কর্ডোভা ঃ এক কিংবদন্তী ইতিহাস ...
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:৩৭:৫৫ রাত
কর্ডোভার ইতিহাস জানার পর প্রত্যেকের ভিতর সুপ্ত আকাংখা জন্মায় একবার হলেও স্বচক্ষে মুসলিম ঐতিহ্য, স্পাপনাগুলো দেখার, পরিচিত হওয়ার! স্টুডেন্ট লাইফে আন্দালুসিয়া প্রদেশের সাথে পরিচয় হয়েছিলো সাইমুম সিরিজের মাধ্যমে , যদিও তখন বোঝার গভীরতা বা আবেগ খুব একটা প্রকট ছিলো না।
পরবর্তীতে যখন ইতালিতে এলাম, এখানে স্কুলে ভর্তি হলে আমাদের সাইন্স ও ম্যাথ টিচারের কাছ থেকে গল্প শুনেছিলাম কর্ডোভা, গ্রানাডা সহ সমস্ত আন্দালুসিয়া প্রদেশের। টিচার নিজে গিয়েছিলেন এই জায়গাগুলো ভ্রমন করতে এবং উনি যখন ক্লাসে বর্ণনা করছিলেন, ইউরোপের রেঁনেসা, জ্ঞান- বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান, শিল্পিক স্থাপনা, জ্যামিতি, ফিলোসফি- প্রথমবারের মতো আমার ভিতরে জেগে উঠেছিলো আন্দালুসিয়ার এই স্থান গুলো ভ্রমনের অদম্য ইচ্ছা !
সিয়েররা মরেনা পর্বতচূড়া আর গোয়াদেলকুইভার নদীর স্রোতধারায় সিক্ত এক অপূর্ব প্রকৃতিক পরিবেশে যে সৌন্দর্য কীর্তি সমস্ত মুসলিম সভ্যতাকে সগৌরবে বিশ্ববাসীর নিকট উপস্থাপন করে তার নাম কর্ডোভা । ইউরোপের বাতিঘর নামে খ্যাত এই কর্ডোভাতে ৭০০ সালে প্রথমবার মুসলিমরা আগমন করে । সময়ের সাথে মুসলিমরা রেখে যায় তাঁদের স্থাপনা শিল্প এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজ্যে তাদের অবদান। তখন থেকেই রচিত হয় কর্ডোভার এক কিংবদন্তী গৌরবোজ্জল ইতিহাসের!
সিদ্ধান্ত হলো মাইক্রোবাস নিয়ে কর্ডোভা যাওয়া হবে, এতে সুবিধা হলো আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী থেমে যাত্রা বিরতি দিয়ে ভ্রমণ করা যাবে।
প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র আমরা আগের রাতেই গুছিয়ে ফেলেছিলাম। সকালে রান্না ঘরে এসে দেখি আফরোজা পরোটা ভাজছে, দুজনে মিলে বাকি কাজ শেষ করলাম। সকালের নাস্তা হিসেবে ছিলো কিমা রোল পরোটা , সিদ্ধ ডিম , আর ফ্লাক্সে লেমন টি । সবকিছু ব্যাগে নিয়ে দু পরিবার শুরু করলাম সফর।
শীতের ঋতু, প্রভাত ধীরপদে অনন্ত আকাশের মেঘ ভেদ করে চুপিসারে উঁকি দিচ্ছিলো। আমরা ফজরের সালাত আদায় করে রওয়ানা হলাম। তখনো দিগন্ত আঁধারের কালো চাদরে ঢাকা ।
গাড়ি থেকে তোলা সূর্যোদয়ের ছবি..)
মাদ্রিদ থেকে কর্ডোভার গাড়িতে দূরুত্ব প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার। A -4 ধরে গাজী হাসান ভাইয়ার সফরের দোআর মাধ্যমে শুরু হলো আমাদের পথচলা....
হাইওয়েতে সাঁ সাঁ করে ছুটে চলছিলো আমাদের গাড়ি সাথে সাথী হয়ে ছিলো সদ্য জাগ্রত দিগন্তের রবিরশ্মি..
ঘন্টাখানেক পর আমরা থামলাম একটি আউতো গ্রিলে, এখানে নেমে সবাই নাস্তা সেরে নিলাম।
ঘোড়া ....
পথে পথে যেতে যেতে হাসান ভাই আর আব্দুল মুকীম ভাইয়ের রসাত্নক নানান টপিকের গল্পের ফল্গুধারায় ভ্রমণের অন্য রকম স্বাদ বৃদ্ধি করেছিলো! সাথে ছিলো দু পাশের সতেজ সবুজ প্রকৃতির মুগ্ধতা ....
এ জায়গাটা দেখে গ্রান্ড ক্যানিয়নের মতো লাগছিলো
আমরা যখন কর্ডোভা সীমান্তে প্রবেশ করি তখন বেলা প্রায় বারোটা গড়িয়ে, সূর্য এবার তার প্রখরতা মেলে ধরতে মোটেই কৃপনতা করেনি, তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছিলো, এদিকের আবহাওয়া বেশ উষ্ণ , সামার মনে হচ্ছিলো।
শহরে প্রবেশের পূর্বে আমরা গাড়ি থামিয়ে সবাই ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নিলাম, কারণ শহরের ভিতর নিরিবিলি বাথরুমের সন্ধান পাওয়া কষ্টকর হতে পারে এই ভেবে।
কর্ডোভা প্রবেশ করলাম মাত্র...
দূর থেকেই দেখছিলাম মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা খেজুর গাছ..
গাড়ি পার্ক করতেই রাস্তার পাশে নিকটস্থ পার্কে স্থানীয় মসজিদ পেয়ে গেলাম। মহিলা ও পুরুষদের আলাদা গেটে প্রবেশ ব্যবস্থা আছে, প্রবেশ করে জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করলাম।
স্থানীয় মসজিদ ..
পার্কের একাংশ..
কর্ডোভার যে সৌন্দর্য সবচাইতে বেশি আকৃষ্ট করেছে তা হলো রাস্তার দুপাশে সারি সারি খেজুর এবং কমলা গাছ।প্রতিটা বাড়ি সাদা রংএর আর চত্বরে কমলা গাছে ঝুলন্ত কমলা পথিকের নজর কেড়ে নিবেই!
বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনে কর্ডোভান স্টাইলে ফুল গাছ..
পার্কে প্রবেশ করেই পানির ফোয়ারা..
গাছে ঝুলন্ত কমলা...
সালাত আদায়ের পর অনেক ঘুরেও মূল সেন্টারে প্রবেশ এর রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না, অতপর সিদ্ধান্ত হলো জেন্টস গ্রুপ আগে চলে যাবে, আমরা লেডিস গ্রুপ গাড়ি নিয়ে পরে যাবো। অনেক সময় ঘুরেও গাড়ি নিয়ে সেন্টারে ঢোকার রাস্তা পেলাম না, পথচারীরা জানালেন বাইরের গাড়ি সেন্টারে ঢুকতে পারবে না। হাসান ভাই আমাদের ফোনে বললেন ট্যাক্সি নিয়ে চলে যেতে, আমরা খুব অল্প সময়ে চলে গেলাম মূল সেন্টারে যেখানে রয়েছে কর্ডোভার মূল ঐতিহ্য La Mezquita di Cordoba বা কর্ডোভার মসজিদ।
এখান থেকে শুরু হলো মসজিদে যাত্রা ...
ঘোড়ার গাড়ি দেখে তো আনন্দ হচ্ছিলো, পরে চড়বো এই ভেবে সামনে এগিয়ে চললাম...
হাসান ভাইয়া আমাদের বার মসজিদে প্রবেশের টিকিট কিনে রেখেছিলেন, আমরা উনাকে অনুসরণ করে ভিতরে প্রবেশ করলাম ভিতরে...
কর্ডোভার মাটিতে পা রাখার পর থেকেই অদ্ভুত এক শিহরণ টের পাচ্ছিলাম, সেটা ক্রমেই বাড়ছিলো মসজিদে প্রবেশের সময়!
