একই বৃন্তে দুই ফুল
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২০ মার্চ, ২০১৩, ০৭:০১:৪৮ সকাল
আমার একটি নাইটকুইন ফুল গাছ ছিলো, অনেক শখের ছিলো গাছটি আমার! নিয়মিত পরিচর্যার পাশাপাশি অক্লান্ত অপেক্ষার প্রহর গুনতাম প্রতিটি দিন, কখন আমার প্রিয় গাছটিতে ফুল ফুটবে!কবে আসবে সেই আকাংখিত দিন!
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষে ফুল ফুটলো! তাও বিশেষ একটি অবিস্মরনীয় ক্ষনে! স্মৃতির পাতা থেকে সেই ক্ষন কখনোই মুছে যাওয়ার নয়! সেদিন ছিলো আমাদের বিয়ের দিন! আজো ভুলিনি আমি আমার
রাতের রানী হয়ে আসা সেই সুরভিত স্মিত ফুলটির কথা!
আসলে ফুল দেখলেই প্রফুল্লতায় মনটা ভালো হয়ে যায়, গোমড়া মুখেও বুঝি হাসির ঝিলিক আসে, মন আনন্দে উদ্দেলিত হয়! একটি ফুলের বাগান সবারই মনের আংগিনার কল্পনায় ছবি হয়ে থাকে, আর একটি মাত্র ফুল দিয়ে তো ফুলের বাগান হয় না, দরকার হয় নানা প্রজাতির ফুলের, আর রকমারি ফুলগুলো যখন দুলে দুলে ফুটে উঠে ফুলের বাগানটি তখন হয়ে উঠে ফুলেদের মেলা!
ইদানিং মনের গহীনে শুধু ফুলের ছবি ভেসে ওঠে! বাহারি রং এর ফুল, গোলাপ, গন্ধরাজ, চন্দ্রমল্লিকা,গাঁদা, জবা, বেলি, রংগন, বকুল, শিউলি, মোরগফুল, দুর্বাফুল, ডালিয়া, রজনীগন্ধা আরো কতো শত ফুল! এই ফুলগুলোর কোনটার সাথেই কোনটার খুব মিল নেই, কিন্তু প্রতিটি ফুল স্বস্হানে থেকেই সবার মন কেড়ে নেয়!
ফুল বাগান আর পরিবার কেমন জানি একটা মিল খুঁজে পাই! ভাবছিলাম আসলেই তো আমরা চাইলেই একটা সুন্দর ফুল বাগানের মতো একটা সুন্দর পরিবার গঠন করতে পারি! ফুলবাগানের ফুলগুলোর রং, রুপ, বেশিষ্ট্যে ভিন্নতা থাকলেও বাগানের সৌন্দর্য্য বর্ধনে বিন্দুমাত্র কৃপনতা করে না, বরং স্নিগ্ধতা আর সৌরভ দিয়ে বাগানকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে তোলে! একই রকম পরিবারের সদস্যরাও যদি ঐক্যবদ্ধ থাকার আদর্শকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার লক্ষ্যে নিস্বার্থভাবে কাজ করে সেই পরিবারও পরিনত হতে স্বপ্নের সাজানো ফুলবাগান!
প্রতিটি পরিবার শুরু হয় দুজন মাত্র ব্যক্তি দিয়ে! দিন, সপ্তাহ, মাস আর বছরের ব্যাবধানে ফুলকলিদের আগমন ঘটে! হাসি আনন্দ যেমন জীবনের অংশ, দুঃখ আর ত্যাগ ও প্রতিটি জীবনের সাথেই জড়িত! একটি পরিবারের সকল সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে ঝরে যায় কতো ঘাম, কতো ত্যাগ আর কতো অশ্রু! আয়নার ওপাশের প্রবাহিত অদেখা নিরব নোনা জলের বিনিময়েই পরিবারে আসে আনন্দের ফোয়ারা!
অনেক হাস্যোজ্জল সুখী পরিবারগুলোতে দেখেছি একটা সময় পর সেই পরিবারগুলোতে দুঃখের জলোচ্ছাস বয়ে যেতে! কারন হলো সবাই প্রাপ্তির তালিকায় থাকতে চায়! কেউ নিজের পছন্দ, মতামত বা স্বীকৃতি কে ত্যাগ বা কুরবানী করতে চায় না! আমি এটা করেছে, সেটা করেছি এভাবে যখন বড়ত্ব আর অহংকার পরিবারের চৌকাঠে রুপান্তরিত হয় তখন সেই পরিবার হতে শান্তি পাখিটি অজনার উদ্দেশ্যে পাখা মেলে! কেউ যদি ভোগেই প্রকৃত সুখ খুঁজে ফিরে কখনোই সুখের সন্ধান পাবে না!
অথচ এমনি অনন্য কিছু পরিবারের অস্তিত্ব আজো এ ধরনীতে আছে, যেখানে সহিংসতার পরিবর্তে সহমর্মিতা, গ্রহনের বিনিময়ে বিলিয়ে দেয়া, শক্তির বিপরীতে সাম্য, শান্তি, ভালোবাসা আর ত্যাগ তিতীক্ষা দিয়ে প্রতিটি ইট গাঁথা হয়েছে, যেখানে নিজের একার খুশীর চেয়ে প্রত্যেকের আনন্দকে প্রাধান্য দেয়া হয়, নিজে কস্টের তীব্র দহনে ক্ষতবিক্ষত হলেও বাকিদের ভালোলাগার ঝর্নায় সিক্ত করে দেয় অন্তর, যেখানে ভালোবাসা আর ভালোলাগার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আছে,ত্যাগ আর কুরবানীর স্বীকৃতি আছে, সকলেই সকলের জন্য উদারতা আর মমত্ববোধ আছে এমন মনের সদস্যদের নিয়েই তৈরি হতে পারে আদর্শ পরিবার, হতে পারে ফুলের
মেলায় ফুলের বাগান!
রজনীগন্ধা ফুল যখন দেখি তখন ভাবি এই ফুল কি অপরুপ সুন্দর স্নিগ্ধতার সৌরভ বিলিয়ে দেয় আর তার শ্বেত শুভ্রতা মনটাকেও বুঝি পবিত্র করে তোলে!
আমাদের এখানে শীত যখন বিদায় নিতে থাকে আশেপাশের গাছ গুলোর তাকালে বড্ড মায়া হয়, গাছগুলো পত্রপল্লবহীন শুধু কাঠি কাঠি ডালপালা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে! কিসের জন্য যেনো অধীর অপেক্ষা!
একদিন বুঝতে পারলাম "মার্গেরিতা ফুল" না ফুটলে বষন্ত আসে না! সবুজ মাঠের বিস্তীর্ন জমীনের ঘাস গুলোকে আলোকিত করে ধীরে ধীরে ধরনীর বুক চিরে ধরা দেয় মার্গেরিতা ফুল! ছোট্র ছোট্র সাদা পাপড়ি মেলে মার্সগেরিতা ফুলে ফুলে সবুজে সাদাতে একাকার হয়ে যায়! প্রকৃতিতে লাজুক কচি কচি সবুজ পাতার আগমন ঘটে! আস্তে আস্তে গাছ পালাগুলো সবুজে সবুজে সতেজ হয়ে ওঠে! বষন্তের ডাকে ফুলে ফুলে প্রকৃতি যেনো সাজ সাজ রব!
মার্গেরিতা ফুল আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে, ভাবছিলাম মার্গেরিতা ফুল দেখতে কতো ছোট, অথচ নিরবে ফুটে ওঠে প্রকৃতিকে পরিপূর্নতা দান করে! আমাদের পরিবারে এরকম অনেক মার্গেরিতাফুল রুপী নারী আছেন, যারা আড়ালে আবডালে থেকেও মৃতপ্রায় প্রকৃতিকে বষন্তকালের মতো জীবন্ত সজীবতা উপহার দেয়!
একটা বই পড়ছিলাম,বিশেষ একটা লাইনে এসে বারবার পড়তে লাগলাম "প্রতিটি মহৎ ঘটনার পিছনে একজন নারী আছে"। কবি সাহিত্যিকগন নারী আর ফুল এদুটো বিষয়কে বারবার একই রুপে রুপদান করেছেন! কখনো প্রিয়া, কখনো বধূ কখনো বা জননী! আসলেই আমরা নারীরা যদি সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারি এই ভুবনে গড়ে তুলত পারি অনেক মহৎ দৃস্টান্ত! হাসি ফোটাতে পারি অনেক দুঃখভারাক্রান্ত মনের, আনন্দিত করে তুলতে পারি সকল প্রিয়জনদের!কখনো রজনীগন্ধা হয়ে, কখনো নাইট কুইন হয়ে, কখনো চন্দ্রমল্লিকা বাহারি ফুল হয়ে কখনো বা মার্গেরিতা হয়ে প্রফুল্লতা ছড়িয়ে দিতে পারি পরিবারের সকলের মাঝে!
(এরকম রজনীগন্ধা, মার্গেরিতা বা বকুলের মতো যারা সুবাস ছড়িয়ে নিজেদের অস্তিত্ব দিয়ে অন্যদের মুখে হাসি ফোটায় তাদের জন্য, যারা একই বৃন্তে দুইটি ফুল...........)
বিষয়: বিবিধ
৬৬১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন