একটি অনিন্দ্য সুন্দর বিকেল...
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ০২ মার্চ, ২০১৬, ০৪:০৫:৪২ রাত
আজ রবিবার, খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন নাজিয়ার জন্য-নাজিয়ার বোনদের জন্য! কিন্তু নাজিয়া ভুলে গেছে রবিবারের কথা, কোথায় জানি চলে গিয়েছিলো বিশেষ কাজে! ফোন হাতে নিয়ে দেখলো পঞ্চাশের বেশি মিসড কল! ইন্নালিল্লাহ! ফোন ভাইব্রেশনে ছিলো তাই সাউন্ড শোনে নি নাজিয়া। কল আসলো, ধরতেই অপর পাশ থেকে তাগাদা- আপনি এখনো আসেন নি? সব বোনেরা চলে এসেছেন! আমরা আপনার অপেক্ষায় বসে আছি, যত দ্রুত পারেন চলে আসুন! ফোন রেখে বাসায় আসলো নাজিয়া, রেডি হলো ঝটপট, হাত পা রীতিমত কাঁপছে, বোরখা খুঁজতে গিয়ে পাচ্ছে না, কোথায় রেখেছে মনে নেই! বোরখার নিচেরটা পায় আবার উপরের খিমার পাওয়া যাচ্ছে না! উফ! কি অস্থিরতা ! উৎকন্ঠায় মনে হচ্ছে ফুসফুসটা এখন ফেটেই যাবে। বোরখা একটা পেলো দিলো দৌড় বাইরে, ট্যাক্সি করে গেলে তাড়াতড়ি হবে, ভেবে ট্যাক্সি ডাক দিলো , কিন্তু তাকিয়ে দেখলো সাইডব্যাগ তাড়াহুড়োয় বাসায় ফেলে এসেছে ! কি হবে! জীবনের সবচাইতে সাংঘাতিক বিড়ম্বনার দুঃসহ একটি দিন পার করছে ভেবে ট্যাক্সির দরজা খুলতে চেষ্টা করে কোনোমতেই খুলতে পারছিলো না দরজা, টেনেই চলছে সর্বশক্তি দিয়ে নাজিয়া- এ্যাই এ্যাই কি হয়েছে ডাকে ঘুম ভাংগলো নাজিয়ার!
পাশে শুয়ে থাকা পতিজ্বী ওর অস্থিরতা দেখে হাতে মৃদু ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে দিয়েছে নাজিয়াকে! উৎকন্ঠিত নাজিয়ার ভয় তখনো কাটে নি এটা ভেবে ও কি দুঃস্বপ্ন দেখছিলো নাকি বাস্তবে ঘটছে এই ঘটনা?
সকাল থেকেই সেই দুঃস্বপ্ন ভূতের মতো তাড়া করে ফিরছিলো নাজিয়াকে! কেক বানানোর সমস্ত উপকরণ সামনে নিয়ে ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে আবারো চমকে উঠলো নাজিয়া। মাত্র এক ঘন্টা সময় আছে হাতে , এর মধ্যেই কেক বানানো, নোট নেয়া, আনুষাংগিক জিনিসপত্র গোছানো, সবাইকে ফোন দিয়ে স্মরণ করানো অনেক কাজ বাকি! ওভেন চালু করে দিয়ে ঝটপট কেক বানাতে লেগে গেলো, ৪৫ মিনিট লাগবে এর মধ্যেই বাকি কাজ গুছাতে হবে !
নাজিয়া যে শহরে থাকে, মাসে একটি রবি বারে সব বোনদের নিয়ে তালীমের আয়োজন করা হয়। লাস্ট তালীমে সবাই মিলে পরামর্শ করা হয়েছিলো তালীম শেষে পিঠার ব্যবস্থা করলে কেমন হয়? সব বোনেরা স্বতস্ফুর্ত ভাবে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন, তাই সেখানে বসেই কি কি পিঠা থাকবে, কে কোন দায়িত্ব পালন করবে সমস্ত প্রোগ্রামের শিডিউল করে ফেলা হয়েছিলো!