প্রতিটি মুসলিমের কাছেই মসজিদ এক পবিত্র স্থানের নাম, এ জায়গাটিকে ঘিরে থাকে আমাদের অনেক সন্মান , ভালোবাসা ও আবেগ। আমরাও এমনি ভালোবাসা ও সন্মান নিয়ে প্রবেশ করেছিলাম কিন্তু ভিতরে যাওয়ার পর ভারি হয়ে আসা বুকের চাপা দীর্ঘশ্বাস আর আহাজারি ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না !
মসজিদটির প্রথম কাজ শুরু করেন আবদ আল রহমান প্রথম ৭৮৫সালে। আব্দুল আল -রাহমান দ্বিতীয় ৮৪৮ সালে এর পরিবর্ধন করেন এবং আবারো আল হাকাম দ্বিতীয় ৯৬১ সালে এবং আল মানযার ৯৮৭ সালে শেষবারের মতো এর পূনর্বার পরিবর্ধন করেন। মোট চার বারে মসজিদটির স্থাপনা কাজ সম্পন্ন হয়। বলা হয়ে থাকে মসজিদটির প্ল্যান করেছিলেন বিখ্যাত সিরীয়ান মুসলিম আর্কিটেক্ট ।
এভাবেই ইউরোপের বুকে প্রথমবারের মতো জন্ম নেয় সবচাইতে সুন্দর এবং বৃহৎ মসজিদ।
২৩হাজার বর্গমিটারের মসজিদটিতে রয়েছে ৮৫৬টি স্তম্ভ, বর্তমান একটি প্রবেশদ্বার ও বহির্গমন দ্বার থাকলেও পূর্বে ১১টি প্রবেশ পথ আর ৯টি বহির্গমন পথ ছিলো। এখন এগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাথর, সোনা ও রূপা দিয়ে তৈরি হয়েছে মোজাইক , এছাড়া গ্রানাইট আর মার্বেল পাথরের সমন্বয়ে করা হয়েছে স্তম্ভ গুলো, যা লাল আর সাদা রং এর এক অভূতপূর্ব নান্দনিক সৌন্দর্যের রুপ মেলে ধরে।
বাইরের উষ্ণ মৃদু গরম হাওয়া থেকে যখন সুউচ্চ মসজিদের ভিতর ঢোকার পর হঠাৎ করেই ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছিলো । ভিতরে জ্বলছিলো মৃদু আলো। সামনের দিকে তাকাতেই চোখ পড়লো লাল আর সাদা মার্বেল পাথরের সমন্বয়ে গড়া স্তম্ভ যা উপরের দিকে ঢেউ খেলানো এক বিশেষ জ্যামিতিক মাপ ও আকারে পুরো মসজিদ জুড়ে আছে , তাই আপনি যে এ্যান্গেল থেকেই তাকান একই মাপ দেখবেন।
ছাদের কারুকাজ
আমাদের প্রত্যেের চোখ খুঁজে ফিরছিলো মিহরাব এর স্থানটুকু । কিছুটা সামনে গিয়েই আমরা পেয়েগেলাম মিহরাব! মিহরাব এর স্থানটুকু এখনো অক্ষত আছে। অতি সোনালী, রুপালী আর সবুজের সংমিশ্রনে চমৎকার কারুকার্যে আ্যারাবিক ক্যালিগ্রাফির সমন্বয়ে মিহরাবের স্থানটিকে অতি সন্মানীয় বিশেষ স্থান হিসেবে আলাদা করে তুলে ধরছিলো!
হাসানভাই মসজিদে ঢুকেই মিম্বার খুঁজছিলেন । কিন্তু কোথাও মিম্বার এর নিশানা দেখা যাচ্ছিলো না। মিহরাবের কিছুটা পাশেই কাঠের কালো মতো আসবাব দেখে হাসান ভাই খুশি হয়ে উঠলেন -পাওয়া গেছে মিম্বার এই বলে। কিন্তু কাছে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেলো এটা হলো সেই আসবাব যার এক পাশে থাকে ক্রিশ্চান পোপ আরেক পাশে ক্রিশ্চান বিশ্বাসী যিনি নিজের পাপ মোচনের জন্য পোপের কাছে এসে পাপ মোচনের আবেদন জানান।
মিহরাব..
উপরের দিকে যতটুকু চোখ যায় ছাদে রয়েছে উচ্চতর জ্যামিতিক কারুকার্য। যদিও ক্রিশ্চিয়ানরা যখন দখন করে নিয়েছে এটাকে পরবর্তীতে ওদের চার্চ হিসেবে বানিয়েছে তখন ওরা ঐ জ্যামিতিক কারুকার্যের সাথে ওদের ধর্মীয় এন্জেলদের ছবিও যোগ করে দিয়েছে!
দু পাশের দেয়ালে তাকালে চোখ শুধু অশ্রু -বিলাপ ধ্বনির নীরব জলপাত করবে! মূর্তি আর মূর্তি! হায়রে সময়! এক সময় যে মিনার থেকে আযানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসতো, দলে দলে মুসুল্লিরা নামাযের পদচারণা শোনা যেতো,খালি পায়ে মসজিদে ঢুকে ইমামের পিছনে নামায পড়তো , সেখানে আজ সেই মিনারে ঝুলছে মূর্তি! নেই কোনো আযানের ধ্বনি, নেই নামাযের অনুমতি! মুসলিমদের ভিতরে ঢুকে নেই নামাযের সুযোগ!
সুউচ্চ জানালা দিয়ে আসা সূর্যের আলো আর রং এর খেলা...
যে আনন্দ নিয়ে এসেছিলাম মসজিদ দেখতে ঢুকে দেখলাম মসজিদকে ক্ষত বিক্ষত করে তৈরী করা হয়েছে গীর্জায়! মসজিদের মূল অস্তিত্ব নেই বললেই চলে! শুধু স্তম্ভ, মেঝে আর সামান্য কিছু জায়াগা অবিকৃত রেখে সমস্ত মসজিদকেই গীর্জায় রুপান্তর করা হয়েছে! ক্রিশ্চিয়ানরা ক্ষমতা লাভ করার বেশ কিছু সময় পর ১৫২৩ সালে একে ক্যাথেড্রালে পরিনত করা হয়!
আশে পাশে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম কিন্তু দীর্ঘশ্বাস আর বেদনা অনুভব ছাড়া কিছুই করার ছিল না! ভিতরে গুমড়ে উঠছিলো না বলা অনেক কথা! চোখ ও যেনো বাঁধ মানতে চাইছিলা না আর! চারপাশের স্তম্ভগুলো থেকে ভেসে আসছিলো সেই মুসলিম শ্রমিকদের রক্ত আর ঘামের শ্রমে গড়ে তোলা এই সূউচ্চ প্রাসাদের কান্নার করুন আর্তনাদ! কতোইনা কষ্ট করেছিলেন সেই সময়ের আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা ! আজকের এই তৈরীকৃত মসজিদ দেখে আনন্দে আপ্লুত হতে পারতাম যদি উনাদের রেখে যাওয়া আমানত অবিকৃত থাকতো! হায় আফসোস!
বুকের চাপা দীর্ঘশ্বাস আর ভগ্ন হৃদয়ে ধীর পায়ে বেড়িয়ে এলাম সবাই। মসজিদের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখলাম মসজিদের দেয়াল ঘেঁষা প্রবেশ পথের দরজা গুলো সব তালা বদ্ধ ! শুধু দরজাই তালাবদ্ধ হয়নি মুসলিম সম্রাজ্যের গৌরবোজ্জল ইতিহাসও আজ রুদ্ধ তালাবদ্ধ.।.।.।
বাহির থেকে...
দেয়ালের ভগ্নাংশ...
সরু রাস্তায় বাড়িঘর...
যে মুসলমানদের হাতে প্রজ্বলিত জ্ঞানের শিখায় স্পেন হয়ে উঠেছিলো সূর্যকরোজ্জ্বল ভূমি, তৈরী করেছিলো বিদ্যাশিক্ষার তীর্থস্থান এই স্থান আজ মুসলিমদের চাপ কান্না , রুদ্ধ শ্বাস আর শোকের ছায়ায় স্তব্ধ!
রোমান ব্রীজ গোয়াদেলকুইভার নদীর বুকে...
হেঁটে চলে আসলাম গোয়াদেলকুইভার নদীর উপর স্থাপিত রোমান ব্রিজের কাছ। ২৪৭ মিটার লম্বা আর ৯ মিটার প্রস্থের এই ব্রিজটি দাঁড়িয়ে আছে মোট ১৬টি খিলানের উপর। এটি তৈরি হয়েছিলো রোমান সাম্রাজ্যের সময় কালে ,পরবর্তীতে এর পূনর্বার সংস্কার হয়!
পানির স্রোত..
ব্রীজটির উপর দাঁড়িয়ে সবাই তন্ময় হয়ে একমনে নিচের পানির স্রোতধারা দেখছিলাম, আমাদের সবার মনে তখন ঘুরপাক খাচ্ছিলো মুসলিম সাম্রাজ্যের বর্তমান অধঃপতিত অবস্থায় আমাদের করণীয়! আবার কি কখনো এই স্পেনের মাটিতে, ইউরোপে, আল্লাহ জমীনে ইসলামের পতাকা উড়বে? বিজয় গাঁথা আঁকা হবে?
এর মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হতো রাজবাড়িতে, রাজবাগানে....
বিকেল গড়িয়ে বেলা পড়ে এসেছিলো, পড়ন্ত সূর্যের আলো ব্রিজ থেকে নিয়ে সমগ্র মসজিদ এড়িয়েকে ছেঁয়ে আছে, আলো -ছায়ার লুকোচুরিতে কেমন এক বিষন্নতার ছোঁয়া আঁকা কর্ডোভার জমিনে, সেই বিষন্নতা যেনো গোয়াদেলকুইভার তার দু চোখে অশ্রুর কাজল মেখে নিয়েছে...
ব্রীজে দাঁড়িয়ে আপনমনে হারিয়ে গিয়েছি , ভাবছিলাম পরায় ১৩০০ বছর আগের কথা, এই খানে দাঁড়িয়ে ছিলেন হয়তো সেনাপতি, মুসলিম আমীর, সৈন্য সামন্তগন। বক্তব্য- আলোচনা-পরামর্শ করেছেন ! তেরোশো বছরের লম্বা সিঁড়ি পেড়িয়ে আমরাও হাজির কিন্তু আহাজারি ছাড়া আমাদের আর কোনো বক্তব্য নেই!
সূর্য তাঁর প্রখরতা হারাবার পূর্বেই আমরা গাড়ির কাছে চলে এলাম , শুধু দীর্ঘশ্বাস নয় এক নতুন সোনালী সম্ভাবনার আলোকময় সূর্য আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের দ্বারা ইউরোপের আকাশে জ্বলে উঠুক, নিভে যাওয়া আলোকে অন্ধকার থেকে পূনর্বার আলোকোজ্জল করে তুলুক এই প্রত্যাশা নিয়ে....
বিষয়: বিবিধ
৩৬৯৭ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনুপম জীবন্ত বর্ণনার সাথে মুগ্ধতার পরশে মাখা ছবিগুলো মুসলমানদের চেতনায় কষাঘাত করুক, আবার বীর সিপাহী মুসলমানগণ গর্জে উঠুক এবং হৃত গৌরব ছিনিয়ে আনুক এই প্রত্যাশা আমারও।
যদিও অবুঝ ভগ্ন মন আর ব্যথাতুর চোখ দুটো বার বার ছল ছল হয়ে উঠছিল।
বিবেকের দরজায় নাড়া দেয়ার মত একটি প্রাণবন্ত লিখনী উপস্থাপন করার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর। ছোটআপি।
তারা ঝিলিমিলি আর লাল গোলাপের শুভেচ্ছা একরাশ ভালোলাগার পরশ বুলিয়ে দিলো! শুকরিয়া
প্রাণবন্ত উপস্থিতি এবং উচ্ছল, সহমর্মী মন্তব্যের জন্য আন্তরিক শুকরিয়া!
বারাকাল্লাহু ফিক।
ঘোরতে ঘোরতে , আপনার সাথে হারিয়ে গিয়েছিলাম
ছবি গুলো তে যেন প্রানের ছোয়া পেল
পুরো কাহিনি
অনেক অনেক শুকরিয় আপনাকে সাথে থাকার, অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য!
শুভকামনা জানবেন।
তাই নাকি? পোস্ট নাই কেনো?
আমাদেরো একই অনুভূতি ছিলো, যাওয়ার সময় যতোটা আনন্দিতো ছিলাম ফেরার পথে ততোটাই মন খারাপ ছিলো!
শুকরিয়া,শুভকামনা জানবেন
আপনাদের ওখানকার চমৎকার আবহাওয়ার কথা জেনে খুব ভালো লাগলো । ইটালিতে এবার স্নো পড়ে নি তবে বেশ কিছুদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছিলো, আজ আমাদেরো আকাশের মন ভালো.....
আপনাদের উৎসাহ সত্যি অনেক বেশি অনুপ্রেরণা জোগায়! শুকরিয়া,শুভকামনা জানবেন, দোআ প্রার্থী
ভেবে শুধু অবাক এবং আনন্দিতো হয়েছিলাম সেই অতীতে এতো সুন্দর, সুউচ্চ কারুকার্যময় মসজিদ স্থাপনায় কত দূরদর্শিতা, মেধা এবং দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন মুসলিমরা !
অনেক খারাপ লেগেছে মূর্তিগুলো দেখে!
আপনিও দেখেছেন মনে হচ্ছে?
শুকরিয়া!
ওখানে গেলে দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারি হয়ে আসবে, বুকের গুমোট ভাবতা কন্ঠস্বর রোধ করে তুলবে!
তবু এতোখানি স্বান্তনা, আমাদের পূর্বপুরুষ গন আমাদের জন্য এক অনিন্দ্য সুন্দর স্থাপনার নিদর্শন রেখে গেছেন, আমরা যেনো না ভুলি উনাদের অতীত , আদর্শ...
শুকরিয়া!
এই ঘটনাটি আমার জীবনের অনেক অনুপ্রেরণময় একটি অংশ হয়ে থাকবে, যা আমাদের দেখা হয়েছে একসাথে সপরিবারে এবং খুব ভালোবাসার কিছু মানুষদের সাথে এবং এই অভিজ্ঞতা টুকুকে শেষ পর্যন্ত কিছু ভাষায় আমি প্রকাশ করেতে সমর্থ হয়েছি! শুধু তাই নয় আমাদের সকলের পছন্দের বিডি পরিবারের ভাই বোনদের সাথেও শেয়ার করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ! এতাই বড় প্রাপ্তি !
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি এবং আন্তরিক অভিব্যাক্তির জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া!
আমি নিজেই অনিয়মিত ব্লগে কি আর বলবো
অনেক ধন্যবাদ আপু ।
এই ঘটনাটি আমার জীবনের অনেক অনুপ্রেরণময় একটি অংশ হয়ে থাকবে, যা আমাদের দেখা হয়েছে একসাথে সপরিবারে এবং খুব ভালোবাসার কিছু মানুষদের সাথে এবং এই অভিজ্ঞতা টুকুকে শেষ পর্যন্ত কিছু ভাষায় আমি প্রকাশ করেতে সমর্থ হয়েছি! শুধু তাই নয় আমাদের সকলের পছন্দের বিডি পরিবারের ভাই বোনদের সাথেও শেয়ার করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ! এতাই বড় প্রাপ্তি !
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি এবং আন্তরিক অভিব্যাক্তির জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া!
আমি নিজেই অনিয়মিত ব্লগে কি আর বলবো
ডেনমার্ক আসার ইচ্ছে আছে স্পেশালি কোপেনহেগেন! আমার জিওগ্রাফিতে ডেনমার্ক নিয়ে নোট করতে হয়েছিলো , তখন থেকেই ইচ্ছা !
আরেকটা হলো জার্মানের বার্লিনের ওয়াল ! এটা নিয়েও পড়তে হয়েছিলো! ইনশা আল্লাহ ...
পুটির মা কে ঘরে তো আনেন আগে!
স্বচক্ষে দেখলে আপনার অনুভূতিও জীবন্ত হয়ে উঠবে আমার বিশ্বাস! অনেক দোআ ও শুভকামনা জানবেন!বারাকাল্লাহ ফিক!
আপনার লিখাটা পড়তে পড়তে মনের অজান্তে দু-চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো। ইনশাআল্লাহ মুসলিমদের বিজয় আবার আসবেই।
আপনাকে ধন্যবাদ
সাইমুম সিরিজে পড়া স্বচক্ষে দেখা অনুভূতিটা একবারে আলাদা! সময় করে পোস্টে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য আন্তরিক শুকরিয়া। দেশে কি গিয়েছিলেন?
শুকরিয়া!
মুসলিম স্থাপত্যের স্পেন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা পাই নসী হিজাযীর উপন্যাস পড়ে। সীমন্ত ঈগল, শেষ বিকালের কান্না, প্রত্যুষের সুর্যোদয় সহ কিছু উপন্যাস পড়ার সময় আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল, প্রায় সাপ্তাহ খানিক দুনিয়ার সাথে যেন আমার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ছিল, আমার সহকর্মীরা বলতেন, চলুন যাই কর্ডোভা, গ্রানাডা, সেভিল, মালাগা ঘুরে আসি।
আমার তখন এ বিষয়ে আরো বিস্তারীত জানতে প্রচুর আগ্রহ ছিল, তারেক বিন যিয়াদের বিরত্বের সাথে পরিচয় হলাম।
পরবর্তীতে মুসলিম শাষকদের অবহেলার সুযোগে খৃষ্টান রাজা ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলাদের বিশ্বাস ঘাতকতায় লক্ষলক্ষ মুসলমানের জীবন বিসর্জনের মাধ্যমে ডুবে গেল এক সোনালী ইতিহাস।
আজ শুধুই স্মৃতির পাতা উল্টানো ছাড়া কিছুই করার নেই। কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজানোর চেয়ে মুসলিমদের মাঝে সেই তারেক বিন যিয়াদ তৈরী করাই মুসলমানদের মূল এজেন্ডা হওয়া প্রয়োজন। আফসোসের বিষয় হলো মুসলমানরাই আজ মুসলমানদের নিয়ে জঙ্গী জঙ্গী খেলায় মত্ত।
আপনার সুন্দর বর্ণনা ও ছবিগুলো সত্যিই আমার অন্তরে দাগ কেটেছে, অনেক অনেক শুভ কামনা, জাযাকিল্লাহু খাইরান।
আমাদের বাসায় গল্পের বই পড়া একেবারে নিষিদ্ধ ছিলো, যা পড়তাম লুকিয়ে পড়তে হতো! বিয়ের পড় যাখন পড়ার স্বাধীনতা পেলাম তখন নসীম হিজাজীর সন্ধান পাই নি!
কর্ডোভা, গ্রানাডা, সেভিল, মালাগা এগুলো সব খুব কাছিকাছি কিন্তু আমাদের যাওয়ার সময় হয়নি । সাথে বাচ্চারা ছিলো আর এমনিতেও সারাদিন ঘুরে সবাই যথেস্ট টায়ার্ড ছিলাম , খুব ইচ্ছে ছিলো গ্রানাডার আল হামারা প্রাসাদ দেখার!
চমৎকার মন্তব্য এবং অনুভূতি ব্যক্ততার জন্য আন্তরিক শুকরিয়া! বারাকা আল্লাহু ফিক।
.
.
স্পেনে এহন দেহার তেমন কিছুই নাই, সব ধুইয়ে মুইছে ছাফ কইরে ফেলিছে... এইহানে আমি দুই মাসের বেশ থাকপো না...
দুই মাস তো অনেক সময়, আমরা সব মিলিয়ে নয় দিন ছিলাম, ছুটি কাটিয়ে হাঁপিয়ে গিয়েছিলাম!
শুকরিয়া।
আপনাকেও আন্তরিক শুকরিয়া জানাই সময় করে পোস্টটি পড়া এবং অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য!
বারাকাল্লাহু খাইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন