এক গুচ্ছ মুক্তো
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:৪০:০৪ রাত
সুরা হাজ্ব
৩৪) প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর একটি নিয়ম ঠিক করে দিয়েছি, যাতে (সে উম্মতের) লোকেরা তাদের পশুদের উপর আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করতে পারে । কেননা তোমাদের ইলাহ একমাত্র আল্লাহ্, অতএব তোমরা তার [ ইচ্ছার ] নিকট আত্ম সমর্পন কর। এবং সুসংবাদ দিয়ে দাও বিনয়ের নীতি অবলম্বন কারীদেরকে ।
ব্যাখ্যা - এই আয়াতের অর্থ এই যে, এই উম্মতকে কোরবাণীর যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা কোন নূতন আদেশ নয়। পূর্ববর্তী উম্মতদেরও কোরবাণীর আদেশ দেয়া হয়েছিলো। এই কোরবাণী হতে হবে শুধু মাত্র এক আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য। কোরবাণীর পশুর রক্ত মাংস কিছুই আল্লাহ্র কাম্য নয়। বান্দার একাগ্রতা ও নিজেকে উৎসর্গ করার মানসিকতা হচ্ছে কোরবাণীর প্রতীক যা পশু কোরবাণী ও তার মাংস গরীবদের সাথে অংশগ্রহণের মাধ্যমে উদ্যাপন করা হয়। কোরবাণীর পশুর উপরে আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করা হজ্জ্বের আনুষ্ঠানিকতার এক প্রধান অংশ।
"সুসংবাদ দাও " তাদের জন্যই সুসংবাদ যারা বিনয়ী। দম্ভ বা অহংকার যাদের উদ্ধত ও অত্যাচারী করে তোলে নাই। যারা জাগতিক অর্থ সম্পদ ক্ষমতা সব কিছুর জন্য সর্বশক্তিমানের কাছে কৃতজ্ঞ এবং আল্লাহ্ সন্তুষ্টি লাভের জন্য গরীব ও নির্যাতিতের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে, যারা সুখে - দুঃখে স্বাচ্ছন্দে ও অভাব অনটনে আল্লাহ্র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং সন্তুষ্ট থাকে তারাই বিণীত।
বিনয় এমন একটা গুণ যা আল্লাহ্র নিকট অত্যন্ত প্রিয়। মোমেন বান্দার চরিত্রে এই গুণটির প্রকাশ ঘটবে।
৩৫) যাদের অবস্থা এই যে, আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে, যে বিপদই তাদের ওপর আসে তার ওপর তারা সবর করে, নামায কায়েম করে এবং যাকিছু রিযিক তাদেরকে আমি দিয়েছি তা থেকে খরচ করে৷
ব্যাখ্যা -আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যে পাক-পবিত্র রিযিক ও যে হালাল উপার্জন আমি তাদেরকে দান করেছি তা থেকে তারা খরচ করে৷ আবার খরচ করা মানেও সব ধরনের যা-তা খরচ নয় বরং নিজের ও নিজের পরিবার পরিজনদের বৈধ প্রয়োজন পূর্ণ করা,আত্মীয়, প্রতিবেশী ও অভাবীদেরকে সাহায্য করা, জন কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা এবং আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার জন্য আর্থিকত্যাগ স্বীকার করা৷ অভাবগ্রস্থদের মাঝে দান করা আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর শ্রেষ্ঠ ভাষা।
৩৬) কোরবাণীর উটগুলিকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের অন্যতম করেছি। তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। যখন তারা [ কোরবাণীর জন্য ] সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায় তাদের উপরে আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ কর , যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় [ যবাই এর পরে ] তোমরা তা থেকে আহার কর এবং আহার করাও গরীবদের যারা ভিক্ষা করে না এবং যারা ভিক্ষা করে [ উভয়কে ]। এরূপে পশুদের আমি তোমাদের অধীন করেছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও ।
ব্যাখ্যা - এই আয়াতে বিশেষভাবে উটের কথা বলা হয়েছে যা মরুবাসীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। উটকে যবেহ্ করার প্রণালী অন্যান্য ছোট পশুদের থেকে ভিন্ন। উটকে দণ্ডায়মান অবস্থায় বুকের অগ্রভাবে ছুড়ি বসিয়ে যবেহ্ করা হয়।
অভাব গ্রস্থদের নৈতিকতার বর্ণনা করা হয়েছে। একদলের কথা বলা হয়েছে যারা অভাবগ্রস্থ কিণ্তু ধৈর্য্যশীল। অর্থাৎ অভাব থাকা সত্বেও তারা ধৈর্য্যশীল অর্থাৎ আত্মতৃপ্ত এরা কারও দ্বারে ভিক্ষার পাত্র প্রসারিত করে না। আর একদল অভাবগ্রস্থ আছে যারা যাঞ্চাকারী - অর্থাৎ যারা বিনয়ের সাথে যাঞা করে। এই দুই শ্রেণীর অভাবগ্রস্থের কথা এই আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। যারা অভাবগ্রস্থ কিন্তু উদ্ধত এবং বিদ্রোহী ,তাদের কথা আল্লাহ্ উল্লেখ করেন নাই, যদিও সকল দুর্দ্দশাগ্রস্থরাই বাঞ্ছিত বা অবাঞ্ছিত সকলেই দানের যোগ্য। কিণ্তু যারা বিনয়ের সাথে যাঞ্চাকরে এবং যারা আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টির সাথে যাঞা করে এই ঊভয়দলকে বিশেষভাবে দান পাবার যোগ্যরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। দান কখনও অন্যকে দেখানোর উদ্দেশ্যে করা উচিত নয়, দানের প্রকৃত উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ্কে খুশী করার মানসিকতা।
৩৭) আল্লাহ্র নিকট ইহাদের গোশ্ত বা রক্ত কিছুই পৌঁছায় না বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া । এভাবেই তিনি ইহাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যেনো তোমরা আল্লাহ্র মহিমা কীর্তন করতে পার, এজন্য যে তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন । যারা সৎ কাজ করে তুমি তাদের সুসংবাদ দাও।
৩৮) অবশ্যই আল্লাহ্ বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেন। তিনি কোন বিশ্বাসঘাতক ও অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।
ব্যাখ্যা - আল্লাহ্ এই বিশ্ব ভূবনের মালিক। যিনি পৃথিবীর স্রষ্টা, বিশ্ব বিধাতা তাঁর তো সৃষ্ট পদার্থের রক্তের প্রয়োজন নাই। তিনি তো অভাবমুক্ত। তিনি চান বান্দার আকুল আকুতি , ভালোবাসা ,ভক্তি ও শ্রদ্ধার ডালি এবং আল্লাহ্র জন্য আত্মোৎসর্গ।বান্দার এই প্রাণের ভালোবাসার প্রকাশের জন্য আনুষ্ঠানিক যে ব্যবস্থা তাই হচ্ছে পশু কোরবাণী। এই কোরবাণী যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের সর্বোচ্চ আত্মাত্যাগের কাহিনী।
আমাদের জাতীয় জীবনে আজকে বহু লোককে দেখা যায় যারা কোরবাণীর এই মহৎ শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে। যারা কোরবাণীর মাধ্যমে অর্থ বিত্তের প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতা করে। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং আত্মত্যাগ, কোরবাণীর এই মহৎ শিক্ষাকে জাতীয় জীবনে জাগরিত করা সকলের কর্তব্য।
(তাফসীর থেকে )
বিষয়: বিবিধ
১৭৮১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাকওয়া এবং বিণয়ের গুণে উজ্জীবিত হয়ে ইবাদাতের প্রতিটি ধাপ সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হই এটাই আর্জি প্রভুর দরবারে !
প্রথম মন্তব্যকারী এবং গুরুত্বপূর্ণ আয়াতটি দিয়ে সাথে থাকার জন্য আন্তরিক শুকরিয়া!
জাযাকাল্লাহ খাইর
ধন্যবাদ আপু ।
জাযাকিল্লাহ আপুনি
আপনাকেও আন্তরিক শুকরিয়া, বারাকাল্লাহু ফীক।
আমাদের সকল প্রচেষ্টা আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নিন এবং উত্তম প্রতিদান দান করুণ এটাই দুআ! Quran and Tafseer এর পেজ থেকে নিয়েছি , ভাষা প্রান্জল এবং সহজবোধ্য !
শুকরিয়া ভাইয়া।
আল্লাহর পছন্দের কাজগুলো দিয়ে আমাদের নিত্য পথ চলা হোক এটাই দুআ !
জাযাকাল্লাহ খাইর।
মূল্যবান মুক্তোর গুচ্ছগুলো দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ লিখা মাশাআল্লাহ।
মহান রব কুরবানীর মহৎ উদ্দেশ্য যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দিন। আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
শতব্যস্তার মাঝেও আপনার উপস্থিতি মনের মাঝে রিম ঝিম পরশ বুলিয়ে দিল আপু!
অতি উত্তম দুয়ায় আমীন । জাযাকিল্লাহ খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন