ার চাদরে জড়িয়ে রেখেছে ধরনী! মনটা আশ্চর্য এক সজীবতায় নতুন প্রানের সন্চারনে দুলে দুলে ওঠে!
আবার কখনো কখনো-
চোখ মেলে তাকাই, ঘড়ির দিকে মুখ ঘুরিয়ে হিসাব কষি, আর একটু ঘুম চাই! আবার তাকাই! নাহ! আর সম্ভব নয় এবার যে উঠতেই হবে! অলসতাকে ঝেরে ফেলতে চাইলেও আদর করে জড়িয়ে ধরে! সকালের আনন্দময়ী প্রকৃতিতে উঁকি দেয়া হয়না, পাখিদের ডাক শুনতে চাইনা, পূবের আকাশ ও দেখতে চাইনা!বুকের ভিতরটা কেমন জানি শূন্য শূন্য লাগে, ধূ ধূ প্রান্তরে খোলা প্রান্তরে উদভ্রান্ত কূল-কিনারাহীন আগন্তুক মনে হয়, অস্হিরতার এক সময় মনে মনেই বলি ধ্যেত! কিছুই ভালো লাগছে না! আজ সকাল থেকেই মনটা খারাপ! আজ মন খারাপ থাকার দিন!
আসলে কি এটাই হওয়া উচিত?
সময় এগিয়ে চলছে, জীবনে চাহিদার পরিমানও সীমিত আর নেই! বেড়েই চলেছে! মাঝে মাঝে বাসার জন্য যে বাজার আনা হয় তখন চিন্তা করি, ব্যাগ ভর্তি বাজার! লম্বা একটি লিস্ট হাতে নিয়ে যাওয়া আর দুহাত বোঝাই করে বাজার নিয়ে ফেরা আলহামদুলিল্লাহ! ফ্রিজ খুললে রকমারি খাবার, ডিপে তো আছেই! বাসায় যে পরিমান চাল, ডাল, বিস্কিট আরো কতকি এতো খাবার কতোদিনের পরিকল্পনার জন্য কেনা হয়েছে জানা নাই!
রান্নাকরার সময় একটু মাছ, একটু গোশত, একটু স্বজি না হলে চলেনা! কতো মজার মজার রান্না! আর দাওয়াতে গেলে তো কথাই নেই,বাহারি আইটেমে বড় সাইজের টেবিলেও বুঝি স্হানসংকুলান হয়ে পড়ে, উদরপূর্তি করতে করতে পাকস্হলি এক নিকৃস্ট থলেতে রুপ নেয়!
প্রতিদিনের সকালটা সুন্দর হতে পারে, খাওয়া-দাওয়া পরিমিত হতে পারে, জীবনযাপন পদ্ধতি ভারসাম্যমূলক হতে পারে! আর এটাইতো হওয়া উচিত!
প্রতিদিন প্রভাতে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে, আল্লাহ যেন আমাদেরকে আবারো নতুন জীবন দান করেন। আমাদেরকে পূণ্যআমল করার, বিশ্বাসী হবার, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবার জন্যে নতুন সুযোগ করে দেন। অথচ আমরা অধিকাংশই সেটা উপলব্ধি করি না। প্রতিটা দিন যেন আমাদের জন্য আল্লাহর দেয়া নিয়ামত হয়ে ধরা দেয় আর আমরা গতানুগতিক চলছি, কোন পরিবর্তন নাই!
আমাদের প্রভাতগুলো সাধারণত শুরু হয় সমস্যাজর্জরিত, চিন্তাক্লিষ্টভাবে। ঘুম ভেঙ্গেই আমাদের মনে প্রথমেই পার্থিব কাজ, যাবতীয় সমস্যার কথা এসে ভর করে। অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে উঠে দোআ পড়তেন, সবসময় আশাবাদী মানসিকতা পোষণ করতেন। আর আশাবাদ তো একজন কৃতজ্ঞ বান্দারই বৈশিষ্ট্য। ঘুম ভেঙ্গে প্রথম যে কথাগুলি উনি উচ্চারণ করতেন তা হল, "সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে মৃত্যূ (নিদ্রা) দেবার পর জীবিত করলেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তন"। (বুখারী, মুসলিম)
মহান আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা দিয়ে আরম্ভ হতো উনাদের দিবসের সূচনা। ঘুম ভেঙ্গে উঠতে পারাটা উনি আল্লাহর নিয়ামত হিসেবে দেখছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। এরকম মনোভাব নিয়ে দিন শুরু করলে আমরা প্রত্যেকেই অনেক কিছু করতে পারি, অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি। অনেক সুন্দর গঠনমূলক আদর্শবাদী কাজ আমরা করতে পারি! আর দূরে থাকতে পারি বস্তুবাদী চাওয়া পাওয়ার বিষাক্ত ছোবল থেকে!
আমরাও যেন প্রতিটা সকাল শুরু করতে পারি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে) এর শিখিয়ে দেয়া দো'আ দিয়ে এবং অনুরূপ মনোভাব নিয়ে। বস্তুবাদী চিন্তা পরিহার করে জীবনকে সঠিক মূল্যায়ন করি! জীবনের বাড়ন্ত অনর্থক চাহিদাগুলোকে যেনো দমন করতে শিখি! প্রতিটা কাজের শুরু আর শেষে পরম করুনাময়ের দয়ার কথা যেনো বিস্মৃত না হই! অনেক কিছু আছে আর অনেক কিছুই লাগে তারপরো যেনো ভাবি সেই সব অসহায়, দুঃস্হ ,পীড়িত, ক্ষুধিত অনাহারে কস্ট পাওয়া ব্যক্তিদের কথা! যে আদর্শ এসেছে পৃথিবীকে আলোকিত করতে নিজেরাই প্রথম পান করি সেই সূধা, আত্বস্হ করি সেই বানী!
প্রতিটা সূর্য যেন দিগন্তে উদিত হয় আমাদের জন্য নবপ্রেরণা, আমলের উদ্দীপনা আর আশার সঞ্চারণ নিয়ে। প্রতিটা প্রভাত যেন ঊষার আকাশে উদিত হয় নতুন উদ্দোমে, সাড়া জাগায় মৃতপ্রায় অন্ধকার অন্তরে, চির সবুজের মতো জাগিয়ে তোলে ঈমানকে, আর চিরশানিত আলোকিত করে পরলৌকিক চেতনাকে!
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন