পূর্বাকাশের হিলাল ... (ব্লগ আয়োজন থার্ড সেগমেন্ট )
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৫ জুন, ২০১৬, ০৪:৩২:২৫ রাত
পূর্বাকাশে কাস্তের মতো চিকন চাঁদের দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ আনমনা হয়ে রইলো আসমা। নতুন চাঁদ দেখা এবং দোয়া পড়ার উদ্দেশ্যে মাগরিবের সালাত আদায় করে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে । সন্ধ্যার আযকার করছিলো আর অনুসন্ধানী চোখ দিয়ে পুরো আকাশ জুড়ে চাঁদটিকেই খুঁজছিলো সে। মেঘ সরে যেতেই দেখা মিললো আকাংখিত চন্দ্রের!
মনের দু-কূল জুড়ে উচ্ছাসিতো আনন্দের জোয়াড় এসে সিক্ততায় ভরে দিচ্ছে হৃদয় । বিয়ের পর প্রথম রমাদ্বানের চাঁদ এবং প্রথম আনন্দময় অপেক্ষার প্রহর গোনার অনুভূতি - আলহামদুলিল্লাহ। ধীরে ধীরে পরম মমতায় পেটের উপরটায় সে হাত বুলিয়ে দেয়, আপনমনে জিজ্ঞেস করে পারবে তো বেটা? মামণির সাথে সিয়াম পালন করতে?
বিষ্মিত হলো পেটের ভিতর থেকে ক্ষীণ নড়া চড়া অনুভব করে,মনে হচ্ছিলো উনি সম্মতি জানান দিচ্ছেন- আম্মিজান আমি পারবো ইনশা আল্লাহ । একা একাই হেসে উঠে আসমা ।
এই সময় সালাম দিয়ে বারান্দায় এসে প্রবেশ করলেন জামিল। আসমার কাঁধে হাত রেখে কৌতুহলী নয়নে জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার একা একা হাসছিলে যে?
আমাদের আসন্ন অতিথিকে জিজ্ঞেস করছিলাম সিয়াম পালন করতে পারবে কি না তাঁর মায়ের সাথে, সে পেটের ভিতর থেকে নড়া চড়া করে উত্তর জানিয়েছে পারবে বলতে বলতে এবার দুজনেই একসাথে হেসে উঠলো ।
কিছু ক্ষণ চুপ থেকে জামিল জিজ্ঞেস করলো - আসলেই কী তুমি রোযা রাখতে চাইছো? পারবে তো?
ইনশা আল্লাহ । আগে চেষ্টা তো করি । আর এমনিতে তো আমি ফিট আছি আলহামদুলিল্লাহ, তেমন কোনো শারীরিক অসুবিধা আমার নেই। ভিটামিন, ফলিক এসিড, আয়রন খাচ্ছি নিয়মিত । আর এখন তো বমির সমস্যাও নেই, আগের চাইতে রুচি ও বেড়েছে । খেয়াল করে শুধু সেহরি আর ইফতারে ব্যালেন্সড ডাইট এর দিকে জোর দিতে হবে তবেই পারবো তুমি শুধু দোআ করো- বলে সহধর্মীর দিকে তাকলো আসমা।
কিছুটা চিন্তিত স্বরে জামিল বললো, আমি মাগরিবের সালাত শেষে ইমাম সাহেব এর নিকট ফাতোয়া জানতে চেয়েছিলাম ।
উনি বললেন যে, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারীণী শারীরিকভবে যদি শক্তিশালী হয় এবং সন্তানের কোন ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে তাহলে সিয়াম পালন করতে পারে। আর যদি সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে সিয়াম ভঙ্গ করার অবকাশ তাদের দিয়েছে ইসলামী শরীয়ত।
এক্ষেত্রে স্কলারদের বেশ কিছু অভিমত আছে, যেমন কিছু স্কলার বলছেন ,গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারীণী মায়েরা যে সিয়ামগুলো রাখতে পারেন নি সেগুলো উনারা পরবর্তীতে কাযা আদায় করবেন ।
কিছু স্কলার বলেছেন উনারা ফিদিয়া অর্থাৎ প্রতি একদিনের রোযার বদলে এক মুদ (৫১০ গ্রাম) পরিমাণ গম / খাবার/ ( অনেকে টাকা ও সাব্যস্ত করেছেন) একজন করে মিসকীনকে খাওয়াবে বা প্রদান করবে।
চুপ করে শুনছিলো আসমা, মাথা নেড়ে জবাব দিলো - আমিও কিছুটা পড়াশোনা করেছি বিষয়টা নিয়ে । আমি আগে চেস্টা করতে চাই । আমার গাইনী ডাক্তার বলেছেন, আমার আর বেবির অবস্থা ভালো আলহামদুলিল্লাহ । উনি বলেছেন প্রথম তিনমাসের গর্ভবতী মায়েদের জন্য কিছুটা ঝুঁকি থাকে, আর আমার তো পাঁচ মাস চলছে। এছাড়া মেডিক্যাল সায়েন্স কোনো এপ্রুভ দিতে পারে নি সিয়ামের কারণে ফিটাস বা মায়ের ক্ষতি হয় ।
আমাদের মতো যারা নিউ মাদার প্রেগন্যান্ট বা ব্রেস্ট ফীডিং করাচ্ছেন , নির্ভর করছে আমাদের এবং বেবির শারীরিক অবস্থার উপর। শরীয়ত আমাদের জন্য সহজতাও রেখেছে প্রয়োজন অনুযায়ী । তাই ভাবছি প্রথমে চেষ্টা করে যাই একান্ত না পারলে ব্য়াবস্থা গ্রহণ করা যাবে ইনশা আল্লাহ!
হুম বলে মাথা ঝাকিয়ে সায় দিলো জামিল । আচ্ছা কী নাম রাখবো ভেবেছো কিছু?
দুটো নাম আমার অনেক আগে থেকেই পছন্দ- আব্দুল্লাহ আর যুবায়ের । তোমার কোনটা পছন্দ?
আমারতো দুটোই পছন্দ হয়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ, কোনটা রেখে কোনটা নেই বলে হাসতে লাগলো জামিল।
ততোক্ষণে সন্ধ্যা স্বমহিমায় আবির্ভূত, নিশীথে হেলাল খানি আগের চাইতে দীপ্ত কিরণমেলায় উদ্ভাসিত, বাইরের বাগান থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা গুন্জরন সেই সাথে মৃদুমন্দ হাওয়ায় ভেসে আসছে কনকচাঁপা ফুলের সুগন্ধি- পাশাপাশি দাঁড়িয়ে, হাতে হাত রেখে জামিল- আসমা জুটির হৃদয় জুড়ে এক পবিত্র প্রার্থনা- মহান রব্বুল আলামীন তাঁদের, আসন্ন সন্তানের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ মন্জুর করুন, ইবাদাতে সহজতার মাধ্যমে প্রভুর নিকটবর্তী করে নিন....
( সদ্য সন্তান জন্মদান কারিনী মা নিফাসওয়ালী ক্যাটাগরীতে পড়বেন, উনার তো সিয়াম পালন হারাম পবিত্র হওয়ার আগ পর্যন্ত)
(স্মরণ করছি শ্রদ্ধেয় ভাই গাজী সালাউদ্দিন এবং সন্ধাতারা আপুকে , সাথে প্রতিটি পর্বের পরিচালকগণ , যারা দায়িত্বানুযায়ী লিখা দিচ্ছেন, মন্তব্য করে উৎসাহ জোগাচ্ছেন সব্বাই কে । আল্লাহ এই শ্রম এবং প্রয়াস কবুল করে নিন এবং উত্তম জাযাহ দান করুন)
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৮ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার উপস্থিতি আরো মিস্টি অনুভূতির দোলা দিয়ে গেলো মনে
জাযাকিল্লাহ খাইর
রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন বোন।
আপনাকেও আন্তরিক শুকরিয়া পড়া ও মন্তব্যের জন্য।
শ্রদ্ধেয় ভাই, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন
এতো চমৎকার অনুপ্রেরণ দিলেন সত্যি সত্যি মনে হচ্ছে লিখাটি স্বার্থক হলো। জাযাকাল্লাহ খাইর । বারাকাল্লাহ
শ্রদ্ধেয় মাছুম ভাই, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন
আমরা যারা বিয়ে করিনি, এইসব গল্প শুনে এক ধরণের মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে।
যাই হোক, কথা রেখেছেন। সেই জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আলহামদুলিল্লাহ্।
জাযাকাল্লাহু খাইর
আসলে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একটি মাসায়েলার , আমি ভেবে দেখলাম শুধু মাসায়েলা পেস্ট করে দিলে লিখাটা কতখানি হৃদয় গ্রাহী হবে সেটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছিলো সেখান থেকে ভাবলাম গল্পাকারে দিয়ে দেই ।
বিষয়টা ঘিরে যতটুকু পরিধি বাড়ানো যায় ততোটুকুই চেষ্টা করেছি! আপনাদের ভালো লেগেছে জেনে আসলেই অনেক ভালো লাগা কাজ করছে আলহামদুলিল্লাহ।
সামনে কাজে লাগবে আপনার ইনশা আল্লাহ
শ্রদ্ধেয় ভাই, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন
গর্ভবতী মায়েদের ফিদয়ার ব্যপারটি আরো ক্লিয়ার হওয়ার দরকার। এ নিয়ে আরো লিখার অনুরোধ করছি।
আমার জানামতে ফিদয়া তো এমন ব্যক্তি দিতে পারে, যে পরেও রোঝার সক্ষমতা হারায়। অর্থাৎ পরে কাযা করার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়। মায়েরা তো এক সময় সক্ষম হয়ে উঠতে পারে।
والله اعلم
জাযাকিল্লাহ খাইর
যতটুকু আমি পড়াশোনা করেছি এবং শায়খদের লেকচার শুনেছি, গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারীনি মায়ের জন্য বিধান হলো উনারা যে সিয়ামগুলো আদায় করতে পারেন নি , রমাদ্বান পরবর্তীতে উনারা সেই সিয়ামগুলো পূর্ন করবেন । এটাই উনাদের জন্য জেনারেলি খাস বিধান।
এখন ধরেন এমন এক বোন যিনি প্রথম রমাদ্বানের বছর গর্ভবতী, দ্বিতীয় বছরে দুগ্ধদানকারী, তৃতীয় বছরেও উনি গর্ভধারণ করলেন এবং উনার শারীরিক অবস্থা নাজুক উনার পক্ষে সম্ভব হয় নি বিগত সিয়াম পূরণ করা(৯০) এই ক্ষেত্রে উনি ফিদিয়া দিতে পারেন।( শায়খ মাহমুদুল হাসান)
আপনি যে বিষয় বলেছেন আমি একমত এবং সঠিক । ফিদিয়া জেনারেলি অক্ষমব্যাক্তিদের জন্য।
প্রশ্নঃ (৪০৬) সন্তানকে দুগ্ধদানকারীনী কি রোযা ভঙ্গ করতে পারবে? ভঙ্গ করলে কিভাবে কাযা আদায় করবে? নাকি রোযার বিনিময়ে খাদ্য দান করবে?
উত্তরঃ দুগ্ধদানকারীনী রোযা রাখার কারণে যদি সন্তানের জীবনের আশংকা করে অর্থাৎ রোযা রাখলে স্তনে দুধ কমে যাবে ফলে শিশু ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তবে মায়ের রোযা ভঙ্গ করা জায়েয। কিন্তু পরবর্তীতে তার কাযা আদায় করে নিবে। কেননা এ অবস্থায় সে অসুস্থ ব্যক্তির অনুরূপ। যার সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন,
]وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ[
আর যে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে নিবে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫)
অতএব রোযা রাখার ব্যাপারে যখনই বাধা দূর হবে তখনই কাযা আদায় করবে। চাই তা শীতকালে অপেক্ষাকৃত ছোট দিনে হোক অথবা সম্ভব না হলে পরবর্তী বছর হোক। কিন্তু ফিদ্ইয়া স্বরপ মিসকীন খাওয়ানো জায়েয হবে না। তবে ওযর যদি চলমান থাকে অর্থাৎ সার্বক্ষণিক রোযা রাখায় বাধা দেখা যায় যা বাধা দূর হওয়ার সম্ভবনা না থাকে, তখন প্রতিটি রোযার বদলে একজন করে মিসকীনকে খাওয়াবে।
(ফতোয়া আরকানুল ইসলাম থেকে)
মূল: আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমীন (রাহ
অনুবাদক: শাইখ মুহা: আব্দুল্লাহ আল কাফী
ফিকহ এর বিষয় টা এজন্যি এতো বিশাল পরিধি নিয়ে কাজ করে, ব্যক্তি এবং অবস্থা ভেদে বিধান পরিবর্তিত হয় ।
والله اعلم
বারাকাল্লাহু ফীক ।
শ্রদ্ধেয় ভাই, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন
সুন্দর আলোচনা
জাযাকুমুল্লাহ...
ধন্যবাদ আপনাকে
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি এবং চমৎকা র মন্তব্য অনেক অনুপ্রাণিত করলো
শ্রদ্ধেয় ভাই, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন
মেডিক্যাল সাইন্স এখন অনেক এডভান্স তাই মায়ের পেটের ভিতর শিশু কখন হাসে, কখন কাঁদে , কখন আংগুল চুষে !
শ্রদ্ধেয় ভাই, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন
আপনাদের উৎসাহমূলক মন্তব্য এবং অনুপ্রেরণাতেই আজ এটুকু আসা আলাহমদুলিল্লাহ ।
বই বের করা অনেক গুণের ব্যাপার ভাইয়া, ওতো দূর আপনাদের বোন এখনো এগোয় নি তবে প্রথম আপনি বললেন ভালোলাগাটা থেকে যাবে নিরন্তর।
আমারো পছন্দ হয়েছে নামটি খুউব
শ্রদ্ধেয় ভাই, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন
চাঁদের ছবিটা নতুন চাঁদ হলে বোধ হয় আরও ভাল লাগত।
জ্বি , আমারো খটকা লাগছিলো প্রথম লাইনের একেবারে বিপরীত ছবি দিয়েছি কিন্তু পছন্দমতো পাচ্ছিলাম না বলেই .......
শ্রদ্ধেয় শেখ ভাই, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন
আল্লাহ কাউকেই সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব দেন না, অবস্থা অনুযায়ী সহজতা আছে বিধায় ইসলাম কল্যাণের ধর্ম।
শ্রদ্ধেয় ভাই, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন
আমি নিজে এবং আশে পাশের অনেক বোনদের দেখেছি সিয়ামের কারণে আসলে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে এটা অবশ্যই নির্ভর করে মায়ের এবং বাচ্চার স্বাস্থ্যের উপর। দিন ছোটো হলে ব্যাপারটা অনেকটা সহজ কিন্তু বড় দিন আর গরমে আসলেই কষ্টকর। শরীয়ত যেখানে সহজতা রেখেছে সেটা গ্রহন করাই মুমিনের জন্য কল্যাণকর। আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি।
শ্রদ্ধেয় রিদওয়ান ভাই, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন।
মুগ্ধ করার মত একটি অসাধারণ মিষ্টি গল্প মাশাআল্লাহ।
ভীষণ ভাল লাগলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর আপু।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারো ভালো লাগলো আপু ।
শরীর কেমন এখন আপু?
বারাকাল্লাহ ফীক।
শ্রদ্ধেয়া আপু, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন
সাথে থাকার জন্য আপনাকেও আন্তরিক মোবারকবাদ।
শ্রদ্ধেয়া মাহবুবা আপু, রমাদ্বানের এই অমূল্য মাসে আপনার দোআয় আমাদেরো শরীক রাখবেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন