শুদ্ধিতার চন্দ্র
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ০৭:২৭:১৮ সন্ধ্যা
আজ ২৮ শে জিলক্বদ (ইতালি) । পবিত্র জিলহজ্বের চাঁদ উদ্ভাসিত হতে খুব বেশী দেরী নেই। আরবী বছরের শেষ মাস, সন্মানিত -পবিত্র মাস এবং বছরের মাঝে সেরা দশদিন নিয়ে, অগণিত কল্যাণের -পুণ্যের বারিধারায় সিক্ত করতে আমাদের সামনে হাজির হতে যাচ্ছে জিলহজ্ব মাস ইনশা আল্লাহ।
দিনে এবং রাতে বছর ঘুরে ১২টি মাস আমাদের সামনে আসে। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা এর মধ্যে চারটি মাসকে গুরুত্ব এবং মর্যাদার দিক দিয়ে করেছেন সম্মানিত, দিয়েছেন শ্রেষ্ঠত্ব। এরকম কিছু শ্রেষ্ঠ সময়ের আগমনী বার্তা এবং করণীয় নিয়ে এই লিখনী।
সাহাবি ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মত প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোন আমল নেই। তারা প্রশ্ন করলেন হে আল্লাহর রাসূল ! আল্লাহর পথে জিহাদ করা কি তার চেয়ে প্রিয় নয় ?
রাসূলুল্লাহ স. বললেন : না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তির কথা আলাদা যে তার প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়ে গেল অত:পর তার প্রাণ ও সম্পদের কিছুই ফিরে এল না।(বুখারি)
হাফসা রা. থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম স. কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হল : আশুরার সওম, যিলহজের দশ দিনের সওম, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের সওম, ও জোহরের পূর্বের দু রাকাত সালাত।[আহমদ]এ হাদিসে যিলহজের দশ দিনের সওম বলতে এক থেকে নবম তারিখের সওম বুঝানো হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম স. বলেছেন : এ দশ দিনে (নেক) আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় ও মহান কোন আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাকবীর (আল্লাহু আকবার) তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি করে পাঠ কর। (আহমদ)
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. ও আবু হুরাইরা রা. যিলহজ মাসের প্রথম দশকে বাজারে যেতেন ও তাকবীর পাঠ করতেন, লোকজনও তাদের অনুসরণ করে তাকবীর পাঠ করতেন।[বুখারী]
উম্মে সালামাহ রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তার অন্য একটি বর্ণনায় আছ্তে'সে যেন চুল ও চামড়া থেকে কোন কিছু স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় আছে 'কোরবানির পশু জবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে।'[মুসলিম]
আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলে কারীম স. বলেছেন : আল্লাহর নিকট দিবস সমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কোরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন।[আবু দাউদ]
সাহাবি আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ স. বলেন : 'আরাফার দিনের সওম আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।'[ মুসলিম-]
তাকবীর হলো-
اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لَاإِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الحَمْدُ
সাহাবি আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ স. বলেন : 'আরাফার দিনের সওম আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।'[ মুসলিম-]
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন : 'নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরাফাতে অবস্থানকারীদের নিয়ে আসমানের অধিবাসীদের কাছে গর্ব করেন। বলেন : আমার এ সকল বান্দাদের দিকে চেয়ে দেখ ! তারা এলোমেলো কেশ ও ধুলোয় ধূসরিত হয়ে আমার কাছে এসেছে।'[আহমদ ]
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. বলেন : 'আরাফার দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন : 'তোমরা কি
বলতে পার আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কি চায় ?'[ মুসলিম]
সবচেয়ে উত্তম দোয়া হল আরাফাহ দিবসের দোয়া। আর সর্বশ্রেষ্ঠ কথা যা নবীগণ বলেছেন, তাহলো : لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন মাবুদ নেই। তিনি একক তার কোন শরিক নেই। রাজত্ব তারই আর সকল প্রশংসা তারই প্রাপ্য, এবং তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।' এই কালিমা বেশী পাঠ করা।
গতানুগতিকভাবে আমরা এই দিন গুলি পার করে দিচ্ছি। ঈদ ইদযাপন করে যাই, কোরবানী করি কিন্তু কোরবানীর সাথে জড়িত ইব্রাহীম আলাইহিসসালামের আত্মসমর্পণ, উনার রেখে যাওয়া আদর্শ- ঈমানী চেতনা থেকে আজ আমরা বহু দূর!
সকল ভালোবাসাকে, সকল চাহিদা, ত্যাগ - তিতিক্ষা, চাওয়া পাওয়াকে আল্লাহর নির্দেশের কাছে কোরবানী করার শিক্ষা আমাদের গ্রহণ করা উচিত, অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং আসন্ন ইবাদাত কবুলের চমৎকার সুযোগটিতে তৎপর হওয়াই আমাদের একান্ত করণীয় , আল্লাহ আমাদের সহজ করে দিন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৮৯৫ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাচ্চাদের তিন মাসের আমার ভ্যাকেশন প্রায় শেষের দিকে, এই লম্বা সময়ে নিজের রুটিনকে এডযাস্ট করতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা! তাও মাঝে কিছু দিন ট্রাই করেছিলাম লগইন করতে, পেরে উঠিনি , সম্ভবত ব্লগের কোনো সমস্যা ছিল।
দীর্ঘ বিরতির পর প্রিয় অংগনে এসে, আপনাদের সব্বাইকে পেয়ে আসলেই অন্নেক আনন্দানুভূতি জাগছে!
আসন্ন পবিত্র,মহামান্বিত সেরা দিন গুলোতে আপনার দুয়ায় আমাদেরো শামীল রাখবেন।
স্মরণ করিয়ে দিলেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকিল্লাহ..
প্রায় দু'মাস পরে পোস্ট দিলেন!!
পরবর্তী বিরতিটা যেন ছোট হয়!!
বাচ্চাদের তিন মাসের আমার ভ্যাকেশন প্রায় শেষের দিকে, এই লম্বা সময়ে নিজের রুটিনকে এডযাস্ট করতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা! তাও মাঝে কিছু দিন ট্রাই করেছিলাম লগইন করতে, পেরে উঠিনি , সম্ভবত ব্লগের কোনো সমস্যা ছিল।
দীর্ঘ বিরতিতে আপনাদের সবাইকে অনেক মিস করেছি, অতিবাহিত সময়ের অনেক কিছু লিখব এই আশা তো আছেই , দোআ করবেন।
আসন্ন পবিত্র,মহামান্বিত সেরা দিন গুলোতে আপনার দুয়ায় আমাদেরো শামীল রাখবেন।
ভাইয়া কারেন্ট ইসলামিক এমনকোনো ওয়েবসাইটের কথা কী বলতে পারেন যেখানে সৌদি আরবের চাঁদ দেখার বিষয় তাৎক্ষনিক জানা যায়? জাযাকাল্লাহু খাইর।
http://www.moonsighting.com
http://www.islamicmoon.com
http://saudigazette.com.sa
http://www.arabnews.com
চাঁদ দেখা যাবার কয়েকমিনিটের মধ্যে এখানে ম্যাগাজিন অংশেও খবরটা এসে যায়!
অনেক শুকরিয়া।
আপনাকেও আন্তরিক শুকরিয়া।
আসন্ন পবিত্র,মহামান্বিত সেরা দিন গুলোতে আপনার দুয়ায় আমাদেরো শামীল রাখবেন।
অনেক ভালো লাগল। ধন্যবাদ।
আসন্ন পবিত্র,মহামান্বিত সেরা দিন গুলোতে আপনার দুয়ায় আমাদেরো শামীল রাখবেন।
আমরা দুইজন খুবই ভাল বান্ধবী আলহামদুলিল্লাহ!
মেহেরবানী করে আমাদেরকেও আপনার দোয়ায় সামিল রাখবেন!
আপনার মদীনায় অবস্থানকাল জানতে পারলে সাক্ষাতের সম্ভাবনা বুঝতে পারতাম! সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরে কোন এক জুমআ'বার আমার মদিনা যাওয়া হতে পারে!
আপনার সফর নিরাপদ ও মাকবুল হোক!
আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আপনার হজ্বকে হজ্বে মাবরুর হিসেবে কবুল করে নিন। আমীন।
পবিত্র ভূমি এবং নিশ্চিত দোআ কবুলের স্থানে যাচ্ছেন, আপনার দুআয় আমাদেরো শামিল রাখবেন।
আল্লাহ আপনাকে সুস্থ এবং সহজভাবে প্রতিটি আহকাম সমাধা করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
আপু কী যে ব্যস্ততা যাচ্ছে! দুআ করবেন আপু।
আসন্ন পবিত্র,মহামান্বিত সেরা দিন গুলোতে আপনার দুয়ায় আমাদেরো শামীল রাখবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন