"জ্ঞান অর্জনের কিছু আদব"
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১০ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:১৪:৫৩ রাত
জ্ঞান এর সঠিক উপমাকে আলো বলা যায়। এই আলো মুমিনের জীবনকে সমৃদ্ধ করে, এই আলো অন্ধকারে ওৎ পেতে থাকা শত্রু সম্পর্কে সচেতন করে।
পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম বাক্য ‘ইকরা’ অর্থাৎ পড়। যে যত বেশি পড়তে পারবে সে তত বেশি জানবে আর যে যত বেশি জানাবে সে তত বেশি জ্ঞান অর্জন করবে। জ্ঞান অর্জনের কোনো শেষ নেই, দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত পড়তে হবে। জ্ঞানই চৈতন্যবোধ সৃষ্টি করে। এই চৈতন্যবোধের ভেতর দিয়ে মানুষ আত্মপ্রকৃতিকে জানতে পারলে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী হয় তেমনি জাগতিক জ্ঞান ও অর্জন করতে পারে।
নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মূল শর্ত হচ্ছে আত্মসংস্কার।ব্যক্তির নিজের মধ্য লুকিয়ে থাকা কুপ্রবৃত্তিগুলো বিশ্লেষণ করে তা সমূলে নির্মূল করার নাম আত্মসংস্কার বা আত্মশুদ্ধি। এই আত্নশুদ্ধি সম্ভব কোরআন ও হাদীসের আলোকের জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যমে এবং তা বাস্তব জীবনে প্রতিফলনের মাধ্যমে।
ইসলাম প্রত্যেক মুসলিমের ওপরে জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরজ ঘোষণা করেছে। যারা জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন এবং তিনি আল-কোরআনে জানিয়েছেন জ্ঞানীদের তিনি উচ্চ মর্যাদা দান করবেন!
‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহ যাদেরকে জ্ঞান দান করেছেন তাদেরকে উচ্চমর্যাদায় উন্নীত করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত।’ (মুজাদালাহ ৫৮/১১)
হাদীসে এসেছে-
আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অর্জন করার উদ্দেশ্যে পথ চলবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দিবেন। (তিরমিযী হা/২৬৪৬ সনদ সহিহ)
সবার আগে একজন জ্ঞান অন্বেষণকারীকে মৌলিক কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে প্রখ্যাত তাবেয়ী আবদুল্লাহ বিন আল মুবারক এর উক্তি টি সকল সময়ের জ্ঞান অর্জনকারীদের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। উনি বলেছেন- "আমি ত্রিশ বছর ধরে আদব শিখেছি আর জ্ঞান চর্চায় সময় দিয়েছি বিশ বছর।"
জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আদব এর উল্লেখ করছি-
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-
“যে জ্ঞানের সাহায্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব, যে ব্যক্তি শুধু দুনিয়া লাভের জন্য তা অর্জন করবে, কিয়ামতের দিন সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না”। (আবু দাউদ, ইবন মাজাহ)
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁর শিক্ষার্থীদের এভাবে উপদেশ দিতেন -
"তিনের যে কোন একটি উদ্দেশ্য নিয়ে জ্ঞান অর্জন করো না: অজ্ঞকে হেয় প্রতিপন্ন করতে, অথবা ফুকাহাদের (বিদ্বানদের) সাথে তর্কে লিপ্ত হতে, অথবা তোমার প্রতি লোকদের মনোযোগ আকর্ষন করতে। তোমার আমল ও কথার দ্বারা তাই অনুসন্ধান কর যা আছে আল্লাহর নিকট। কেননা আল্লাহর নিকট যা আছে তা অবশিষ্ট থাকবে আর বাকি সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে"।
ইবন আল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্নিত হয়েছে যে, প্রখ্যাত তাবেয়ী আল হাসান আল বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
“কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর নামে, আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান লাভের আশায় কোন জ্ঞান অর্জন করে, তবে সে সফল হবে। আর কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য জ্ঞান অর্জন করে, তাহলে না সে তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে, আর না তার অর্জিত জ্ঞান তাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করবে”।
ইবন কুদামাহ (রহিমাহুল্লাহ) “মুখতাসার মিনহাজুল কাসিদীন” বইতে বলেছেন:
“নিশ্চয়ই সমস্ত মানবজাতি ক্ষতিগ্রস্ত শুধু তারা ছাড়া যাদের জ্ঞান আছে, এবং সমস্ত জ্ঞানীরাই ক্ষতিগ্রস্ত শুধু তারা ছাড়া যারা জ্ঞানের উপর আমল করে। এবং আমলকারী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত শুধু তারা ছাড়া যাদের আমলে ইখলাস থাকে”।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ফজর সালাতের পর প্রার্থনা করতেন এই বলে যে,
اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, কবুলযোগ্য আমল ও পবিত্র রুজি প্রার্থনা করছি।’ (আহমাদ ইবনে মাজাহ, তাবারানি, মিশকাত হা/২৪৯৮)
সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত একমাত্র আল্লাহর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করা। আদব বজায় রেখে সঠিক জ্ঞান অন্বেষণে নিজেকে নিয়োজিত রাখা এবং অন্বেষণকৃত জ্ঞানের দ্বারা ব্যক্তি নিজে,পরিবার ও সমাজকে আলোকিত করা!
বিষয়: বিবিধ
১৬২৪ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাঃ, তাবেয়ী আল হাসান আল বাসরী (রহিমাহুল্লাহ), ইবন কুদামাহ (রহিমাহুল্লাহ) - অদ্ভুত রকমের এ্যাপিলিং তিনটি কোটেশান। আল্লাহু আকবর।
আল্লাহ আমাদের জন্য জ্ঞান আহরনের, সে জ্ঞান এর উপর আমল করার এবং সে জ্ঞান ও আমলকে 'জান্নাত' পাবার উছিলা করে দিন।
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
জ্বি উনাদের এই কোটেশন গুলো পড়লে সব কিছু শুণ্য শুণ্য মনে হয়! অনুশোচনা হয় না জানি কতো ভুল হয়ে গেলো!
চমৎকার দোআয় আমীন! আপনার সরব উপস্থিতি ও আন্তরিক মন্তব্যের শুকরিয়া
উভয় জাহানে কৃতকার্য হওয়ার জ্ঞান ও আমল করার তৌফিক কামনা করি! চমৎকার দোআয় আমীন! আপনার সরব উপস্থিতি ও আন্তরিক মন্তব্যের শুকরিয়া
আপনাকেও অনেক শুকরিয়া!
২. ইবনে কুদামাহ সাহেব মানুষটা বড্ড পেঁচালো...
উভয় জাহানে কৃতকার্য হওয়ার জ্ঞান ও আমল করার তৌফিক কামনা করি! সরব উপস্থিতি ও আন্তরিক মন্তব্যের শুকরিয়া
ইদানিং গায়েব কেন? মামার সাথে আপনাকেও নিয়ে গেলো নাকি?
জ্ঞানার্জন সবচেয়ে উত্তম ও মর্যাদাকর কাজ আর এর অগ্রভাগে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে আল্লাহর কালাম জানা, বুঝা ও উপলব্ধি করা। কেননা জ্ঞানের মর্যাদা জ্ঞানগত বিষয়ের মর্যাদার উপর নির্ভর করে। কিতাবুল্লাহ হচ্ছে জগতের সবচেয়ে সম্মানিত বিষয়; সুতরাং এর জ্ঞানার্জনই হল সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাকর কাজ।
চমৎকার শিক্ষণীয় মন্তব্যটির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া।
বারাকাল্লাহু ফিক। দোআ প্রার্থী
এজন্যই বলা হয় কম বুদ্ধির মানুষের জন্য জ্ঞান বিপদজনক। যদিও এখন আমরা বেশিরভাগক্ষেত্রে অর্থউপার্জন কিংবা প্রদর্শনির জন্যই জ্ঞান অর্জন করতে পছন্দ করি।
প্রদর্শনেচ্ছার মতো শিরক থেকে আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন।
জাযাকাল্লাহ খাইর!
জ্ঞানী গুনী সরল মনের মানুষ??????? কোনো গুণ ই যে নেই!
সঠিকভাবে ইবাদত করার ও আল্লাহ কে ভয় করে মেনে চলার জ্ঞানটুকু যেনো আল্লাহ আমাক এদান করেন এই দোআ প্রার্থী
শুকরিয়া
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁর শিক্ষার্থীদের এভাবে উপদেশ দিতেন -
"তিনের যে কোন একটি উদ্দেশ্য নিয়ে জ্ঞান অর্জন করো না: অজ্ঞকে হেয় প্রতিপন্ন করতে, অথবা ফুকাহাদের (বিদ্বানদের) সাথে তর্কে লিপ্ত হতে, অথবা তোমার প্রতি লোকদের মনোযোগ আকর্ষন করতে। তোমার আমল ও কথার দ্বারা তাই অনুসন্ধান কর যা আছে আল্লাহর নিকট। কেননা আল্লাহর নিকট যা আছে তা অবশিষ্ট থাকবে আর বাকি সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে"।
আহ! আজকাল দু'একটি লেকচার বা দু'একটি বাংলা হাদিস পডেই নিজের পান্ডিত্য জাহির করতে গিয়ে বড় বড় ফুকাহায়ে কেরামের ভূল ধরা আরম্ভ হয়ে যায়। যেখানে সেখানে মানুষের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়ে যায়।
বর্তমান যামানায় এসব লেকচারবাজ ও দু'একটি হাদিস বিশারদগন শুধু তর্ক করতেই জ্ঞান অর্জন করে, আমল করতে নয়।
মা-শা আল্লাহ আপনার পোষ্টগুলো দারুন উপকারী। শুকরিয়া।
কোটেশন গুলো আসলেই অনেক ভাবিয়ে তোলে। আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুণ এবং সঠিক ভাবে আদবের সাথে জ্ঞান অর্জনের তৌফিক দান করুণ!
বর্তমান যুগের সমস্ত ফিতনা থেকে আশ্রয় কামনা করি! চমৎকার মন্তব্য, সরব উপস্থিতি এবং অনুপ্রেরণার জন্য শুকরিয়া
অনুপ্রেরণার জন্য আন্তরিক শুকরিয়া আপনাকে। দোআ প্রার্থী।
আমিন।।
জাজাকাল্লাহু খাইর। অনেক উপকারী পোস্ট। লিখতে থাকুন প্লিজ এরকম আরো লিখা।। শুকরিয়া।।
"জ্ঞানার্জন" ও "মূর্খতার উপলব্ধি" সমানুপাতিক
এবং
"জ্ঞানার্জন" ও "আমলের বিশুদ্ধতাবোধ" ব্যস্তানুপাতিক
ফলাফল
ঘুম ভাঙাতে চাই এর মন্তব্য পড়ে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পাচ্ছি না।
তবে আমিও অনেক দুঃখ ও কষ্ট পেলাম তোমার অনুপস্থিতি দেখে। নিয়মিত হবার অনুরোধ নাই বা করলাম তবে মাঝে মাঝে তোমার শিক্ষণীয় লিখাগুলো থেকেও বঞ্চিত হবো তা কী করে মেনে নেয়া যায়? তুমিই বলো?
মন্তব্য করার শক্তি ও সুযোগ না পেলেও শুয়ে শুয়ে তোমার লিখাগুলো ঠিকই পড়ে ফেলি।
কেমন আছো তোমরা আপী??
মন্তব্য করতে লগইন করুন