সব কিছু ঠিক থাকলেও সমস্যা দেখ দিলো অন্য খানে । আকাশ যে ভীষন মন খারাপের আঁচল জড়িয়ে নিয়েছে , নিকষ কালো মেঘের জাল সরিয়ে সূর্যের দেখা মিলা যে ভার! পুরো সপ্তাহ জুড়ে একই অবস্থা সাথে বিনা ঘোষনায় রিমঝিম বর্ষণ তো আছেই! ভেবে ভেবে অস্থির হয়েছে নাজিয়া তবু সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না কি করণীয়? আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলেছে সারাদিন মেঘলা আকাশ, সন্ধার পর বৃষ্টি হবে! মন থেকে দোআ করছিলো সমস্ত অনুষ্ঠানটি বাঁধা বিপত্তি ছাড়া সুন্দর ভাবে যেনো সমাপ্ত হয়!
রেডি হওয়ার ফাঁকে বারবার জানালা দিয়ে আকাশের মনের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো নাজিয়া। সমস্ত জিনিষপত্র নিয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে বেড়িয়ে পড়লো প্রোগ্রামের উদ্দেশ্যে!
পথে যেতে যেতে , গাড়িতে বসে মেসেজে,চ্যাটে, কল দিয়ে সব বোনদের সাথে যোগাযোগ করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো, আলহামদুলিল্লাহ বোনরা সবাই উপস্থিত থাকছেন!
যথাসময়ের আগেই পৌঁছে গেলেন , পথে কিছু বোনদের পেয়েও গেলেন। মহিলাদের নির্ধারিত স্থানে বসে দুরু দুরু করে কাঁপছিলো নাজিয়া, শেষ পর্যন্ত কি হতে যাচ্ছে ভেবে! দরজা দিয়ে একেক জন বোন যখন সালাম দিয়ে প্রবেশ করছিলো নাজিয়ার চোখে তখন শুকরিয়ার অশ্রু বিন্দুরা ঢেউ খেলছিলো হালকা স্রোতে ...
সব বোনেরা চলে আসলে আসরের সালাত আদায় করার পর তালীম শুরু হলো। সামনে উপবিষ্ট বোনদের দিকে ভীরু চোখে ধীরে ধীরে তাকিয়ে দেখলো আলহামদুলিল্লাহ সমস্ত রুম পরিপূর্ণ!
আলোচনা ছিলো সূরা ফাতির এর ২৭ থেকে ৩০ আয়াত পর্যন্ত। সবচাইতে বেশি ফোকাস করা হয়েছে ২৯ নাম্বার আয়াতের প্রতি-
যারা আল্লাহ্র কিতাব আবৃত্তি করে, নিয়মিত নামাজ পড়ে এবং তাদের আমি যে জীবিকা দান করেছি তা থেকে গোপনে এবং প্রকাশ্যে [দানে ] ব্যয় করে ; তারা আশা করে এমন এক ব্যবসার যার লোকসান নাই। ফাতির -২৯।
যখন আলোচনা চলছিলো , নির্ধারিত কিছু বোনেরা প্লেট সাজানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। আলোচনা শেষে উনারা সবাইকে সুন্দরভাবে পরিবেশন করলেন প্লেট সমেত হরেক রকমের পিঠা ! যা উপস্থিত বোনেরাই বানিয়ে এনেছেন। ভাপা পিঠা, তেলের পিঠা,চিতই পিঠা-ভর্তা মুখ শৈলী পিঠা, নারকেল- তিলের পুলি, মেরা পিঠা,পাটিসাপটা সাথে ছিলো বাচ্চাদের জন্য কেক এবং পিজ্জার ব্যবস্থা!
স্বাভাবিকভাবেই অনেক বোনেরা যারা পিঠায় পার্টিসিপেট করেন নি তারা অভিযোগ করছিলেন কেনো উনাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হলো না? যদিও আগেই ভেবে রাখা হয়েছিলো তালীম এবং পিঠা পর্বশেষে সবাইকে স্থানীয় মসজিদে দুই টাকা করে সাদাকাহ করার অনুরোধ করা হবে । ঘোষনা দিতেই সবাই রাজি হয়ে গেলেন খুব বেশী খুশী হলেন যারা পিঠা বানানোতে পার্টিসিপেট করতে পারেন নি।
সুবহান আল্লাহ! ঘোষনা ছিলো দুই এর কিন্তু বোনদের অন্তর সাদাকাহ করার ব্যাপারে অনেক প্রবল ! সবাই যার যার সামর্থ অনুযায়ী সাদাকাহ করলেন! কারো মনেই কোনো আক্ষেপ রইলো না আর!
বৃষ্টি আর পড়ে নি, সামান্য রিমঝিম শুরু হয়েছিলো সবাই যখন যারা যার আপনালয়ে ফিরে গিয়েছে তার অনেক পরে! বাসায় ফিরে এসে নাজিয়া জানালার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো, সূর্য তাঁর মুঠো মুঠো লাল আভা ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো আকাশ জুড়ে ! পশ্চিমাকাশের শেষ প্রান্তে সেই আভাটুকু মৃদু হাসির পরশ রেখে বিদায় নিচ্ছে সেদিনের তরে.....
মাগরিবের সালাত আদায় করে কৃতজ্ঞ হৃদয়ে সালাতের স্থানেই বসে ছিল নাজিয়া, মোবাইলের রিং টোন বেজে উঠতেই হাত বাড়িয়ে সালাম দিয়ে ফোন রিসিভ করতেই অপরপ্রান্তে এক বোনের কন্ঠ শুনতে পেলো । ভিজা গলায় উনি বলছিলেন বাসায় ফিরে মাগরিব পড়েই উনি কোরআন তিলাওয়াত করেছেন, নিজের কাছে দৃড় শপথ করেছেন আর কখনো সালাত এবং কোরআন মিস করবেন না, বলতে বলতে বোনটির গলা বুঝি ধরে এলো...........
নাজিয়ার সেই হাদিসের কথা মনে পড়লো - যারা দ্বীনের পথে চলে আল্লাহ তাঁদের জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অনন্ত জান্নাতের পথটাকে সহজ করে দিন, নিয়মিত সালাত আদায় এবং কোরআন তিলাওয়াতের তওফিক দান করুন, কুরআনকে নির্ভেজাল পথ প্রদর্শক রূপে বানিয়ে দিন।কুরআনের আলোক রশ্মির মাধ্যমে সকল বক্রতা, পথভ্রষ্টতা ও জাহিলী অন্ধকারের অতল গহ্বর থেকে আলোকিতো পথের সন্ধান দিন আমাদের সবাইকে আপনমনে দোআ করতে করতে বাঁধানহারা যে ঢেউ খেলা করছিলো নয়নসাগরে টপ টপ করে বিশাল ফোঁটায় তা এবার ভালোবাসার অশ্রু হয়ে ঝরতে রইলো অবিরাম................
বিষয়: বিবিধ
২৭১৪ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রথম মন্তব্যকারী হিসেবে আন্তরিক শুকরিয়া!
আশাকরি দেশে সবার সাথে প্রাণোচ্ছোল মুহূর্ত পার করছেন। শুভকামনা রইলো!
আপনাদের জন্য ও দোয়া রইলো।
আমার একটা পরামরশ থাকবে.. আপনারা একটা সমাজকল্যান ফান্ড তৈরি করুন, প্রতিদিন প্রোগ্রাম শেষে যে যা পারে ঐ ফান্ডে জমা দিবে। হয়তো দেখবেন ২/৩ মাস পর পর ঐ ফান্ডে অনেক টাকা হয়ে গেছে। এগুলো দেশের শহীদ পরিবারের এতিম সন্তানদের জন্য পাঠিয়ে দিয়েন। যদিও আমন্ত্রন জানাননি, তবুও খোজ করে আপনার ব্লগ বাড়িতে চলে আসলাম।
জেনে ভালো লাগলো ভাবী দ্বীনের কাজে নিয়োজিত আছেন , আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ উনাদের হিফাজত করুন।
পরামর্শের জন্য শুকরিয়া! আমন্ত্রণ পাঠিয়েছিলাম মনে হয় ডাকপিয়নের মনে ছিলো না যথাসময়ে...
আপনার গতকালের পোস্ট পড়েই আমার এই লিখার সূচনা, তাই অনেক অনেক শুকরিয়া এবং শুভকামনা!
আচ্ছা আপু আপনার থেকে শুনতে চাই, কিভাবে আপনার এই কাজের প্রথম সুচনা করেছিলেন?
বিস্তারিত জানতে চাই।
জাযাকুমুল্লাহ খাইরান।
তাহলে তো ভাইয়া বিশাল পোস্ট লিখতে হবে ইনশা আল্লাহ আমি লিখে যাবো ধারাবাহিকভাবে সময় করে...
দোআ করবেন আমাদের জন্য! আচ্ছা এটাকে গল্প হিসেবে না নিয়ে সিরিয়াসলি নেয়ার কারণ টা কি?
বারাকাল্লাহু ফিক।
কিন্তু যতবারই উদ্যোগ নেই ততবারই কোন না কোন বাধা এসে যায়, প্রথম প্রথম লজ্জ, তারপর বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততা। দুৎএকদিন তালীম করে ক্ষ্যান্ত হয়ে যাওয়া। অলসতা ভাব কাজ করা। সব মিলিয়ে পেরে উঠতে পারি না।
এজন্য আপনার কারগুজারী জানলে হয়তো একটা পথ বাহির হবে। জাযাকিল্লাহ
অনেক অনেক শুকরিয়া আপু! দোআ করবেন , বারাকাল্লাহ ফিক।
আপনার কমেন্ট মানে তো ডুমুরের ফুল ,কালেভ্রদে মিলে !
অনেক অনেক শুকরিয়া!
শুকরিয়া!
উৎসাহমূলক মন্তব্যের জন্য অন্নেক শুকরিয়া জানবেন, দোআ প্রার্থী! শুভকামনা রইলো!
আমার বন্ধু আমার পেছনে দীর্ঘ এক বছর সাধনার পর একদিন রাতে যখন মেসেজ করে বলি, আমি তোদের একজনা হতে চাই। শুনে সে যে কত্তো খুশি হয়েছিল!
আপনাদের পথচলাকে আল্লাহ সহজ করে দিন।
ইসলামের প্রতিটা বিষয় কল্যানকর, দাওয়াতী কাজের উপারীতা এবং ফজিলত বুঝে গেলে কেউ পিছিয়ে থাকতে চাইবেন না নিশ্চিত বলতে পারি!
আল্লাহ আমাদের কে তাঁর দ্বীনে রহাদিম এবং খাদিমা হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন।
আমিন উত্তম দোআয়, জাযাকাল্লাহ খাইর।
ইসলামের প্রতিটা বিষয় কল্যানকর, দাওয়াতী কাজের উপারীতা এবং ফজিলত বুঝে গেলে কেউ পিছিয়ে থাকতে চাইবেন না নিশ্চিত বলতে পারি!
আল্লাহ আমাদের কে তাঁর দ্বীনে রহাদিম এবং খাদিমা হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন।
আমিন উত্তম দোআয়, জাযাকাল্লাহ খাইর। কী বোর্ডে ক অনেক ঝামেলা করছে, খাদিম হবে!
অঃনিশেষ শুকরিয়া জানবেন।
আলহামদুলিল্লাহ বোনদের সংগ আসলেই অকৃত্রিম অশেষ নিয়ামত । আপু অনেক ভালো লাগলো আপনাকে পেয়ে, খুব মিস করি কিন্তু আপনার উচ্ছল লিখা এবং প্রাণবন্ত কমেন্ট!
আমীন।
সুন্দর ও আন্তরিক একটি দাওয়াতি কার্যক্রমের ঘটনা শেয়ার করেছেন
আল্লাহ আপনাকে , আমাকে , আমাদের সবাইকে কবুল করুন …
Aamin
আপনার আন্তরিক উপস্থিতি এবং চমৎকার মন্তব্য ও আন্তরিক দোআর জন্য অঃনিশেষ শুকরিয়া! আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন