Starএকটি বালিকার প্রথম রোযা পালন Star

লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২৭ জুন, ২০১৬, ০৬:১০:৩৯ সকাল



আসসালামুআলাইকুম ।

আমি মুবাশ্শারা । তখন আমার বয়স ছিলো ৭ বছর । আমার আম্মু আমাদের মতোন স্কুলগোয়িং মেয়েদের নিয়ে ইস্লামিক হালাকা এবং সানডে স্কুল পরিচালনা করতেন । আমি সব সময় আম্মুর সাথে সাথেই থাকতাম ।তাই ইসলামিক আলোচনা শোনা হতো নিয়মিত আলহামদুলিল্লাহ।

সেবার আমার সাত বছর হতেই আম্মু আমাকে বলেছিলেন , আমাকে নামায পড়ায় অভ্যস্থ হতে হবে। আর রমাদ্বান মাস আসলে রোযা রাখার চেষ্টাও করতে হবে।

রমাদ্বান আসলো । বাসায় আম্মু আব্বুকে দেখতাম রমাদ্বান উপলক্ষে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিতে । আমাদের বাসায় যারাই আসতো বা যাদের সাথেই দেখা হতো সবাই শুধু আমাকে জিজ্ঞাসা করতো আমি রোযা রাখতে পারি কি না! আমার খুব লজ্জা লাগতো ।

আমার খুব ভয় লাগছিলো । আমি কী পারবো রোযা রাখতে? খুব ক্ষুধা লাগ্লে কী করবো? পানি পিপাসা লাগলে? এসব ভেবে আমি আসলেই দুশ্চিন্তার মাঝে ছিলাম ।

আম্মু বলেছিলেন ছোটরা একদিনে দুটা রোযা রাখতে পারে । সেহরি থেকে বারোটা পর্যন্ত আবার বারোটার পর থেকে ইফতার পর্যন্ত।

আমার মনে আছে আমি ঢেড়শ ভাজি দিয়ে সেহরি খেয়েছিলাম ।সেদিন ছিল রবিবার ।আমাদের সানডে মসজিদ ছিল। আমি আর আম্মু এক সাথে গিয়েছিলাম।

সবাই যখন ক্লাসে আসলো , যারা যারা রোযা রেখেছিলো সবাই নিজেদের কথা বলছিলো । আম্মু সবাইকে খুব কমপ্লিমেন্ট করছিলো, আমাকেও ।

ওখানে এক বড় আপু বলেছিল উনি দিনে একটাই রোযা রাখেন, সেহরির পর একেবারে ইফতার খান। আমার খুব ইচ্ছে হল আমিও বড়দের রোযা রাখবো ।

স্কুল শেষে আমরা বাসায় চলে এসেছিলাম ।তখন বারোটার বেশি বাজে । আমার খুব ক্ষুধা লেগেছিলো, পানির পিপাসাও । কিন্তু বড়দের মতো রোযা রাখার ইচ্ছে ছাড়তে পারছিলাম না ।

আমি বাসায় এসেই শুয়ে পড়ি । আম্মু আমাকে খেতে বল্লেও খাই নি । আমার পেটের ভিতর গুর গুর আওয়াজ হচ্ছিল , গলাটাও শুকিয়ে আসছিল । কিছুক্ষণ পর কী কারণে জানি আমি কিচেনে গেলাম । টেবিলে তাকিয়ে দেখি চকলেট কুকিজ । আমি বসে কুকিজগুলো হাতে নিয়ে আদর করতে লাগলাম । আগে কখনো এমন করিনি । তারপর উঠে চলে গেলাম । আম্মু কাজ করছিলো ।আমি খুব চাইছিলাম আম্মু আমাকে আবার জিজ্ঞাস করুক আমি খাবো কি না! কিন্তু আম্মু আমাকে এবার কিছুই বললো না।

তারপর আবার আমি কিচেনে চলে আসলাম। চকলেট কুকিজ এর প্যাকেট নিয়েই সোজা আমার রুমে চলে এলাম । খাটের পাশে বসে বসে পুরা এক প্যাকেট খেয়ে ফেললাম । তারপর পানি খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম ।

তারপর আমার যখন ঘুম ভাংগ্লো আমি দেখলাম আম্মু ইফতার বানাচ্ছেন । সব আমার পছন্দের ইফতার ।আমি নামায পড়লাম । আমার খুব খারাপ লাগছিলো । আম্মুকে কীভাবে বলবো আমি খেয়ে ফেলেছি!

ইফতারের সময় হয়ে এলো । আমি শুধু আম্মুর আশে পাশে ঘুরি ।কিন্তু বলতে পারি না। তারপর আমি কান্না শুরু করে দেই । পরে সব খুলে বলি । আম্মু আমাকে অনেক সান্তনা দিয়েছিলো , আব্বুও । এবং বলেছিলো ,ইচ্ছে করেই কুকিজ রেখেছিলো যেনো আমার যখন খেতে ইচ্ছে করবে তখন যেন খেয়ে নেই ।

ইফতারের পর আম্মুর পাশে গিয়ে শুয়েছিলাম আমি। আম্মু আমাকে বললেন, রোযা আমাদের এটাই শিক্ষা দেয়, পৃথিবীর কেউ আমাদের না দেখলেও আল্লাহ আমাদের দেখেন । আমাদের সামনে লোভনীয় সব কিছু থাকবে কিন্তু আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা কেউ না দেখলেও আমরা তা করা থেকে দূরে থাকবো । কোনো অন্যায় করলে আম্মু আব্বুকে ভয় করার চাইতে আল্লাহকে বেশি ভয় করতে হবে, ভালো কিছু করলে আল্লাহকেই বেশি ভালবাসতে , খুশি করার চেষ্টা করতে হবে ।

এটাই ছিলো আমার প্রথম রোযা। তারপরেও আমি আরেকটা রোযা রেখেছিলাম কিন্তু ইফতার ছাড়া অন্য কিছু খাইনি আলহামদুলিল্লাহ।

( ঘটনা আমার নহে, আমি শুধুই ভাষ্য ধারা বিবরণীর লিখিত রুপায়ক মাত্র )

বিষয়: বিবিধ

১৯১৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373258
২৭ জুন ২০১৬ সকাল ০৭:১৩
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : রোজা নিয়ে গল্প হয় না তাই মনে করতাম|কারণ সব কিছু এতো সেটেল্ড আর প্রিডিটারমিন্ড|কিন্তু সব ছাপিয়ে এটা একটা ছোট্ট সুন্দর গল্প হয়েছে|জানিনা আমার মেয়েকে তার প্রথম রোজার গল্প বলতে বললে হয়তো এই গল্পটাই ও বলবে|ভালো লাগলো অনেক|
373260
২৭ জুন ২০১৬ সকাল ১০:২৪
হতভাগা লিখেছেন : রোজার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা
373265
২৭ জুন ২০১৬ সকাল ১১:০৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অসাধারন গল্প। বাচ্চাদেরকে বাচ্চাদের মত ট্রিট করতে হবে। ঘটনায় যা দেখা গেল তাই দেখা উচিৎ। এভাবেই শিখে
373268
২৭ জুন ২০১৬ সকাল ১১:৫২
মহিউদ্দিন মাহী লিখেছেন : ভালো লাগলো।
এমন বালিকায় ভরে উঠুক মুসলমানদের প্রতিটি গৃহ।
373291
২৭ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:০০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ। এভাবে যদি শিশুরা গড়ে উঠে তবে তারা রমজান এর আসল শিক্ষা পাবে।
373298
২৭ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:৫৭
আবু জান্নাত লিখেছেন : মুবাশশারাহ কে ব্লগে একটি আইডি খুলে দিলে হয়তো আরো আবেগ দিয়ে এ ঘটনাটি লিখতো।

মায়ের মনে মেয়ের কল্পনা দারুন ফুটে উঠেছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
373326
২৭ জুন ২০১৬ রাত ০৮:৩৬
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনার নিজের প্রথম রোজার ঘটনা মনে থাকলে এমন করে লিখে ফেলুন। ফাটাফাটি হবে। ধন্যবাদ।
373347
২৮ জুন ২০১৬ রাত ০১:৩৬
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
373696
০১ জুলাই ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪০
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সত্যিই অসাধারণ হয়েছে। আমিও লিখবো ইনশা-আল্লাহ আমার মেয়ের প্রথম রোজা বিষয়ে। ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File